সাগরের গল্প - Bound Book PDF - FLIP2 Flipbook PDF


28 downloads 115 Views 45MB Size

Recommend Stories


Review Cure Su Ciatica pdf book free download
Review Cure Su Ciatica pdf book free download >-- Click Here to Download Cure Su Ciatica Now --< >-- Click Here to Download Cure Su Ciatica Now --

Porque. PDF Created with deskpdf PDF Writer - Trial ::
Porque tu hogar empieza desde adentro. www.avilainteriores.com PDF Created with deskPDF PDF Writer - Trial :: http://www.docudesk.com Avila Interi

Story Transcript

সাগেরর গl


সাগেরর গl AvdjvZzb nvq`vi †PŠayix


িশরোনাম পষ্ঠা ৃ র পেরর পষ্ঠা ৃ (Back of the Title Page) এই পষ্ঠা ৃ য় প্রকাশেকর নাম ও িঠকানা, প্রকাশকাল, প্রচ্ছদিশল্পীর নাম, সংস্করণ, গ্রন্থস্বত্ব, মু্দ্র ণকারী প্রিতষ্ঠােনর নাম, পিরেবশেকর নাম, আইএসিবএন, মল্য ূ ইত্যািদ তথ্য থাকেব। স্বত্ব © আফলাতুন হায়দার চৌধরী ু


উৎসর্গ জলিফকার ু হায়দার চৌধরী ু হুসনা হায়দার চৌধরী ু আমার জান্নাতবাসী বাবা িযিন আমায় িশিখেয়িছেলন িকভােব লেখা িদেয় ছিব আঁকেত হয়। আর, আমার আম্মা যাঁর মার খেেয়ও এখন পর্যন্ত মানুষ হেত পারিছনা।


cÖvi¤¢K_v ঘরেুবেড়া য় অ েন েক ই , স বা ই হা িরয়ে যা য় না জে. আর. আর. টলিকন বই িলখার শুরু থেেক শেষ, একটা বড় ভেয়জ। Voyage-এর আিভধািনক বাংলা অনবাদ ু সমদ্রু যাত্রা। একটা জাহােজর ভেয়জ বলেত এক পোর্ট থেেক লোড িনেয় আেরক পোর্টে িডসচার্জ করা বোঝায়। সেটা িচটাগাং থেেক মংলা হেত পাের, িকংবা িচটাগাং থেেক িনউ ইয়র্ক। একজন নািবেকর (Seafarer বা Mariner) ভেয়জ বলেত বোঝায় একিট জাহােজ তার কনট্রাক্টের শুরু থেেক শেষ। এয়ারেপার্টে, লঞ্চ ঘােট, ট্রেন ষ্টেশন এমনিক বাস ষ্টেশন থেেক কাউেক িবদায় দেবার সময় আমরা বিল Bon Voyage বা যাত্রা শুভ হোক। খবু চেেয়িছলাম বইেয়র নাম দেেবা, “দ্য ভেয়জার”। ইংেরজী গালভরা নাম, এর বঙ্গানবাদ ূ বা প্রিতশব্দ গুেলাও পছন্দ হলনা। িলখা যখন প্রায় শেষ তখন ভাবলাম সাগর-মহাসাগর িনেয় িলখা সতরাং ু সাগেরর গল্প’ই হোক বইেয়র নাম। সমস্যা হল, আমার ডাকনাম সাগর। িনেজর নােম বইেয়র নাম? আসেলই িক তাই? এ যে সত্যিই সাগেরর গল্প! ‘সাগেরর গl’ বইিটেত রেয়েছ আমার নািবকজীবেনর প্রথম িদেকর কািহনী। শুরু হেয়িছেলা কর্ণফর্ণ ু লী নদী থেেক। িচটাগাং পোর্টের দশ নম্বর জেিট যেখান থেেক যাত্রা কের প্রথেম নদীর ওপাের িস.ইউ.এফ.এল, সেখান থেেক হেমন্তের এক সকােল ভরা জোয়াের শুরু হয় সমদ্রু যাত্রা। সাগর জীবেনর অর্জিতর্জি অিভজ্ঞতা যা আিম তুেল ধেরিছ িলখার মাধ্যেম। কার্গো িশেপ এক দল নািবেকর সােথ ঘেরু বেড়ােনা দেশ থেেক দেেশ, বন্দর থেেক বন্দের, সাগর থেেক মহাসাগের। খোলা, একেঘঁেয় গহীন সমদ্রু । কখেনা কখেনা মেন হেয়েছ এ জীবন কেতাইনা ইন্টােরষ্টিং, অপরূপ আর রোমান্টিক। ভয়াল অিভজ্ঞতার সময় মেন হেয়েছ এটাই বিঝু জীবেনর শেষ। হয়েতা প্রশ্ন আসেত পাের, এখােন জীবন এমন কেন? এভােব বেঁেচবেঁ থাকা যায়? অথবা, জীবনটা এত মধরু কেন? িকংবা, পিথবীটা ৃ এত্তো সন্দু র কেন? একই মানষু , িবপরীত প্রশ্ন। তেব একটা িবষয় সবসময় হৃদয়টা ব্যাথাতূর কের রাখেতা। পিরবার, প্রিয়জন থেেক দেরু কোন দেেশর মািটেত নয়, মহাসাগেরর মােঝ যেখান থেেক ইচ্ছে হেলই ছুেট আসা যায় না। সমদ্রু জীবেন যে সব অিভজ্ঞতা হয়েেছ সেগুেলা আমার সেরা সম্পদ। আমার সৌভাগ্য সাত সাগর তেরো নদী দেেখিছ। দেেখিছ গহীন সমদ্রেু সরোবেরর মত টলটেল জেল পর্ণিূ মার র্ণি চাঁেদর প্রিতফলেন ভয়াবহ উজ্জ্বল জোছনা। দেেখিছ ঝঞ্ছা, দেেখিছ ঝড়ের কবেল পড়ে পাহাড়সম ঢেউয়ের চুড়ায় উেঠ িবশাল জাহােজর দু টুকেরা হেয় যাওয়া, দেেখিছ সাগেরর জেম থাকা বরেফ িদেনর পর িদন আটকা পড়ে থাকা। আর, দেেখিছ মানষ।ু নানান দেেশর নানান জােতর মানষ।ু জীবেনর শ্রেষ্ঠ িশক্ষা পেয়েিছ সেখান থেেক।


২০২০ সােল বর্তমান কর্মক্ষের্ম ত্রের এক দর্ঘু টনায় র্ঘ বাঁহােতর কব্জির কােছর রেিডয়াস এবং আলনা দেটাই ু ভেঙ্গে গেেলা। আলনা হল দইু , আর রেিডয়াস হল ছোট ছোট চার টুকেরা। টানা িতনমাস ঘের বেস থাকেবা? ভাবলাম ডানহাত িঠক আেছ, িকছু একটা করা উিচত। সেই থেেক িলখার ভাবনা। এক হােতর টাইিপং ধীর তেব অসম্ভব নয়। শুরু হল ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’ িদেয়। িতন মােসর মধ্যে পেরাপ ু িরু সস্থ্য ু হেল িলখার গিত বাড়েলা । জীবন, প্রেফশন, সংসার এইসেবর পাশাপািশ িতল িতল কের এিগেয় যেেত থাকেলা পাণ্ডুিলিপ। কখেনা দশ লাইন, কখনও কেয়ক পষ্ঠা ৃ আবার কখেনা িকছুই নয়। তারপর দীর্ঘ আড়াই বছর পর দাঁড়ােলা িকছু একটা। স্বপ্নেও ভািবিন এতগুেলা পষ্ঠা ৃ িলেখ ফেলেবা। িলখেত িগেয় টের পেলাম কল্পকািহনী যত সহেজ বানােনা যায় বাস্তব জীবেনর ঘটনাবলী ফু িটেয় তোলা এত সহজ নয়। অেনকিদন আেগর ঘেট যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ হাতড়ােত িগেয় খািব খেেত হেয়েছ পেদ পেদ। স্মৃিতর উপর িনর্ভর করার কোন সেযাগ ু নেই, সৌভাগ্যক্রেম বেশ িকছু ছিব অতীত স্মৃিত িফিরেয় আনেত সাহায্য কেরেছ। রেফােরন্স িহেসেব উপকাের এেসেছ প্রচুর পেরােনা ু িচিঠ আর িনেজর কােছ থাকা কাগজপত্র। এর ভেতর িকছু বন্দর, শহর ইত্যািদর নাম বদেল গেেছ। পাল্টে গেেছ জীবন িচত্র, পেরােনা ু সব ভেঙ্গেচুের নতু ন কের গেড় তোলা হেয়েছ নানান দেেশর অেনক শহর-বন্দর। সেখােন যক্ষের ধেনর মত উপকাের এেসেছ ইন্টারেনট রেফােরন্স; গুগল সার্চ ইঞ্জিন আর গুগল ম্যাপ, অন্যান্য ম্যাপ সার্ভিস, ব্রিিটশ এ্যামডরালিট চার্ট সার্ভিস, ইউ কে হাইড্রোগ্রািফক অিফস, উইিকিপিডয়া, ন্যাশণাল িজওগ্রািফক এক্সপ্লোরার, এনকার্টা এনসাইক্লোিপিডয়া, িহষ্ট্রী ওেয়ব পোর্টা ল, মেট অিফস (National Meteorological Service for the UK)। আেরা পেেয়িছ িবিভন্ন রাষ্ট্রীয় এবং বািনজ্যিক সংস্থার ওেয়ব পোর্টা ল থেেক। িলখার সময় অেনেকর কাছ থেেক সাহায্য সহেযািগতা পেেয়িছ, তােদর কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই। এটুকু বলেত পাির িলখা শুরু করা যত কিঠন তার চেেয় ঢের কিঠন এবং চ্যােলঞ্জিং িছেলা ঠান্ডা মাথায় শেষ করা। হয়েতা কখেনাই িলেখ শেষ করেত পারতাম না যিদ প্রিয়তমা স্ত্রী কান্তা আমার পােশ না থাকেতা। িনউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবািদক, আমার শ্রদ্ধেয় মামা জনাব আকবর হায়দার িকরন কেবল সাহস আর উৎসাহ নয়, অেনক ধমকও িদেয়েছন তা না হেল হয়েতা িঢেলিমর কারেন আজও আমার িলখা শেষ হত না। তাঁেক কৃতজ্ঞতা জানােনার ধৃষ্টতা আমার নেই। প্রথম দশ পর্ব আমার িনজস্ব ওেয়বসাইেট পাবিলশ করেল (পাসওয়ার্ড িদেয়) সেটা পড়েলন আমার িপতৃপ্রতীম শ্বশুর জনাব আবদসু সোবহান মাতবর, ভূয়সী প্রশংসা কের বলেলন অবশ্যই এটােক বই আকাের প্রকাশ করেত হেব। তাঁর মন্তব্য আমােক দারুন উৎসাহ িদেয়েছ। আমার বন্ধু একরাম উল্লাহ্ (টেিনং সহপাঠী বর্তমােন ক্যানাডা প্রবাসী) আমােক সাহায্য কেরিছেলা প্রচুর িচিঠর কিপ, ট্রেিনং শেেষ জাহােজ জেয়ন করার সময়কালীন অেনক খিটনািট ু ঁ িবষেয় স্মৃিত রোমন্থেন। তা নাহেল ওই িবষয়গুেলা এত িনখতভােব ু ঁ িলখেত পারতাম না।


’ ‘ন্ড’ ইত্যািদ। এ্যাপল-ম্যাক ওয়ার্ড প্রেসসর ‘পেইেজস’ এর বড় সমস্যা হল হসন্ত ব্যাবহােরর সীমাবদ্ধতা (কন্টিিনউেয়শেন), অসাধারণ গ্রািফকস্ ক্ষমতা সত্বেও ছিবগুেলার িনখতু ঁ অবস্থান আর টেক্সট-ছিবর সম্মিিলত লে-আউট মেনেটইন করা দরহ। ু তাছাড়া প্রায় আিশ হাজার শব্দের এই িলখায় ফাইন্ড, সার্চ, িরপ্লেস এবং দীর্ঘ ফন্ট িলষ্ট ড্রপডাউেন গিতজড়তা জিনত সমস্যা পেেয়িছ। সবেচেয় বড় দর্বু লতা র্ব , ডকুেমন্টের আেগ বা পের পষ্ঠা ৃ জেড়ু দেবার সেযাগ ু নেই। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের বহুমখী ু ক্ষমতার ধােরকােছও নেই ম্যাক পেইেজস। গ্রািফকস্ খনু শুিট বড্ডো জ্বািলেয়েছ যিদও টেক্সট িলখেত পেেরিছ সাবলীলভােব। এজন্য ekushey.org-কে আন্তিরক ধন্যবাদ জানাই িবনামূল্যে ম্যাক-সফ্টওয়্যােরর মাধ্যেম মাতৃভাষায় িলখার সেযাগ ু কের দেবার জন্য। টাকা িদেয় কেনা লাইেসন্সড্ weRq বাংলা সফটওয়্যার ব্যাবহার কেরিছ িকছু িকছু যায়গায় যেখােন আরাম কের হসন্ত ব্যাবহার করেত পেেরিছ। তাছাড়া এ্যােডািব ফেটাশপ, ইলাষ্ট্রেটর এবং ইনিডজাইন গ্রািফক্সের কােজ weRq বাংলা সফটওয়্যার অসাধারণ এবং স্মার্ট। যে পিরমান আেবগ আর ভােলাবাসা মেন িনেয় িলেখিছ সে পিরমান হয়েতা ফু িটেয় তু লেত পািরিন। িলখায় নানান ভুল-ভ্রান্তি থাকেত পাের, আশা কির দয়া কের সকল ভুল ক্ষমােঘন্না করেবন এবং নীেচর িঠকানায় ইেমইল করেবন পরবর্তী েত আমরা শুধের নেেবা। িবনীত আফলাতুন হায়দার চৌধরী ু [email protected] [email protected] aflatun.co.uk


সু Ȍ 00. weZvob (Deportation) 1 01. ‡`‡ki gvwU LyuwR 8 02. bwj Avi wmwWwm 13 03. cywjk mycvi Avi cywjk mycvi 18 04. cvIqvidzj g¨vb, `ytðwi‡Îi ZvwjKv Ges mxjMvjv 22 05. Nyl †`‡ev! †Kb †`‡ev? cvMj bvwK? 27 06. AZtci 31 07. cÖ_g w`b 37 08. ‡iwWI MvMv 41 09. wKQz ‡evwisZ_¨ 46 10. cÖwfkb, A_©vr Lvbvwcbv 51 11. nb MvB - †QvÆ GKUv kn‡i bvg 57 12. ïf Rb¥w`b - WªvMb AeZiY 65 13. DËi wf‡qZbvg - The N☸︎rth 72 14. ‡nv wP wgbn& wmwU - (Sái gón) 81 15. ‡nv wP wg‡bi wf‡qZbvg 86 16. Aciƒcv mvBMb 93 17. ‡gvm© †KvW 101 18. ‡dvm© †Ub 107 19. K¬vDWm&... †g‡Ni Mí 112 20. ‡`k, Avgvi ‡`k 121 21. gnvmvMi, `yB gnv‡`k Avi wZwg `y‡Uv 128 22. ‡dvi eW©vm© 136


সু Ȍ 23. AvK¡vev †cvU© K‡›Uªvj UvIqvi 149 24. ‡Zvgvi bvg AvK¡vevi mevB Rv‡b 156 25. AvK¡vev †_‡K wmivPv 173 26. Avj Zvdwm‡ii †gvQjgvb 179 27. _vBj¨vÛ †_‡K †Kvwiqv 186 28. c„w_exi cÖ_g C` (Ni nB‡Z eû`yi) 193 29. wQb&ûqvs`vI - †n‡eB, Pvqbv 201 30. cÖ_g AwfÁZv . . . THE GREAT WALL 208 31. Zvgvg `ywbqvi cøvM, m‡KU Ges wUwf wm‡ógm& 222 32. Bb‡Pv‡b wdDwg‡Mkb 231 33. Pvqbv-‡Kvwiqv jvBUvwis - Avevi †MÖU Iqvj 241 34. wejøvi D‡cÖ `yB WvÛv, wK Avb›`!! 251 35. Wvwjqvb (⼤连, Dàlián, People’s Republic of China) 257 36. UvBd‚b iweb 270 37. eymvb Avi cymvb, GKB K_v 278 38. BsK~¨, Zvici Bb‡PvÕb 286 39. M„nh×, kxZj hy‡×i ci AvR‡Ki Avl©bxq †Kvwiqv, Zvici Avgvi we`vq 293


সা গ ের র গ ȩ শেষ খȈ. . . িবতাড়ন (Deportation) আমােক িডেপার্ট করা হচ্ছে। অেনকিদন আেগর কথা, তখন ঢাকা হযরত শাহজালাল এয়ারেপার্টের নাম িছেলা িজয়া আন্তর্জািতক িবমানবন্দর। কাঁেধর ব্যাগ আর হ্যাণ্ডব্যাগ িনেয় বেস আিছ, সেই কখন এয়ারেপার্ট খািল হেয় গেেছ। যেখােন বেস আিছ তার পেছেন কাঁেচর দেয়ােলর ওপােশ ভূেতর মত িনঃশব্দে দাঁিড়েয় আেছ ক্যােথ প্যািসিফেকর এয়ারক্রাফ্ট যেটােত কের আিম ঢাকা এেসিছ। সামেন বেশ তফােত ইিমগ্রেশন কাউন্টার, দুজন ইিমগ্রেশন পিলশ ু কাউন্টােরর পেছেন বেস িনেজেদর মধ্যে টুক টাক কথা বলেছ। ‘িডেপার্ট’ শব্দটা আেগও শুেনিছ। এর মােন হল কেউ যখন কোন রাষ্ট্রে অৈবধভােব প্রেবশ কের বা বসবাস কের, স্থানীয় কতপৃ ক্ষ (ইিমগ্রেশন) যিদ ধরেত পাের তাহেল তােক তার িনজ দেেশ ফেরত পাঠােনা হয়। আমার ক্ষেত্রে িবষয়টা অদ্ভুত। হািস পাচ্ছে, আবার িবরক্তও লাগেছ। িডেপার্ট করার মােন যিদ হয় কাউেক তার িনজ রাষ্ট্রে ফেরত পাঠােনা হেব সেক্ষেত্রে আমােক কোথায় পাঠােব? আমার জন্ম, বেেড় ওঠা, লেখাপড়া সব এই বাংলােদেশর ফেণী শহের। এখন স্থানীয় সময় প্রায় রাত দুেটা। সেই িমডনাইেট ফ্লাইট ল্যাণ্ড কেরেছ, পিলশ ু দুজন বেল িদেয়েছ আমােক অেপক্ষা করেত হেব, ওেদর ‘স্যার’ আসেল উিন ফেরত পাঠােনার সব ব্যাবস্থা করেবন। তাই বেস আিছ, িক আর করা? সারা এয়ারেপার্টে ওই একটা ফ্লাইটই ল্যাণ্ড কেরিছেলা। ফ্লাইেট যাত্রী িছেলা আিম সহ িতরািশ জন। গত এক বছেররও বেশী সময় ধের সমদ্রু গামী জাহােজ চাকরী কেরিছ, দুিনয়ার এ-মাথা ও-মাথা ঘেরু এবার বাড়ী ফেরার পালা। আমার জাহাজ সাউথ কোিরয়ার ইনেচান পোর্টে এেল সেখান থেেক সাইন-অফ কের িনকটস্থ িকমেপা (김 বা িগমেপা) ইন্টারন্যাশণাল এয়ারেপার্ট থেেক কোিরয়ান এয়ারলাইন্সের একটা ফ্লাইট ধের প্রথেম হংকং, সেখান থেেক ক্যােথ প্যািসিফেক ঢাকা যােবা। আমােদর 1


সা গ ের র গ ȩ লোকাল এেজন্ট পোর্ট অিফস থেেক সাইন অফ কিরেয় ইিমগ্রেশন ক্লীয়ােরন্স িনেয় আমােক রাজধানী সোউল (서울) এর িকমেপা এয়ারেপার্টে িনেয় আেস। সোউল আর ইনেচান অেনকটা ঢাকার মিতিঝল-উত্তরা দুরত্বে। এয়ারেপার্টে চেক-ইন, লােগজ ট্রান্সফার এমনিক বোর্ডিং পাস হােত আসা পর্যন্ত আমার সােথ থােক এেজন্ট, তারপর িবদায় জানায়। িকমেপা এয়ারেপার্ট থেেক কোিরয়ান এয়ারলাইন্সের বোিয়ং সেেভন-ফোর-সেেভন জাম্বো জেেটর ফ্লাইট আমার জীবেনর প্রথম আকাশ ভ্রমন। িক অদ্ভুত না? আমার প্রথম িবমান ভ্রমন িবেদশ থেেক। িবশাল এয়ারক্রাফ্ট, চারশরও বেশী যাত্রী িনেয় আকােশ ওড়ার অনুভূ িত কেমন িঠক বলেত পারিছনা কারন তের মাস পর দেেশ যাচ্ছি, সেখােন মা, বাবা, ভাইেবান, আত্মীয়স্বজন, প্রিতেবশী, বন্ধু সবাই আেছ। জীবেন কখনও এত লম্বা সময় সবাইেক ছাড়া কাটােবা ভািবিন। প্রিতটা সেেকণ্ড ভেেব অস্থির কখন দেেশ পৌঁছেবা? দেশ বলেত ঢাকায় নয়, কখন ফেণী যােবা? যেখােন আেছ িনেজর বাড়ী, ঘর, আমার রুম, সবিকছু। হংকংেয় দুই ঘন্টা ট্রানিজটসহ সব িমিলেয় আট নয় ঘন্টার ফ্লাইট। কোথাও কোন সমস্যা হয় িন। হংকং এয়ারেপার্টের বোর্ডিং লাউঞ্জে আিম আর দুজন বদ্ধৃ দম্পিত ছাড়া আর কেউ নেই। ক্যােথ প্যািসিফক এয়ারলাইন্সের বোর্ডিং শুরু হবার িকছুক্ষন আেগ দেিখ বড়সড় এক দল বাংলােদশী প্যােসঞ্জারস্ ওেয়িটং রুেম সািরবদ্ধভােব ঢুকেছ। সামেন পেছেন বেশিকছু পিলশ ু (তখন হংকং িছেলা বিটশেদর ৃ )। পিলশ ু অিফসারেদর চার-পাঁচ জন অেনকগুেলা বাংলােদশী পাসেপার্ট/বোর্ডিং কার্ড মদুৃ স্বের নাম ডেেক ডেেক জেন জেন ফেরত িদচ্ছে। প্যােসঞ্জারেদর পাসেপার্ট, বোর্ডিং কার্ড যার যার কােছ থাকার কথা, পিলেশর ু কােছ কেন? এর ভেতর সুিমষ্ট িমঁউঁ িমঁউঁ ইংেরজী আওয়াজ শুেন ঘেরু দাঁড়ােত দেিখ টকটেক লাল কোটপরা এয়ার হোষ্টেস তার টকটেক লাল িলপষ্টিক ঠোঁট নেেড় বলেছ, “প্লীঁজ কাঁম উঁইথ িমঁ।” শুধু আিম নয়, আমার সােথর বদ্ধৃ দম্পিতেকও ডাকেলা। আমােদর বোর্ডিং পাস চেেয় িনেলা, িছঁেড় ছোট অংশ রেেখ বড় অংশ ফেরত দেবার কথা, িদেলা না। বরং সীট নাম্বার ইগেনার করেত বলেলা। মরুব্বী দম্পিতর মখু খশী ু খশী ু , িকন্তু কেন? আিম দেেখ শুেন চমৎকার একটা উইণ্ডো সীট িনেয়িছলাম সেটার িক হেব? ক্যােথ প্যািসিফেকর এই প্লেন কোিরয়ান এয়ালাইেনর মত জাম্বোেজট নয়, একতলা মাঝারী সাইেজর প্লেন। এয়ার হোষ্টেস আমােদর সামেনর অংেশ ফার্ষ্ট ক্লােস নেবার পর বঝলাম ু মরুব্বীেদর খশীর ু কারন, সেখােন িনেয় িগেয় বলেলা যেখােন ইচ্ছা বসেত পাির। ঘটনা িক জানার জন্য কৌতুহেল পেট ফেেট যাচ্ছে, কেিবন ক্রু মেেয়টােক িজজ্ঞেস করেল জানােলা এই ফ্লাইেট কের আিশ জন ইলিলগ্যাল ইিমগ্র্যান্ট বাংলােদশীেক হংকং থেেক বাংলােদেশ ফেরত পাঠােনা হচ্ছে। অর্থাৎ িডেপার্ট করা 2


সা গ ের র গ ȩ হচ্ছে। ওরা নািক িবিভন্ন মেয়ােদ িডেটনশন সেন্টাের িছেলা। সবাইেক একসাথ কের এই ফ্লাইেট তুেল িদেয়েছ। সীট চেঞ্জ কের ফার্ষ্ট ক্লােস কেন আনা হল সে প্রসঙ্গে িকছু না বলেলও আমরা যা বোঝার বেঝু িনলাম। আমােদর দেেশর অেনক মানুষ যে যেভােব পাের িবেদশ চেল যেেত চায়। টাকা পয়সা খরচ কের িবেদশ যায়, এর মধ্যে অেনেক এক পর্যােয় অৈবধ হেয় যায়, কেউ ধরা পেড় যায়, কেউ পেড় না। ধরা পড়েল এভােব ফেরত আেস। তখন তােদর মেনর অবস্থা কেমন হয়? িকন্তু মেন হচ্ছিেলা এই মানুষগুেলার কােরা কোন সমস্যা হচ্ছেনা। কারন ওপাশ থেেক ওেদর হৈ- হৈ রৈ-রৈ আনন্দ শোনা যাচ্ছে। টয়েলেট যাবার সময় িসগােররেটর কড়া গন্ধে নািড়ভু ঁিড় উল্টে যাবার উপক্রম। এক ফাঁেক উঁিক িদেয় দেিখ পেছেনর অংেশ যাত্রীেদর মাথার উপর িবশাল ধোঁয়ার মেঘ, তখন ফ্লাইেট িসগােরট টানা যেেতা। ইেকানিম ক্লােসর পেছেনর অর্ধেক হচ্ছে স্মোিকং এিরয়া। হাস্যকর স্মোিকং পিলিস। অেনেকর হােত ওয়াইন গ্লাস, কােরা হােত বীয়ার। আবার দেখা যাচ্ছে আইেলর মাঝখােন কেয়কজন এয়ার হোষ্টেস তরুণীেদর সােথ হািসমেখু ছিব তুলেছ, “িসষ্টার িসষ্টার, ওয়ান িফকসার িপিলজ!” ফ্লাইট ঢাকায় ল্যাণ্ড করেল সবার আেগ আমােদর নামেত িদেলা। মরুব্বী দুজন ইিমগ্রেশেন বাঁেয়র কাউন্টাের গেেলা, আিম গেলাম ডােন। ইিমগ্রেশন পিলশেক ু সালাম িদলাম, জবাব িদেলানা, পাসেপার্ট চাইেলা। আিম িসিডিস এিগেয় িদেল সে অবাক, “পাসেপার্ট চাইিস, এইটা িক িদেলন?” “এটা িসিডিস” িবনীতভােব বললাম। “িসিডিস মােন? পাসেপার্ট কই?” িবরক্ত হেয় ভদ্রেলাক িসিডিস ফেরত দেবার জন্য এিগেয় িদেলা, আিম িনলাম না। বললাম, “আপিন সত্যি িসিডিস মােন িক জােনন না? এটা মেরীনার্স পাসেপার্ট। আিম নািবক, এটাই আমােদর পাসেপার্ট!” “এইটা িদয়া আফেন হংকং থেইকা উইড়া চইলা আইেছন?” লোকটার কথার tone এমন কেন? মাথা গরম না কের ভদ্রভােব ব্যাখ্যা করলাম, “দেখনু , প্রায় দেড় বছর আেগ আিম িশেপ জেয়ন কির িচটাগাং পোর্ট থেেক। িশেপ জেয়ন করেত হেল পাসেপার্ট থাকেত হেব এমন বাধ্যবাধকতা নেই (*এখন বাধ্যবাধকতা আেছ)। তেব আিম িনয়ম মত পাসেপার্টের জন্য এ্যাপ্লাই কির, িকন্তু পাসেপার্ট হােত আসার আেগই আমরা িচটাগাং ছেেড় চেল যাই। আিম আবারও বলিছ, মেরীনারেদর পাসেপার্ট থাকেতই হেব এমন বাধ্যবাধকতা নেই! এই দ্যােখন”, বেল িসিডিসর ভেতেরর একটা ব্ল্যাংক পেইেজ অেনকগুেলা দেেশর ইিমগ্রেশন সীল দেখালাম। সে বেস বেস কতক্ষন আমার িসিডিসর মধ্যে নানান 3


সা গ ের র গ ȩ দেেশর ইিমগ্রেশন সীেলর কােলকশন দেখেছ। ইিতমধ্যে ওই িডেপার্টেড আিশজেনর দল হৈ- হৈ করেত করেত ইিমগ্রেশেনর িকউেত দাঁড়ােলা। তখন কাউন্টােরর দুই পিলেশর ু মধ্যে িকছুটা চাঞ্চল্য দেখলাম, ওরা পরষ্পর দষ্টিৃ িবিনময় করেলা। িসিডিসটা আমার হােত িফিরেয় িদেয় বেল, “পাসেপার্ট ছাড়া আফেনের আিম এন্ট্রি িদেত পারুমনা।” এতক্ষন কার জন্য লেকচার িদলাম? “িসিডিস দেিখেয় সব বিঝেয় ু বলার পরও এটা বলেলন?” এবার সে খেঁিকেয় ওঠেলা, “িকইই িসিডিস িসিডিস কেরন? পাসেপার্ট ছাড়া ক্যামেন পোরমান করেবন আফেন বাংলােদেশর িসিটেজন? আফেনের িরটার্ণ বোর্ড কইরা িদম।ু ” আিম কনিফউজড্, “িরটার্ণ বোর্ড মােন?” “মােন আফেন যেই দ্যাশ থেইক্কা আইেছন ওইখােন িফরত যাইেবন।” লোকটার কথা শুেন হতভম্ব হেয় গেলাম। বাক্স-পেটরা িনেয় আবার হংকং িফের যােবা! বেল িক? রীিতমত বকু ধড়াস ধড়াস করেছ। এই লোেকর িক মাথা খারাপ? িসিডিসেত আমার নাম, িপতার নাম, জন্মতািরখ, জন্মের স্থান, িঠকনা, এমনিক িফংগারপ্রিন্টও আেছ। তাছাড়া িসিডিসেত সুস্পষ্ট বাংলা এবং ইংেরজীেত “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলােদশ সরকার” কর্তৃক প্রদত্ত এটা উল্যেখ করা আেছ। বললাম, “এটা বাংলােদশ সরকােরর ইস্যূ করা একটা ডকুেমন্ট। এখােন আমার িঠকুিজ কুষ্ঠি সব আেছ খাঁিট বাংলায়। আর আপিন বেলন আিম বাংলােদশী িক না প্রমাণ িক? আমােক িডেপার্ট করেবন আমার, দেশ থেেক? ইয়ার্কী কেরন?” রােগ আমার গা জ্বেল যাচ্ছে। “আমােদর পক্ষে আফেনের এন্ট্রি দেয়া সম্ভব না।” এবার িমনিত কের বললাম, “ভাই, আমার মেট্রিক, ইন্টার থেেক শুরু কের প্রেফশনাল সব সার্টিিফেকট দেখােত পারবো। আর িক প্রমাণ চান?” পােশর ইিমগ্রেশন পিলশ ু তার কাউন্টার থেেক দাঁিড়েয় আমার িদেক তািকেয় বলেলা, “এই যে জনাব, আফেনর সব কথা মানলাম। িকন্তু আমােদর দুইজেনর কােরার আফেনের দ্যােশর িভতের ঢুকােনর ক্ষমতা নাই। স্যােরের ডাকন লাগেবা, উিন যা করেনর করেবা। আফেন..” “ডােকন আপনার স্যারেক! আমার তো সমস্যা নেই?” তার কথা মখু থেেক কেেড় িনেয় বললাম। পােশর পিলশ ু জবাব দেবার আেগ আমার সামেনর পিলশ ু চেয়ার দেিখেয় বলেলা, “স্যােরের ডাকেতিছ, আফেন ওইখােন িগেয় বেসন তো!” আিম মাথা গরম কের িকছু বলেত যাবার আেগ পােশর পিলশ ু আবার বলেলা, 4


সা গ ের র গ ȩ “ভাই ভাই ভাই! িপিলজ আফেন অেপক্ষা কেরন। দ্যাখতােসন না এত্তগুলা প্যােসঞ্জার খাড়াইয়া আেছ। স্যােরের খবর িদেতিছ, স্যাের আসেল আফেনের ডাকেবএ্যােন। বেসন আফেন।” পােশর পিলেশর ু কথা শেষ হবার আেগই আমার পিলশ ু অেপক্ষামান প্যােসঞ্জারেদর একজনেক ইশারায় ডাকেত সে ছুেট এেস তার পাসেপার্ট এিগেয় িদেলা। বাধ্য হেয় আিম আমার িসিডিস, হ্যাণ্ডব্যাগ আর ব্যাকপ্যাক িনেয় পেছেনর চেয়াের িদেক চেল গেলাম। বেস আিছ, ওেদর স্যার এখেনা আেসিন। হংকং থেেক আসা িডেপার্টেড প্যােসঞ্জাররা দুই লাইেন দাঁড়ােনা, এেককজেনর সময় িনচ্ছে দীর্ঘক্ষণ। ইিমগ্রেশন ষ্টাফগুেলা ওেদরেক সমােন চোটপাট করেছ আর টাকাপয়সা িনচ্ছে। ওরাও কেমন জািন চোেরর মত কাঁচুমাচু করেছ আর পেকট হাতড়াচ্ছে। অথচ ফ্লাইেটর ভেতর মদ খাচ্ছিেলা, এয়ার হোষ্টেেসর সােথ ছিব তুেল ঈেদর আনন্দ িনচ্ছিেলা। একসময় সেটাও শেষ হল। িডেপার্টেড পার্টি এন্ট্রি ক্লীয়ােরন্স িনেয় চেল গেেছ অেনক্ষন, এয়ারেপার্ট এখন সম্পূর্ন ম্পূ নীরব। ঢাকার িজয়া ইন্টারন্যাশণাল এয়ারেপার্ট এত ব্যাস্ত নয়, তার উপর তখন গভীর রাত। সুনসান নীরবতা সবখােন। ইিমগ্রেশন পিলেশর ু কাউন্টার পেিরেয় খািনক দুের ডানিদেক কাঁেচর দেয়ােলর ওপােশ লােগেজর কনেভয়ার বেল্ট, থেেম আেছ। আমার লােগজ কোথায় কে জােন? লােগজ িনেয় অবশ্য গ্রীন চ্যােনল িদেয় পার হেবা, আমার কােছ কোন ট্যাক্সেবল আইেটম নেই। ইিমগ্রেশন, কাষ্টমেসর পেছেন দুের হঠাৎ চোেখ পড়েলা ভাইয়া বাইের থেেক কাঁেচর দেয়ােল মাথা ঠেিকেয় আমােক খু ঁজেছন। এয়ারেপার্টের বাইের সাধারনতঃ জটলা থােক, এখন সব খািল। সেই কখন ফ্লাইট নেেমেছ, গোটা এয়ারেপার্ট খািল হেয় গেেছ অথচ আিম বের হেত পারিছনা। হংকং থেেক আিশটা ইলিলগ্যাল িক সুন্দর পার হেয় গেেলা আর আমােক বিসেয় রেেখেছ। কেমন লােগ? ইিমগ্রশন পিলশ ু দুেটা সেই কখন বেলেছ ওেদর স্যারেক ডাকেব, এরপর আর কোন খবর নেই। বেস বেস গল্প করেছ ওরা। এিদেক আিম িনজভূেম বেস আিছ উদ্বাস্তুর মত। অিতশয় তুচ্ছ মেন হচ্ছে িনেজেক। আমার জন্মভূ িম থেেক বের কের দেেব? বিহঃষ্কার!! হঠাৎ মেন হল আিম িক এতই ফালতু? হাল্কা? কোন মান-সম্মান নেই? এই দুই ব্যাটা িনেজেদর িক ভােব? ‘আিম ফেণীর পোলা।’ জন্মের পর থেেক গুণ্ডামী পাণ্ডামী দেখেত দেখেত বড় হেয়িছ, আর এই দুই পাবিলক ইউিনফর্ম িপন্দা পাওয়ার দেখায়? আমােদর ফেণী বাংলােদেশর অন্য সব এলাকার চেেয় িভন্ন। ফেণীেক বাংলােদেশর লেবানন উপািধেত ভূ িষত করা হেয়িছেলা সেই এরশােদর আমল থেেক। মেন মেন অংক, ইিতহাস আর ভূেগাল পড়া শুরু করলাম। শুধমা ু ত্র ফেণী শহের প্রিতিদন যতগুলা ককেটল ফুেট, সমগ্র বাংলােদেশর বাকী বত্রিশিট জেলা িমিলেয়ও এত ককেটল ফুেটনা (তখন বাংলােদেশ জেলার সংখ্যা তেত্রিশ।) সারা বাংলার পোলাপান িশশুকােল লেেবনচুষ চুেষ। ফেণী টাউেনর পোলাপানেদর লেেবনচুষ হইেলা বেলট। ু িক মেন কের এরা? মাথা গরম হেত হেত মেন হচ্ছে আগুন ধের গেেছ। িক 5


সা গ ের র গ ȩ যে হল জািননা। ব্যাগগুেলা চেয়ােরর উপর ফেেল রেেখ হুড়মড়ু কের ওেদর কাউন্টােরর সামেন এেস দাঁড়ালাম, “আপনােদর স্যার কই?” “এ্যাঁ!” লোকটা এমনভােব তাকােলা যেন আিম গরু িকংবা ছাগল। মাথায় রক্ত উেঠ গেেছ। দাঁেত দাঁত চেেপ বললাম, “মাদার✻✻✻! ফাইজলািম করছ আমার লেগ?” কাঁচা গািল শুেন িবস্মেয় হতবাক লোকটা, িকন্তু তােক আর এক সেেকণ্ডও সময় িদই িন, “ওই তোেগা অিফসারের ডাক?” আমার চীৎকার এত জোের শোনা গেেলা যেন িনেজরই কান ফেেট যাচ্ছে। ওরা দাঁিড়েয় িক যেন বলেত যােব, “কােমর পোলােগা লেগ কথা কইনা, যা তোেগা বােপের ডাক!” নীরব, প্রায় শণ্য ূ এয়ারেপার্টে আমার চেঁচােমিচ কুৎিসত শোনাচ্ছে, এসব িক করিছ আিম? িকন্তু তখন আিম রােগ অন্ধ। আমার দেেশ আমােক ঢুকেত দেেবনা? কত বড় সাহস? অেনকখািন পেছেন আেরকটা কাঁেচর দেয়াল পেিরেয় কাষ্টমস্ এিরয়ায় খেয়রী রংেয়র স্যূ ট পরা মোটােসাটা মধ্যবেয়সী এক লোক তািকেয় আেছ আমার িদেক। পােশর পিলশ ু আমােক শািশেয় িকছু বেল তার ‘স্যার’কে ডাকেত গেেলা, জািননা িক বেলিছেলা। হয়েতা বোঝােত চেেয়েয় ওেদর ‘স্যার’ আসেল আমার খবর আেছ। চেয়ােরর কােছ ফেেল আসা ব্যাগগুেলা এেন কাউন্টােরর সামেন দাঁিড়েয় আিছ। একটু পর একজন িসিনয়র অিফসার এেলন। চেহারা দেেখ বোঝা যা উনােক ঘমু থেেক তোলা হেয়েছ। চোেখমেখু িবরক্তি, “আপনার নািক পাসেপার্ট নেই?” অিফসার জানেত চাইেলন। আিম জবাব দেবার আেগ পিলশ ু ষ্টাফ বেল, “স্যার হ্যায় আমােগর িচক্কুর পাড়েস, গাইল….” একজন িমনিমন কের কম্প্লেইন শুরু করেলা আমার নােম। “চুপ কর তুিম, ওনােক বলেত দাও।” ওেক থািমেয় অিফসার আমার িদেক তাকােল বললাম, “জ্বী না, আমার পাসেপার্ট নেই।” “হংকং থেেক এেসেছন পাসেপার্ট ছাড়া?” “হংকং থেেক নয়, আিম সাউথ কোিরয়া থেেক এেসিছ, হংকংেয় ট্রানিজট িছেলা। গত বছর িশেপ জেয়ন কির িচটাগাং পোর্ট থেেক।” আমার কথা শুেন অিফসার বলেলন, “আই িস, আপিন মেরীনার। বলেবন না? িসিডিস দেখান িন?” আবার মাথা গরম হল, আমার িসিডিসর কথা অিফসারেক ওরা জানায়িন। অৈধর্য কন্ঠে বললাম, 6


সা গ ের র গ ȩ “অবশ্যই দেিখেয়িছ, যখন িসিডিস দেখালাম ওনারা বলেলন সেটা নািক আমার নাগিরকত্ব প্রমাণ কেরনা। আমােক িডেপার্ট করা হেব। িরটার্ণ বোর্ড!” আবার রাগ উেঠ গেেছ। অিফসারও প্রচণ্ড িবরক্ত হেলন। ওেদর দুজনেক বলেলন, “উনার িসিডিস দেখার পরও তোমরা এ কথা বেলছ? তার উপর এতক্ষন উনােক বিসেয় রেেখছ, আমােক ডােকািন কেন?” আিম অবাক, এরা অিফসারেক খবরই দেয়িন! অথচ বেলিছেলা ওেদর ‘স্যার’ আসেতেছ! যে পিলশ ু আমার িসিডিস দেেখেছ সে আমতা আমতা কের বলেলা, “স্যার হ্যায়. . .” “চুপ কর।” ওেক কথা বাড়ােত না িদেয় অিফসার আমােক ডাকেলন, “আপিন আসুন তো।” অিফসােরর পেছন পেছন আিম ইিমগ্রশন কাউন্টার ক্রস করলাম, আমার িসিডিস পিলশ ু ষ্টাফেক িদেয় ষ্ট্যাম্প িদেত বলেল সে দ্রুত কের িদেলা। অিফসার আমার হােত িসিডিস িদেয় আন্তিরকভােব দুঃখ প্রকাশ করেলন এবং চেল যেেত বলেলন। যাবার সময় শুনেত পাচ্ছিলাম অিফসার দুই পিলশ ু ষ্টাফেক সমােন ঝাড়েছ। িক কেথাপকথন হচ্ছে বোঝা যাচ্ছেনা তেব অিফসােরর উত্তেিজত “নো! নো!” শোনা যাচ্ছে। ল্যােগজ এিরয়া একদম খািল, সুনসান নীরব। কনেভয়ার বেল্টের একপােশ পেড় আেছ আমার ল্যােগজ, ওগুেলা একটা ট্রিলেত তুেল কাষ্টমস্ গ্রীন চ্যােনল পার হবার সময় খেয়রী স্যুট পরা মোটা অিফসার আমােক থামােলা। এয়ারেপার্টের বাইের ভাইয়ােক স্পষ্ট দেখেত পাচ্ছি, এই গভীর রােত কতক্ষন একা একা দাঁিড়েয় আেছ কে জােন? কাষ্টম অিফসারেক বললাম আিম গ্রীন চ্যােনল িদেয় পার হচ্ছি কারন আমার কােছ ট্যাক্সেবল িকছু নেই। আমার ভাবভঙ্গি উনার সুিবধার লাগিন। উিন আমােক চেল যেেত িদেলন। এয়ারেপার্ট থেেক বের হেয় ভাইয়ােক সালাম করেল বেকু জিড়েয় আদর করেলন িঠকই িকন্তু এত দেরী হবার জন্যে িবরক্ত। কারন বললাম, সব শুেন ভাইয়া আমার উপর এমন রাগ করেলা যেন মারেব, এখােন আমার দোষ কোথায়? “তোর দোষ হইেলা তুই একটা বেকুব। এত দেশ িবেদশ ঘরিলু , িমিনমাম কমন সেন্স নাই? ওেদরেক িকছু ডলার িদিলনা কেন? প্রায় িতন ঘন্টা দাঁড়ােয় আিছ!” মহুর্তে আমার সারা শরীের িবদ্যূ ৎ খেেল গেেলা। সত্যি তো! ওরা এত তামাশা কেরেছ টাকার জন্য, অথচ িকছুেতই এই সামান্য িবষয়টা আমার মাথায় আেসিন? আিম একটা গাধা। িবরাট গর্ধভ। 7


সা গ ের র গ ȩ ১ দেেশর মািট খুঁিজ বঙ্গোপসাগেরর বকু িচের িতরিতর কের এিগেয় চলেছ এম.িভ. আল-তাফিসর। সকাল সােড় দশটায় িস.ইউ.এফ.এল জেিট (Chittagong Urea Fertilizer Limited) থেেক িভেয়তনােমর িদেক যাত্রা শুরু। ফুল লোড ইউিরয়া সার িনেয় িভেয়তনাম যাচ্ছি। বাংলােদশী মািলেকর জাহাজ বাংলােদশী পতাকাবাহী হেব এটাই স্বাভািবক ভেেবিছলাম। িচটাগাং পোর্টের জেিটেত জাহােজর পেছেন িবেদশী লাল পতাকা আর নােমর িনেচ ‘ভ্যােলটা’ দেেখ মেন পড়েলা এই জাহােজর মািলক িবিশষ্ট িশল্পপিত আব্দুলব্দু আউয়াল িমন্টু সােহব আেমিরকান িসিটেজন। জাহােজর রেিজষ্ট্রশন চট্টগ্রাম থেেক করেত হব এমন বাধ্যবাধকতা তাঁর নেই। যাই হোক, কার্গো িডসচার্জ শেেষ জাহাজ চেল গেেলা নদীর ওপাের, CUFL জেিটেত। পাশাপািশ দুেটা বড় বড় ইউিরয়া সার কারখানা, কাফেকা (Karnaphuli Fartilizer Co. Ltd.) এবং িস.ইউ.এফ.এল। আমরা িস.ইউ.এফ.এল জেিটেত। এখােন সার প্রস্তুত করা থেেক শুরু কের ব্যািগং তারপর জাহােজ লোিডং সব অেটােমিটক। একদম িনিরিবিলেত মনুষ্যিবহীন এবং সাড়াশব্দ ছাড়া কার্গো লোড হেয়েছ। এেকর পর এক পঞ্চাশ কেিজ ওজেনর প্রিতিট সাদা সাদা ব্যাগ সুশংখল ৃ ভােব বেস যাচ্ছে কার্গো হোল্ডে। ছয়-সাত িদন লেেগিছেলা পাঁচিট হ্যাচ (কার্গো হোল্ড) ফুল লোড হেত। চট্টগ্রােমর পেতঙ্গা থেেক কর্ণফুলী নদীর ওপাের একটা ফ্যাক্টরীর িচমিনর উপর থেেক ফ্ল্যােশর মত সাদা আেলা জ্বলেত-িনভেত দেখা যায় ওটাই িচটাগাং ইউিরয়া সার কারখানা। আেনায়ারা উপেজলা। পেতঙ্গা পেনর নম্বার ঘাট থেেক মটরেবাট বা জিলেবাট িনেয় পার হেত পেনরকুিড় িমিনেটর বেশী লােগ না, আবহাওয়া ভােলা থাকেল সাম্পােনও পার হওয়া যায়। মেরীন একােডমী ঘাট থেেক সময়মত ফেরী পাওয়া গেেল চািফ খেেত খেেত িবনা িটেকেট আরােম পার হওয়া যায়। চােয়র সােথ কিফ মেশােল তােক চািফ বেল। KAFCO আর CUFL পেড়েছ নদীর ওপাের আেনায়ারার বৈরাগ িকংবা গবািদয়া গ্রােম। নদী পেিরেয় সন্ধ্যার পর জেিট থেেক জাহাজ পর্যন্ত হেঁেট যাবার সময় আশপােশর কাটা ধানক্ষেত থেেক নবান্নের িমষ্টি গন্ধ নােক এেল মনটা দুঃেখ ব্যাথাতুর হেয় উেঠিছেলা। কত দেেশই না যােবা, কোথাও িক পােবা আমার দেেশর এমন িমষ্টি নবান্নের গন্ধ? 8


সা গ ের র গ ȩ এর মধ্যে আমার বস্ ছুিট থেেক িফের এেলা, পািকস্তািন রেিডও অিফসার খািলদ জােভদ। তার অধীেন আমরা দুজন ট্রেইিন রেিডও অিফসার, মঞ্জুরঞ্জু ইসলাম এবং আিম। মঞ্জু্ আমার চার মাস আেগ জেয়ন কেরেছ। আিম আর মঞ্জু এক সােথ ঢাকায় হোষ্টেেল থেেক ট্রেিনং কেরিছ। ওেক পেেয় কিলজা বড় হেয় গেেলা। জাহােজর প্রিভশন (খাবার দাবার) িচটাগাং পোর্টে িরিসভ করা হেয়েছ। ক্রু িলষ্ট ফাইনাল। অিফসার, ক্রু, এবং সুপারন্যূ েমরারী িমেল মোট বায়ান্ন জন। একটা জাহােজর জন্য সংখ্যাটা একটু বেশী। সুপারন্যূ েমরারীর সংখ্যা ছয় জন, চীফ ইঞ্জিিনয়ােরর স্ত্রী এবং মেেয়, চীফ অিফসােরর স্ত্রী এবং ছেেল, আর সেেকণ্ড ইঞ্জিিনয়ােরর স্ত্রী এবং ছেেল। ভয় নেই, আমােদর লাইফেবাট ক্যাপািসিট চুয়ান্ন জন। বাংলােদেশর ফেণী জেলার আবদুল আউয়াল িমন্টু সােহব কেনার আগ পর্যন্ত এই জাহাজ আেমিরকানেদর িছেলা, তখন নাম িছেলা অগেডন এক্সপ্লোরার, লাইেবিরয়ার পতাকাবাহী। িমন্টু সােহব নাম এবং রেিজষ্ট্রেশন পাল্টে ফেলেলন, উনার বড় ছেেল তাফিসেরর নােম নাম রাখেলন এম.িভ আল-তাফিসর (Motor Vessel Al-Tafsir), রেিজষ্ট্রশন কেরেছন ভ্যােলটা থেেক, আল-তাফিসর মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ। ১৯৬৬ সােল জাপােনর িশজওকা ু িশিমজু িশপইয়ার্ডে তৈরী এই জাহােজর ধারন ক্ষমতা সাতাশ হাজার মেট্রিক টন। ১৭৬ িমটার (৫৭৭ ফু ট) লম্বা, ২৩ িমটার (৭৬ ফু ট) প্রশস্থ। মেইন ইঞ্জিন জার্মানীর সালজার কোম্পানীর। ছয়িট হ্যাচ আেছ যেখােন কার্গো লোড করা হয়, আেছ ষোলিট ডেিরক যেগুেলা িদেয় কার্গো লোডআনেলাড করা হয়। অেটাম্যািটক লোিডং ব্যাবস্থা থাকায় CUFL জেিটেত ডেিরক ব্যাবহার করেত হয় িন। ধীের ধীের জাহােজ কার্গো ফুল লোড হেল স্বাভািবকভােব ফ্রীেবার্ড কেম গেল। পািন থেেক জাহােজর বিড যতখািন উপের থােক সেটােক বলা হয় ফ্রীেবার্ড। জাহােজর সবাই খবু খশী ু , িভেয়তনাম যাচ্ছি। আল-তাফিসের আঠােরা থেেক বাইশ বছর বয়িস জিনয়র ু অিফসােরর সংখ্যা ষোল জন। এিডশনাল সেেকণ্ড অিফসার মমহাজ ু আহেমদ মচিকু মচিকু হােস আর বেল, আমরা নািবকেদর স্বর্গে যাচ্ছি, সী-ম্যানস্ প্যারাডাইস। শান্ত সাগর, পকুেরর মত টলটেল িমিহ জেল উপর হাল্কা তরঙ্গ। আিম ব্রীেজ, যেখান থেেক জাহাজ নেিভেগট করা হয়। রৌদ্রোজ্জ্বল সুন্দর সকাল। এখােন ওখােন ছিড়েয় িছিটেয় আেছ িফিশং বোট। বাঁেয় দুের পাহাড় পর্বেতর সাির, যেন স্বপ্ন। অেনক দুের একটা কন্টেইনার জাহাজ পশ্চিম িদেক যাচ্ছে। প্রায় নীরব পিরেবশ। ইঞ্জিেনর িমিহ গুঞ্জন ছাড়া আেরা কোন সাড়া শব্দ নেই। নেই কোন প্রকার কাঁপিনু বা দুলিন। ু স্মুদিল স্মু চলেছ জাহাজ। ফুল লোেড বােরা হাজার হর্স পাওয়ােরর আল-তাফিসেরর সর্বোচ্চ গিত ঘন্টায় তের নট বা একুশ িকেলািমটার। 9


সা গ ের র গ ȩ িকন্তু তারেচেয়ও বেশী গিতেত এিগেয় যাচ্ছে জাহাজ কারন স্রোত অনকুূ েল। এখন গিত উিনশ নট বা িতিরশ িকেলািমটার। বাঁ িদেক দুের সবজু পাহােড়র সাির দেেখ মনটা কেমন কেমন করিছেলা। জীবেন প্রথম দেশ ছেেড় যাচ্ছি। দুপরু গিড়েয়েছ সেই কখন, এখন বেলা প্রায় সােড় িতন টা। িট টাইম শেষ িকন্তু আমার চা এখেনা শেষ হয় িন। ব্রীজ থেেক দুঃখী চেহারায় চােয়র কাপ হােত এক দষ্টিৃ েত পাহােড়র িদেক চেেয় আিছ দেেখ পািকস্তানী এিডশনাল সেেকণ্ড অিফসার মমতাজ ু আহেমদ বলেলা, “I can see that you’re missing home?” মমতােজর ু এখন িডউিটেত থাকার কথা না। সেেকণ্ড অিফসার মাসুদ জােভদ এখনকার *অিফসার অফ দ্য ওয়াচ (the OOW) িকন্তু মাসুদ বেচারার পেট নেেম ঘন ঘন বাথরুেম যাচ্ছে। তাই মমতাজ ু প্রক্সি িদচ্ছে। সে কেয়কিদন আেগ িচটাগাং পোর্টে জেয়ন কেরেছ। থার্ড অিফসােরর জায়গায় আেরকজন সেেকণ্ড অিফসারেক ‘এিডশনাল’ িহেসেব আনা হল কেন? এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যেেহতু এটা অেনক বড় বাল্ক ক্যািরয়ার িশপ সেজন্যই বাড়িত একজন অিভজ্ঞ অিফসারেক আনা। আসেলও তাই, ব্রীজ থেেক সামেন তাকােল িবশাল লম্বা ডেক। বে অফ বেঙ্গেলর শান্ত পািনেক িনর্দয়ভােব কেেট দুপােশ ঢেউেয়র ত্রিভূ জ বািনেয় প্রায় নীরেব এিগেয় যাচ্ছে বাংলােদশী ব্যাক্তি-মািলকানাধীন সবেচেয় বড় জাহাজ এম.িভ আল-তাফিসর। বললাম, “আমােদর দেেশর পহাড়গুেলা। দেেখ িনচ্ছি, আবার কেব িফরেবা কে জােন?” ইংেরজীেত কেথাপকথন চলেছ। মমতাজ ু বলেলা, “তোমােদর দেেশর পাহাড়?” এই প্রশ্নের জবােব ছোটখাট জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা িদেয় িদলাম, “হ্যাঁ। আমােদর িচটাগং, কক্সস্ বাজার, টেকনােফর িহলস এ্যাণ্ড মাউন্টেনস। আমােদর িবেগষ্ট সী-পোর্ট িচটাগং, আর তার সাউেথ কক্সস্ বাজার, তারও সাউেথ টেকনাফ।” গলা পিরষ্কার কের ভরাট গলায় মমতাজ ু বলেলা, “কোনটা িচটাগং, কোনটা কক্সস্ বাজার আর কোনটা টেকনাফ সেটা আিম জািন। এখন তুিম যা দেখেছা সেটা িময়ানমার।” একথা বেল ব্রীেজর পেছেন চার্টরুেম এেস চার্টের কোর্স লাইেনর উপর আঙ্গুেল দুই টোকা িদেয় জাহােজর এখনকার পিজশন দেিখেয় আবার ব্রীেজ িফের গেেলা। হতবাক হেয় চার্টের িদেক চেেয় আিছ, িবশ্বাস করেত পারিছনা ওই সবজু পাহাড়গুেলা বাংলােদেশর নয়। 1 0 * অিফসার অফ দ্য ওয়াচ, নেিভেগশেনর সময় জাহােজর দািয়ত্বরত অিফসার।


সা গ ের র গ ȩ দুেটা রাডার (RAdio Detection And Ranging) জাহােজ। একটা আেমিরকান রেিথয়ন আেরকটা আর.িস.এ ব্র্যাণ্ডের আরপা (Automatic RADAR Plotting Aid)। এই ঝকঝেক িদেনর আেলায় খািল চোেখ ওয়াচিকিপংেয়র সময় মমতাজ ু আরপা অন রেেখেছ কারন বাঁ িদেক বার্মিজ কোষ্ট, ডান িদেক পেছেন সেইন্ট মার্টিনস আর খািনক সামেন (দক্ষিেন) আন্দামান এণ্ড িনেকাবার আইল্যাণ্ডস। এছাড়াও জাহােজর আেশপােশ আেছ প্রচুর িফিশং বোট তাই বাড়িত সাবধানতা। টেিবেল ঝু ঁেক চার্ট দেখিছ। পেন্সিেল আঁকা কোর্স লাইন উপর থেেক নীেচ SSE বা দক্ষিনদক্ষিন-পর্ব ূ িদেক (South South East) চেল গেেছ। কোর্স লাইেনর বাঁেয় খোলা বঙ্গোপসাগর, ডান িদেক অর্থাৎ পর্ব ূ িদেক বার্মার আরাকান রাজ্য যার রাজধানী আিকয়াব। ১৯৮৯ সােল বার্মার সামিরক জান্তা রাষ্ট্রের নাম পাল্টে িময়ানমার রেেখেছ। রাজধানী রেঙ্গুন এখন ইয়াংগন। আরাকান হেয়েছ রাখাইন, আরাকােনর রাজধানী আিকয়াব হেয় গেেছ িসটওেয়। ইউনাইেটড নেশনস্ নাম পিরবর্তেন বার্মােক বাধা দেয়িন িকন্তু বেটন ৃ আর আেমিরকা তখনও বার্মার নতুন নামকরন মেেন নেয় িন। নেিভেগশেনর জন্য আমরা বিটশৃ 1 1 চার্টের উপর ঝু ঁেক পাগেলর মত দেেশর মািট খু ঁিজ


সা গ ের র গ ȩ এ্যাডিমরালিট চার্ট ব্যাবহার কির। সুতরাং বিটশেদর ৃ দেওয়া পেরােনা ু নামগুেলাই ছাপােনা আেছ চার্টে। মনেযাগ িদেয় চার্টের ভেতর দেেশর মািট খু ঁজিছ। আিকয়াব থেেক একটু উপের সাগেরর কূল ঘেঁেষ মা িগই চং, তারও উপের থোয়াইন চং, আেরা উপের আনক িমনলৎু (Anauk Myinhlut)। হঠাৎ বকটা ু ধ্বক কের উঠেলা। যেন একটা হার্টিবট িমস করলাম। আনক িমনলৎু থেেক পশ্চিেম সাগেরর বেকু আমােদর সেইন্ট মার্টিনস্ আর ছেঁড়া দ্বীপ, তার একটু উপের বাংলােদেশর সর্বদক্ষিেন টেকনােফর দক্ষিনপাড়া। চার্টের উপর যেন জ্বল জ্বল করেছ আমার দেেশর মািট। খবু অস্থির লাগেছ, আবার জাহােজর অবস্থান দেখলাম। সেন্ট মার্টিনস ৩৫ মাইল আর দক্ষিনপাড়া ৪৫ মাইল পেছেন ফেেল এেসিছ (১ নিটক্যাল মাইল = ১.৮৬ িক.িম.)। িভিজিবিলিট ক্লীয়ার থাকেল খািল চোেখ পেনর বা িবশ মাইেলর বেশী দেখা যায় না। তবওু ছুেট গেলাম বাইের, পোর্ট সাইেডর উইং থেেক পেছনপােন চেেয় তিষেতর ৃ মত খু ঁজ কোন ল্যাণ্ড দেখায় িক না। ব্রীজ থেেক বাইেনাকুলার এেনও খু ঁজলাম, জানতাম দেখেবানা তবওু অেনকক্ষন খু ঁেজিছ, পাইিন। সেইন্ট মার্টিনস্ আর ছেঁড়া দ্বীপ দষ্টিৃ সীমানার অেনক দুের চেল গেেছ। শান্ত বঙ্গোপসাগেরর নীলেচ সবজু জেলর উপর জাহােজর দীর্ঘ ট্রেইল, িকছু িফিশং বোট ছাড়া আর িকছু নেই। ইিতউিত কেয়কটা ডলিফন ডাইভ িদেত িদেত আসেছ, যেন সাগের কাঁথা সেলাই করেছ। দুের ডান িদেক সবজু পাহােড়র সাির যেগুেলােক ভুল কের পার্বত্য চট্টগ্রােমর পাহাড় ভেেবিছলাম আর মেন মেন বলিছলাম, “আবার দেখা হেব।” একিট বােরর জন্যেও মেন হয় িন ওটা বাংলােদশ নয়। হঠাৎ অদ্ভুত এক শন্যূ তা গ্রাস করেলা আমায়। এতক্ষন দেশ ভেেব আেবেগ আপ্লুতপ্লু হচ্ছিলাম, অথচ এখন জানলাম আমার বাংলােদশ অেনক আেগ ছেেড় এেসিছ। িনশ্বাস গেেলা, কন্ঠ রোধ হেয় এেলা, তারপর হেঁচিক। আশপাশ, চািরিদক সব ঘোলােট। আিম কাঁদিছ। 1 2 Compass Rose


সা গ ের র গ ȩ ২ নিল আর িসিডিস CDC (Continuous Discharge Certificate) িশেপ চাকরী করেত হেল একটা িজিনষ লােগ। তার নাম িসিডিস। আেগ জানা িছেলানা। যখন জানলাম তখন শুিন অন্য কথা, এেক নািক ‘নিল’ বেল। পের জানলাম আসেল িসিডিস আর নিল আলাদা িজিনষ। আেরা পের জানলাম এরা আলাদা নয়, একই িজিনষ তেব িভন্ন ক্ষেত্রে িভন্ন নাম। মেন হচ্ছে পাগল হেয় যােবা। যার নাম জীবেন শুিনিন, দেিখিন তারই আবার এত রকম নাম, দুিনয়ার িকচ্ছা-কািহনী। কেমন লােগ? পের শুনলাম িসিডিস বা কন্টিিনউয়াস িডসচার্জ সার্টিিফেকট হচ্ছে জাহােজর অিফসারেদর জন্য ইস্যূ করা বই যােক মেিরনারেদর পাসেপার্টও বলা যায়। মলতঃ ু এেত অিফসােরর প্রিতিট ভেয়জ রেকর্ড করা হয় যােক আমরা বিল সী-টাইম। ক্যািরয়ােরর শুরুেত এই সী- টাইম অত্যন্ত গুরুত্বপর্ন ূ । নিল বলেত যা বোঝায় সেটাও হুবহু িসিডিস’র মত তেব ওটা ইস্যূ করা হয় যারা অিফসার নয় তােদর। ব্রিিটশ ইংেরজীেত বেল রেিটং, জাহাজীেদর ভাষায় তারা হেলন ‘ক্রু’ আঞ্চিলক ভাষায় কুরু। হুবহু িসিডর মত দেখেত এই িবেশষ বইেতও ক্রুেদর সার্ভিস বা সী-টাইম রেকর্ড করা হয় এই বইও ক্রু দের জন্য সমান গুরুত্বপর্ন ূ । প্রশ্ন হল, তাহেল ক্রু দের িসিডিসর নাম নিল কেন? আেগ ক্রু দের বই িছেলানা। িছেলা এক পষ্ঠা ৃ র একটা সার্টিিফেকট যেখােন সার্ভিস রেকর্ড কের ষ্ট্যাম্প মারা হত। ওই কাগজ যােত নষ্ট না হয় সেজন্য ক্রু রা কাগজিট রোল কের দুই িদেক বন্ধ করা যায় এরকম একটা শক্ত কাগেজর নল বা পাইেপর মধ্যে রাখেতা িবধায় এর নাম হেয় যায় নিল। অিফসার বা ক্রু যাই হোক, িসিডিস পেেত হেল অেনকগুেলা যোগ্যতা থাকেত হয়। ধরা যাক ইন্টারিমিডেয়ট পরীক্ষায় পাশ করার পর একজন তরুন জাহােজর জিনয়ার ু অিফসার বা অিফসার আণ্ডার ট্রেিনং িহেসেব জেয়ন করেত চায়; সে যিদ ক্যাপ্টেন হেত চায় তাহেল তােক 1 3


সা গ ের র গ ȩ ডেক ক্যােডট (নিটক্যাল) িহেসেব ঢুকেত হেব। অথবা, সে যিদ মেরীন ইঞ্জিিনয়ার হেত চায় তাহেল তােক ইঞ্জিন ক্যােডট িহেসেব ঢুকেত হেব। চাইেলই তো আর হেব না, এর জন্য িনর্দিষ্ট িনয়ম মেেন এগুেত হেব। এতসব িনয়ম কানুন িনেয় আপাততঃ কথা বাড়ালাম না। তেব জাহােজর অিফসার বা ক্রু িহেসেব চাকরী পেেল একজন ব্যক্তি সরকারী িশিপং অিফেস িসিডিস’র জন্য আেবদন করেত পাের। িশিপং অিফস হচ্ছে চট্রগ্রােম, আগ্রাবাদ িসিজও িবল্ডিংএ (Chittagong Govt. Offices)। তখন জাহােজ ডেক িকংবা ইঞ্জিন ক্যােডট িহেসেব যোগ দেবার ন্যূ ণতম যোগ্যতা এইচ এস িস (সােয়ন্স) কমপক্ষে ২য় িবভােগ পাশ - িফিজক্স, ক্যািমষ্ট্রি এবং অংেক ৬০%, ইংেরজীেত ৫০% নম্বর, কমপক্ষে। এখন িক িনয়ম জািননা। তাছাড়া ISC বা সােয়ন্স এবং ম্যাথ সহ A লেেভল(স্) পাশ করার পর বাংলােদশ মেরীন একােডমী বা প্রচুর প্রাইেভট মেরীন িশক্ষা প্রিতষ্ঠান থেেক পাশ কেরও জাহােজ ক্যােডট িহেসেব চাকুরীর আেবদন করা যায়। মলতঃ ু জাহােজ দুই ধরেনর পিজশন আেছ। অিফসারস্ এবং রেিটংস্ (ক্রু)। িসিনয়র অিফসােররা বৌ-বাচ্চা সহ জেয়ন করেত পাের। ক্রু িলষ্টে বৌ-বাচ্চােদর পদবী হল সুপারন্যূ েমরারী। ক্যাপ্টেন, চীফ ইঞ্জিিনয়ার, চীফ অিফসার, সেেকণ্ড ইঞ্জিিনয়ার এরা িসিনয়র, সাধারনতঃ ওনারাই ফ্যািমিল িনেয় ভেয়জ কেরন। তেব বৌ-বাচ্চা িনেয় জাহােজ উঠেত পারেব িক পারেবনা সেটা িনর্ভর কের জাহােজর লাইফেবাট ক্যাপািসিটর উপর। কোন কারেন যিদ জাহাজ ডু েব যাবার ভয় থােক তখন সবাই িমেল লাইফ বোেট উেঠ জীবন রক্ষা কের। ধরা যাক লাইফেবাট ক্যাপািসিট হচ্ছে ৪০, এখন অিফসার, ক্রু সব িমেল যিদ ৪০ জেনর কম হয় তাহেল সুপারন্যূ েমরারী িনেত সমস্যা নেই। তারপরও কথা থােক, জাহােজর মািলক (বা কোম্পানী) এ্যালাউ করেত হেব। সমদ্রু গামী জাহাজগুেলােত এক বা একািধক লাইফ বোট থাকা বাধ্যতামলক। ু িমিনমাম সেইফ ম্যািনংঃ- একিট সমদ্রু গামী জাহাজ পিরচালনার জন্য কমপক্ষে কত জন অিফসার এবং রেিটংস্ িনেত হেব তার একটা আন্তর্জািতক নীিতমালা আেছ। যেমন, ডেক িডপার্টেমন্ট:- ক্যাপ্টেন, চীফ অিফসার, দুই জন ওয়াচিকিপং অিফসার, িতন জন ওয়াচিকিপং রেিটং (ক্রু) ইঞ্জিন িডপার্টেমন্ট:- চীফ ইঞ্জিিনয়ার, সেেকণ্ড ইঞ্জিিনয়ার, দুই জন অিফসার ইন-চার্জ ইঞ্জিন ওয়াচিকিপংেয়র জন্য, িতন জন ইঞ্জিন ওয়াচিকিপং রেিটং (ক্রু) রেিডও অপােরিটং এণ্ড ওয়াচিকিপং:- রেিডও অিফসার। (২০০৫ থেেক রেিডও অিফসার পদবী পেরাপ ু িরু উেঠ যায়।) 1 4


সা গ ের র গ ȩ প্রিভশন বা িভকচুয়াল িডপার্টেমন্ট (খাবারদাবার, সাধারনতঃ রেিডও অিফসার এই িডপার্টেমন্টের ইন-চার্জ হেয় থােক):- এখােন সবাই রেিটং। চীফ কুক, সেেকণ্ড কুক, দুই জন ষ্ট্যূ য়ার্ড ইত্যািদ। উপের যে’কয়িট পদবী লেখা আেছ তত জন অিফসার এবং রেিটংস্ জাহােজ থাকেত হেব, এটাই িমিনমাম সেইফ ম্যািনং। প্রেয়াজেন এর বেশী নেওয়া যেেত পাের তেব কোনভােবই কম নয়। (এটা একটা উদাহরণ মাত্র। জাহােজর আয়তন, ইঞ্জিন ইত্যািদর উপর িভত্তি কের প্রকৃ ত সংখ্যা িনর্ভর কের।) মেরীন এ্যােকেডমী থেেক পাশ করার পর সরাসির জাহােজ ক্যােডট (ডেক িকংবা ইঞ্জিন) িহেসেব জেয়ন করা যায়। ক্যােডটরা হচ্ছে অিফসারস্ আণ্ডার ট্রেিনং। িনয়ম মত সী-টাইম করার পর কোর্স-পরীক্ষা ইত্যািদ িদেয় ধীের ধীের থার্ড অিফসার, সেেকণ্ড অিফসার, চীফ অিফসার এবং ক্যাপ্টেন হেত পাের। ইঞ্জিিনয়াররাও এভােব ক্রেম ফোর্থ, থার্ড, সেেকণ্ড এবং চীফ ইঞ্জিিনয়ার হয়। এছাড়া ইেলক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিিনয়ার এবং রেিডও অিফসােররা স্ব স্ব ক্ষেত্রে ট্রেিনং ইত্যািদ িডগ্রী িনেয় জাহােজ জেয়ন করেত পাের। সব ক্যােডট মেরীন এ্যােডমী থেেক পাশ করেত হেব এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। জাহােজ কোম্পানী অর্থাৎ মািলকপক্ষ সরাসির ক্যােডট িনেয়াগ িদেত পাের, ডােইেরক্ট এন্ট্রি ক্যাটাগিরেত। জাহােজ ক্যােডট িহেসেব কাজ করেত গেেল কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যিমক (িবজ্ঞান) পাশ হেত হেব। সত্যি কথা বলেত, জাহেজর মািলক (বা কোম্পানী) যােক খশী ু তােক চাকরী িদেত পাের। বর্তমােন িনয়ম পিরবর্তন হেয়েছ িক না জািননা। ক্রু রা জাহােজ কাজ করেত হেল আেগ থেেক িকছু ট্রেিনং িদেয় সার্টিিফেকট িনেত হয়। ডেক িডপার্টেমন্টে সােরং (Bosun), সুকািন (Able Seaman বা AB), কোয়ার্টার মাষ্টার, মাষ্টারএট-আর্মস, ওেয়ল্ডার, কার্পেন্টার বা জেয়নার; ইঞ্জিন িডপার্টেমন্টে ফায়ারম্যান, ওেয়লার (বা গ্রীজার), িফটার, প্লাম্বার, ওয়াইপার ইত্যািদ। আেছ চীফ কুক, সেেকণ্ড কুক, গ্যালী (জাহােজর রান্নাঘর) এ্যািসষ্ট্যান্ট, মেস বয়, ষ্ট্যূ য়ার্ড, ইউিটিলিট হ্যাণ্ড ইত্যািদ। সে আমেল সীম্যানস্ হোষ্টেল িছেলা, এখন ট্রেিনং সেন্টার অেনক বেেড়েছ। ইন্টারিমিডেয়ট পরীক্ষা দেবার পর আিমও একটা প্রাইেভট িশিপং কোম্পানীেত ডেক ক্যােডট িহেসেব জেয়ন করার আেবদন জািনেয়িছলাম। ওটা ফেণীর নামকরা িশল্পপিত জনাব আব্দুলব্দু 1 5


সা গ ের র গ ȩ আউয়াল িমন্টু সােহেবর, তখন বাংলােদশী প্রাইেভট িশিপং কোম্পানীগুেলার মধ্যে িমন্টু সােহেবর কোম্পানীেত জাহােজর সংখ্যা বেশী িছেলা। আমার মামা জনাব আকবর হায়দার িকরন সাংবািদকতার পাশাপািশ িমন্টু সােহেবর অিফেস কাজ করেতন, সেই সুবােদ সেখােন আেবদন করা। কোম্পানী থেেক িকছুিদন পর উত্তর এেলা এ মহুর্তে ক্যােডট পেদ ভ্যােকন্সী নেই তেব রেিডও অিফসার পেদ ভ্যােকন্সী আেছ। তােদর একটা প্রোগ্রাম আেছ যেখােন রেিডও অিফসারেদর ট্রেিনং দেওয়া হেব। রেিডও অিফসারস্ কোর্স কম্প্লিট করার পর সারসির এিসষ্ট্যান্ট রেিডও অিফসার িহেসেব কোম্পানীর জাহােজ িনেয়াগ পােব। জেয়ন করার পর ছয় মাস প্রিভশন িপিরয়ড শেষ হেল ফুল-ফ্লেজড্ রেিডও অিফসার। বেতন ভােলা তেব শর্ত দুেটা, কোর্স-িফ িনেজেক িদেত হেব এবং িনজ দািয়ত্বে পরীক্ষায় পাশ করেত হেব। পাশ করার পর যে সার্টিিফেকট পাওয়া যােব তার নাম এম.আর.িস.ও.িজ (Marine Radio Communication Operato’s General)। এই সার্টিিফেকট ইস্যূ কের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলােদেশ সরকােরর ডাক ও টেিলেযাগােযাগ িবভাগ। িক সব গুরু গম্ভীর কথাবার্তা, তার মধ্যে ইংেরজীও আেছ। িকছু বিঝিন ু , সব আমার মাথার উপর িদেয় চেল গেেলা। একিদন ফেণীর মিহপাল থেেক যাত্রীেসবা বােস চেেপ ঢাকা চেল গেলাম। িকভােব যে িক হেয় গেেলা। ঢাকায় ৪২ আমানত মঞ্জিল, পরানা ু পল্টেন আব্দুলব্দু আউয়াল িমন্টু সােহেবর অিফস থেেক আলাদা আলাদা বেবী ট্যাক্সী (তখন িস.এন.িজ ছেলানা) িনেয় আমরা ঊিনশ জন গেলাম তেজগাঁেয়র টেিলকম ট্রেিনং সেন্টার সংক্ষেেপ টেিলেসন্টাের। এখনও মেন আেছ সেিদন ঝুম বষ্টিৃ হচ্ছিেলা, তেজগাঁ িশল্প এলাকার গভীের হঠাৎ এত িনিরিবিল যায়গা দেেখ গা ছম ছম করেছ। জাহােজ জেয়ন কেরিছলাম ট্রেইিন রেিডও অিফসার িহেসেব। জেয়ন করার পর ছয় মাস প্রিভশন িপিরয়ড শেষ হেল ফুল-ফ্লেজড্ রেিডও অিফসার। রেিডও অিফসার হেত হেল সােয়ন্স গ্রুেপ এইচ.এস.িস পাশ কের এম.আর.িস.ও.িজ (Marine Radio Communication Operato’s General) সার্টিিফেকট িনেত হয়। সার্টিিফেকট আনেত গেিছলাম ঢাকা ইস্কাটন গার্ডেেনর বাংলােদশ টেিলেযাগােযাগ ভবন থেেক। সেই সার্টিিফেকট িনেত হেল কেয়কিট িবষেয় প্রচুর পড়ােশানা করেত হয়, আমরাও পেড়িছ:- ১. ইেলক্ট্রিিসিট এণ্ড ম্যাগেনিটজম ২. মেরীন রেিডও এণ্ড ইেলক্ট্রিনক্স ৩. মেরীন রেিডও রেগুেলশনস (International Maritime Organisation) ৪. সেইফিট অফ লাইফ এট সী ৫. মেরীন স্যােটলাইট কিমউিনেকশন িসষ্টেমস্ 1 6


সা গ ের র গ ȩ ৬. গ্লোবাল মেিরটাইম িডসট্রেস এণ্ড সেইফিট িসষ্টেম (GMDSS) ৭. রেিডও টেিলেফািন ৮ ওয়্যারেলস টেিলগ্রািফ এবং মোর্স কোড টানা সোয়া এক বছেরর কোর্স কেরিছ তেজগাঁেয়র টেিলেসন্টাের। কোর্স কপ্লিট করেত িগেয় লাল সুেতা বের হেয় গেেছ। প্রত্যেকটা িবষয় পড়েত আর িশখেত িগেয় গলদঘর্ম অবস্থা। তার উপর আেরক ঝােমলা ১০০ তে ৫০এর কম পেেল ফেল। সবেচেয় ভহাবহ িছেলা মোর্স কোড। মোর্স কোেড মেেসজ সেণ্ডিং এণ্ড িরিসিভং, ১০০েত ৯৮ এর কম পেেল ফেল। মেন পড়েল এখনও িশউের উিঠ। যেেহতু মোর্স কোড হচ্ছে রেিডও অিফসারেদর ব্রেড এণ্ড বাটার সুতরাং এটা পাশ করেত হেল কোন ভুল করা চলেবনা। তেব জীবেনর একটা িবেশষ অধ্যায় িছেলা তেজগাঁ িশল্প এলাকার টেিলেসন্টােরর হোষ্টেল জীবন। ১৯৯০, ১৯৯১ এবং পের আবার ক্রাশ প্রোগ্রােমর জন্য ১৯৯২ সােলর শুরুর িদেক অল্প িকছু িদন। টক-ঝাল-িমষ্টি, সব িমিলেয় মধরু অিভজ্ঞতা যা মেন হেল খবু ইচ্ছে কের অতীেত িফের যেেত। সার্টিিফেকট আনেত হেল কালার িভশন টেষ্টে পাশ করেত হেব। সেই পরীক্ষা নেওয়া হয় মিতিঝেল, ডাইেরক্টর জেনােরল অফ িশিপং (DG, Shipping) এর অিফেস। তার জন্য িদেনর পর িদন িডিজ িশিপংেয় ধর্ণা িদেয়িছ আমরা িতনজন। আিম আর আমার দুই কোর্সেমট একরাম এবং রুেবল। সারািদন বেস বেস অেপক্ষা করেত করেত চা দোকানীেদর সােথও খািতর হল যারা িকনা বািকেত চা িদেতা। িডিজ িশিপং অিফেসর দুই িপয়ন ‘মান্নান আর রাজ্জাক’ িমেল অিফস িবল্ডিংএর িসঁিড়র তলায় িবিড়র দোকান িদেয়েছ, যেখােন চা- িবস্কিটও পাওয়া যায়। মানরাজ িট ষ্টল। িদেনর পর িদন যায়, যথাযথ কর্মকর্তার পরীক্ষা নেবার সময় নেই। আমরাও প্রিতিদন সকােল যাই িবকােল িফির আর বািকেত মানরােজর দোকােন চা খাই। শেষেমষ এেলা সেই মােহন্দ্রক্ষন, যথাযথ কর্মকর্তা আমােদর কালারিভশন টেষ্ট িনেলন। কােলা অন্ধকার রুেম িকছুক্ষন পর পর এলইিডর মত ছোট িবন্দুেত সাদা, সবজু , লাল বািত জ্বলেব। পিরক্ষার্থী সিঠকভােব জবাব িদেত পারেল পাশ। িবষয়টা অেনেকর কােছ হাল্কা মেন হেত পাের িকন্তু মেরীন, এয়ারেফার্স-সহ অেনক জব কালার ব্লাইণ্ডেদর জন্য নয়। রং চেনা অত্যন্ত জরুরী, এর সােথ জীবনরক্ষার িবষয় জিড়ত। যাই হোক, এেককজেনর পরীক্ষা িনেত দশ িমিনটও লাগেলানা। টেষ্ট শেষ কের সার্টিিফেকট হােত পাবার মেন হল বকু থেেক পাথর নেেম গেেছ। সার্টিিফেকট পাবার পর িসিডিস পেেত সমস্যা হেবনা। 1 7


সা গ ের র গ ȩ ৩ পুিলশ সুপার এবং পুিলশ সুপার িসিডিসর কথা বলেত িগেয় কত িক বেল ফেললাম। িসিডিসর জন্য এ্যাপ্লাই করেত হয় িচটাগাং িশিপং অিফেস যােক সবাই িসিজও িবল্ডিং নােম চেেন। সেখােন িগেয় এ্যাপ্লিেকশন ফরেমর সােথ আমার যাবতীয় ট্রেিনং কম্প্লেশন সার্টিিফেকট, জাহােজর জেয়িনং লেটার, কালার িভশন টেষ্ট িরেপার্ট ইত্যািদ দেবার পর আেরা দুেটা কাজ ধিরেয় িদেলা, মেিডক্যাল িফটেনস আর পিলশ ু ভেিরিফেকশন। িসিজও িবল্ডিংওয়ালােদর পছন্দের ডায়াগনষ্টিক সেন্টাের ব্লাড টেষ্ট এক্স-রে ইত্যািদ নাচেত নাচেত কের ফেললাম িকন্তু ফ্যাকড়া বাধেলা পিলশ ু ভেিরিফেকশন করেত িগেয়। সামান্য ধারনাও নেই িকভােব পিলশ ু ভেিরিফেকশন করােত হয়। পরিদন সকালেবলা হন হন কের হেঁেট আবার িসিজও িবল্ডিংেয় িগেয় িসিডিস সেকশােন ঢুেক একজেনর কােছ জানেত চাইলাম পিলশ ু ভেিরিফেকশন কেমেন কের? অিফসরুেম যত জন িছেলা সবাই বাকরূদ্ধ হেয় আমার িদেক অবাক নয়েন তািকেয় িছেলা। একজেনর দয়া হল, িতিন বলেলন যেখােন থািক সেখানকার পিলশ ু ষ্টেশেন গেেলই হেব, ওরা ভেিরিফেকশন কের দেেব। দয়া কের এটাও মেন কিরেয় িদেলন িশিপং অিফেসর খািক খােম ভরা িচিঠ যেন তােদর দেখাই। আগ্রাবাদ থেেক টেম্পু ধের সোজা িচটাগাং রেল ষ্টেশেন, সকাল দশটার পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ধের সোয়া এক ঘন্টায় ফেণী। ফেণী ষ্টেশন থেেক হন হন কের হেঁেট রাজািঝর দীিঘর পশ্চিম পাড়ে পিলশ ু সুপােরর অিফেসর সামেন দাঁড়ােত টের পেলাম প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত আিম, দুপরু বােরাটা বােজিন তখনও। সকাল থেেক সিলড িকছু না খাওয়ােত এমন হেয়েছ। বাসা কােছই, আবার হন হন কের হাঁটেত হাঁটেত ট্রাংক রোড বড় মসিজেদর িবপরীেত আমােদর বাসায় চেল আসলাম। খেেয় দেেয় দেরী না কের সােড় বােরাটার মধ্যে আবার চেল এলাম পিলশ ু সুপােরর অিফেস। সুনসান নীরব পিরেবশ দেেখ িবশ্বাস করেত কষ্ট হয় ব্যাস্ততম ট্রাংক রোেডর ‘সূরত মহল’ িসেনমা হেলর িবপরীেত, অর্থাৎ পবূ পােশর দোকান গুেলার পেছেন এই অিফস। রুেমর বাইের একপােশ পিলশ ু সুপােরর নেমপ্লেট, নাম মেন নেই। উঁিক িদেয় দেিখ অত্যন্ত পিরষ্কার সুন্দর অিফস, 1 8


সা গ ের র গ ȩ ডেস্কের পেছেন ইউিনফর্ম পরা ফর্সা চেহারার অিফসার। উনার মেখাম ু িখু আেরকজন সাফাির স্যুট পরা ভদ্রেলােকর পেছন িদক দেখেত পাচ্ছি। অিফেসর িসিলংেয়র মাঝ বরাবর স্লো স্পীেড ফ্যান ঘরেছ। ু অিফসােরর পেছেন মাথা বরাবর উপের বড় ফ্রেেম বাঁধােনা খােলদা িজয়ার ছিবেত চোখ আটেক গেেলা। সবখােন তো এরশােদর ছিব থােক! হঠাৎ মেন পড়েলা গত বছর ইেলকশন হেয়িছেলা, তারপর থেেক খােলদা িজয়া প্রধানমন্ত্রী। এর আেগ প্রধানমন্ত্রী বেল িকছু িছেলা না, প্রেিসেডন্ট িছেলা। নয় বছর এরশাদ প্রেিসেডন্ট থাকার পর গিদ ছাড়েত বাধ্য হল। তারপর জেেল গেেলা। “এ্যাই ছেেল বাইের দাঁিড়েয় আছ কেন? ভেতের এেসা।” থতমত খেেয় ভেতের ঢুেক পিলশ ু সুপােরর িদেক তািকেয় িবনেয়র সােথ সালাম িদলাম। সাফাির স্যূ টওয়ালা ভদ্রেলাকেকও সালাম িদলাম। পিলশ ু সুপার আমােক হােতর ইশারায় বসেত বলেলন।পােশর চেয়ার টেেন বসেতই একজন ষ্টাফ ট্রে হােত রুেম ঢুকেলা। ট্রে তে দু কাপ চা আর হাফ প্লেেট ছোট ছোট কের কাটা আেপেলর টুকেরা। পিলশ ু সুপার ষ্টােফর িদেক তািকেয় আেছন, এক কাপ চা মেহমানেক িদেয় আেরক কাপ উনার সামেন রাখেত যােব তখন আমােক দেিখেয় বলেলন, “ওিদেক দাও। আমার জন্য আেরক কাপ আেনা।” িবষ্মিত আিম, “নাও চা খাও।” িক করেবা বঝেত ু না পেের চুপ কের বেস আিছ। কথা নেই বার্তা নেই আমােক চা িদচ্ছে কেন? “আের নাও, খাও খাও।” এবার আেপেল প্লেট এিগেয় িদেলন। আিম এক টুকরা আেপল িনলাম। পিলশ ু সুপার পােশর ভদ্রেলােকর সােথ সৌজন্যমলকু আলাপ করেছন। এিদেক আিম চুক চুক কের চা শেষ কের বেস আিছ। উনার আন্তিরক ব্যাবহাের ভড়েক গেিছ। “এবার বেলা, কেন এেসছ।?” চা শেষ কের চেয়াের িপঠ ঠেিকেয় আরাম কের বেস িজজ্ঞেস করেলন। প্রিমত শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেছন। সারা জীবন পিলশেদর ু আঞ্চিলক টােন কথা বলেত শুেনিছ। গািলও শুেনিছ। “জ্বী পিলশ ু ভেিরিফেকশন করােত এেসিছ।” হেেস ফেলেলন পিলশ ু সুপার, িনঃশব্দ হািস। “পিলশ ু ভেিরেফকশন করােব, তো এখােন এেসেছা কেন?” এবার বোকা বেন গেলাম। এ কেমন কথা, পিলেশর ু কােছইেতা পিলশ ু ভেিরিফেকশন করােত আসা। পােশর সাফাির স্যূ ট পরা ভদ্রেলাক এবার আমার িদেক তাকােলন, মেখু কৌতুেকর হািস। আিমও এক নজর তাকালাম। ক্লীন শেভড্, মাথাভর্তি কাঁচাপাকা কোকড়া চুল, গোঁফও কাঁচাপাকা। আবার পিলশ ু সুপােরর িদেক তািকেয় আিছ, িকছু বলিছনা। িক বলেবা? জীবেন প্রথম আেপল িদেয় চা খেলাম। িমষ্টি আেপল এবং দারুন সুস্বাদু চা, এখন স্বাদ-গন্ধ সব ভুেল পিলশ ু সুপােরর িদেক বোকার মত চেেয় আিছ। “কে বেলেছ তোমােক পিলশ ু ভেিরিফেকশন করেত?” উনার এই প্রশ্নে জােন পািন পেলাম। যাক, এটার উত্তর জািন। 1 9


সা গ ের র গ ȩ “জ্বী, িচটাগাং িশিপং অিফস।” বেল খািক রংেয়র খামটা হােত িনলাম। উিন নড়েলন না, হেলান িদেয় এখেনা বেস আেছন। “িক জন্য পিলশ ু ভেিরিফেকশন লাগেব তোমার?” “পিলশ ু ভেিরিফেকশন ছাড়া আিম িশেপ জেয়ন করেত পারেবা না।” পিলশ ু সুপার হেলান থেেক সামেন ঝু ঁেক বসেলন, কনুই সহ দুহাত টেিবেল। পােশর কাঁচাপাকা গোঁফও আমার িদেক তািকেয় আেছন। “তোমার বয়স কত বাবা?” পিলশ ু সুপােরর এই প্রশ্নে মেন মেন মাথা গরম হল। সবখােনই একই সমস্যা। চেহারা বয়েসর তুলনায় কম দেখায়। ঢাকায় হোষ্টেেল গত দেড় বছর িনয়িমত শেভ কেরও গােল দািড় ওঠােত পািরিন। “নেভম্বের উিনশ হেব।” পিলশ ু সুপার মেহাদেয়র কৌতুহেলর শেষ নেই। আিম কোথায় লেখাপড়া কেরিছ, স্থানীয় িকনা। বাবা, দাদা সব খবর িনেলন। মেট্রিক পরীক্ষায় কোন িডিভশন, ইন্টারিমিডেয়ট পরীক্ষায় কোন িডিভশন সব খু ঁেট খু ঁেট জেেন িনেলন। তারপর মেিরন রেিডও অিফসার্স ট্রেিনং কোর্সের কথা শুেন অবাক হেলন, এটা আেগ শোেনন িন। এবার কাঁচাপাকা গোঁফ মেহাদয় খবু মোলােয়ম স্বের জানেত চাইেলন, “ইন্টাের কোন গ্রুপ িছেলা বাব?ু ” বাবু মােন? আিম িক হাই স্কুেলর ছোকরা? ভেতের ভেতের মরেম মের যাচ্ছি। এিদেক পিলশ ু সুপার হো হো কের হেেস কাঁচাপাকার ভুল শুধের িদেলন, “আের সােয়ন্স ছাড়া িশেপ জেয়ন করেব িকভােব?” “টোটাল মার্ক কত িছেলা?” কাঁচাপাকার পেরর প্রশ্নে আবার ঝােমলায় পড়লাম, িকছুেতই মেন পড়েছনা। “মেন করেত পািছনা, পাঁচশ তেপ্পান্ন বা তেষট্টি হেব হয়েতা।” “মেন পড়েবনা কেন? ফার্ষ্ট িডিভশন পাওিন বেল মন খারাপ কেরিছেলা?” পিলশ ু সুপাের প্রশ্ন “জ্বী না। আসেল, আিম পাশ করেবা সেটা আশা কিরিন।” এবার কপাল কুঁচেক হেেস িদেলন। “িফিজক্স, ক্যািমষ্ট্রি, ম্যাথ, জোেলািজ-বোটািন এগুেলােত মার্কস কেমন িছেলা?” আবার কাঁচাপাকার প্রশ্ন, িবষদ জানেত চায়। ইন্টারিভউ চলেছ নািক? “িফিজক্স-ক্যািমষ্ট্রিেত িসক্সিট পারেসন্ট, জওেলািজ ু -বোটািন আর ম্যাথ সেেকণ্ড পেপাের িফফিট থেেক িসক্সিট পার্সেন্টের মত, আর ম্যাথ ফার্ষ্ট পার্টে কনফার্ম সেেভনিট পার্সেন্ট, ওটা খবু ভােলা হেয়িছেলা।” “তাহেল তো ফার্ষ্ট িডিভশ পাবার কথা।” কাঁচাপাকার এই কথার জবােব হেেস বললাম, “পাশ করারই কথা িছেলানা আমার। ইংেরজী ফার্ষ্ট পেপার খবু খারাপ কেরিছলাম। এক সাব্জেক্টে ফেল করেল টোটাল মার্কস যতই হোক পাশ তো আর হেবনা।” বেল হাসলাম, কাঁচাপাকাও চোখ বড়বড় কের হেেস ফেলেলন। 2 0


সা গ ের র গ ȩ এিদেক পিলশ ু সুপার আমার খািক খাম খেলু পেপারগুেলা পড়েছন। িশিপং অিফস থেেক পিলশ ু ভেিরিফেকশেনর জন্য িচিঠ আর আমার িশিপং কোম্পানীর জেয়িনং বা এ্যাপেয়ন্টেমন্ট লেটার। ইংেরজীেত লেখা জেয়িনং লেটার পেড় কাঁচাপাকার িদেক বািড়েয় িদেয় বলেলন, “এেক দেেখ আমার মন ভােলা হেয় গেেলা। আই.এস.িস পাশ কের ট্রেিনং শেেষ জাহােজ জেয়ন করেব। দেশ-িবেদশ ঘেরু বেড়ােব, ডলার কামােব।” কাঁচাপাকাও জেয়িনং লেটার পেড় আমার িদেক িদেক সপ্রশংস দষ্টিৃ েত তাকােলন। পিলশ ু সুপার কোথাও টেিলেফান কের কুলশািদ িবিনময় শেেষ বলেলন, “আিম একজনেক পাঠাচ্ছি। ওর হােত িকেছ পেপারস আেছ। ভেিরিফেকশন কের হােত হােত ওেক িদেয় িদও কেমন?” ফোন রেেখ আমার হােত খািক খামটা ফেরত িদেয় এখনই এস.িব অিফেস চেল যেেত বলেলন। কাঁচাপাকার কাছ থেেক জেয়িনং লেটারটাও খােম ভের িনেয় উেঠ দাঁড়ােত পিলশ ু সুপার এস.িব অিফেসর িঠকানাও বেল িদেলন। অিম ভাবেতই পািরিন পিলেশর ু স্পেশাল ব্রাঞ্চ সেই একােডমী এিরয়ায়। ছেেলেবলা থেেক দেেখ আসিছ পিলশ ু , কোর্ট, কাছারী সবিকছু দীিঘর পােড়। পিলশ ু সুপার মেহাদয় এবং কাঁচাপাকােক িবনেয়র সােথ সালাম এবং ধন্যবাদ িবদায় িনলাম। যাবার আেগ পিলশ ু সুপার কাঁচাপাকােক দেিখেয় বলেলন, “উিন আমার বন্ধু, িচটাগাংেয়র পিলশ ু সুপার, পোর্টে কোন সমস্যা হেল উনােক বোেলা। গুড লাক উইথ ইেয়ার ক্যািরয়ার।” আবার অবাক হলাম। পিলশ ু সুপােরর অিফস ফেণী রাজিঝর দীিঘর পশ্চিম পােড়। ওখান থেেক বের হেয় উত্তর িদেক হেঁেট ডােন মোড় নেবার সময় দীিঘর উত্তর-পশ্চিম কোেন িডিসর বাংেলা। ১৯৮৪ সােল ফেণী যখন মহকুমা থেেক জেলা হয় তার প্রথম িডিসর নাম হািববরু রহমান। আিম তখন ক্লাস এইেট, িডিসর বড় ছেেল মাসুদ সে বছর ক্লাস এইেট আমােদর সােথ পাইলট হাই স্কুেল ভর্তি হেয়িছেলা। দীিঘর উত্তর-পর্ব ু পাড় থেেক পথ নীচু হেয় নেেম কেলজ রোেড িমেশেছ। ওখান থেেক সহেজ িরকশা পাওয়া যােব। আিম আেরা হেঁেট রেলেগইট পার হেয় িরকশা িনলাম, কোন কারেন রেল গেইট পেড় গেেল কখন গেইট খলেব ু কেউ জােননা। িরকশায় যেেত যেেত ভাবিছ বড় বড় দুই জন পিলশ ু কর্মকর্তা িক অমািয়ক ব্যাবহার করেলন, সন্তােনর মত মায়া করেলন। সারা জীবন পিলশেদর ু রগচটা, কেঠার এসব ভেেব এেসিছ। মেন মেন প্রিতজ্ঞা করলাম বেতন পেেল িবেদশ থেেক ওই পিলশ ু সুপারেদর জন্য সুন্দর উপহার িনেয় আসেবা। অপিরিচত এক ‘ছেমরা’ িহেসেব এত ভােলা ব্যাবহার আিম আশা কিরিন, এর যোগ্যও নই। 2 1


সা গ ের র গ ȩ ৪ পাওয়ারফুল ম্যান, দুঃশ্চিরত্রের তািলকা এবং সীলগালা স্পেশাল ব্রাঞ্চে ঢুেক দেিখ কেউ ইউিনফর্ম পরা নেই। পের বঝলাম ু িডেটকিটভেদর ইউিনফর্ম পরা লােগনা। িডিব ইনসেপক্টর সােহব আমােক পােশর রুেম িনেয় গেেলন। এক ভদ্রেলাক কাজ করিছেলন, সোনালী ফ্রেেমর চশমার পেছেন একেজাড়া চোখ, চোেখর নীচটা ফোলা। গালও ফোলা তেব িতিন মোটা নন, নােকর তলায় গাঢ় কােলা গোঁফ। িতিন উেঠ দাঁড়ােত িডিব ইন্সেপক্টর আমার খািক খামটা তার হােত ধিরেয় িদেয় এক্ষুিন িরেপার্ট লেেখ সীল কের আমােক হােত হােত িদেয় িদেত বলেলন, আর আমােক বসেত বলেলন। ভদ্রেলাক মাথা িনচু কের জ্বী স্যার জ্বী স্যার বেল কাজ শুরু কের িদেলন। আমার সােথ কোন কথা বলেলন না, তাকােলনওনা। টেিবেলর উল্টোিদেক একটা চেয়ার টেেন বসলাম। এই রুমটা িডিব ইন্সেপক্টর সােহেবর রুেমর তুলনায় বড়। মাঝখােন পরপর দুেটা টেিবল বিসেয় লম্বা টেিবল বানােনা হেয়েছ। দুপােশ আটটা, সামেন পেছেন দুেটা মোট দশ টা চেয়ার। বোঝা যাচ্ছে এখােন অেনেক িমেল অিফস কের। রুেমর এক পােশর দেওয়ােল দুেটা জানালা, দুই জানালার মাঝখােন সরকাির ক্যােলণ্ডার ঝুলেছ। জানালা িদেয় আেরকটা বািড়র পেছেনর উঠান, ধানক্ষেত ইত্যািদ পেিরেয় িবলাসী িসেনমা হেলর একটা অংশ দেখা যায়। অন্য পােশর পেরা ু দেয়াল জেড়ু শেলফ্যেখােন সাজােনা প্রচুর ফাইলপত্র, খাতা, বালাম বই, আর সাধারন লম্বা খাতার মত অেনকগুেলা হার্ড কভােরর খাতা। ইন্সেপক্টর সােহেবর রুম সংলগ্ন দরজার পােশর দেয়ােল কেয়কটা ফ্রেম ঝোলােনা সার্টিিফেকট। উল্টোিদেক বাথরুম আর িকেচেনর দরজা। িকেচেনও অেনক ফাইলপত্র রাখা আেছ। মলতঃ ু এটা একটা বাড়ী যেটােক ভাড়া িনেয় আপততঃ িডিব অিফস িহেসেব ব্যাবহার করা হচ্ছে। যে ভদ্রেলােকর কােছ িডিব ইনসেপক্টর আমার খািক ইনেভলপ িদেয়েছ তার নাম জািননা। িডিবর পিলশ ু বা ষ্টাফ হেব হয়েতা। উিন আমার িদেক একবার তাকােলনও না, চোখমেখু একরাশ িবরক্তি। িডমাই সাইেজর একটা সাদা কাগজ িনেয় নাম, িপতার নাম, জন্ম তািরখ, িঠকানা িলখেলন। তারপর উেঠ মোটা একটা বালাম বই িনেয় আসেলন, এমন বই িশিপং 2 2


সা গ ের র গ ȩ অিফেস অেনক দেেখিছ। অিফসার বা রেিটংস দের সী লাইফ, রোষ্টার ইত্যািদর রেকর্ড থােক। বইেয়র উপর লেেবল দেেখ বেকুব হেয় গেলাম, ওখােন বড় বড় কের লেখাঃ- “দুশ্চিরত্রের তািলকা” পষ্ঠা ৃ র পর পষ্ঠা ৃ দুিনয়ার নাম লেখা। সােথ িপতার নাম, জন্ম তািরখ, িঠকানা এবং ঘটনার সংক্ষিপ্ত িববরণ। ভদ্রেলাক আঙ্গুল ধের প্রথম থেেক শুরু কের এেকর পর এক নাম দেখেত দেেখ দ্রুত উপর থেেক নামেছন। এ িক? ওখােন আমার নাম খু ঁজেছ? মন খারাপ হল, আর িক িক তািলকা আেছ কে জােন। এভােব কতক্ষন চলেব? ঘাড় ঘিরেয় ু যেখান থেেক এটা এেনেছ সেিদেক তাকালাম। দেিখ আেরা বেশ কেয়কটা একই সাইেজর বালাম বই আর িচকন চার পাঁচটা বই। এিদেক ভদ্রেলােকর মাথা গরম কেন সেটাও বঝেত ু পারিছনা। কোন মেত আমতা আমতা কের বললাম, “ইেয়… মােন বলিছলাম… আপিন িক সত্যি মেন কেরন ওখােন আমার নাম আেছ?” দুশ্চিরত্রের তািলকার বই দেখালাম। ‘ধ্বপ্’ শব্দে মোটা বালাম বইটা বন্ধ কের ওটার উপর দু হাত রেেখ আমার িদেক রোষকষািয়ত নয়েন তাকােলন, তারপর িচিবেয় িচিবেয় বলেলন, “বহুত পাওয়ারফুল লোক আপেন।” বলার মধ্যে কেমন যেন অসন্তুষ্টি আর ঘণার ৃ িমশ্রন দেখেত পাচ্ছি। আিম বেকুেবর মত চেেয় আিছ তার িদেক। পাওয়ারফুল িকভােব হলাম এটা কোনভােবই বঝেত ু পারিছনা। “এসব আপিন িক বলেছন?” আিম কনিফউজড। আমার প্রিত এত রাগ দেখােনার ব্যাখ্যা িক? তাই আমার কথায়ও খািনক ঝাঁজ িছেলা। “ছয় মাস!” চীৎকার কের বেল হঠাৎ কুঁকেড় গেেলন। তারপর পেছন িফের কেয়ক মহুর্ত িডিব ইনসেপক্টেরর রুেমর িদেক তািকেয় আবার আমার িদেক তািকেয় গলা নািমেয় িচিবেয় িচিচেয় বলেলন, “ছয় মাস থেেক এক বছর লােগ পিলশ ু ভেিরিফেকশন পাইেত। আর আমেন আসেছন ‘হাঁেত হাঁেত’ িরেপার্ট িনেত।” বেল বালাম বই হােত িনেয় শেলেফ রেেখ ওখান থেেক আেরকটা মোটা বালাম বই িনেয় আসেলন, ওটার লেেবল দেেখ রীিতমত শরম পাইলাম, “পেকটমােরর তািলকা” 2 3


সা গ ের র গ ȩ চোেখমেখু রাজ্যের িবরক্তি আর রাগ িনেয় দ্রুত চেক করেলন। আমার নাম পেেলন না। মখু ভেংিচেয় িসেনমায় এিটএম শাসুজ্জামান যেভােব বেল অেনকটা সেভােব বলেলন, “হাঁেত হাঁেত!” তারপর এেককবার উেঠন আর িবিভন্নরকম অপরাধীর তািলকার বালাম বই িনেয় আেসন, পষ্ঠা ৃ র পর পষ্ঠা ৃ চেক কেরন আর এর ফাঁেক ফাঁেক িচিবেয় িচিবেয় আমােক কথা শুিনেয় িদচ্ছেন। একবার বেলন, “িমিনষ্টােরর ছেেলও এত িবরাট সুিবধা পায় না।” আবার বেলন, “দশ হাজার টাকার িবিনমেয়ও ‘হাঁেত হাঁেত’ আমরা পিলশ ু ভেিরিফেকশন িদই না। িচিঠ আেস, আমরা িরেপার্ট বাই পোষ্ট পাঠাইয়া দেই।” (তখন দশ হাজার টাকা প্রায় িতনশত মার্কিন ডলার।) প্রিতবার িতিন ‘হাঁেত হাঁেত’ বলেছন, যেন নাটক িসেনমার ডায়ালগ িদচ্ছেন। তারপর আবার কােজ ডু েব যান। আবার বেলন, “বহুত পাওয়ারফুল গো আফেন… ইনসেপক্টর স্যার পর্যন্ত আমাের অর্ডার দেয়, ‘হাঁেত হাঁেত’ িদয়া িদবা।” চোেরর তািলকা, যানবাহন চুিরর তািলকা, ডাকােতর তািলকা, মাদকদব্য ব্যাবসায়ীর তািলকা, হত্যাকারীর তািলকা, মানব পাচারকািরর তািলকা, ধর্ষেকর তািলকা, হত্যােচষ্টা মামলার আসামী, চোরাচালািন, িবষ্ফোরক ব্যাবহার, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাবাহার, ধারােলা অস্ত্রের ব্যাবহার, পিততাবত্তিৃ , পিততা বািনজ্য, এমন কোন অপরাধ নেই যার তািলকা পরীক্ষা করা বাদ গেেছ। ভদ্রেলাক প্রায় দেড় ঘন্টা ধের কাজ কেরেছন আর সারক্ষন এটা ওটা বেল ভােলামত বিঝেয় ু িদেলন যে বাংলার ইিতহােস আিমই একমাত্র সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি যে িডিব অিফেস বেস িনেজর পিলশ ু ভেিরিফেকশন কিরেয় ‘হাঁেত হাঁেত’ িরেপার্ট িনেয় িফের গেেলন। এক পয়সাও খরচ না কের। ওনার রােগর কারন জেলর মত পিরষ্কার হল। আিম অপরাধীর মত বেস আিছ। চশেমশ ভদ্রেলাক িনেজ িনেজ গজ গজ করেছন সেই সােথ কাজও করেছন। সব পরীক্ষা- িনরীক্ষা শেেষ িতিন িরেপার্ট লেখেলন। শুরুটা িছেলা এরকম, এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাইেতেছ যে. . . 2 4


সা গ ের র গ ȩ গোটা গোটা অক্ষর, বেশ সুন্দর এবং পিরচ্ছন্ন হােতর লেখা মাশা আল্লাহ্। আমার িবরুদ্ধে কোন ‘অিভেযাগ পাওয়া যায় নাই’, ‘কোন প্রকার অপরােধর সিহত সংশ্লিষ্টতা নাই’, এতগুেলা বালাম বই পরীক্ষা কের অপরাধীেদর একটা তািলকাও আমার ‘নাম পাওয়া গেল না’ এরকম একটা িরেপার্ট বািনেয় দুঃেখ যেন কেঁেদ ফেলেবন ভদ্রেলাক। একটা িসগােরট ধরােলন, তারপর িসগােরট টানেত টানেত আবার িনজ হােত লেখা িরেপার্ট পড়েলন, বোঝা যাচ্ছে কোথাও কোন ভুল ভাল নেই, সন্তুষ্ট। তারপর চেয়াের হেলান িদেয় আবার মখু বেজার কের িসগােরট শেষ কের এ্যাশ ট্রে তে িসগােরেটর শেষ অংশ গুঁেজ আমার িদেক তাকােলন। িকছু একটা বলেত িগেয় আবার চুপ, আিম অেপক্ষা করিছ। কতক্ষন তািকেয় থেেক অেনক কষ্টে দাঁড়ােলন। তারপর িরেপার্টটা হােত িনেয় গেেলন িডিব ইনসেপক্টেরর রুেম। কেয়ক মহুর্ত পর কাগজটা হােত িনেয় িফের এেলন। চোরা চোেখ চেেয় দেখলাম িরেপার্টে িসগেনচার এবং রাবার ষ্ট্যাম্প মারা হেয়েছ। বাব্বাহ্, এত তাড়াতািড়? পােশর শেলফ্থেেক একটা খািক খাম (Envelope) িনেলন। িরেপার্ট, খাম টেিবেলর উপর রেেখ িনেজও বসেলন। চেয়াের হেলান িদেয় আেয়শ কের আেরকটা িসগােরট ধরােলন। িরেপার্টটা টেিবেলর উপর উপড়ু কের রাখা, রাবার ষ্ট্যাম্পের কািলর রং কাগজ শুেষ নেয়ায় িরেপার্টের উল্টো পােশও নীলেচ আভা দেখা যাচ্ছে। পােশ গণপ্রজান্ত্রী বাংলােদশ সরকােরর খািক খাম, ওটােত বড় বড় কের প্রিন্ট করা, ‘অিত গোপনীয়।’ আিম চুপচাপ বেস আিছ। ধৈর্য কাহােক বেল, কত প্রকার ও িক িক? উদাহরণসহ মখু স্থ করিছ। িসগােরট শেষ হেল ভদ্রেলাক সুন্দর কের িরেপার্টটা ভাঁজ কের ‘অিত গোপনীয়’ খােম ভের গ্লু িদেয় মখু বন্ধ করেলন। তারপর একটা খেয়রী রংেয়র কািঠেক িসগােরেটর লাইটার িদেয় গিলেয় খােমর মেখু বিসেয় সীলেমাহেরর মত দেখেত িপতেলর একটা িজিনস িদেয় চাপ িদেলন। চাপ খেেয় খেয়রী রংেয়র গিলত পদার্থ গোল হেয় ছিড়েয় সুন্দর শুকেনা গোল একটা সীল হেয় গেেলা, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলােদশ’। আিম অিভভূত। মখু ব্যাজার অথচ পেরা ু কাজটা খবু যত্মের সােথ করেলন ভদ্রেলাক। তারপর অত্যন্ত মল্য ূ বান এবং ‘অিতেগাপনীয়’ সেই খাম আমার হােত িদেয় বলেলন, “এই সীলগালা যিদ ছুেট আপনার এই িরেপার্ট কেউ এক্সেপ্ট করেবনা। সুতরাং সাবধান।” খেয়রী রংেয়র ওই কািঠেক বেল গালা, ওটা গিলেয় কোন িকছুর মখু িপতেলর ব্লক িদেয় বন্ধ করােক বেল সীলগালা। সবসময় শুেনিছ, জীবেন প্রথম দেখলাম এবং িশখলাম। ওনােক এবং িডিব ইনসেপক্টর সােহবেক সালাম জািনেয় ফেরার সময় পেছন িফের দেিখ ভদ্রেলাক 2 5


সা গ ের র গ ȩ এখেনা দু িদেক মাথা নাড়েছন। হয়েতা ভাবেছন, হেঁেট হেঁেট চেল যাচ্ছে টাকা। আফেসাস, ওনার নাম জানা হল না। সীলগালা মারা ‘অিত গোপনীয়’ খামটা আবার ঘিরেয় ু দেখলাম। কাল সকােল এই খাম িচটাগাং িসিজও িবল্ডিংেয়র িশিপং সেকশােন পৌঁছােত হেব। “হাঁেত হাঁেত।” 2 6


সা গ ের র গ ȩ ৫ ঘুষ দেবো! কেন দেবো? পাগল নািক? পরিদন সকাল সােড় সাতটায় ফেণী রেল ষ্টেশন থেেক মেঘনা এক্সপ্রেস ধের িচটাগাং রওনা হলাম। আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ভোরেবলা চাঁদপরু থেেক লাকসাম, ফেণী হেয় হেয় সকাল সোয়া নয়টার িদেক িচটাগাং পৌঁছায়। তারপর একই ট্রেন পাহািড়কা এক্সপ্রেস নাম িনেয় িসেলট রওনা হয় সকাল দশটায়। গতকাল এই ট্রেেন কের ফেণী এেসিছলাম। িচটাগাং রেল ষ্টেশন থেেক টেম্পু ধের আগ্রাবাদ পর্যন্ত আসেত িবশ িমিনেটর বেশী লােগ না। িসিজও িবল্ডিংএ ঢুেক একরাম আর রুেবেলর সােথ দেখা হেল খবু খশী ু লাগেলা। একরােমর এক জ্যাঠা চট্টগ্রাম মেট্রপিলটন পিলেশর ু িরটায়ার্ড কিমশনার িবধায় ওর পিলশ ু ভেিরিফেকশেন সমস্যা হয় িন তেব কেয়কিদন সময় লেেগেছ। রুেবেলর ভেিরিফেকশন টাকা পয়সা খরচ করায় ভােলায় ভােলায় হেয়েছ। আমার িবষেয় িকছু বললাম না। প্রথম কাজ প্রথেম, িশিপং সেকশেন িগেয় সীলগালা মারা আমার অিত গোপনীয় এবং মহামল্য ূ বান পিলশ ু ভেিরিফেকশন জমা িদেয় আসলাম। ‘হাঁেত হাঁেত’। সরকারী অিফসগুেলােত যে কোন কােজ গেেল সেখানকার লোকজন নানান বায়ানাক্কা কের পয়সা খসােত চায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে িসিজও িবল্ডিংএ প্রায় ৯০% অিফসার এবং ষ্টাফ ফেণী/নোয়াখালীর আঞ্চিলক ভাষায় কথা বেল। সুতরাং ধের নেওয়া যায় বেশীরভাগই বহৃ ত্তর নোয়াখাইল্লা। ঢাকার সরকারী অিফসগুেলােতও এই একই অবস্থা দেেখিছ। এেত বড় একটা সুিবধা হল সবাই এলাকার লোক, িনেজেক এিলেয়ন মেন হয় না। সমস্যা হল িসিডিস এমনই এক িজিনষ যেটা পাসেপার্টের চেেয় অেনক বেশী শক্তিশালী। এটা থাকেল পিথবীর ৃ কোথাও িভসা পেেত ঝােমলা হয় না (২০১০ সােলর পর থেেক সব পিরবর্তন হেয় গেেছ। অেনক দেেশ বাংলােদশী নাগিরকেদর িভসা দেওয়ােতা দুের থাক, পোর্টে গেেল জাহাজ থেেকও নামেত দেয়না।) িসিডিস বানােত গেেল ষ্টাফ, অিফসার িনর্বিেশেষ সকলেকই টাকাপয়সা িদেত হয়। সব িঠকঠাক থাকার পরও কেউ যিদ দশ হাজার টাকার (তখন প্রায় দুই’শ পাঁচািশ ডলার) মধ্যে ম্যােনজ কের পাের তাহেল সে সৌভাগ্যবান। 2 7


সা গ ের র গ ȩ কাগজপত্রে ছোটখাট ভুল থাকেল বা তাড়াতািড় িসিডিস বানােত লাখ টাকা খরচ হেয় যায়। পাসেপার্ট অিফেস যেরকম দালাল থােক, িসিজও িবল্ডিংেয় ওসেবর বালাই নেই। পাসেপার্ট আর িসিডিসর মধ্যে পার্থক্য হল, পাসেপার্ট নাগিরেকর পিরচয়পত্র এবং িবেদশ ভ্রমেনর ডকুেমন্ট। অন্যিদেক িসিডিস হচ্ছে সমদ্রু গািম জাহােজর কর্মিেদর (অিফসার বা রেিটং) সনদ। পাসেপার্ট বানােনা যে কোন নাগিরেকর অিধকার, িকন্তু িসিডিস বানােত হেল যোগ্যতার অেনকগুেলা ধাপ পার হেয় আসেত হয়। সেজন্য িসিজও িবল্ডিংেয় পাসেপার্ট অিফেসর মত দালাল বা টাউটেদর কোন প্রেয়জন নেই। িনর্ধািরত ফরম িফলআপ কের, প্রেয়াজনীয় সকল কাগজপত্র/ছিব এ্যাটাচ কের িনর্ধািরত িফ সহ িসিজও িবল্ডংেয়র এ্যাকাউন্ট সেকশেন জমা িদেত হয়। তারপর িনর্দিষ্ট তািরেখ এেস িসিডিস তুেল িনেত হয়। এটা হল গতানুগিতক িনয়ম। বাংলােদেশ সরকারী অিফেস গতানুগিতক ভােব িকছু পাওয়া আর ঠাকুরমার ঝু িলর রাক্ষস-খোক্কেশর গল্প িবশ্বাস করা এক কথা। িসিডিস িনেত এেস সকল িনয়ম শংখলা ৃ মানা হল, যত রকেমর কাগজপত্র প্রেয়াজন সব দেওয়া হল, এখন শুধু বইটা (িসিডিস) ইস্যূ করা বাকী। অথচ এই শেষ সমেয় শুরু হল আেরক যন্ত্রনা। একজন ষ্টোর রুেমর আলমারী খেলু বই বের কের আনেবন এবং সেই বইেয়র রেকর্ড রেিজষ্টার খাতায় লেখেবন, আেরকজন (সোনালী ফ্রেেমর চশমা পরা ভদ্রেলাক) িসিডিসরর মধ্যে (বাহেকর) নাম, িপতার নাম, িঠকানা ইত্যািদ লেখেবন, আেরকজন সেগুেলা িঠক আেছ িক না সেটা ভেিরফাই করেবন এবং যায়গামত (রাবার ষ্ট্যাম্পের) সীল মারেবন, আেরকজন (িতিন িপয়ন) ওই বই বহন কের িশিপং মাষ্টােরর টেিবেল রেেখ আসেবন। এই চারজেনর এেককজন এেকক রেট হাঁকেছ। কেউ পাঁচেশা, কেউ এক হাজার আেরকজন বােরা’শ টাকাও হাঁকেছ। টাকা না ছাড়েল কোন কাজ এগুেবনা। আমরা এক পয়সাও দেেবা না, কারন আমােদর কােছ তেমন টাকা নেই, থাকার প্রশ্নই উেঠনা। িতনজন িমেল সর্বোচ্চ ছয়’শ টাকা যোগাড় করা যায়। টাকা দেেবা!! িকন্তু কেন দেেবা? আমােদর সব কাজ িনখু ঁত। কাগজপত্র িঠকঠাক মত জমা িদেয়িছ, ওরা িশিপং অিফেসর কর্মচাির, সরকার ওেদর বেতন দেয় না? আবার ঘষু চায় কেন? ঘষু দেবার প্রশ্নই উেঠ না! (প্রশ্ন উঠেব কোত্থেেক, সবার পেকেটর অবস্থা ঠন্ ঠন্)। শুেন একজন এমন মাইণ্ড করেলন, আমােদর সােথ কথাবার্তা বন্ধ কের িদেলন, বািকরাও কথা বেলনা। সারািদন সকাল থেেক িবকাল পর্যন্ত অিফেস ধর্ণা িদই, নানানভােব বোঝাই, িকছুেতই িকছু হয় না। কেউ িফেরও চায় না। এভােব চেল গেেলা কেয়ক িদন। ওখােন একজন শুকেনা লম্বামত সাদা ছাগলদািড়ওয়ালা বেড়া ু িছেলা িযিন িসিজও িবল্ডিংেয়র কেউ না। অিফেসর মধ্যে ঘেরু বেড়ান। ওই লোকও কোত্থেেক আমােদর হেয় ওেদর সােথ দেন দরবার শুরু করেলা। 2 8


সা গ ের র গ ȩ একিদন সেই বেড়া ু হেিভ মেডু আমােদর জানােলা সে সব সমস্যার সমাধান হেয় গেেছ। পাঁচ’শ টাকা কের িতন জনেক মাত্র পেনর’শ টাকা িদেল িসিডিস চেল আসেব, গ্যারান্টি। পাসেপার্ট অিফেসর মত িসিজও িবল্ডংেয়ও দালাল? আিম বড়ােক ু হেিভ ঝািড় িদলাম, সােথ এটাও বেল িদলাম যােত এই িবষেয় যােত নাক না গলায় এবং আমােদর পেছন পেছন যেন হেঁেট না বেড়ায়। কে শোেন কার কথা, বেড়া ু আমােদর পেছন ছােড়না। িদন চেল যায় িকন্তু কাজ হয় না। এক ফাঁেক আমরা িতনজন বািরক িবল্ডিংেয়র উল্টোিদেক িনউ প্যািরস টেইলার্স থেেক ইউিনফর্ম অর্ডার িদেয় আসলাম। একরাম রুেবল িতনটা সাদা হাফ শার্ট, িতনটা কােলা প্যান্ট আর দুই জোড়া কের রেিডও অিফসােরর এ্যাপেলট (Epaulette, শার্টের শোল্ডার ষ্ট্র্যােপ যে ব্যাজ লাগােনা হয়) অর্ডার িদেলা। আমার কােলা প্যান্ট আেছ, দুেটা সাদা শার্ট আর একেজাড়া এপেলট অর্ডার িদেয়িছ। সময় থাকেত ইউিনফরম রেিড না রাখেল পের িবপেদ পড়েত হেব। আমােদর িতন জেনরই িশেপ চাকরী করফার্মড। সব ফরমািলিটজ রেিড, িসিডিস হােত আসামাত্র িশেপ জেয়ন করেত পারেবা। আিম জেয়ন করেবা এম.িভ. আল-তাফিসর জাহােজ, একরাম আর রুেবল একসােথ এম.িভ. আল-তাজওয়াের। আেগ বেলিছলাম তাফিসর িমন্টু সােহেবর বড় ছেেলর নাম, তাজওয়ার ছোট ছেেলর নাম। মেঝ ছেেলর নাম তািবথ, ওর নােমও জাহাজ আেছ, এম-িভ আল-তািবথ। একরাম আর রুেবেলর হােত এখেনা যেথষ্ট সময় আেছ কারন ওেদর জাহাজ আল-তাজওয়ার এখেনা দুবাই পোর্টে। এিদেক আমার জাহাজ অলেরিড িচটাগাং পৌেছ গেেছ সুতরাং জেয়ন করেত কোন বাধা নেই। অসহ্য অবস্থা। রুেবল এক অদ্ভুত কাণ্ড কের বসেলা। িকভােব যেন িপ.ও.এম.এম.িড (Principal Of Mercantile Marine Department, Chittagong Shipping Offices)-এর সােথ আত্মীয়তার সম্পর্ক বের কের ফেলেলা (উনার বাড়ীও ফেণী অথবা নোয়াখালী, মাশা আল্লাহ্)। িসিজও িবল্ডিংেয়র ভেতেরই দোতলায় অিফস। আমরা িতনজন িমেল ওনার চেম্বাের িগেয় অবাক। বড়সড় আিলশান অিফসরুম। ঢাকায় রেিডও অিফসারস্ কোর্স করেত িগেয় আমােদর িক িক পেেরশািন হেয়েছ উিনও িকছু িকছু জােনন, এ িবষেয় খািনক গল্প করেলন। রুেবেলর সােথ িকছু আত্মীয়তার গল্প করেলন, খালাম্মা-খালু এবং বাড়ীর সবার খবর িনেলন। তার মােন উিন সত্যি সত্যি আত্মীয়। (ফেণী/নোয়াখালীেত সবাই সবার আত্মীয়)। িপ.ও.এম.এম.িড সরাসির িসিডিস ইস্যূ র সােথ জিড়ত নয় তবওু আমােদর সামেন িশিপং মাষ্টারেক ফোন করেলন। িকছুক্ষন গল্প করেলন, হািসঠাট্টাও করেলন। তারপর সময় িনেয় আমােদর িতনজেনর নামধাম বলেলন, আমরা স্পষ্ট বঝেত ু পারিছ িশিপং মাষ্টার সােহব আমােদর সবার নাম িপতার নামসহ নোট কের িনেয়েছন। এর মধ্যে দুপরু গিড়েয় গেেছ। 2 9


সা গ ের র গ ȩ িসিজও িবল্ডিং থেেক আমরা সোজা চেল গেলাম সেজান রেষ্ট্যু েরন্টে। কােছই, রাস্তার এিদক আর ওিদক। বাদামতলী মোেড়র এই সেজান রেষ্ট্যু েরন্ট িছেলা কমার্স কেলেজর পোলাপান আর জাহাজীেদর িমলনেমলা। সেজান থেেক চা িসঙ্গাড়া খেেয় আবার িফের এলাম িসিজও িবল্ডিংেয়র িসিডিস শাখায়। এেস দেিখ পিরেবশ পাল্টে গেেছ। এই কয়িদন যারা আমােদর িদেক িফেরও চায়িন তারা সবাইেতা বেটই, িশিপং অিফেসর অন্য শাখার লোকজনও এেক এেক এেস আমােদরেক দেখেত আসেছ। অন্য শাখার লোকজন কেন জািন হাসেছ, অন্যিদেক িসিডিস শাখার সবার চোেখ মেখু রাগ। িসিডিসর লেখক চশমাওয়ালা ভদ্রেলাক রীিতমত ফোঁস ফোঁস করেছন। চাটগাঁইয়া এ্যাকেসন্টে নািক স্বের বলেলন, “সারািদঁন গােয়ঁ বাঁতাস লাঁিগেয়ঁ গুঁরেল ছলেবঁ? িসঁিডিসঁ লেখেতঁ হঁেবঁ না? থাঁেকঁন কোঁতায়?” সােথ সােথ আমরা িতনজন ধপধা ু প্ কের িসিডিস লেখেকর সামেনর দুই চেয়াের চেেপচুেপ িতনজন গাদাগািদ বেস বেস গেলাম। “সেরঁন িমঞাঁ, সেরঁন!” দুেরর িদেক আঙ্গুল তুেল বেলন, “ওঁই িদেকঁ যান!” ওের বাবা, এবার চীৎকার করেছ। টেিবল থেেক খািনক দুের রুেম ঢোকার দরজার পােশ ছোট একটা বেঞ্চি, ওখােন িগেয় বসলাম। ওহ্ আচ্ছা, সবাই িমেল একসােথ তার টেিবেলর সামেন বসায় িবরক্ত হেয়েছ। িকছুক্ষন পর খেঁিকেয় ডাকেলা, “এ্যাঁগজন এ্যাঁগজন গঁির আঁেসন!” অর্থাৎ, একজন একজন কের আসুন। 3 0


সা গ ের র গ ȩ ৬ অতঃপর প্রথেম একরাম গেেলা। একরামেক প্রচুর গরম গরম কথা শোনােলা, সামান্য একটা িসিডিস ইস্যূ হেব, এটার জন্য এত বড় কর্মকর্তার কােছ যাওয়া লােগ? আমরা িছলাম িক করেত? সমােন চোটপাট করেছ একরােমর সােথ, আর িলখেছ। প্রায় পেনর-িবশ িমিনট পর একরাম িফরেল আিম গেলাম। টেিবেলর উপর রং চটা নীল শক্ত মলােটর একটা বইেয়র মত িজিনষ, উচ্চতায় পেরােনা ু হােত লেখা পাসেপার্টের চেেয় দেড় ইঞ্চি আর সাইেড আধা ইঞ্চি বড়। ওটা িসিডিস। আমার বকু ধ্বক-ধ্বক করেছ। মলােটর উপেরর িদেক মাঝ বরাবর দুেটা আয়তক্ষেত্রের মত চারেকানা ফুেটা বা জানালা। দুরু দুরু বেকু একটু এিগেয় দেিখ চারেকানা জানালার পেছেন িকছু লেখা আর নীেচর জানালার পেছেন িকছু নাম্বার। মলােটর উপর সোনালী আর রূপালী রং িমশােল যেমন হয় সেই রংেয় ইংেরজী এবং বাংলায় অেনক িকছু লেখা। সবার উপের লেখা:- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলােদশ সরকার GOVERNMENT OF THE PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH মলােটর একদম মধ্যখােন িশিপং অিফেসর গোল লোেগা। তার আেরকটু নীেচ বড় বড় কের লেখা, একই িনয়েম:- ধারাবািহক বরখাস্ত সনদ CONTINUOUS CERTIFICATE OF DISCHARGE একদম নীেচ লেখা:- িশিপং অিফস ফরম নং ২০ Shipping Office Form No. 20 3 1


সা গ ের র গ ȩ চশেমশ ভদ্রেলাক আমার সােথও সমােন চোটপাট কের যাচ্ছে। আমার কােন িকছু যাচ্ছেনা, স্বপ্নে বু ঁদ হেয় আিছ। চোেখর সামেন পেড় আেছ িসিডিস। ভেতেরর পষ্ঠা ৃ গুেলা সরকারী হাল্কা সবজাভ ু রংেয়র। পালিপেটশন বেেড় গেেছ, এখন এই বইেয় আমার নাম, ধাম, বত্তা ৃ ন্ত ইত্যািদ লেখা হেব. . . “আঙ্গুঁল পিরষ্কাঁর আেছঁ? ... এ্যাঁই যেঁ ভঁদ্রেলাঁক, এ্যাঁই! আঙ্গুঁল ফঁিরষ্কাঁর আঁেছিন িজংেগঁস করেতিছ যে। আঁেছ?” চমেক বাস্তেব িফের এলাম। িক সব কথাবার্তা, আঙ্গুল পিরষ্কার আেছ মােন? আমােক িকছু বলেত হল না, িতিনই বলেলন, “এখাঁেন দুই হােতঁর বু ঁইয়া আঙ্গুঁল রাঁেখন।” কােলা ষ্ট্যাম্প প্যােডর মত একটা িজিনেষর িদেক দুই হােতর বেড়া ু আঙ্গুল এিগেয় িদেতই উিন প্যােডর উপর চেপ ধরেলন আমার দুই বেড়া ু আঙ্গুল। তারপর তেল িচটিচেট কািল লেেগ কুচকুেচ কােলা হেয় যাওয়া আঙ্গুেলর তালু দুেটা িসিডিসর যেই পাতায় ফেটা থােক তার একপােশ িনর্ধািরত যায়গায় চেেপ ধের দু হােতর বেড়া ু আঙ্গুেলর ছাপ মেের িনেলন। “উঁইচ্চঁতা কঁত?” আিম আমার হাইট বললাম। িতিন বলেলন, “খাঁড়ান দেঁিখ?” দাঁড়ালাম, “ভঁেসন।” আিম বসলাম, উিন উচ্চতা লেখেলন। “চোঁেখর রং িক?” বললাম, “ব্রাউন,” “ব্রাঁউন মাঁেন? আঁিমেতা দেঁিখ গাঁলা গাঁলা।” চক্ষুর রং লেখেলন Black. “চুেলর রং িক?” বললাম, “কােলা।” িতিন চশমা খেলু চুল দেখেলন, তারপর চশমা পের আবার দেখেলন “হুমম, কােলাঁ। চু ঁল লম্ফাঁ লম্ফাঁ কেন? এঁত কোঁকড়াঁ কেন?” লেখেলন ‘Black’ পেরর প্রশ্ন, “গাঁেয়র রং িক?” “গেরােমর আবার িকেসর রং?” চশমাওয়ালা আবার চেঁেত গেেলন, “ফাঁইজলািম গঁরদ্দে? হোঁয়াঁট ইঁজ দাঁ গাঁলার অঁফ ইঁউর বঁিড?” (What is the colour of your body?) বললাম, “ওহ্, শরীেরর রং? কােলা, কােলা।” িতিন সেটাও মানেলন না, “গাঁেলা মাঁেন? আঁমেন শাঁমলা, শাঁমলা। গাঁেলা না।” িসিডিসেত বর্ণ লেখেলন, ‘Brown’ নতুন ইংেরজী িশখলাম, ব্রাউন মােন ‘শাঁমলা’। 3 2


সা গ ের র গ ȩ “সঁনাক্ত করার িবঁেশঁষ িচহ্ন িক?” আিম িক মেন কের বেকর ু উপর হাত রাখেত উিন খেঁিকেয় উঠেলন, “কেরঁন িক? জাঁমা খু ঁইলেতঁেছঁন কেঁেনা?” নােকর সামেন কলম তাক কের কলমটা মেখর ু উপর ঘিরেয় ু বলেলন, “চেঁহারায় দাঁগমাঁগ আঁেছ?” দুই চোেখর মাঝখােন নােকর ব্রীেজর উপর একটা দাগ আেছ, সেটা বললাম। উিন এেকবাের নাটেকর কুটনা িভেলনেদর মত বলেলন, “এ্যাঁগটা দাঁগ? আঁদাই গাঁেল কাঁডাকুঁডা। হেহ্ এ্যাঁগটা দাঁগ!” (বঙ্গানবাদ ূ :- একটা দাগ? সারা গােল কাটাকুটা।) খবু আরাম কের সনাক্তকরন িচহ্ন লেখেলন, “Cut mark on the rt. side face.” নােকর দাগ িবষেয় লেখেলন না। ডান গােল হাত বলালাম ু , বাসায় িগেয় আয়না দেখেবা। তার পেরর পষ্ঠা ৃ য় লেখা শুরু করেলন… নাম, িপতার নাম, জন্ম তািরখ, জন্মস্থান, জাতীয়তা, ‘বাংলােদশী’ (আেগ থেেক রাবার ষ্ট্যাম্প মারা), গ্রাম: উিকল পাড়া (উিকল পাড়া একিট গ্রাম? আেগ শুিনিন)। থানা, ইউিনয়ন, ডাকঘর, িজলা সব ‘ফেণী’। পেরর পষ্ঠা ৃ গুেলােত যায়গামত িক িক সব লেখেলন, শেেষর িদেক মেিডক্যাল এ্যাক্সািমেনশন রেকর্ড করেলন। এটা খবু ইম্পর্ট্যান্ট, িবিভন্ন পোর্টে এটা নািক সবার আেগ চেক কের। তারপর িসিডিস লেখেকর ঘের সই করেলন। সব শেেষ মলােটর পর প্রথম উপর িদেক পাতায় দুেটা আয়তক্ষেত্র ছাপােনা। 3 3 আমার িসিডিস। এখনকার িসিডিস এমন নয়। আধিনকু , স্মার্ট িসিডিস।


সা গ ের র গ ȩ উপের আমার নাম, নীেচ িসিডিস নাম্বার বসােনা হল। এতক্ষেন বঝলাম ু শক্ত মলােটর দুেটা আয়তাকার জানালার রহস্য। মলাট বন্ধ থাকেলও নাম আর িসিডিস নাম্বার দেখা যােব। আমার িসিডিস রেিড। ইেয়সসস্!! তারপর রুেবেলরটা লেখা হল। একসােথ িতনিট িসিডিস িলেখ লেখক মেহাদয় প্রচণ্ড ক্লান্ত। ক্লান্তির কারন একসােথ িতনটা িসিডিস লেখা নয়। চা-পািনর খরচ ছাড়া লেখেত হল, এই দুঃেখর ক্লান্তি। িতনজন এখেনা রুেমর বেঞ্চে বেস আিছ। যে কেরই হোক আজ িসিডিস নেেবাই। এখন িসিডিস পেরর টেিবেল, িতিন কাগজপত্র এবং িসিডিসেত সব লেখা ভেিরফাই কের যায়গায় যায়গায় রাবার ষ্ট্যাম্প িদেয় সীল মারেলন। তারপর যে পষ্ঠা ৃ য় ফেটা আেছ সেখােন বড় ভারী একটা যন্ত্র িদেয় এমবস (Emboss) করেলন। এখন িশিপং মাষ্টার িসগেনচার কের িদেল ওটা হেয় যােব রাষ্ট্রীয় দিলল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলােদশ সরকার কতকৃ ইস্যূ কৃ ত নািবেকর ধারাবািহক বরখাস্ত সনদ, িস িড িস। িতনটা ফাইল বগলদাবা কের িপয়ন রওনা হল িশিপং মাষ্টােরর চেম্বাের। আমরা িতনজন আঠার মত তার পেছন পেছন গেলাম, িপয়ন ভােব আেছ। আমরা িনর্বিকার হেয় চেম্বােরর সামেন অেপক্ষা করিছ। িতনটা িসিডিস সই করেবন িতিন, দেেখ শুেন করেবন, িকছু সময়েতা লাগেবই। হঠাৎ কোত্থেেক সেই বেড়া ু হািজর। িচকন, লম্বা, মাথায় গোলটু িপ, মেখু সাদা ছাগলদািড়। চোেখ মেখু হািস। ভাবভঙ্গি এমন, “আিম আিছ, সব িঠক হেয় যােব।” রুেবল নীচু গলায় হাল্কা ধমক িদেয় িদেলা, বড়া ু তবওু িপছন ছােড়না। প্রায় আধঘন্টা িশিপং মাষ্টােরর চেম্বােরর সামেন দাঁিড়েয়িছলাম। পেরােনা ু কিলং বেেলর মত িরং বেেজ উঠেল িপয়ন ধীের সুস্থ্যে ফূ র্তির একটা ভাব িনেয় িশিপং মাষ্টােরর চেম্বাের ঢুকেলা, কেয়ক মহুর্ত পর বের হল আমােদর ফাইলগুেলা হােত িনেয়। মখখানা ু এত গম্ভীর যেন কেউ মারা গেেছ। আমরা দাঁিড়েয় থাকলাম। বেড়া ু পেছন পেছন যাচ্ছে। িপয়ন ওই রুেম ঢোকার পর আমরা গেলাম ধীের সুস্থ্যে। সারাক্ষন এই অিফসরুেম ষ্টােফরা িনেজেদর মধ্যে হািস ঠাট্টা, গল্পগুজেব মেেত থােক আর কাজ কের। এখন পিরেবশ অন্যরকম। সবাই চুপচাপ, গম্ভীর। রুেবল, আিম তারপর একরাম। এেক এেক িতনজন যার যার িসিডিস িসগেনচার কের গ্রহন করলাম। মখরা ু চশমাওয়ালাই িসিডিস হােত তুেল িদেলন। উত্তেজনায় শরীেরর রক্তচলাচল 3 4


সা গ ের র গ ȩ বেেড় গেেছ, সে এক অন্য রকম অনুভূ িত। মলােটর উপেরর জানালা িদেয় আমার নাম, নীেচর জানালা িদেয় িসিডিস নাম্বার দেখা যাচ্ছে। হােতর লেখা, সুন্দর না তেব পড়া যায়। িতন শব্দে আমার নাম একটু লম্বা হওয়ায় জানালায় স্থান সংকুলান হয়িন, AFLATUN HAIDER CHOW পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। মলাট উল্টােল পেরা ু নাম দেখা যােব। নীেচর জানালা িদেয় িসিডিস নাম্বার পেরাটা ু দেখা যাচ্ছে. . . . হুমম, দুহাজার চারশ ঊনষাট নাম্বার অিফসার হলাম আিম। খারাপ িক? মাথায় প্রশ্ন এেলা, িকন্তু এই পিরেবেশ িকছু িজজ্ঞেস করা সমীিচন হেব? আবার খেঁিকেয় উঠেব। এিদেক পেট ফেেট যাচ্ছে, প্রশ্নটা কেরই ফেিল, িক আেছ দুিনয়ায়? “আচ্ছা ভাই, িসিডিস নাম্বােরর আেগ ইংেরজীেত ‘িস’ / ‘ও’ িদেয় িক বঝায় ু ” ফ্যাঁসফ্যাঁেস গলায় আস্তে কের কোনমেত বলেলন, “িসঁটাগাং, ওঁিফঁসাঁস্ ” (িচটাগং / অিফসার্স)। রুেবেলর িসিডিস দেবার সময় আবার বলেলন, “িবঁরাট ফাঁওয়ার দেখাঁই ফাঁলাইেলন গো সাঁেহব। এঁক্কেঁবাের িফঁও এমএমিডঁ-র কােছ চঁিল গেঁেলন (POMMD)। আঁমরা িক মাঁেনাঁষ না? কাঁজটা মোঁট্টেও বাঁেলা গঁেরন নাঁই মঁেন লািখঁেয়ঁন।” ভদ্রেলাক আস্তে আস্তে আেরা গরম হচ্ছেন। অবস্থা বেগিতক দেেখ রুেবল িডপ্লোম্যািটকািল পিরস্থিিত ট্যাকল করার জন্য খবু িবনেয়র সােথ বলেলা, “আমােদর মাফ কের দেন ভাই, অেনক বড় ভুল হেয় গেেছ।” রুেবেলর কারবার দেেখ মেন হল নাটক িসেনমার ফািন রোল প্লে করেছ। আিম আর একরাম হািস চেেপ মখু করুন কের লোকটার িদেক চেেয় আিছ। িকন্তু জোর কের হািস চাপেত িগেয় মখু থেেক শব্দ কের বাতাস বেিরেয় গেল। এবার পরা ু হট টেম্পাের উেঠ গেেলন, চীৎকােরর চোেট রুেমর আসবাবপত্রগুেলাও কাঁপেছ, 3 5 কন্টিিনউয়াস িডসচার্জ সার্টিিফেকট, এক ঐিতহািসক নিথ আধিনকু িসিডিসর চেহারা আেরা সুন্দর, স্মার্ট


সা গ ের র গ ȩ “িকঁ?.... িকঁ?.... শুঁক্কুের শুক্কুের আষ্টোিদন ন ওঁইেয় ভঁয়ঁস, আঁ-রার লঁেগ ভেঁয়াঁদ্দিফ গঁরর না তোঁওরাঁ?” (বঙ্গানবাদ ূ :- শুক্রবাের শুক্রবাের আট িদন হয়িন বয়স অথচ আমার সােথ বেয়াদিপ করেছা তোমরা?) রুেবল হঠাৎ দ্রুত রুম থেেক বের হেয় গেল, পেছন পেছন একরামও। আিম বের হেয় কিরেডার িগেয় দেিখ ওরা দৌঁেড় পালাচ্ছে, এবার আিমও দৌঁড়। বাইের এেস দাঁিড়েয় িতনজন হো হো কের হাসিছ। িকন্তু হঠাৎ মেন হল আমােদর সােথ চতুর্থ একজন হাসেছ। দেিখ সেই বেড়া। ু ধ্যাৎ বেল রুেবল আর একরাম হেঁেট রাস্তায় চেল গেল আিম রেয় গেলাম কারন বেড়া ু আমার হাত ধেরেছ, “এত কষ্ট কইল্লাম, চা ফািন খাইবাইল্লাই িকছু দেন।” খাস নোয়াখাইল্লা ভাষায় বেড়ার ু িমনিত। হাত ছাড়ােনার চেষ্টা না কের হািস মেখু গর্বিত ঢংেয় বললাম “আপেন িকছুই কেরন নাই, যা করার আমরা করিস।” “এক কা চা খািল।” “িঠক আেছ, আজ শুভিদন। আমার পেকেট যত টাকা আেছ সব আপনার।” বেল বকু পেকেট হাত িদেয় যা িছেলা তা বের কের িদলাম। বেড়া ু মখু কােলা কের একবার আমার িদেক, আেরকবার টাকার িদেক চায়। িনেজর চোখেক িবশ্বাস করেত পারেছনা, “দুই টেঁয়া িন?” পেরােনা ু , ময়লা মাখােনা, তেল িচটিচেট, দোেয়ল পাখীর ছিবওয়ালা দুই টাকার নোট, একটা। আমার সর্বস্ব বলেত ওই তেল িচটিচেট দুই টাকাই িছেলা। রুেবল আর একরাম এর মধ্যে মেইন রোেডর উঁচু ফু টপােথর উপর দাঁিড়েয় আেছ। আমার জন্য অেপক্ষা করেছ। ক্যাশ টাকা আমার পেকেট খবু একটা থাকেতা না। এখেনা থােক না। এখন ওসব ভাবার সময় নেই। িসিডিস হােত চেল এেসেছ। জাহােজ জেয়ন করা সমেয়র ব্যাপার মাত্র। বন্ধুরা অেপক্ষায় আেছ, স্যািলব্রেট করেত হেব। 3 6


সা গ ের র গ ȩ ৭ প্রথম িদন যেিদন িসিডিস হােত পেলাম সেিদন িছেলা ২৬ অক্টোবর। িসিজও িবল্ডিংেয়র মেইন রোেডর িবপরীেত দাময়া ু পকুর পােড় আপার বাসা। রুবেল আর একরামের সােথ আন্জা-আন্িজ কের িবদায় িনেয় আপার বাসায় িগেয় টাকা পয়সা িনেয় কদমতলী িগেয় সেখান থেেক বাস ধের সোজা ফেণী বাসায়। আব্বু িসিডিসটা হােত িনেয় পষ্ঠা ৃ উল্টে পাল্টে দেখেত দেখেত বলেলা, “কাল বােদ পরশু তুই চেল যািব সাগের। কোথা থেেক কোথায়, কত দুের চেল যািব কে জােন?” ১৯৮৯ সাল থেেক গতকাল পর্যন্ত অেনকগুেলা ঘটনা িবদ্যূ েতর মত ফ্ল্যাশবাক হল। কান্না লকােনার ু জন্য এক দৌঁেড় পেছেনর বারান্দায় হেয় পবূ িদেকর উেঠােন চেল গেলাম। এখানটা অন্ধকার। মা, বাবা, ভাই, একমাত্র বোন, দুলাভাই, ভাগ্নে, আত্নীয় স্বজন কােরা কথা নয়, স্বার্থপেরর মত মেন এেলা বন্ধুেদর কথা। দেখা হেবনা অেনকিদন, থাকেবা িকভােব ওেদর ছাড়া? সব অিভমান িগেয় পড়েলা আব্বুরব্বু উপর। দু বছর আেগ ফেণীছাড়া করেলা, এখন দেশছাড়া করেছ। ইন্টারিমিডেয় পরীক্ষায় পাশ করেবা িক না সেটাও িনশ্চিত িছলাম না। কারন ইংেরজী ফার্ষ্ট পেপার পরীক্ষায় বােজ আনসার কেরিছ। আব্বুেতা ব্বু এতশত জােননা, রেজাল্ট বের হবার আেগ থেেকই আমার িশেপ চাকরীর ব্যাবস্থা কের ফেলেলা। কপাল খারাপ, সেেকণ্ড িডিভশেন পাশ কের ফেললাম। মার্কিশট হােত পেেয় দেিখ িফিজক্স, কেিমষ্ট্রি, ম্যাথ্ আর ইংেরজী ফার্ষ্টসেেকণ্ড পেপার িমেল গেড় যত নম্বর পেেয়িছ সেগুেলা িশেপ জেয়ন করার জন্য যেথষ্ট। ট্রেিনং শেেষ দু বছর পর জাহােজ উেঠ যাচ্ছি। সত্যিই তো, কোথা থেেক কোথায়, কত দুের চেল যােবা কে জােন? বেশীক্ষন কাঁদা হলনা, গোছগাছ করেত হেব। পরিদন সারািদন কেেট গেেলা কেনাকাটা আর গোছগাছ করেত করেত, িবেকেল বন্ধুেদর বেকু বকু লািগেয় কোলাকুিল কের িবদায় িনলাম। 3 7


সা গ ের র গ ȩ পরিদন সকাল সকাল নাস্তা খেেয় বাসায় সবাইেক িবদায় জািনেয় আিম আর আব্বু সকাল সােড় সাতটার মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরলাম। সীট ক্যাপািসিটর আন্তঃনগর ট্রেন অথচ ভেতেরর অবস্থা কািহল। ভোর পাঁচটায় চাঁদপরু থেেক এই আন্তঃনগর চট্টগ্রােমর িদেক রওয়ানা হয়। পেরা ু ট্রেন ভের যায় মাছভর্তি লাই (বাঁেশর তৈরী বড় পাত্র িবেশষ), মটকা আর মাছ িবক্রেতায়। মেঘনা নদীর তাজা মাছ যাচ্ছে িচটাগাংেয়, আন্তঃনগর ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেেস। ঠেেল ঠুেল আমােদর সীট পর্যন্ত িগেয় দেিখ লোকজন বেস আেছ, আমার হােত বড় লােগজ, কাঁেধ ব্যাগ। আব্বু বলেলন ঐ সীট আমােদর। ওরা বেল ওেদর, িটেকেট সীট নাম্বার লেখা আেছ। আব্বু িকছু বলেলা না, দাঁিড়েয় রইেলা, সােথ আিমও। হায় কপাল, আব্বু না থাকেল ওেদর চ্যাংেদালা কের ট্রেন থেেক প্ল্যাটফরেম ছু ঁেড় ফেলতাম। “না, এগুলা একটাও আপনােদর সীট না। সব্বাই উেঠন। এই সীট গুলা সব ফেণীর প্যােসঞ্জারেদর জন্য বরাদ্দ। উেঠন-উেঠন!” গমগেম ভরাট কন্ঠ। দেিখ হাসান মামা, ফেণী রেল ষ্টেশেনর িটেকট সেকশেন আেছন। প্ল্যাটফরেম দাঁিড়েয় ট্রেেনর জানালা িদেয় বিগর ভেতের সীেট বসা লোকগুেলােক হােতর ইশারায় সের যেেত বলেলন। লম্বা, ফর্সা, মেেহদী রাঙ্গা চুেলর এই হাসান মামা শুধু হ্যাণ্ডসামই নন, দারুন ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন। ফেণী রেল ষ্টেশেনর িটেকট কাউন্টাের এেস কত বাঁদরােমা কেরিছ, প্রিতদােন হাসান মামা শুধু স্নেহই িদেয়েছন। লোকগুেলা কথা না বািড়েয় সের গেেলা। লােগজ উপের রেেখ আমরা বসলাম। হাসান মামা আব্বুেকব্বু সালাম িদেয় আর আমার মাথায় স্বস্নেেহ হাত বিলেয় ু িবদায় িনেলন। ট্রেন চলেত শুরু করেল মেন হল আর বিঝু কখনও ফেরা হেব না। জন্ম, বেেড় ওঠা সব এই ছোট্ট শহর ফেণীেত। স্থানীয়রা সবাই সবাইেক চেেন। প্রথম যেিদন ফেণী পাইলট প্রাইমারী স্কুেল ক্লাস-ওয়ােনর ক্লাসরুেম গোিব ভাই আমােক রেেখ চেল গেেলা, আিম ফু ঁিপেয় ফু ঁিপেয় কাঁদিছলাম। তারপর ক্লাস ফাইভ পার হেয় িকভােব পাইলট হাই স্কুল, এস এস িসর পর ফেণী কেলজ। মােঠর দক্ষিন িদেক প্রাইমারী, উত্তর িদেক হাই স্কুল আর পবূ িদেক কেলজ। একটা মাঠ িঘেরই কািটেয়িছ জীবেনর বােরাটা বছর। সুখ-দুঃখ, হািসকান্না কত ঘটনা। এখনও স্মৃিতেত স্মৃ উজ্জ্বল। আমার পিরবার, আমার শেকড়, সব এই ফেণীেত। ফেণীর পথ, ঘাট, মাঠ, পকুর, িদঘী, গাছপালা, বাড়ী ঘর, আকাশ, বাতাস… আমার বন্ধুরা, প্রিয় জেনরা, সব আমার একান্ত আপন। সব ছেেড় কোথায় যাচ্ছি আিম? আমার ফেণীেক অেনক ভােলাবািস, অেনক। আগ্রাবাদ বািনজ্যিক এলাকার কমার্স কেলজ রোেডর পাম িভউেত বেঙ্গল িশিপং অিফস। সোফায় বেস অেপক্ষা করিছ আিম আর আব্বু।ব্বু আমােদর মেখাম ু িখু এয়ার কণ্ডিশনােরর 3 8


সা গ ের র গ ȩ িবশাল একটা ব্লোওয়ার। অেনক গরম পেড়েছ, িকন্তু সরাসির গােয়র উপর ঠাণ্ড বাতাস লাগায় আব্বুরব্বু অস্বস্তি হচ্ছিল, আমারও ঠাণ্ডা লাগেছ। িমঃ বিদউল আলম এখেনা আেসন িন, তেব ষ্টাফ আেনায়ার আেছ। সে আেছ হেিভ মেড। ু একবার এিদক যায়, আবার ওিদক। মাথা বেল করার এক সপ্তাহ পর যেমনটা হয়, আেনায়ােরর মাথার চুল সেই সাইেজর। গাঁট্টােগাঁট্টা স্বাস্থ্যের আেনায়ার খেয়রী প্যান্টের ভেতর কােলা আর গ্রে ষ্ট্রাইেপর শার্ট গুঁেজ পেরেছ। পােয় কােলা চামড়ার জেতা ু , দেেখ বোঝার উপায় নেই আেনায়ার বিদউল আলেমর িপয়ন। যে কেউ ওেক অিফসার মেন করেব। নোয়াখাইল্লােদর এই স্মার্টেনস আমােক অিভভূত কের। “এিসটা একটু কিমেয় দেওয়া যায়?” মোলােয়ম আর ভদ্রভােব আেনায়ারেক আব্বু বলেলা। “এয়ার কণ্ডিশন চইলেতেছ, এইটা বন্ধ করন যাইেতা নো।” বেল আব্বুেকব্বু এক নজর দেখেলা তারপর ওিদক চেল গেেলা। আমার মাথায় আগুন ধের গেেছ। আেনায়ার এবার এিদক িফের আসেছ। আমার চোেখ চোখ পড়ায় হঠাৎ থমেক গেেলা সে। মেন মেন ভাবিছ আব্বুটা ব্বু পােশ কেন? তা না হেল ... আেনায়ার আবার ওিদক চেল গেেলা। আিম উেঠ দাঁড়ালাম, আেনায়ার তাড়াহুেড়া কের অিফস থেেক বেিরেয় গেেলা। িক ভেেবেছ কে জােন? আিম একজন অিফসারেক বলেতই িতিন দৌঁেড় এেস এিসর ব্লোওয়ারটা অফ কের িদেলন। যাবার আেগ আব্বুেকব্বু িবনীতভােব সিরও বলেলন। িম. বিদউল আলম এক ফাঁেক রাস্তার ওপােশ িসিজও িবল্ডিংেয়র িশিপং সেকশেন িনেয় আমােক ‘সাইন অন’ কিরেয় িনেয় আসেলন। আব্বু, ব্বু আিম আর বিদউল আলম প্যােসঞ্জার িসেট, সামেন ড্রাইভােরর পােশ আেনায়ার। মাইক্রো বােস কের আমরা যাচ্ছি জেিটর িদেক। আমার জাহাজ চার নম্বর জেিটেত। কোন ঝােমলা ছাড়া সাঁই কের িসিকউিরিট গেট পার হেয় গেেলা গাড়ী, বোঝা যাচ্ছে জেটীর গার্ডরা এই গাড়ী চেেন ভােলামত তাই থামাবার প্রেয়াজন মেন কেরিন। তাছাড়া জেিটর ভেতর গার্ড, খালাসী থেেক শুরু কের হাই অিফিসয়াল বেশীরভাগই নোয়াখাইল্লা। সবাই সবাইেক চেেন। বাঁ িদেক প্রচুর গাড়ী আর ডােন কন্টেইনােরর সাির। আমরা যাচ্ছি সোজা নদীর িদেক, পাড় বরাবর এেস ডােন মোড় িনেত আমার জাহােজর পেছন িদেক দেখেত পেলাম। বড় বড় কের জাহােজর নাম লেখা AL-TAFSIR, তার নীেচ VALETTA দেেখ িকছু বঝলাম ু না, একটা পতাকা ঝুলেছ সেটাও অেচনা। বাংলােদশী মািলেকর জাহাজ, নােমর নীেচ CHITTAGONG (Port of registration) আশা কেরিছলাম। িবশাল জাহােজর কাছাকািছ এেস িনেজেক খবু িপচ্চি লাগিছেলা। িসঁিড় িদেয় উেঠ সামেনর িদেক তািকেয় অবাক হচ্ছিলাম, কত িবশাল আর কত বড় বড় ক্রেেনর মত িজিনষ। পের শুেনিছ জাহােজর 3 9


সা গ ের র গ ȩ িসঁিড়েক বেল গ্যাংওেয়, ক্রেেনর মত ওগুেলার নাম ডেিরক। (জাহাজ আল-তাফসীর মাল্টার রাজধনী ভ্যােলটায় রেিজষ্টার্ড, তাই মাল্টিজ পতাকা আর শহেরর নাম।) অক্টোবর মােসর ২৮ তািরেখ জাহােজ আমার প্রথম িদন। জাহােজ জেয়ন করা মােন জাহােজ উঠা। কাগজপত্রের কোন বালাই নেই। চীফ অিফসার আমােক একটা কেিবন িদেলা, একজন ক্যােডেটর সােথ শেয়ািরং। পের সেটা আমার রুম হেয় যায়। ওখােন লােগজ, কাগজপত্র িনেয় আবার উপের এেস আব্বুেকব্বু িবদায় িদেয় ডেেক দাঁিড়েয় সাদা মাইক্রোবাসটা চোেখর আড়াল হেতই মেন হল আিম এখন একা। খবু একা। ইচ্ছে হেলও যখন তখন বাস বা ট্রেন ধের ফেণী যেেত পারেবানা। খবু মন খারাপ হয়, আবার জাহােজর িদেক তািকেয় রোমাঞ্চিত হই। ঘেরু ঘেরু িবশাল এই জাহাজ দেখেবা। ডেক, ইঞ্জিন, ব্রীজ আেরা কত িক। গভীর সমদ্রু দেখেবা, দেখেবা দেশ িবেদশ। আবার দেেশর কথা, ফেণীর কথা মেন পেড়। খবু কষ্ট লােগ। িঠক প্রকাশ করা যায় না। কেমন যেন মেশােনা অনুভূ িত। এক িদেক রোমাঞ্চ আেরক িদেক িবষাদ। এই জাহাজ আমােক িনেয় যােব গভীর সাগের। িক দেখেবা আিম? শুধইু নোনা জল? পিরবার আর আপনজনেদর থেেক হাজার হাজার মাইল দুের! আমার ডাকনাম সাগর। চেল যােবা সাগের। িক িবিচত্র, িক অদ্ভুত! 4 0


Get in touch

Social

© Copyright 2013 - 2024 MYDOKUMENT.COM - All rights reserved.