বার্ণালোক, নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০২২ Flipbook PDF

বার্ণালোক, নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০২২

33 downloads 99 Views 1MB Size

Recommend Stories


Porque. PDF Created with deskpdf PDF Writer - Trial ::
Porque tu hogar empieza desde adentro. www.avilainteriores.com PDF Created with deskPDF PDF Writer - Trial :: http://www.docudesk.com Avila Interi

EMPRESAS HEADHUNTERS CHILE PDF
Get Instant Access to eBook Empresas Headhunters Chile PDF at Our Huge Library EMPRESAS HEADHUNTERS CHILE PDF ==> Download: EMPRESAS HEADHUNTERS CHIL

Story Transcript

সম্পাদকীয়— কথায় বলে, অতি সর্বত্র গর্হি ত। এবারে ঠান্ডা দেশের প্রায় সর্বত্র বড় জাঁকিয়ে বসেছে। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া মানুষের মনে দেহে স্বস্তির ভাব নিয়ে আসে। শীত জড়তা আনে। সক্রিয় মানুষও অতি শীতে জবুথবু হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমরা জানি, লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে অলস সময় কাটাবার অবস্থা এটা নয়। তবু প্রকৃ তিতে আমারা সৃজিত হই। জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, প্রাণীজগতের সমস্ত কিছু বন্ধন ও বিরহের মাঝে রয়েছে প্রকৃ তির প্রভাব। এ বারের শীতের জড়ত্বের মধ্যে আমাদের লেখক লেখিকারাও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলছি। কোন কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, এমন কি লেখালেখির ব্যাপারেও আমি বড় স্লথ হয়ে পড়েছি। প্রতি মাসে একটিমাত্র ব্লগ ও ই-বুক পত্রিকার সম্পাদনা এমন কিছু বড় কাজ নয়, তবু আলস্যের ভরে তাকে একটা বোঝা বলে মনে হচ্ছে। আর এটা আমাদের বিশ্বাস, এ কারণেই এ মাসের পত্রিকায় অধিকাংশ লেখক-লেখিকা তাঁদের লেখা সময় করে দিয়ে উঠতে পারেননি। সে যাই হোক, সময়কে সম্বল করে এবারের পত্রিকা সংখ্যাটিও নিয়মরীতি মেনে যথাসময়ে প্রকাশিত হচ্ছে। লেখক-লেখিকা তথা পাঠকবর্গকে অনুরোধ জানাই, অনুগ্রহ করে এবারে ছোট সংখ্যাটি পড়ুন। তার ভালোমন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করুন। পত্রিকার দৃষ্টিকোণ থেকে এতেই আমরা ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ হতে পারব। ধন্যবাদ– তাপসকিরণ রায়। সহ-সম্পাদকের কলমে – পশুর মতো অবস্থা পার হয়ে মানুষ হয়ে ওঠার মুখে প্রথম প্রথম মুখ দিয়ে নানারকম শব্দ করত। পরে সেই শব্দ গুলোই চিহ্নের আকৃ তি পেতে পেতে ভাষার রূপ পেল। ভাষাই মানুষকে শিখিয়েছে তার উপলব্ধির প্রকাশ করতে। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছেই নিজের মাতৃ ভাষা বড়ই আদরের। ভাষাই আত্মপ্রকাশের যথার্থ মাধ্যম।মাতৃ ভাষা মানুষের মনন ও চিন্তনের ভাষা। আমাদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত ও উন্নত করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম আমাদের মাতৃ ভাষা তাই সকল জাতি তার মাতৃ ভাষার উন্নতি সাধনের চেষ্টা করে। বিশ্বজুড়ে নিজের ভাষা ও সাংস্কৃ তিক ঐতিহ্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটানোই লক্ষ্য থাকে । আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলা।বাংলা ভাষার স্বীকৃ তির জন্য ওপার বাংলায় ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১সালের ঊনিশে মে আসামের বরাক উপত্যকার শিলচর স্টেশনে কমলা ভট্টাচার্য সহ এগারো জনের মৃত্যুবরণ কিংবা দীর্ঘদিন যাবৎ মানভূ মের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ কারী শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগণের কথা স্মরণ করা যেতেই পারে। আর এসব কিছু র মূলে যা ছিল তা হলো মাতৃ ভাষা বাংলার প্রতি অকৃ ত্রিম ভালোবাসা। মাতৃ ভাষা বাংলার শেকড় বুকের এতটাই গভীরে প্রোথিত ছিল যে সেখান থেকে তাকে কখনোই উপড়ে ফেলা সম্ভবপর ছিল না । বাংলা ভাষার রত্নভাণ্ডারটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ সাহিত্যিক গণের সৃজনশীলতায় পরিপূর্ণ সেই বাংলা যা আমাদের প্রতিনিয়ত আত্মোপলব্ধি ঘটিয়ে সঠিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করছে তা আমাদের সহজাত নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতো হলে তবেই মঙ্গল। বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করে মাতৃ ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বাঙালি জাতির এক অনবদ্য সৃষ্টি। পৃথিবীতে আর কোনো জাতি নেই যারা ভাষার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে। খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আত্মদানের ফলে বাংলাভাষার স্বীকৃ তি আদায়ের সুফল আজো ঠিক সেভাবে মেলেনি।

এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। হিন্দি গান, সিনেমা প্রভৃ তির প্রভাবে বর্ত মান বাংলাভাষা ক্রমশঃ একটি মিশ্র ভাষায় পরিণত হচ্ছে। বর্ত মান প্রজন্ম প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে বাংলাকে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় প্রায় দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারী স্তরে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের কারণে উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যম স্কু লে পড়াতে আগ্রহী হওয়ার ফলে তারা বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আবার ইংরেজিও ভালো শিখছে না কারণ সব ইংরেজি মাধ্যম স্কু লের মান সমান নয়। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিকৃ ত বাংলা উচ্চারণের ফলে বাংলাভাষার বিকৃ তিকে অনেকাংশেই ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলার জন্য আত্মবলিদানের ঐতিহাসিক কাহিনী গুলির স্মৃতি যথার্থ মর্যাদায় যেন বেঁচে থাকে প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে। বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনের জন্য, সকল উপেক্ষার আবিলতা কাটিয়ে উত্তরণের জন্য, মাতৃ ভাষার গৌরব প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃ তিকে বিকশিত করার জন্যই সর্বোপরি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আরো বেশী করে বাংলা ভাষা চর্চ ার একান্ত প্রয়োজন। – সাবিত্রী দাস। সহ-সম্পাদকের কলমে – আদরের মতো নরম রোদ্দুর এখন ছুঁ য়ে যাচ্ছে শহর,চু মুদিন শীতের সকালে,শব্দ ঘিরে আগুন।সকালের হিম মেখে মজদুরি সেরে সন্ধ্যার ক্লান্তি র মতো ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে দিন মাস বছর।এ সময় খেঁজর ু গাছ থেকে রস পড়ছে গড়িয়ে যেভাবে আগেও। গত পাঁচ সাত বছরে কর্মহীনতা বেড়েছে পাঁচ শতাংশ।ধারবাকি বেড়েছে দেশের দ্বিগুণের বেশি। ঁ ড়ের ডিম সেদ্ধ খেয়ে বাঁচে। আমাদের দেশে এখনও হো উপজাতি পিপ এসব জানা কথা প্রায় সবার। তবুও তো পেঁচা জাগে... নভেম্বর মাসে একটি শিশু মারা গেছে বোমা ফেটে।একটি আরো শিশু অন্ধত্ব উপহার পেল নতু ন বছরে বিস্ফোরণে।কে রেখেছে বোমা?কার দায়?কেউ জানে না।রাষ্ট্র কোনো দায় নেবে না এইসব ধ্বংস ও কোলশূন্যতার। আমরা বিন্দাস আছি। কেক থেকে কন্টিনেন্টাল,পার্ক স্ট্রিট থেকে দক্ষিনেশ্বর উল্লাস উপচে এসেছে নতু ন ক্যালেন্ডার নগর সভ্যতার কাছে। গোপন রোগের মতো এইসব অবনমনের কথা লিখে রাখবে না ইতিহাস তবু প্রাচীন অসুখের মতো রক্তের মধ্যে থেকে যাবে কথা আর দৃশ্য। বিবেকের কথা লেখার দায় কলমের।প্রতিবাদ সঞ্চিত হোক গল্প কবিতায়।ক্রান্তির বীজ আসুক শব্দ খননে। উষ্ণতা এলেই ঋতু বদল। – জয়িতা ভট্টাচার্য।

সূচিপত্র– কৌস্তুভ দে সরকার – রূপকথার কথা সাবিত্রী দাস – মা ও ভু ল শ্যামাপ্রসাদ সরকার – সোয়েটার জয়িতা ভট্টাচার্য – দেবতা

দেবীপ্রসাদ মজুমদার – অনুতপ্ত ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় – টাকডু মাডু ম নারায়ণ রায় – মোহর কুঞ্জ রূপালী মুখোপাধ্যায় – সমব্যথী নীলেশ নন্দী – বাগান শংকর ব্রহ্ম – রাজপুত্র কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালী দর্পনা গঙ্গোপাধ্যায় – গোসাবা অঞ্চলের মানুষের কথা সুবর্ণা – মুখোশের আড়ালে জেবুননেসা হেলেন – আদুল আসুখ ও পালা বদল তপন কুমার মুখার্জি – চিঠি প্রেরণা বড়াল – এক ফালি চাঁদ বীরেন্দ্রনাথ মন্ডল– যমুনার মাটি শমিত কর্মকার – অধরা বহ্নি শিখা – সত্যি হয়ে গেলো রমা কর্মকার – নোনাবৃষ্টি রূপা বাড়ৈ – ধ্বংসস্তূ প থেকে মুক্তি সন্ধ্যা রায় – স্রোতস্বিনী তাপসকিরণ রায় – ফাঁকা জায়গা

রূপকথার কথা কৌস্তুভ দে সরকার বাড়িতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাবা একলা থাকেন এবং কার্যত: রোজগারহীন। তাই একটু দূরের এক অফিসে ট্রেন জার্নি করে চাকরি করতে যায় রূপকথা। এভাবে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার ফিরতি ট্রেনে এক অদ্ভু ত কান্ড ঘটে গেল। শরতের সাদা মেঘগুলো যখন সন্ধ্যের মৃদু সুলভ বাতাসে কোন নিরুদ্দেশের দিকে পাড়ি দিচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে আধোআলো ছায়ায় মাখামাখি গাছেদের শরীর ছুঁ য়ে আসা শিউলির গন্ধযুক্ত বাতাসের ওড়না ছিঁড়ে ক্রমশঃ এগিয়ে যাওয়া ট্রেনের জানলার পাশে বসে এলোচু লে রূপকথার ঘুম এসে গিয়েছিল। হঠাৎ এক ছোট্ট স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পরই ট্রেনের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙতেই সে অনুভব করতে পারে গোটা ট্রেনের এই একটিমাত্র কামরায় সে যেন একদম একা। আর তার পাশের বার্থে ওই জানলার পাশে বসে থাকা এক ছিপছিপে ভদ্রলোক পেপার পড়তে পড়তে হঠাৎ একটি কাগজের টু করো ওর দিকে ছুঁ ড়ে দেয়, যাতে লেখা "রূপকথা বিশ্বাসঘাতিনি।" কাগজটা হাতে নিয়ে পড়ার ফাঁকে মুহূর্তে ই ওই লোকটি তার দিকে উঠে এসে গোঙাতে গোঙাতে তাকে টেনে হিঁচড়ে দরজার দিকে নিয়ে যেতে চায়, উদ্দেশ্য চলন্ত ট্রেনের থেকে তাকে জোরজবরদস্তি ফেলে দেওয়া। আতঙ্কে কাঁদতে কাঁদতে হলেও মনের জোরে ও ভগবানের নাম স্মরণ করে প্রচন্ড শারীরিক শক্তি খাটিয়ে সে যখন নিজেকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় তখনই সে দেখে ট্রেনটি তার বাড়ির কাছের প্ল্যাটফর্ম ছুঁ য়েছে। তড়িঘড়ি ট্রেন থেকে নেমেই প্ল্যাটফর্মে বসে পড়ে রূপকথা ফুঁ পিয়ে কাঁদতে থাকে। স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটি চলে গেলেও তাকে ওভাবে বসে কাঁদতে দেখে স্টেশনমাস্টার ছু টে আসেন। তার মুখ থেকে সব শোনার পর স্টেশনমাস্টারের মনে সন্দেহ জাগে। তিনি এমন অদ্ভু ত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে চেয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন ঠিক সন্ধ্যে রাতের এই ট্রেনে এই রুটে বিগত সাত বছরে প্রায় সাত জন তরুণী এবং একজন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে এবং তরুণীদের সবার নামই ছিল রূপকথা। সেদিন প্ল্যাটফর্মে ক্রন্দনরতা রূপকথার বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর সবই নিয়েছিলেন তিনি। তাই এরপর রূপকথার বাড়িতে গিয়ে তিনি তাকে সতর্ক করে দিয়ে কয়েকদিন বাড়িতে থাকতে পরামর্শ দেন এবং এরই মধ্যে সেই সাত বছর আগে মৃত একমাত্র পুরুষটির বাড়ির ঠিকানা বের করে তার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন সেই বিধবার নামও আসলে রূপকথা। তার সাথে গল্প করে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামী তাকে পরকীয়া প্রেমে যুক্ত থাকার জন্য ভীষণ সন্দেহ করত এবং

তাকেবিশ্বাসঘাতিনী ভেবেই সে ওই ট্রেনেই আত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকেই এই ট্রেনে সফরকারী রূপকথা নামের কাউকে পেলেই তার অশরীরি আত্মা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে রূপকথার বিশ্বাসঘাতিনি হবার বদলা নিতে খুন করত। আত্মঘাতী স্বামীর এভাবে রূপকথা নামের অসহায় মেয়েদের উপর প্রতিশোধস্পৃহার মেটানোর কথা স্বচক্ষে দেখবার বাসনায় ও স্বামীর ভু ল ভাঙানোর জন্য এবং যাতে নতু ন করে আর কারো প্রাণহানি না হয় সেই ভেবে ওই বিধবা মহিলা রাজি হয়ে যান একদিন স্টেশনমাস্টারের সাথে ওই ট্রেনে সফর করতে। এদিকে রূপকথার বাবাও এক বিখ্যাত তান্ত্রিকের স্মরণাপন্ন হন। তান্ত্রিক তাকে বলেন ওই ট্রেনে আজ রাতেই ফেরার পথে সেই অতৃ প্ত আত্মাকে বিনষ্ট করতে হবে, কারণ আজ মাঘ মাসের ঘোর অমাবস্যা তিথি। আজকের রাতেই তান্ত্রিক নানা জড়িবুটি দিয়ে তাকে কাবু করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। এদিকে স্টেশন মাস্টারও সেই মহিলাকে নিয়ে সেই ট্রেনেই উঠে পড়েন। যখনই ওই অশরীরি এসে রূপকথাকে আক্রমন করতে উদ্যত হয় তখনই তান্ত্রিক তার মন্ত্র:পুত জল ছিটিয়ে দেন এবং মহিলাটিও সেসময় ওই কামরায় এসে উপস্থিত হয়ে অশরীরিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি বিশ্বাসঘাতিনী নন। কিন্তু অশরীরি অবুঝের মতো তাকে সেই বিশ্বাসঘাতিনী অভিযোগেই ট্রেনের থেকে ফেলে দিয়ে নিজেও মন্ত্রপুত জলের দাপটে শক্তি হারিয়ে চিরতরে ভ্যানিশ হয়ে যায়। এইভাবে এই রূপকথা প্রাণে বেঁচে যায়। সমাপ্ত

সাবিত্রী দাসের গল্প – মা আজ সকাল থেকেই প্রভার মনটা বড়ো খারাপ । বড়ো ছেলে আর বৌমা আলোচনা করছিল মা মরে গেলে এই ঘরটা পেলে ওদের ভারী সুবিধে হবে।এমনটাও কানে এলো-"এখনো কতদিন কে জানে?" ওফ! আগে যখন সবাই বলতো-"তোমার পাঁচ ছেলে !মেয়ে নেই,কত ভাগ্যবতী তু মি!"শুনে শুনে তিনিও তেমনটাই ভাবতেন বৈকি ! আনন্দের একটা চোরা-স্রোত বইতো বুকের ভেতর।আর এখন সে সৌভাগ্যের বহর তো প্রতিনিয়ত টের পান। যখন ছেলেরা ছোটো ছিল ,এতটু কু অবসর নেই।তাড়াতাড়ি কাজ,রান্না সেরে বেরোতে হবে!তার মধ্যেই যখন উনি আর প্রভা পাঁচ মিনিট একসাথে বসে চা টু কু খেতেন। তারপর তো আগে পরে খেয়ে নিয়ে বেরোনো।বাচ্চাদের এতটু কুও অযত্ন হতে দিতেন না কখনোই,আর আজ!বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে প্রভা দেবীর।সমস্ত কিছু র বিনিময়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন।এত দুঃখেও হাসি পেয়ে গেল তার, না বড়ো করেছেন,প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেকথা ঠিক কিন্তু মানুষ করতে পারেন নি। এখন তিনি শয্যাশায়ী।সকলের বোঝা! সবাই বলতো প্রভা পরকে আপন করতে পারে।হায়রে! আপনকে আপন করে ধরে রাখতেই পারলো না সে।যখন সুস্থ ছিলেন লোকের বিপদে আপদে পাশে থেকেছেন।তাঁকে দেখতে তাদের কেউ কেউ এলে বৌমারা ভারি বিরক্ত হয়।তার এই আশী বছর বয়সে ডাক্তার দেখাতে চাইলে বলে এ বয়সে অমন হয়।না ঘরটা খালি না হলে তার বড়ো ছেলের ভারী অসুবিধা!কিন্তু মরণও হয়না যে ! উপায় ভাবতে লাগলেন। বিছানার উপরেই তার খাবার রাখার ছোট টু লটা রয়েছে না!যে করেই হোক বড়ো ছেলের মুখে হাসি ফোটাতেই হবে তাকে।বুকের ভেতর তাকিয়ে দেখলেন দশ বছর আগে উপরে চলে যাওয়া মানুষটির মুখখানি।ঈশ্বরকে স্মরণ করে ক্ষমা চাইলেন। চারদিন আগে শেষ পেনশন পেয়েছেন।বালিশের তলায় রাখলেন সেই টাকা ।আরেকটি স্বীকারোক্তি, অন্যদের দায়মুক্ত করার।বুকের ভেতর একটা মোচড়ানো ব্যথা পাক দিয়ে উঠলো। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে উঠে দাঁড়ালেন টু লের উপর। পড়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু না! মনে জোর আনলেন, পরনের শাড়ীতে ফাঁস লাগিয়ে ছুঁ ড়ে ফেলেন ফ্যানের দিকে।দুবারের চেষ্টায় আটকে ফেললেন। শাড়ির অন্য প্রান্তে ফাঁস লাগিয়ে দুচোখ বন্ধ

করে গলায় পরে নিলেন, পায়ের তলার কাঠের টু লটা পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলেন। হ্যাঁচকা টান পড়লো। কি প্রচন্ড কষ্ট!যন্ত্রনায় দমবন্ধ হয়ে আসছে।জিভটা বেরিয়ে পড়েছে। ঠোঁটের পাশ দিয়ে কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো খানিকটা রক্ত । প্রবল যন্ত্রণার চোটে চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়, খানিক ছটফটিয়ে নিস্পন্দ দেহটি ঝু লে পড়লো। ঘর খালি করে দিলেন তিনি বড়ো ছেলের জন্য। সমাপ্ত

ভু ল ঘটক বলেছিল 'মেয়েটা দেখতে শুনতে তেমন ভালো না হলেও, মেয়ের বাবা সোনা-দানা বাদে আড়াই লক্ষ টাকা নগদ দেবে।' কী কুক্ষণেই না শুনেছিল কথাটা! মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হওয়ার পর, শেষ সম্বল বসতবাড়িটাই বন্ধক দিয়ে টাকা যোগাড় করতে বাধ্য হয়েছিল। মা তো বাঁচলোই না, বাড়িটা না ছাড়াতে পারলে মাথাগোঁজার ঠাঁইটু কুও ঘুচে যাবে এই চিন্তায় যখন দিশাহারা ঠিক তখনই প্রস্তাবটা এসেছিল। মেয়ে দেখার পর মনটা সায় দেয়নি, তাই না করেই দিয়েছিল । বলেছিল -'অমন সুন্দর ভাই আমার ,তার সঙ্গে এমনটা করব !' ঘটক তার অবস্থা জানত বলেই ছিনে জোঁকের মতো লেগেছিলো। বারবার শুনতে শুনতে একসময় দিলীপেরও মনে হলো, বাড়িটাও বাঁচবে আর ভাইও একটা ব্যবসা বা কিছু অন্ততঃ করতে পারবে। বৌ বলেছিল-'বিয়ের পর চেহারা ভালো হয়ে যাবে ! ' দ্বিধান্বিত ভাব নিয়ে ভাইকে বলেওছিল-'যা একবার দেখে আয়। ' দাদার উপর বিশ্বাস ছিল দেখতেও গেল না। বিয়ের সময় ভাইয়ের শুকনো মুখ দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। ভু ল করে বসলো না তো! এমন করে ভু লের মাসুল দিতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি। বিয়ের পর থেকে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল, একটা কথাও বলেনি। বেগতিক দেখে যে যার মতো সরে গিয়েছিল। এমনটা যে হবে কেউ ভাবতেও পারেনি। ভাইয়ের ঝু লন্ত শরীরটা দেখে বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল দিলীপের। ভোর রাতে বাসর ঘরে সবাই ঘুমোলে পরনের ধুতিটা দিয়ে ফ্যানে ঝু লে পড়েছে ছেলেটা।........ সমাপ্ত

সোয়েটার– শ্যামাপ্রসাদ সরকার ভরসন্ধে থেকে সব খদ্দেরদের ফিরিয়ে দিতে মন চাইছে বলে ও তাই দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে বসে আছে। আজ তারিখটা হল সতেরোই অঘ্রাণ।‌এই দিনটা যেমন ওর এই লাইনে আসার তিনটে বছর পার করে দেয়, তেমনই এ দিনটা ওর মনের মধ্যে বয়ে আনে মন খারাপের দম আটকানো স্মৃতিও । জ্যোৎস্না দরজায় হুড়কো টেনে দিয়ে ঘরের জোরালো বাল্বটিকে নিভিয়ে দিয়ে নাইটল্যাম্পটাকে জ্বালিয়ে তক্তোপোশের তোলা থেকে তাপ্পি মারা একটা বাক্স‌টেনে বের করে আনল। .... বাইরে তখন মদ্যপদের সাথে আরো সরু; মোটা নানারকমের গলা আরও ছেনালির হইচই শোনা যাচ্ছে। এখানে এটাই হয়তো স্বাভাবিক। আসলে রাত যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনিই বাড়ছে এ পাড়ার রাতের সংলাপ বা হয়তো অগুন্তি প্রলাপও । ওর ভিতর থেকে একটা প্যাকেট বের করে আনল জ্যোৎস্না।‌ওতে মোড়া আছে একটা বছর চারেকের শিশু র পড়ার সোয়েটার। এই ক'বছরে ওটা মলিন হয় গেলেও ওতে আজো নবীন স্পর্শের বড় টাটকা ছোঁয়াটি যেন লেগে আছে ।‌ ..... যে রাত্তিরে খোকা চলে গেছিল সে রাত্তিরে ঘরে রাতের খাবার ছিল না।অভু ক্ত জ্যোৎস্না খুব গাল পেড়েছিল পাশের গ্রামে পালা গাইতে যাওয়া খোকার বাপ রসিক সুত্রধরকে। সবাই বলতো যে আড়ালে আবডালে সে তখন নাকি উঠতি হিরোইন কমলির টানে হাবুডুবু খাচ্ছে।

অনেক ঝগড়া, মান কষাকষি হলেও। তারপর যা হওয়ার তাই হওয়া আটকাল না ! ওর সেদিন যেমন‌ঘর ভাঙলো...পেটের দায়ে সতীত্বটাও একদিন ঘুচলো ! তবু কি ‌ ন্তু ওই নরম হাতের ওম্ টু কু আজো মুছল না। .... আস্তে আস্তে এ পাড়ায় শীত নামছে ! জ্যোৎস্নার বুকের মধ্যে কান্না থেকে থেকে দলা পাকিয়ে উঠছে। আদিগন্ত বিস্তৃ ত অশ্রনদীর একান্তে একটি পশমের পোশাক আর অজস্র না বলা কথা যেন এভাবেই কেবল পাষাণ স্তুপের মতো জমে উঠছে, তার থেকে কি আদৌ নিষ্কৃতি পাবে সে? সমাপ্ত

দেবতা জয়িতা ভট্টাচার্য সারাদিন ধরে বিরক্তিকর ঘ্যানঘ্যান আর মেসেজ।নিম্নচাপের বৃষ্টির মতো ফোঁটা ফোঁটা ভিজিয়ে দিচ্ছে ইনবক্সে ওয়াটস্যাপে।পলাশ মৈত্র অনেক মেসেজ পড়েন না।একই কথা।নানা সুরে।একই আকুতি। আসলে একটা সময় দুর্বল মুহূর্তে জড়িয়ে গেছেন এখন তাঁর বহুবিধ এইসব কাজে বাহুল্য মনে হয়।এখানে সময় ব্যয় আনপ্রোডাক্টিভ।তবু সুতোটা আটকে আছে।পলাশ মৈত্র আলোকিত হতে ভালোবাসেন।সেই আলো হতে পারে সাহিত্য অথবা রাজনীতি যেন তেন প্রকারে।পলাশ জানেন তাঁর অনেক শত্রু এমনকি বন্ধু বেশেও।দুপাশে ঝাউ আর দেবদারু পেরিয়ে এগিয়ে যান পলাশ।এখানে সব লোকেই তাঁকে চেনে।দেখা হলে মাথা নোয়ায় ভয়ে,ভালোবাসায় বা বাধ্যতায়।কিছু যায় আসে না।তিনি খুশি।যেখানে যাবেন দাগ। আড়চোখে দেখে নেন মোবাইল টা।নেই।আর কোনো মেসেজ নেই।তবে আসবে জানেন একটু পর।অথবা ফোন। তাঁর নগ্নতা,তাঁর খামতি তাঁর বয়সের দাগগুলো একমাত্র জানে এই মেয়েটি।ভালোবাসে তাঁকে অদ্ভূ ত ভাবে।তিনি একসময় অবাক হতেন তাঁর মতো স্বার্থসর্বস্ব মানুষকেও কোনো নারী এত কিভাবে ভালোবাসতে পারে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে যান পলাশ।বাড়িতে থাকেন।মোটামুটি এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে তাঁকে যে তিনি একান্ত পত্নীনিষ্ঠ এবং পারিবারিক মানুষ যাকে জনগন ভোট দিয়ে নিশ্চিন্ত হবে। ভিড় করে বসে আছে গ্রামীণ মহিলা পুরুষ অফিসের বাইরে।পলাশ ব্যস্ত হয়ে পড়েন।রাত হলে মদের ঠেকে আলতো চোখ রাখেন মেসেজে। তারিফ আর তোষামোদ।সুযোগের অনুরোধ নানা ধরনের।

কিন্তু তাঁকে আজ পর্যন্ত কেউ দেবতা ভাবে না।এমন আকুতি একবার দেখতে চেয়ে।তর সয় না মেয়েটার দশটা দিন।পাগল হয়ে যায় যেন সে। স্ত্রী র সঙ্গে দূরত্ব মানসিক আর শারীরিকের অনেক বছর পর মেয়েটি তাঁকে তৃ প্তি দিয়েছে একথা সত্যি। যদিও এর মাঝে অনেকেই এসেছে চলেও গেছে।কিন্তু তাঁকে দেবতা কেউ বলেনি।একথা ঠিক। পলাশ একটু বিরক্ত হন।মেয়েটা কোনো মেসেজ করেনি।ঘ্যানঘ্যান করেনি এখনও। ভালবাসতে পারেন না কাউকে এটা তাঁর খামতি। কিন্তু রাতে চোখ বোজার আগে একটা নরম বাতাস তাঁকে ঘুম এনে দেয়। এই আত্মসমর্পণ ভালো লাগে।দিনভর শুধু তাঁকে একবার ছুঁ তে চেয়ে মেয়েটির বায়না কান্না।ভালো লাগে। আগামী বছর রিটায়ার করবেন।ছয় পেগের পর বেশ ঘুম ঘুম জড়তা।মেয়েটা রাগ করে।অভিমান করে চারের বেশি খেলে।ভয় পায় তাঁকে হারানোর।তাঁর কাছে অবশ্য সবটাই জৈবিক চাহিদা আগাগোড়া। সেকথা প্রকাশ করা যায় না। রাতে ফিরে লিখতে বসেন।কয়েকটা জায়গায় লেখা দিতে হবে। স্ক্রিন জুড়ে মেয়েটার মুখ এসে যাচ্ছে। আশ্লেষভরা চু ম্বন, আদর।উফ নেশা হয়ে গেল কি বেশি!পলাশ বিরক্ত হন।আশ্চর্য এতক্ষণে অনেকবার মিনতিভরা মেসেজ আসার কথা।ফোন।ঘ্যানঘ্যানের ঠেলায় রেগে যাবেন।কঠিন কথা শুনিয়ে দেবেন।তারপর শেষে হালকা একটা চু মুর ইমোজি। তাতেই খুশি হয়ে যায় বোকা মেয়েটা।খেলাটায় তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে যে। একটু ইতস্তত করে কল করেন।বন্ধ ফোন।রাগ হচ্ছে মেয়েটার ওপর এবার। সারারাত অস্বস্তি। ঘুম আসছে না।একটাও মেসেজ নেই তার।ফেসবুকে পুরোনো পোস্ট।কোথায় যে গেলো। বাইরেয় বেরিয়ে আসেন পলাশ মৈত্র। একটু পর প্রথম ট্রেন ছাড়বে।হিম ঠাণ্ডা চোখে মুখ ছুঁ য়ে যায়। একটা মেসেজ কেন করছে না ও।অস্থির লাগছে। অসহায় লাগছে হঠাৎ। ঠিক ওই মেয়েটার মতো ব্যাকুল, একবার কথা বলতে... সমাপ্ত

দেবীদাস মজুমদার °অনুতপ্ত° বর্ধমান জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম । মধ্যবিত্ত পরিবার , না মধ্যবিত্ত বলা ভু ল হবে, গরীব পরিবার । সম্পত্তির নামে তিন কামরার, উঠোন সহ মাটির ঘর , টিনের চাল আর পাঁচ কাঠা জমি । রামকৃ ষ্ণ মন্ডল নিজে ছু তোর মিস্ত্রী, বৌ আর তিন ছেলে । বড়ছেলে সদানন্দ , মেজ বিশ্বরূপ আর ছোট হরিপদ। রামকৃ ষ্ণ মন্ডলের কি ই বা আমদানি, তার ওপর নিজের দমবন্ধ করা কাশি আর জীর্ণ শরীর । কোনরকম সংসারটা চলছিল । পাড়াতেই হুসেইন চাচার বেশ বড় বাড়ি , উনি উকিল , খুব ভালো মানুষ । রামকৃ ষ্ণ কে বন্ধুর চোখে দেখতেন । আর বড় ছেলে সদানন্দকে খুবই স্নেহ করতেন । কাঠের কাজ করবার জন্য নিজের বাড়িতে একটা ছোট রুমও দিয়েছিলেন বিনা পয়সায় । রামকৃ ষ্ণ আর বড় ছেলে সদানন্দ দিনভর ওখানে মিস্ত্রীর কাজ করতো । দিন পেরিয়ে যায়, রামকৃ ষ্ণ গত হলেন । সদানন্দ হুসেইন চাচার দেওয়া রুমটা তে কাঠমিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল । হুসেইন চাচার ও বেশ বয়স হয়েছে । সদানন্দর বিয়ে ও হল । সদানন্দ মা আর বৌকে নিয়ে দুটো রুমে থাকতো । সদানন্দর আর দুই ভাই বিশ্বরূপ ও হরিপদ খুবই স্বার্থপর মনোবৃত্তির । মা বাবাকে অবহেলা করতো আর সংসারের প্রতি ছিলো অমনোযোগী। কোনো রকম মাধ্যমিক পাস করে ওরা ডিমের ব্যাবসা শুরু করলো । ব্যাবসাটা ভালো চলল , রোজগার ও ভাল ই হচ্ছিল, ওরা কিন্ত ঘরে এক পয়সাও সাহায্য করতো না । কিছু দিন পর বিশ্বরূপ ও হরিপদ বাড়ির উঠোনে পাকা বাড়ি তু লতে লাগলো। ছোট ভাইদের পাকা ঘর তৈরি হয়েছে ওরা পুরানো রুমে তালা দিয়ে নতু ন ঘরে থাকতেও লাগল । সদানন্দ বার বার ভাইদের বলছিল আমাকে আমার ভাগটা বলে দে । যাতে আমিও আমার অংশটা কাজে লাগাতে পারি । কিন্তু দুজনেই তার কথা উপেক্ষা করে । বলে "হরিপদকে বল" , "বিশ্বরূপ কে বল"। এই বলে দুজনেই একে অপরের উপর দায় চাপাতে থাকে। একদিন সদানন্দর মাও মারা যান।সদানন্দর বাড়ির ছাদে ফাটল , ছিটকে পড়ছিল । সদানন্দ আবার ভাইদের সামনে আবার তার কথা রাখল। দুই ভাই আবার বাধা দিল। হতাশ হয়ে সদানন্দ তার আত্মীয়দের হস্তক্ষেপ করতে বলে। সবাই দুই ভাইকে অনেক বুঝিয়ে বললেও ওরা যথারীতি দায় চাপিয়ে দিল একে অপরের উপর। সদানন্দর এক বন্ধু পরামর্শ দিল, "এই লোকগুলো এভাবে তোমার ভাগ দেবে না, তু মি আইনি লড়াই করো।" কিন্তু সদানন্দ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলো যে "আমি আমার পরিবারের বিরোধ আদালতে রাখব না। আমাকে ভাগ দিক বা না দিক ।" হুসেইন চাচা সবই খবর পাচ্ছিলেন। একদিন তিনি বললেন " তোমার কথা যখন ওরা শুনছেনা তখন তু মি ওই জায়গাতেই নিজের ঘর তৈরি করা আরম্ভ কর । সিদ্ধান্ত আপনা আপনি হয়ে যাবে। " কিন্তু চাচা ওরা ... " সদানন্দ বলল । হুসেইন চাচা মুচকি হাসলেন । সদানন্দ এই হাসির রহস্য বুঝে উঠতে পারলো না । পরেরদিনই সদানন্দ ঘর নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে, মিস্ত্রী এসে কাজ বুঝে নিল , মালপত্র অর্ড ার দেওয়া হল । দুই ভাই বিশ্বরূপ ও হরিপদ নিজেদের সম্মানের তোয়াক্কা না করে তাড়াহুড়ো করে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। সদানন্দ আইনজীবীর সামনে তার বক্তব্য রাখে এবং সিদ্ধান্ত নিতে বলে। ভাই দুজনই অনড় ছিলো । তর্ক -বিতর্ক বাড়তে থাকে এবং থানা-পুলিশ, আদালত এই সব পরিস্থিতি দেখে সদানন্দর মন এবং ধৈর্য ভেঙে যায়। সেই সময় হুসেইন চাচা একটা সরকারি কাগজ নিয়ে আসে। সেই কাগজটা তিনি উকিলের সামনে রাখলেন। তাতে সদানন্দর বাবার একটি উইল লেখা ছিল যে, "এই বাড়িতে শুধু সদানন্দরই অধিকার আছে, আমার অন্য ছেলেদের , এর ওপর কোনো অধিকার নেই।” উইলটা দেখে অন্য দুই ভাইয়ের লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। ওরা আর কোন লজ্জায় মুখ দেখাবে !! সমাপ্ত

টাকডু মাডু ম ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় দিনরাত এক ই চিন্তা গগনবাবুর।মানে গগন সেনগুপ্ত।ছা পোষা কেরানি।মাইনে যা পান তাতে সংকুলান হয় না।বয়সটা পঞ্চান্ন বটে তবে দেখলে পঁয়ষট্টি মনে হয়।যার কারণ ওটাই।গগন বাবুর মাথা ভরা টাক।এই টাক টাই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিল।ওটাই অশান্তির কারণ। সেদিন হঠাৎ আয়নার সামনে হঠাৎ এসে পরেন।আঁতকে ওঠেন যেন।একি!কাকে দেখছেন।চোখে অজান্তেই জল এসে যায়।কত সুন্দর একমাথা চু ল ছিল।কী অবস্থাটাই না হয়েছে।এই সংসারের চিন্তাতেই সব গেল।অথচ দেখো।সংসারের মানুষ গুলোকে।অকৃ তজ্ঞ কাকে বলে।সময় পেলেই টাক নিয়ে টিপ্পনি। স্ত্রী সুজাতার বয়স পঞ্চাশে ঠেকেছে।বেশ আলগা একটা চটক এখনো আছে বৈকি।বিয়ের প্রথম প্রথম কত প্রেম।তু মি আমার।আমি তোমার।আর এখন।সেদিন তো মুখের উপর বলেই দিল যা একটা টাক বানিয়েছ।কোথাও যেতে ইচ্ছাই করে না।হায় কপাল!

কে যেন বলেছিল মেয়েরা মুখেও যা প্রাণেও তাই।এটা আর মানা যায় কি? অন্যকেউ বললে কথা থাকে।ধর্মপত্নী বললে ব্যথাটা শতগুণ লাগে বৈকি।আপাত নিরীহ গগনবাবু সহ্য করেন। শুধু কী তাই?ছোটছেলেটাও লায়েক হয়ে উঠেছে।সবার সামনে সেদিন বললো তোমার মুখ আর মাথার সীমানা বোঝা দায়।কাঁদতে বাকী থাকে গগন বাবুর।এটা একটা জীবন? পাড়ার লোকেরাও তেমনি।তার বাড়ির ঠিকানা হয়েছে টেকো দাদু বা টেকো কাকার বাড়ি।হায়!এই টাকটা গগন বাবুর জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে। জামাইষষ্ঠী।মেয়ে জামাই এসেছে।হাজারো পদ।নাতিটা খুব ই দুষ্টু হয়েছে।কোন এক গানে কেওড়ার পরিবর্তে এ টাকলা বলছে আর কোমড় দোলাচ্ছে।ঘরের শত্রু বিভীষণ।সুজাতা তো হেসে গদগদ। উফফফ!এই হাসি দেখে একদিন অস্থির হতেন গগন বাবু।এখন মনে হচ্ছে কিষ্কিন্ধ্যার বানরী।ছিঃ।ধিক্কার।ধিক্কার। পরদিন অফিসে গিয়ে ঘেমে গেছেন গগনবাবু।জষ্ঠি মাসের গরম।ফ্যানটা চালিয়ে চেয়ারে বসতে যাবেন আর বাসু বলে উঠলো টাকটা তো ভিজে গেছে দাদা। তোর কী রে বলে কী একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন গগনবাবু।ওদের মতো অসভ্যতা শেখেন নি উনি। আজ অনেকদিন পর লটারী তে টাকা পরেছে।দু লাখ টাকা।উৎফু ল্ল গগনবাবুর যেন ধড়ে প্রাণ এসেছে।বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে গদগদ।সুজাতা অনেক দিন পর গগন বাবুর টাকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।সোহাগের সুরে বলছেন কী গো?এবার সোনার হার দেবে তো? ছোট ছেলেটা বাড়ি থেকে যাবার আগে গগন বাবুকে ঠক করে একটা প্রণাম করে বললো গাড়ি কিনতে পঞ্চাশ হাজার দিও বাবা। কিছু ক্ষণ পরেই খবর পেয়ে মেয়ে জামাই হাজির।মেয়ে হাসতে হাসতে বললো নাতিটার জন্য কিছু টাকা দিও কিন্তু।দশটা নয়,পাঁচটা নয়, একটাই নাতি। গগনবাবু দেখলেন টাক এর প্রসঙ্গ টাই হঠাৎ উবে গেছে।বাসুও অফিসে দু হাজার টাকা চেয়েছে কাঁদো কাঁদো হয়ে। হায় কপাল! একটা আ কারের এত ক্ষমতা গগনবাবু আজ তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলেন। মনে মনে গেয়ে উঠলেন মাথাভরা টাক দিলি টাকা দিলি না।। সমাপ্ত

মোহর কুঞ্জ– নারায়ণ রায় পটাইবাবু মানুষটি বড়ই শান্ত শিষ্ট । তু লনায় পটাইবাবুর স্ত্রী পুটি ঁ রানীর মেজাজ কিঞ্চিত উর্দ্ধ মুখি। তবে দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া না হলে সে জীবন বড়ই সাদা মাটা, আর এই আপ্তবাক্যটি পটাইবাবুরা দুজনে বিশেষ ভাবে মান্য করেন। অন্যান্য দিনের ন্যায় সেদিনও পটাইবাবুর সঙ্গে তার স্ত্রীর সক্কাল বেলাতেই একটু একটু করে কিছু টা অম্ল-মধুর শুরু হয়ে গেল। আসুন আমরা আমাদের কান দুটিকে পটাইবাবুর বাড়িতে পৌছে দেই। সকালে মুড়ি আর ভেলিগুড় দিয়ে টিফিন সেরে বেশ আয়েশ করে খবরের কাগজটা নিয়ে পড়তে পড়তে পটাইবাবু তার স্ত্রী-কে বললেন, “গিন্নী আজ বিকেলে আমাদের ফেসবুকের বন্ধুদের একটা গ্রুপ মীট আছে আর তাতে আমাকে আজ যেতেই হবে.........।” সুরবালা তখন তার বিখ্যাত শিল-নোড়ায় ঘটর ঘটর করে ধনে পাতা বাটছিলেন তাই পটাইবাবুর কথাটা ঠিক মত শুনতে না পেয়ে চিৎকার করে উঠলেন, “কি মী...ট ? না না ও সব খিট-মিটে জায়গায় যাওয়া চলবে না।” “না না খিট মিটে নয় গিন্নী, গ্রুপ মীট, ফেসবুকের গ্রুপ মীট...। দেখ গিন্নি ওখানে পাঁচজন ভালো ভালো লোক আসেন পাঁচ রকম ভালো ভালো বিষয় আশয় নিয়ে আলোচনা হয়...... গেলে একটু জ্ঞান গম্যি বাড়ে। তাছাড়া সারাজীবন তো সরকারের কেরানীগিরি আর তোমার খিদমতগিরি করেই জীবনটা কেটে গেল, তাই এই বয়সে এসে ভাবছি একটু বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, একটু জনসেবামূলক কাজ এইসব করেই সময় কাটাব। বুঝলে গিন্নী কথায় বলে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!” আসলে এই কথাটা উচ্চারণ করার পরেও পটাইবাবু বুঝতে পারলেন না যে তিনি তার অজান্তে একটি চকোলেট বোমায় অগ্নি সংযোগ করলেন, এখন শুধু ফাটার অপেক্ষা।

“ও তার মানে তু মি বলতে চাইছো যে আমি তোমার অসৎ সঙ্গ, আর ওই মুখ পোড়া মেয়েগুলো তোমার সৎ সঙ্গ ? হায় হায় হায় বেঁচে থাকতে এ কথাও শুনতে হল আমাকে? ছি ছি এর চেয়ে আমার মরণ হ’ল না কেন?” রাগে কাঁপতে কাঁপতে পুটি ঁ রানী তার ধনেপাতা বাটার গতি দুই-তিন গুন বাড়িয়ে দেন। “ছি ছি তু মি কেন আমার অসৎ সঙ্গ হবে ? তু মিই হচ্ছ আমার একম অদ্বিতীয়ম, বউ, গিন্নী, সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গিনী, ইংরাজীতে যাকে বলে ‘বেটার-হাফ’ অর্থাৎ আমাদের দুজনের মধ্যে আমি শুধু গুড আর তু মিই হচ্ছ বেটার।... বুঝেছ গিন্নী।” একথা বলে পটাইবাবু তার ডান হাতটা বাড়িয়ে পুটি ঁ রানীর থুতনি-টা ধরে একটু আদর করতে যেতেই, তার হাতটিকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে পুটিরানী মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলেন...। “ওরে 'মুখ পোড়া মিনসে', মনে করো আমি কিছু ই জানি না... কিছু ই বুঝি না...... তাই না ? সেদিন ছেলে আমাকে সব দেখিয়েছে...। কম্প্যুটার খুলে আমাকে দেখিয়ে বলল, মা এই দেখ বাবার ফেরেন্ড লিস্ট......। হায় হায় হায়! আমি দেখে অবাক ...। একটাও পুরুষ মানুষ নেই গা। শুধু ধুমসো ধুমসো মেয়ে ছেলেতে ভর্তি ...। একজন আবার লিখেছে ...। "আমার হাত ধরে তু মি নিয়ে চল সখা আমি যে পথ চিনি না।" ছি ছি ছি, ছেলের সামনে আমি লজ্জায় মরে যাই...। এসো আজ তোমাকে আমি পথ চেনাচ্ছি !!! আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন !!! আজ থেকে তোমার ঐ কম্পুটার-এ বসা বন্ধ...... এই হক কথা বলে দিলাম... হ্যা...।” ঘটর ঘটর করতে করতে পুটি ঁ রানী বলে চলেন। পটাইবাবু, আমতা আমতা করে তার অর্ধাঙ্গিনীকে বোঝাবার চেষ্টা করেন, “গিন্নী, ওটা আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়, ওটা একটা বিখ্যাত গান। আর এই বয়সে আমার হাত আবার কে ধরতে যাবে ?” কিন্তু মনে মনে ভাবলেন .....( আহা তেমন যদি কাউকে পাওয়া যেত...... কি ভালই না হত? ) তবে মুখে বললেন, “গিন্নী, এখন ফেসবুকে একাউন্ট না থাকলে তু মি সেকেলে হয়ে যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সবার ফেসবুক একাউন্ট আছে, এমন কি প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়েরা পড়াশুনায় কতটা কি এগোল কিম্বা রানী এলিজাবেথ আজ কি দিয়ে ভাত খেলেন এ সবই তু মি ফেসবুক থেকে জানতে পারবে।” “তা, আর একজন যে লিখেছে ‘আমি তোমাকে চাই’ ঐ মেয়েছেলেটা কে ?” পুটি ঁ রানী তার চোখ দুটি বড় বড় করে জানতে চান। “কে আবার কাকে চাইবে ? ও কাউকে চায় না, ঐটাই ওর নাম, ফেসবুকে অনেকেই আসল নাম না দিয়ে, ওই ভাবে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের নাম লেখে, যেমন ধর, ‘আমি তোমাকে চাই’, ‘কোথায় তোমাকে পাই’, ‘বৃষ্টি-ভেজা মন’ কিম্বা ‘ছাতার তলায় আমরা দুজন’ এই রকম আর কি ? তাহলে ঐ কথাই থাকলো, আজ বিকেলে আমি মোহরকুঞ্জে যাচ্ছি।” পটাইবাবু গিন্নীর মেজাজ সম্মন্ধে ষোলআনা নিশ্চিন্ত হয়ে বেশ অনায়াসে কথাটা বলে দেন পুটি ঁ রানীকে। কিন্তু মুখের কথা আর হাতের ঢিল একবার বেরিয়ে গেলে আর তো ফেরানো যায় না। পটাইবাবু বুঝতে পারেননি যে তিনি মুখ ফসকে তার গিন্নীর হাতে একটি মারাত্মক বোমা তু লে দিলেন, এবং যথারীতি সেই বোমাটিও সঙ্গে সঙ্গে ফাটলো। “কি......? কুঞ্জে যাবে? এত দু-র-র-র ? তার মানে একটি রাধিকেও জোগাড় হয়েছে দেখছি ? ও-ও-ও মা-আ-গো-ও-ও এ আমার কি সব্বোনাশ হ’ল গো......? তা সঙ্গে গোপিনীরাও আছেন নিশ্চয়। হায় হায় হায় ...। এই বুড়ো বয়সে এতো দূর ? আমি এখন আত্মীয় পরিজন সবার কাছে মুখ দেখাই কি করে গো ও ও ও ।... বলে কিনা কুঞ্জে যাবে? তাই দেখি আজকাল সারাদিন কুম্পুটারে ঘাড় গুঁজে থাকে কেন?” পুটি ঁ রানীর কান্নার সুর আরও উচ্চগ্রামে ওঠে। “দুত্তোর...। আরে এ কুঞ্জ সে কুঞ্জ নয়...! এ কুঞ্জ হচ্ছে এই কলকাতা শহরের একটা পার্কে র নাম...। বলি এই পৃথিবীতে কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে কারও নাম শুনেছ ?” এতক্ষন কথাগুলো জোরে জোরে বলে পটাইবাবু এবার আস্তে আস্তে টিপ্পনি কাটেন ‘তা আর শুনবে কি করে? বাপের তো ছিলো কয়লার ব্যবসা’। “কি তু মি আমার বাপ তু ললে...... ? তোমার এত বড় সাহস ?”... প্রায় লাফিয়ে ওঠেন পুটি ঁ রানী। “তোমার বাপকে কি আমি তু লতে পারি? আমার সে ক্ষমতাই নেই, জীবদ্দশায় তার ওজন ছিল চার মন, এখন স্বর্গে গিয়ে আদৌ কিছু কমেছে কিনা কে জানে?” কথাগুলো মিন মিন করে আপন মনে বলেই গিন্নীকে শুনিয়ে জোরে জোরে বললেন, ”আচ্ছা তু মি মোহর বলে কারও নাম শুনেছো?”

“ও ও ও তাকে এখনও ভোলনি দেখছি ! বিয়ের পর থেকেই তো দেখতাম, আমার পিসতু তো বোন মোহরকে দেখলেই ‘ও আমার দুষ্টু শালী... মিষ্টি শালী’ বলে তার সঙ্গে তোমার কতই না ফস্টি নস্টি আর আদিখ্যেতা। আর ছু ড়িটাও তেমনি, জামাইবাবু বলতে এক্কেবারে অজ্ঞান। ছি ছি তাকে এখনও ভোলোনি তু মি ? হায় হায় এই না হলে পুরুষ মানুষের চরিত্র... ?” হতাস গলায় বলেন পুটি ঁ রানী। “ আরে দুত্তোর, এ মোহর সে মোহর নয় ইনি হলেন একজন বিখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। সারাটা জীবন তো শুধু রান্নাঘর, শোয়ারঘর, আর আঁতুড়ঘর, এর বাইরে তো আর কিছু চিনলে না............ !” পটাইবাবুর কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সদর দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজাটা খুলতেই হই হই করে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করলেন পটাইবাবুর পারিবারিক বন্ধু সদা হাস্যময় চিরকুমার লাটাইবাবু। “কি গো বৌঠান কি ব্যাপার ? আজ সকাল থেকে কি এমন হল যে দুজনেরই মুখে আষাঢ়ের ঘন মেঘমালা?” রসিক বন্ধুর উপস্থিতি দুজনকেই যেন নতু ন করে ঝগড়ায় উস্কানি দিল। “আর বলিস না রে, তোর বৌঠানের ধারণা আমাদের ঐসব গ্রুপ মীটগুলোতে শুধুই শ্রীকৃ ষ্ণের লীলা খেলা চলে। একটু বুঝিয়ে বল তো, ওখানে গিয়ে আমরা কি করি?” পটাইবাবুর কথা শেষ না হতেই পুটি ঁ রানী ঝাঝিয়ে ওঠেন, “দেখ ঠাকুরপো, ঐ মুখ পোড়াকে সমর্থন করে একটাও কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। ওর একটা কথাও আমি বিশ্বাস করি না, অবশ্য তোমরা দুজনেই তো চোরে চোরে মাসতু তো ভাই।” “কি যে বল বৌঠান? তু মি থাকতে আমি কখনও ঐ বাঁদর টাকে সমর্থন করি? ওর কথা ছেড়ে দাও, বরং ও যেখানে যাচ্ছে যেতে দাও, আর চল আমরাও দুজনে কোথাও একটু ঘুরে আসি, ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে চল ‘পেয়ার মে দিয়ানা’ সিনেমাটা দুজনে এই সুযোগে দেখে আসি।” লাটাইবাবুর মুখে একথা শুনে একেবারে লাফিয়ে ওঠেন পটাইবাবু, “ কি? এত বড় কথা? তোর সাহস তো কম না ? আমি থাকতে তু ই আমার বউকে নিয়ে যাবি সিনেমা দেখতে?” “তা তু ই যদি কুঞ্জে গিয়ে অন্যের বউদের সঙ্গে লীলে খেলা করতে পারিস আর আমি একটু তোর বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে পারব না?” এ কথা বলে লাটাইবাবু তার বন্ধুর কাছে গিয়ে কি যেন ফিস ফিস করে বললেন, আর বাইরে ভাবখানা দেখালেন যেন, বৌঠান তো ঠিকই বলেছেন। এদিকে তার উত্তরে পটাইবাবুও সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ... “যা যা তোরা যেখানে খুশি যা ... আজ আমি কুঞ্জে যাবই কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না”। আর এটাতেই মন্ত্রের মত কাজ হ’ল। প্রতি উত্তরে পুটি ঁ রানীও গলা চড়িয়ে বলে উঠলেন, “ঠিক আছে ঠাকুরপো... চলতো, তাহলে আমিও সত্যি সত্যি আজ তোমার সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাবই।" সকালের ঝগড়ার মধ্য দিয়ে যা যা ঠিক করা হয়েছিল সেই অনুযায়ী বিকেলের কাজগুলো হ’ল। পটাইবাবু বেলা তিনটে নাগাদই মোহর কুঞ্জের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন। আর বেলা চারটে নাগাদ সেজে গুজে লাটাইবাবু এসে হাজির। মধ্য পঞ্চাশের পুটি ঁ রানীকে পটাইবাবু এর আগে অনেকবার ফেসবুকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনিই কখনো কোথাও যেতেই চাননি, কিন্তু সেদিন পটাইবাবুর ফ্রেন্ডলিস্ট দেখার পর থেকে তার মাথার ঠিক নেই...। ছি ছি এই বুড়ো বয়সে এসে এসব কি? আজ একটা হেস্ত নেস্ত করে তবে ছাড়বেন তিনি। তাই অনেক সঙ্কোচ, অনেক লজ্জা সঙ্গে নিয়েও বিবাহিত জীবনে এই প্রথম একজন পরপুরুষের সঙ্গে বাইরে বেরলেন তিনি। মেট্রোতে ময়দান স্টেশনে নেমে লাটাইবাবু বললেন, “চলো বৌঠান এই ফাঁকা ময়দানে দুজনে বসে একটু সুখ দুঃখের গল্প করি।” ঠিক সেই মুহুর্তে পুটি ঁ রানীর নিজেকে খুব আপরাধী বলে মনে হতে লাগল। লাটাইবাবুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “না, গো আমার ভালো লাগছে না, চল আমরা বাড়ি ফিরে যাই।” "সে কী ? তাহলে ঐ বাঁদরটার প্রতি প্রতিশোধ নেবে না তু মি?" লাটাইবাবু বলে ওঠেন। "না না তু মি বাড়ি চল ঠাকুরপো" মিনতি করে ওঠেন পুটি ঁ রানী। তখন লাটাইবাবু তার হাতের আসল তাসটি বার করলেন। পুটি ঁ রানীকে একটু দূরে একটা আলো ঝলমলে জায়গা দেখিয়ে বললেন, “ঐ যে সাজানো গোছানো, আলো ঝলমলে পার্ক টা দেখছো, ওটাই সেই মোহর কুঞ্জ, চল তো বাঁদরটা ওখানে কি করছে একবার দেখে আসি।” এই কথা শুনেই আবার সুরবালা যেন তার আসল তেজ ফিরে পেলেন, “ওহ! তাই! চল তো, আজ মুখপোড়াটাকে একেবারে হাতে নাতে ধরবো।” দুজনে ভিতরে প্রবেশ করে কিছু টা এগিয়ে এক যায়গায় পৌছিয়েই অবাক হয়ে যায়

পুটি ঁ রানী। কি সুন্দর সাজানো গোছানো গাছ গাছালি ও ফু লে ফু লে ভরা একটা পার্ক । রঙ্গীন জলের ফোয়ারা, কত নারী-পুরুষ এবং ছেলে-মেয়েরা ঘোরা ফেরা করছে, কিম্বা বসে বসে গল্প করছে। কলকাতায় যে একটা এত সুন্দর যায়গা আছে, লাটাইবাবু আজ জোর করে না নিয়ে এলে তার জানাই হত না, সত্যি প্রেম করবার উপযুক্ত যায়গাই বটে, ইশ্ তারমানে এতদিন তাকে ফাঁকি দিয়ে পটাইবাবু এখানে এসে এইসব করে বেরাচ্ছে ছি ছি ছি। হঠাৎ পুটি ঁ রানীর নজরে পড়ে একটা জায়গায় একটা উঁচু বেদীর উপর প্রায় পঁচিশ ত্রিশ জন পনের ষোল বছরের ছেলে মেয়ে। আরও দেখে অবাক হয়ে যান যে ঐ বেদীর উপরে আট দশ জন বয়স্ক মহিলা ও পুরুষের মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পটাইবাবু। পিছনে একটা ব্যানারে লেখা “”ফেসবুক পথ-শিশু গ্রুপ””। ততক্ষনে উদ্বোধনী সঙ্গীত শুরু হয়ে গেছে। উদ্বোধনী সঙ্গীতের পরে পরেই এক ভদ্রমহিলা ঘোষণা করলেন “এই কলকাতা শহরে কয়েক লক্ষ লোক এক শোচনীয় পরিবেশে ফু টপাথে বাস করতে বাধ্য হয়, কিন্তু ঐ পরিবেশেও কত পদ্মফু ল নীরবে ফোটে আমরা তার কতটু কুই বা খবর পাই? আজ আমাদের এই ফেসবুক পথশিশু গ্রুপের পক্ষ থেকে এমনই ত্রিশজনকে সংবর্ধনা জানিয়ে আমরা ধন্য হতে চাই। এইসব ছেলে মেয়েরা ফু টপাথের প্রতিকূল পরিবেশে বাস করেও এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেছে"। "এবার এদের প্রত্যেকের হাতে পুষ্প স্তবক, পুস্তক-সামগ্রী ও একটি করে মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে সংবর্ধনা জানাবেন, আমাদের গ্রুপের প্রবীন সদস্য শ্রী পটাই চন্দ্র খাসনবীশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে আজকের এই পুরষ্কারের যাবতীয় খরচ বহন করেছেন আমাদের গ্রুপের গর্ব পটাইবাবু"। লাটাইবাবু লক্ষ্য করলেন পুটি ঁ রানীর চোখদুটি কেমন যেন ছল ছল করছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন শুধু পটাইবাবুর দিকে। ছোট্ট অনুষ্ঠান, আধ ঘন্টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। দুই বন্ধুর পূর্ব পরিকল্পনা মত পটাইবাবুও দূর থেকে সবই লক্ষ্য করেছেন কিন্তু যেন কিছু ই দেখতে পাননি এমন ভাব দেখিয়ে পুটি ঁ রানীর পাশ দিয়ে যাবার সময়ে হঠাৎ পুটি ঁ রানীকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে, জিজ্ঞেস করলেন "আরে, তু মি এখানে কি করে এলে ?", পুটি ঁ রানী জীবনে এই প্রথম প্রকাশ্যে পটাইবাবুকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে বলে উঠলেন, “শুনেছি ছোটবেলায় তু মি খুব ভাল ফু টবল খেলতে, কিন্তু তু মি যে এত বড় অভিনেতা, সেটা কোনদিন বুঝতে পারিনি গো।” সমাপ্ত

সমব্যথী রূপালী মুখোপাধ্যায় কাল রাতের ঘটনার পর থেকে কিছু তেই মনকে শান্ত করতে পারছেনা রিমা ।আজ সকাল বেলায় খোলা জানালায় বসে ঝরা পাতাগুলো দেখছিল আর নিজেকে একই আসনে বসিয়ে পাতাগুলোর সঙ্গে ভেসে ভেসে মাটির উপর মুখ থুবড়ে পড়ছিল। সারাদিন একই ভাবে কাটিয়ে রাত্রে মনের যাবতীয় দুঃখগুলো কে আন্ডার লক আ্যান্ড কি করে শুতে গেল রিমা,নিশ্চিন্তে ঘুমাবে বলে । কেও যাতে টের না পায় । কিন্তু হায়, বিছানা বালিশ ওরা খুব ধূর্ত সব টের পেয়ে গেল এবং সব দুঃখ ভু লিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিল , রিমা তাকে জড়িয়ে ধরে সব দুঃখ জল করে বার করার চেষ্টা করলো । পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একটি হলুদ পাখি উড়ে এসে রিমাকে বলল , "মন খারাপ করিস না আমারও একই অবস্থা ,দেখছিস না আমি তোর মুখ দেখেই তোর কষ্টটা অনুভব করে ফেললাম । তবে তোর মতো ঝরাপাতার দলে নাম লেখবো না। বুঝলি ?" সমাপ্ত

বাগান– নিলেশ নন্দী ছোট্ট দোতলা বাড়িটার সামনে বিশাল বড় বাগান। ফু ল, ফল, শাক-সব্জি, কি নেই তাতে? রং-বেরংয়ের বাহারি ফু ল, আম, জাম, কাঁঠাল, সবেদা, আতা ইত্যাদি গাছ এবং লাউ, কুমড়োর সঙ্গে বাহারি শাকে বাগান ছেয়ে রয়েছে। সাগ্নিক রোজ বাগানের পরিচর্যা করে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রাণভরে বাতাসের গন্ধ ফু সফু সে শুষে নিতে থাকে। দুহাতে আলতো করে সযত্নে সদ্য প্রস্ফু টিত ফু লের সুবাস নেয়। প্রকৃ তিই তার আদি অন্ত প্রাণ। সে জানে, গাছ না থাকলে কোন প্রাণীও থাকবে না। সবুজের সংস্পর্শেই সে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। এখন শরৎকাল। বাগানের একপাশে একফালি জমিতে ছোট ছোট কাশফু ল ফু টেছে। শিউলি গাছে অজস্র শিউলি ফু ল ফু টে আছে। গাছের তলায়ও কচি কচি ঘাসের উপর শিউলি ফু ল ঝরে পড়েছে। কি অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য! সাগ্নিক দেখল আকাশের টু করো টু করো মেঘের তলে এখন কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। এই সময়টায় প্রায়ই এমন হয়। বর্ষাকাল চলে যাওয়ার পরেও বর্ষা পিছু ছাড়ে না। তবে বর্ষা হলে গাছেরা বর্ষার জল পায়, যা গাছেদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারপর বর্ষা শেষে মেঘ সরে গিয়ে সূর্যের কোমল কিরণ বিচ্ছুরিত হয়ে গাছেদের পাতা ঝলমলিয়ে ওঠে। যেন শত শত হীরককণা তাদের বাগানে এসে জড়ো হয়েছে। এরই মধ্যে কখন যেন বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা তার গায়ে এসে পড়েছে, তার খেয়ালও নেই। ঠিক সেই সময় অনিন্দিতা এসে তাকে ডাক দিল, "কি গো, বৃষ্টিতে ভিজছ কেন? ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে। তু মি জানো না, এই সময় বৃষ্টিতে ভেজা বারণ? কতজনের অসুখ-বিসুখ হয়ে গিয়েছে।"

সাগ্নিক একটু হেসে বলল, "আমার কিচ্ছু হবে না। তু মি চিন্তা করো না। পরিবেশকে যখন কাছ থেকে পেয়েছি, তখন তাকে প্রাণভরে উপভোগ করা উচিত। সবার ভাগ্যে তা জোটে না।" অনিন্দিতা একটু গলে গিয়ে বলল, "আচ্ছা বাবা। এখন এসো। বৃষ্টি কমে গেলে আমরা দুজন একসঙ্গে বাগানে গিয়ে অনেকটা সময় কাটাব।" সাগ্নিক ছু টে গিয়ে বারান্দার ওপর উঠে দাঁড়াল। অনিন্দিতা শাড়ির আঁচল দিয়ে তার মাথার জল মুছে দিল। অনিন্দিতা সাগ্নিকের খুব খেয়াল রাখে। সাগ্নিকও তাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু, সাগ্নিকের তো কোনদিনও গাছপালার উপর কোন টান ছিল না? তাহলে তার হঠাৎ করে এরকম টান জন্মানোর কারণ কি? তাছাড়া, এই বাগান তো তার বাবা শুভময়বাবু নিজের হাতে গড়ে তু লেছিলেন। সারাটা দিন তিনি বাগানেই পড়ে থাকতেন। তিনি যখন রোগে শয্যা নিলেন, তখন সাগ্নিককে বলেছিলেন বাগান পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে। সাগ্নিক প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে বাবার শরীরের দিকে নজর রেখে সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তু লে নিয়েছিল। শুভময়বাবু তাকে বারবার বলতেন, "প্রকৃ তিকে যত ভালোবাসবি, তার দেখভাল করবি, ততই দেখবি সেও তোকে ভালো কিছু রিটার্ন দিচ্ছে। প্রকৃ তি না থাকলে আজ আমরাও থাকতাম না।" যেদিন তিনি সাগ্নিকদের ছেড়ে চলে গেলেন, সেদিন যাওয়ার আগে তিনি প্রাণভরে বাতাসের শ্বাস গ্রহণ করেছিলেন। তারপর চিরতরে প্রকৃ তির মাঝেই বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন। তবে আজ সাগ্নিকের প্রকৃ তির প্রতি যে অটল টানের সৃষ্টি হয়েছে, তা কি বংশানুক্রমে লাভ করা? নাকি অন্য কোন কারণ আছে? বাবার হঠাৎ করে মৃত্যুর শোকে কি সে বাবার কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে? সে তা জানে না। শুধু এটাই জানে সে প্রকৃ তিকে ভালোবাসবে। কিছু ক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেল। আকাশে সাদা পেঁজা তু লোর মত টু করো টু করো মেঘ ভেসে উঠল। সূর্যের ছটা বাগানের ওপর পড়তেই শত শত হীরকবিন্দু ঝলমলিয়ে উঠল। সাগ্নিক এবং অনিন্দিতা দুজনে একে অপরের হাত ধরে বাগানের দিকে এগোল। সমাপ্ত

এক রাজপুত্র কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালী শংকর ব্রহ্ম --------------------------------

সে সব অনেকদিন আগের কথা। অচিনপুর নামে একটা দেশ ছিল । যেখানে পরীরা এসে মানুষের সাথে গল্প করত। পাখিরা, মাছেরা সব মানুষের সাথে কথা বলত। যেখানে ছিল আলো গাছ। যে গাছে রাতে আলো জ্বলতো। ছিল আশা নামে একটা নদী। যে নদীর পাশে বসে কেউ দুখের কথা বললে, নদী তার সব দুঃখের কথা শুনে তা দূর করে দিত। নদীর পাশেই ছিলো একটা গ্রাম, নাম লক্ষ্মীকান্তপুর। সেই গ্রামেই থাকত ছোট্ট একটা মেয়ে। সবাই তাকে লক্ষ্মী বলেই ডাকতো। বয়স তার আর কত হবে। সবে মাত্র দু'টো দাঁত পড়েছে। সে সারাদিন ঘুরে বেড়াত বাগানে , সেখানে প্রজাপতিদের সাথে নাচতো, বনের পাখির সাথে গাইত। কি মধুর ছিল তার গলার স্বর। তার গান শুনে, বনের সব গাছের পাতারা নাচতো, জলের মাছ ডাঙায় উঠে এসে তার গান শুনত। সন্ধ্যেবেলায় পরীরা এসে তার সাথে গল্প জুড়ত। একদিন লক্ষ্মী আশা নদীর পাশে বসে কাঁদতে লাগলো। গাল বেয়ে টু প করে এক ফোটা জল পড়ল নদীতে।

নদী বলে উঠল, ওমা এ কি গো লক্ষ্মীমণি, তোমার চোখে জল! কি দুঃখ তোমার, বলো আমায়। আমার মার খুব অসুখ করেছে গো আশা নদী। মা নাকি আর বেশীদিন বাঁচবে না। মা না থাকলে আমার কি কোন আনন্দ থাকবে বল? কাঁদতে কাঁদতে বলল সে। তার কান্না দেখে নদীর জল কেঁ পে উঠলো। নদীর মাছেরা, নদীকে মিনতি করে বলল, ও গো আশা নদী, তু মি তো সবার দুঃখ দূর কর। লক্ষ্মীর মা কে তু মি ভালো করে দাও। বনের গাছেরা মাটিকে বলল, মাটি তু মি তো আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে রেখেছো। লক্ষীর মা কে তু মি বাঁচিয়ে দাও। নাইলে আমরা আর কোন ফু ল, ফল দেবো না। রাতে আলোচনা সভা বসলো। আশা নদী, বনের মাটি, বাতাস আর পরীরা সবাই মিলে, এই ঐ অনেক ভেবে চিন্তে শেষে খুজে ঁ পেলো লক্ষীর মা কে বাঁচানোর একটা উপায়। লক্ষ্মীকে পরদিন ডেকে বলল, তোমার মা কে বাঁচানোর একটা উপায় আমরা খুজে ঁ পেয়েছি। কিন্তু সে যে বড় কঠিন। লক্ষ্মী কেঁ দে কেঁ দে বলল, বল তোমরা আমায় কি সে উপায়। মা কে বাঁচাতে আমি সব করতে পারবো। - বেশ, তবে কাল ভোরে সূর্য ওঠার আগে, একটা ফানুশে করে তোমায় আমরা সকলে মিলে উড়িয়ে দেবো। সে ফানুশ গিয়ে যেখানে পড়বে সেখানেই মিলবে তোমার মা কে বাঁচানোর উপায় - বলল নীলপরী। ভোর বেলায় একটা বড় ফানুশে বসিয়ে লক্ষ্মীকে আকাশে উড়িয়ে দিল সবাই। কাঁদল গ্রামের মানুষ, নদী, গাছ, মাছ সবাই। উড়তে উড়তে বহুদুরে উড়ে গেলো সে ফানুশ। গিয়ে পড়লো অচেনা এক রাজ্যে। সেখানে ঘাসগুলো সব ফ্যাকাসে, গাছে নেই কোন পাতা, নদীতে নেই জল। হাঁটতে হাঁটতে এক বিরাট রাজ প্রাসাদের সামনে এসে দাড়ালো লক্ষ্মী। ভিতরে ঢু কে দেখলো রাজা একা বসে কাঁদছেন। তার কাছে গিয়ে লক্ষ্মী বলল, আপনি কাঁদছেন কেন? রাজা মাথা তু লে দেখলো, লাল রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। সে বলল, কে তু মি মা? কোথায় থেকে এসেছো? আমার এই রাজ্যে এক সন্ন্যাসীর অভিশাপ লেগেছে। তাই কোন গাছে ফল নেই, নদীতে জল নেই। না খেতে পেরে আমার সব প্রজারা মরে যাচ্ছে। আমার একমাত্র পুত্র বিক্রমজিৎ জলের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। - আমি পারবো আপনার রাজ্যকে বাঁচাতে বলল লক্ষ্মী। - কি বললে মা তু মি! তু মি পারবে? কথা দিচ্ছি যদি তু মি সত্যি আমার রাজ্য আর আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারো, যা চাইবে তাই পাবে, বলল রাজা। রাজাকে নিয়ে সে বাইরে বেরিয়ে এলো।

এসে গান গাওয়া শুরু করলো লক্ষ্মী। তার সে গান শুনে ঘাসগুলো সব সতেজ হয়ে উঠল, গাছগুলো সব পাতায় পাতায় ভরে উঠল সবুজ হয়ে। নদীতে জল এলো কলকল শব্দে ছু টে। নদী ভরে গেল জলে । তাতে কত মাছ। জল খেয়ে বাঁচল রাজপুত্র বিক্রমজিতের প্রাণ। বিক্রমজিতের সাথে বসে গল্প করতে করতে তার দুঃখের কথা লক্ষ্মী বলল বিক্রমকে। বিক্রমজিৎ সব শুনে বলল, আমি জানি কি করে তোমার মা কে বাঁচানো যাবে। সে বলল, কি করে? বল আমায় সে উপায়?” বিক্রমজিৎ বলল, এ রাজ্যের পুব কোনে আছে এক বৃষ্টি গাছ। সে গাছের নীচে দাঁড়ালেই বৃষ্টি হয় সুগন্ধী মিষ্টি রস। তা যদি তোমার মা কে, খাওয়াতে পারো বাঁচবেন তিনি। তারপর দু'জনে মিলে চলে গেল সে বৃষ্টি গাছের কাছে। দু'জনে মিলে ভিজল আর শিশি ভরে নিলো সেই বৃষ্টির জল। তারপর রাজকুমার তার ঘোড়ায় চাপিয়ে লক্ষ্মীকে নিয়ে প্রান্তরের পর প্রান্তর পেরিয়ে গেল লক্ষ্মীর মায়ের কাছে। বৃষ্টির জল খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠল তার মা। রাজপুত্র বিক্রমজিৎ ফিরে গেল তার রাজ্যে। রাজা সারা রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে ঘেষণা করেদিলেন, লক্ষ্মীমণির সাথে বিক্রমজিতের বিয়ের কথা। তার অল্প কিছু দিন পর রাজা মহাসমারোহে, ধুমধাম করে লক্ষ্মীকে বিক্রমজিতের বউ করে নিয়ে গেলেন রাজ্যে। রাজবঁধূর সম্মানে একমাসব্যাপী সারা রাজ্যজুড়ে উৎসব চললো। প্রজারা সকলে তাতে সামিল হতে পেরে ভীষণ খুশি। সমাপ্ত

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় গোসাবা অঞ্চলের মানুষের কথা _______________________

আমি এখানে আমার আত্মীয়ের বাড়ি বনবিবির পূজা উপলক্ষে কদিন থাকবো। তাই আশেপাশে একাই ঘুরছিলাম, এসময় একটা পাগলি দেখতে পেলাম যার চোখ খুবলে বেরিয়ে আসা। বিশ্রী মুখের একটি মেয়ে গলার আওয়াজ বিকট। সবাই বললে, শুধুমাত্র খিদে পেলেই সে বেরিয়ে আসে এবং চেঁ চাতে থাকে তাই সবাই এক থালা ভাত উঁচু ঢিবিতে বসিয়ে দিল। অনেকটা বাঘের স্টাইলে গোঁ গোঁ করে সব ভাত খেয়ে পুকুরে গিয়ে থালা ধুয়ে পুকুরে মুখ ডু বিয়ে জল খেলে।

আমি জিজ্ঞাসা করতে বললে ওকে বাঘে খেয়েছিল বনদপ্তর কোনক্রমে বাঁচিয়ে দিয়েছে। সেই থেকেও বাঘের মতো হয়ে গেছে। চায়ের দোকানে ওর কথা জিজ্ঞাসা করতেই সকলে মিলে বললে সে অনেক কথা। ও পাগলি নয় ! আমি করিমকে ধরলাম, করিম সাদামাটা সুঠাম গঠনের যুবক দেখে মনে হল যে খুব একটা মিথ্যে কথা বলবে না, বাকি সবার হেয়ালিপূর্ণ কথাবার্ত ায় আসল রহস্য গোপন করার প্রচেষ্টা। তাই তাদের কাউকে আমার পছন্দ হলো না। ঘাটের এক নিরিবিলি জায়গায় করিমের সঙ্গে বিড়ি ধরালাম। লোকেরা বুঝল ইয়ং ছেলে নেশা করতে আমাদের থেকে আড়াল খুজ ঁ ছে, ইয়ার্কি ঠাট্টা করবে আর কি! তবুও কাশেম কে ওরা আমাদের কথোপকথনের বিষয়বস্তু জানতে পাঠালে ,আমরা দুজনেই বলি কি দাদা --ওসব চলবে নাকি ? কাসেম বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ একটু লজ্জা পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হল। দু চারটে লজ্জাজনক কথাবার্ত া ও আমরা বলছিলাম বটে! কাশেম চলে যেতে করিম এবার শুরু করল বলল, পাগলী আগে ফার্স্ট গার্ল ছিল ভালোভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসও করেছিল ।প্রেম করত সনাতন মন্ডলের ছেলে দুর্বার সঙ্গে। দুর্বাচরণ ও পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিল। পাগলী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পরই ওদের বিয়ে হয়। পাগলী খুব সুন্দরী ছিল। ফেটে পড়া গায়ের রং ভরা যৌবন মাখন এর মত গা ধুলঢ ু ু লু চোখ খ্যাঁদা নাক, টু কটু কে লাল ঠোঁট ।দুর্বাও সুন্দর যুবক,-- মানিয়েছিলে বেশ। কিন্তু কি জানেন বাবু ,--- নজর লেগে গেল ! পাড়ার মোড়লের ছেলের দল ঠিক করল দুর্বাকে ভু লিয়ে জঙ্গলে মধুর চাক ভাঙতে নিয়ে গিয়ে খুন করে দেবে। করলেও তাই--মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ওখানে ফেলে রেখে চলে এলো, ফিরে এসে বলল বাঘে খেয়েছে দুর্বাকে। পাগলীর ভাগ্য পাগলীকে পাগলি করে তু লল ! পাগলী তখন সন্তান সম্ভব ছিল, তাই হালকা কাজ করতে শুরু করল জলায় ছোট জালে মাছ ধরা শাক তোলা ,দুপুরে টিউশনি পড়ানো কাঠ যোগাড় করা এভাবেই বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত চলছিল। তারপর বাচ্চা হতে বাপের বাড়ি চলে যায়। ছ মাস বাচ্চা করে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে আবার এখানে ফিরে এলো। এরপরে ঘটল বিপত্তি সনাতন মন্ডলের শরীর বিশেষ ভালো না থাকা, অকালে ছেলে চলে যাবার শোক সামলাতে না পেরে অভাবের দায় দেনায় ডু বে যাওয়া; কাল হয়ে গেল । একদিন রাতে মোড়লের ছেলের দল সনাতন মন্ডলের বাড়ি হামলা চালিয়ে অসুস্থ সনাতন মন্ডলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। পাগলির উপর চালালো নৃশংস তান্ডব নিলাম পাগলী বাচ্চাটার কান্না শব্দে জেগে উঠলো বাচ্চাটাকে নিয়ে সেই থেকে পথে পথে ঘুরতে লাগলো এভাবেও বেশ কিছু বছর কেটে গেল। বাচ্চাটা হাঁটতে চলতে কথা বলতে শিখলো--, একদিন সত্যিই পাওয়া গেল বাঘের দেখা, পাগলী ছেলে টাকে বলল, তু ই রাস্তায় দাঁড়া। আমি ওই বাঘটাকে খুন করবো ও তোর বাপ টাকে মেরেছে, আমি ওকে ছাড়বো কিনা ! মাথায় রক্ত উঠেছে আমার! আমি বাঘটাকে মেরে ফেলবো ,বলে বাঘটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ।তারপর তো দেখতেই পাচ্ছেন বাঘটা ওর কি দশা করেছে , বনদপ্তরেরলোক বাঘটাকে ফলো করছিল তাই প্রাণে মারতে পারিনি। এমন দৃশ্য দেখে গাড়ি করে পথ চলতি এক দম্পতি ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে যায়, বলে যায় যে, মাঝে মাঝে এসে তোমার বাচ্চা তোমায় দেখিয়ে নিয়ে যাব। আমরা মানুষ করব আমরা নিঃসন্তান । কিন্তু সেদিকেও ফু টো কপাল সে দম্পতি আর এ পথে কখনো আসেনি। প্রতি বছর বনবিবি পুজোয় পাগলী অনেক মানত করে। কিন্তু কেউ ফেরেনা। সবাই ওকে অপয়া বলে --কেউ ওর মুখ দেখে কাজে যায় না--তাই ও জঙ্গলে একটা গোপন ডেরায় অধিকাংশ সময় কাটায়, মাঝে মাঝে খিদের জ্বালায় বেরিয়ে পড়ে। ঠিক বাঘের মত। সমাপ্ত

মুখোশের আড়ালে সুবর্ণা --------------------------------------------------------ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং, , , , কলিংবেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিলো। ঘরে ঢু কলো বাড়ির মালিক। ও দাদা, এত রাইত হইলো তোমার, বৌমনি এতসময় বইসা থাইকা এখন না খাইয়া ঘুমাইয়া পরলো। ---ওহ্ কতদিন বলেছি, আমার জন্য অপেক্ষা করো না, আচ্ছা তু ই যা। বিমল আর সুরভী। পাঁচ বছরের দাম্পত্য সুখী জীবন তাদের। দুজনই নানা ধরনের সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। বিমল এলাকায় রাজনৈতিক দিক থেকেও বেশ প্রভাবশালী। সুরভী এলাকার "নারী সুরক্ষা কমিটি", "ধর্ষণরোধ কমিটি", "নারী নির্যাতন রোধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। বেশ ব্যস্ততায় তাদের দিন কাটে। তাই এখনো তারা মা, বাবা হবার কথা ভাবতেও পারেনা। -----ডিনার করতে করতে সুরভী জিজ্ঞাসা করলো, ----কি গো? এত রাত হলো কেন?

বিমল-- আর বোলো না, দেশে ধর্ষন নিয়ে যা শুরু হয়েছে? এক নাবালিকা ধর্ষণকে কেন্দ্র করে উত্তাল দেশ। ভাবছি কাল আমাদের "ধর্ষণ রোধ"কমিটি নিয়ে প্রতিবাদী মিছিল বের করবো। তু মি শুয়ে পরো, আমি কালকের কর্মসূচীর প্রতিবেদন তৈরী করে আসছি। সুরভি--- সত্যি, মানুষগুলো সব পশুতে পরিনত হয়েছে। ঘেন্না করে ভাবলে, বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখলেও কামের লালসা তীব্র হয়ে ওঠে, ছিঃ। বিড়বিড় করতে করতে ঘুমাতে চলে গেলো সুরভী। গভীর রাত। একমনে কর্মসূচী তৈরীতে ব্যস্ত। জল পিপাসায় গলা শুকিয়ে এলো বিমলের। ঘুম জড়ানো চোখে রান্না ঘরে গ্লাসটি সবে হাতে, , , , হঠাৎই চোখ পরলো, কাজের মেয়েটি রান্নাঘরের মেঝেতে শোয়া অর্ধনগ্ন অবস্থায়। ফ্যান না থাকার দরুন গরমে ছটপট করছে। স্থির হয়ে গেলো বিমল। সমস্ত ইন্দ্রিয়, চেতনা, জ্ঞান, সন্মান অকেজো হয়ে গেলো। নিমেষে ঘরে ঢু কে হুইস্কি গিলে আবার পৌঁছে গেলো রান্না ঘরে। অন্তঃপর ১ঘন্টা রান্নাঘর বন্ধ। সকালে বাড়িতে দেখা গেলো অনেক লোক। দম্পত্তির বেডরুমের ফ্যানে সুরভী ঝু লছে, মৃত অবস্থায়। নাবালিকা কাজের মেয়েটিকে রক্তাক্ত, অজ্ঞান অবস্থায় পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে তু লছে। আর বিমল বাবু , দুহাতে চু ল ধরে চিৎকার করে বলছে, , আমি কিছু করিনি, , , , , , , সুরভী, , , , আমি কিছু করিনি, , , , , , , , , , বাকিটা ইতিহাস।

সমাপ্ত

জেবুননেসা হেলেন – পালাবদল মুন্নি ঘুমাচ্ছিলো।নিজেই নিজের নাক ডাকার শব্দ শুনছিলো যেনো। কোনো কারণ ছাড়াই ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙার কারণ খুজ ঁ তে দুই হাতে চোখ ডলে নিলো। ডানদিকে ঘুরে দেয়ালে ঘড়ি দেখলো। নাহ! বেশি সময় হয় নি ঘুমিয়েছে। নাকে তীব্র পোড়া গন্ধ লাগলো।এতো লাগোয়া বাড়িগুলো মনে হয়, ঘরেই বুঝি কিছু পুড়ছে। ঘুমানোর সময় খুব ভালো করে চু লা লাইট দরজা বন্ধ করে সে বিছানায় এসেছে। তবু স্বভাবসুলভ উঠে রান্নাঘরে ঢু কে চেক করলো,ভু লে কিছু চু লায় রেখেই শুয়ে পড়েছে কিনা! নাহ! চু লা নেভানো। ঘুম ভাঙার কারণ এই পোড়াগন্ধ। পাশেই কারো গায়ে চড়ের চট চট চটাচট কয়েকটি চড়ের শব্দ কানে এলো।

সে বুঝে গেলো, নতু ন যে বাড়িটা তিনমাস আগে তৈরি হয়েছে,তার তৃ তীয় তলায় নতু ন সংসার পাতা দু' জন ভাড়া এসেছে।ওখানেই কিছু পুড়েছে। এ বাড়ির চার তলায় মুন্নি থাকে।ও বাড়িতে যেতে হলে অনেক ঘুর পথে যেতে হবে। তবে ওদের মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় বারান্দায় খুনসুটি করতে দেখা যায়।দুই একটি পলক পড়া আবেগী কথাও বারান্দায় দাঁড়ালে, না শুনতে চাইলেও শোনা যায়। এখন মেয়েটির গেংগানোর আওয়াজ আসছে। সে কাঁদছে। ফু পিয়ে ফু পিয়ে কাঁদছে।যেনো বজ্রপাত হওয়ার আগে আকাশ গোংগাচ্ছে। আজ ঈদ উৎসব। রাতে বেশিভাগ রান্না শেষ করে রাখায়, আজ হাতে তেমন কাজ নেই।ঘরের সবাই যে যার মত বাইরে। তাই এই সকাল এগারোটায় একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলো সে। কিন্তু মনটা কেমন মেঘাচ্ছন্ন বিষন্ন হয়ে গেলো। এরা যে পালিয়ে বিয়ে করেছে তা এদের টু কটাক কথায়ই বোঝা যায়। দু' জনের বয়সই কম। ছেলেটা হয়ত কোথাও কাজ করে। ছোটখাটো চাকরি হবে হয়ত। মেয়েটা হয়ত রান্নাই জানে না ভালো করে।গৃহিনী হয়ে উঠার পরিবেশই পায় নি। হতে পারে অসমবিত্তের পরিবার। প্রতিবাদ করার বয়সও হয় নি। থেকে থেকে ভেসে আসছে হুউউ হুউউ হুউউ... পোড়া যাচ্ছে সময়... পুড়ে যাচ্ছে আবেগ... পুড়ছে ভালোবাসা... পুড়ছে বিশ্বাস... হুউউ হুউউ হুউউ…

আদুল আসুখ

বাসমতি চালের ঘ্রাণ ভেসে আসছে কারো উনুনে সেদ্ধ হতে হতে। ঠিক দুপুর গলানো আধদুপুরে আদুল গায়ের মেঘ গর্জ ন আসার আগে বিদ্যুৎ চমকে উঠে ঝু ম বৃষ্টি নেমে এলো। চালের ঘ্রাণ হারিয়ে গিয়ে মাটির সোদা ভেজা গন্ধ নাকে ঢু কে যাচ্ছে। পাশেই সদ্য গতকালের ছাদ পেটানো ছাদে জল জমেছে।জলের ওপর জল পড়ে বুদবুদ ওঠা কিশোরী জল কণাদের দিকে নায়ার চেয়ে আছে মুগ্ধ নয়নে। ওর কিশোর কাল চলে গেছে বহুদিন। আজ ছোট ভাই ও তার স্ত্রীর সাথে বাকবিতন্ডায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে সে।অনেকক্ষণ বসেছিলো বাজারের চায়ের দোকানে।যখন কেউ একজন তার ভাইয়ের নাম নিয়ে দোকানদারকে বলছিলো তাকে খুচ্ছে ঁ তার ভাই।সে উঠে চলে এসেছে পরশি বড়বোন পারুলের বাড়িতে।এসে বলেছে সে যেনো না বলে সে এই বাড়িতে। বিয়ের পাত্র খুজ ঁ তে খুজ ঁ তে তার ডাক্তার বাবা আর গৃহিণী মা তার বয়স পাড় করে দিয়েছে সাইত্রিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে যখন সে পড়ে তখন বাবা বার বার মানা করেছে কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা না বলে।সে কথা রেখেছে।বাবা সুপাত্রে কন্যা দান করার আগেই গত জুনে করোনায় মারা গেছেন। ভাই,মা,ভাইবউ কারো আধিপত্য তার এখন ভালো লাগে না। তার ইচ্ছে করে কেহ একজন তাকে বলুক," আই লাভ ইউ"।

তার সৌন্দর্য কোনো অংশেই কম নয়।পাঁচ ফু ট সাত ইঞ্চি দীর্ঘ শরীরটার দিকে একবার সে চেয়ে দেখে।তার জীবন নিঃসঙ্গ।বাবার হাজারো কড়াকড়িতে কিশোরী কালও সে উপভোগ করতে পারে নি। জীবনকে সে দেখেছে টিভিতে দেখা গল্প কাহিনীতে। একটা চাকরির দরখাস্ত পর্যন্ত তাকে করতে দেয়া হয় নি। এখন তার মেজাজ হয়ে গেছে খিটখিটে। কিছু ই ভালো লাগে না তার। অথচ কি নেই তার? ইশ! বৃষ্টি মেয়েরা কি আনন্দই না করছে।উফ! কি ঘনকালো মেঘ নেমে আসছে দিগন্তরেখায়।ইচ্ছে করছে ওই ছাদে কারো সাথে জল ছিটিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। নায়ার আনমনা থাকতে থাকতে খালাত ভাই মিনহাজ ভাইয়ের বউ মালিহা ভাবির ফোন এলো। -হ্যালো! -হ্যাঁ ভাবি বলো। -তু ই কই? - আছি।কেনো? - না।তোকে খুজে ঁ সব্বাই হয়রান।কোনো দিন কোথাও যাস না।কই গেছিস? - ভাবি,আমি ভালো আছি।তু মি আমার খুব প্রিয় বলেই ফোন ধরেছি।তু মি যে আমাকে ফোন করেছো।আমি ধরেছি,কাউকে বলো না প্লিজ! - হঠাৎ কি হলো? আমি আসি তু ই কই বল? নায়ার ফোন কেটে দিলো। চোখ পড়ে গেলো পাশের ছাদের, একজোড়া চড়ুই গা ধুচ্ছে... নায়ার ভাবছে সে কি বাড়ি ফিরবে? নাকি... সমাপ্ত

চিঠি তপন মুখার্জি বর্ষার পরে ই শশধর ঢাকির নাতি বিশু রোজ দিন পোস্ট অফিসে র বাইরে এসে বসে । বীরভূ মের ছোট গ্রাম খয়রাশোল এর ছোট পোস্ট অফিস । পোস্ট মাষ্টার সুধীন বাবু বাইরের ডাকের থলে খুলেছেন মাত্র, বিশু পোস্ট ম্যান নকুল কে জিজ্ঞেস করল " হেই খুড়ো, দ্যাকেন তো আমরা দাদুর কোন চিঠি আইচে কি না ?" আসলে প্রতিবার এই সময় জবলপুর থেকে একটা চিঠি আসে ।ওখানে দুর্গা পূজোয় চারদিন ঢাক বাজাতে যাবার আমন্ত্রণ জানান হয় আর তারপরই আসে বায়নার অ্যাডভ্যান্স । বিশু এইবার সেই চিঠি র অপেক্ষায় আছে । বর্ষার পরে শরতের উজ্জ্বল আকাশে মাঠে মাঠে কাশফু লের সমাহারে, শিউলির সুগন্ধে সদ্য কিশোর বিশুর মনেও আসন্ন দুর্গা পূজার আনন্দের ঢেউ এসে লেগেছে ।এরই অপেক্ষায় সে সারা বছর ঢাকের বোল তু লতে দাদু শশধরের সান্নিধ্য ও নির্দে শনায় ঢাক বাজানোর রেওয়াজ করেছে । এবার দাদু বলেছে" বিশো,এবার তু ই আমার সঙ্গে যাবি ।আর পরের বছর থেকে তু ই যাবি হুথাকে ,আমার বয়স হৈঁ চে আর যেতি পারব না ।" বিশু শুনেছে জবলপুরে বাঙালিদের অনেক ক্লাব আছে ।সেখান ষষ্ঠীর দিন থেকে পূজো প্যান্ডেল গুলো সেজে ওঠে ।কলকাতা র কারিগর রা ওখানেই গিয়ে ঠাকুর গড়ে । দিনে পূজো, রাতে নাটক,গান কত কিছু হয় । কলকাতা থেকে অনেক গায়ক আসে । বিশু দাদুর কাছে জেনেছে দিনে পূজো প্যান্ডেলে সন্ধ্যা আরতি র পর আর কোন কাজ থাকেনা ।মেলা দেখা, অন্য প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা, গান শোনা এই সবকিছু ই করা যায় । ষষ্ঠীর বাজনা, ভোগ আরতি, সপ্তমী, অষ্টমীর দিনে ঢাকের বোল কি ভাবে তু লতে হয় সব কিছু ই রপ্ত করেছে সারা বছর ।সন্ধি বা নবমীর বলিদানের বাজনা ও সে জানে এখন । ঢ্যাং ঢ্যাং ন্যাকটা ন্যাটাং থেকে ঢ্যাং কুরকুর ঢ্যাং সব কিছু ই তার আয়ত্তে এখন । ধুনচি ু নাচের সঙ্গে ওখানে কত নৃতন নূতন বাবু দের সঙ্গে তাকে ও পাল্লা দিয়ে ঢাক বাজিয়ে নাচতে হবে আর তারা আবার ঢাকি কে তার জন্য আলাদা করে টাকা ও দেয় । কল্পনায় এই সব ভেবে ভেবে খুব আনন্দ পায় বিশু। পুজো কমিটির লোকেরাই থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে । দুপুরে প্রত্যেক প্যান্ডেলে পংক্তি ভোজে খুব ভালো খাবার থাকে ।আর রাত্রে নানারকম খাবার স্টলে ই তারা খেয়ে থাকে । এই খয়রাশোল থেকেই তাদের গ্রামের বেশ কয়েকজন ঢাকি তৃ তীয়ার দিনেই বেড়িয়ে পড়ে ।অন্ডাল ষ্টেশন থেকে শক্তিপুঞ্জ ধরে পঞ্চমীর দিন পৌঁছে যায় সেখানে । দশমী র বিসর্জ নের পরেও ওরা,আরও দু তিন দিন ওখানেই থাকে। তখন পূজো কমিটির সদস্য দের বাড়িতে ওদের খাওয়া র ব্যবস্থা থাকে ।এক বেলা একজনের বাড়িতে অন্য বেলা অন্য জনের বাড়িতে এই ভাবেই চলে । যে খাবার ওদের জোটে না সেই রকম খাবার ওরা পেট

ভরে খেয়ে থাকে আর একাদশীর পরে প্রত্যেক বাঙালির বাড়িতে গিয়ে ঢাক বাজালেই প্রত্যেকেই নগদ টাকা, মিষ্টি ফল দেয় আর হয়ত,পুরনো কাপড়, শাড়ি ও দেয় অনেকেই।ওদের মত গরীব লোকদের এ,যে কত বড় পাওনা সেটা ওরাই জানে । তাদের গ্রামে যে পূজো হয় বা আশে পাশে কোথাও তারা এই সব পাওয়ার আশা কখনই করতে পারে না । এই দুর্গাপুজো তে ওরা গ্রামে থাকতে পারে না ।সকলকে ছেড়ে আঠ নয় দিন বাইরে যেতে হয় কিন্তু ওরা মন খারাপ করে না বরং এত দূরে র ট্রেন যাত্রা আর পূজো র ঢাক বাজানোর কাজের সঙ্গে মজুরি আর বাবুদের দেওয়া উপহার এই সব অঢেল আনন্দ দেয়, ওরা সারা বছর এই চিঠির অপেক্ষায় থাকে । এই একখানা ছোট্ট পোস্ট কার্ড পূজো কমিটি র সেক্রেটারি পাঠিয়ে থাকেন । আজ সকালে বিশু পোস্ট অফিসে একটু দেরি তে পৌঁছাল। মনে আশা আজ সেই চিঠি টা নিশ্চয়ই আসবে ।পোস্ট অফিসে পৌঁছাতে ই নকুল বিশুকে ডেকে বলল " এই বিশো,হেই লে রে তু র চিঠি ।জবলপুর থেকে এইচে ।" বিশু বলল,"খুড়ো, তু মিই পড়ে শোনাও দিকিন ।" নকুল চিঠিটা পড়তে লাগলে বিশু উৎসুক হয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইল । একটু পরে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলল ,খপর ভাল লয় রে বিশো, এবার হুই খানে পিতিমে হবেক লাই রে ।করোনা র লেগে নবমী র দিন ঘট পূজো টা ই হবেক নমো নমো করে ।তু দের যেতে হবেক লাই । চিঠি খানা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিশু মনে মনে ঢাকের বোল রপ্ত করতে লাগল - ঢ্যাম কুরাকুর ঢ্যাম কুরাকুর--আর চলতে চলতেই নিজেকে শুনিয়ে বলল ই বার না হয় আসছে বচর তো হবেক ,করোনা তো ততদিন থাকবেক লাই রে ,থাকবেক লাই ।। সমাপ্ত

এক ফালি চাঁদ প্রেরণা বড়াল ---------------------

তপনের মনের আকাশে এক ফালি চাঁদ, যে কিনা তার জীবনকে জোছনাতে ভরিয়ে রেখেছিল। তা আজ অস্তমিত। আজ মনে হচ্ছে অমাবস্যার অন্ধকার তার জীবনকে পুরোপুরিই গ্রাস করে নিয়েছে। সে কি কোন দিনও আলোর খোঁজ পাবে আর? ১৯৯১-তে প্রাণ বাঁচাতে কাশ্মীর থেকে তপন মাকে নিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে কোলকাতা সহরে এসেছিল। ছোট বোনটাকে আততায়ীদের কবল থেকে বাঁচাতে পারে নাই। বোন ছোট থাকতেই বাবা এক্সিডেন্টে মারা যান। সেটা আদৌ এক্সিডেন্ট ছিল, না হত্যা আজো পরিস্কার নয়। তপনের বাবা না থাকায় জমির অধিকাংশই লোকে দখল করে নিয়েছিল। বাড়ীর সাথেই আধা বিঘার মত জমি ওদের ছিল। তাতে ওদের খরচ চলতো না। তাই তপনকে বাইরে কাজ করতে হত। নিজের পড়া সম্পূর্ণ না হলেও বোনকে পড়ানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শেষমেষ কিছু ই করতে পারলো না সে। মা, বোনের ভাবনায় ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছিল। তা ছাড়া কোলকাতার আবহাওয়া, রাস্তার পাশে ঝু পড়িতে থাকা – এ সব ওর মায়ের সহ্য হচ্ছিল না। সহরে কাজের অভাব ছিল না। কোন না কোন কাজ রোজ পেয়েই যেত। কিন্ত যতোটা ওদের দরকার ততোটাও কামাই হত না। কিছু টাকা ও জমিয়েছিল। তা দিয়ে সহরে কিছু করা দুঃস্বপ্নের মত। তাই তপন ঠিক করে গ্রামের দিকে যাবে। ঘটনাচক্রে নদীয়া জেলার মায়াপুরের ইস্কনের এক সাধুবাবার সাথে ওর পরিচয় হয়, আর ওরা ওনার সাথেই চলে আসে মায়াপুরে। সেখানে দু কাঠা জমি কিনে একটা ছোট্ট মাটির ঘর করে, মা ব্যাটা থাকতে শুরু করে। মায়ের শরীরের কথা ভেবেই তপন মাকে নিয়ে ভাগীরথীর সংগমে যায়। যেখানে ভাগীরথীর সাথে মিশেছে জলঙ্গী নদী(খড়ে নদী)। যদি মায়ের একটু ভাল লাগে। ওরা বসেছিল সংগমে। সূর্য অস্তাচলে যেতে বসেছিল। পশ্চিম আকাশে সাদা মেঘের উপর সূর্যের সোনামাখা রোদ, একদিকে গাছপালা অন্যদিকে জলের ঢেউ। সব মিলিয়ে মায়াময় পরিবেশ। হঠাৎ তপনের চোখ পড়ে একটা উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরের উপর। আধা তীরে এবং আধা জলে পড়ে আছে। তপন ভাবলো আবার এখানে এসেও মরা দেখতে হবে। ততক্ষণ ওর মা ওদিকে চলতে শুরু করে দিয়েছিল। অগত্যা মায়ের সাথেই ওকে যেতে হল। কাছে যেতেই বোঝা গেল একটি মেয়ে। মা বলল "দেখ তো বেঁচে আছে নাকি"। মায়ের কথা মত ভাল করে পরখ করতেই বোঝা গেল মেয়েটির মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই ক্ষত কিন্ত তখনো শ্বাস চলছে। জানতেই মায়ের চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। মা বলল "এক্ষু নি ওকে বাড়ী নিয়ে চল।"তপন পুলিশকে খবর দিতে চাইলে মা মানা করলো, বলল, আগে প্রাণে বাচানোর চেষ্টা কর। তাই হল, লোকে জিজ্ঞেস করলে মা বলল আমার মেয়ে। ঔষধে আর মায়ের সেবায় মেয়েটি মাসের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্ত সুস্থ হওয়ার পরও মেয়েটি তার বাড়ী, ঠিকানা এবং ওকে কারা ওই অবস্থা করেছিল ,কিছু তেই কিছু বলল না। শুধুই ওর নাম, তনু, তাই বলেছিল। পরে ওকে আর বিরক্ত করেনি কেউ। তপনের মা তার মেয়ের কথা একটু একটু করে ভু লে যেতে শুরু করে তনুকে পেয়ে। তনু ওদের মত অত ফর্সা না হলেও কালো ছিল না। কোকড়ান একমাথা কালোচু ল, নাক, চোখ টানাটানা–সব মিলিয়ে একটা মোহনীয় ব্যাপার ছিল। তপন এবং ওর মায়ের ভাল লাগা মন্দ লাগা সব কয়েক মাসের মধ্যেই জেনে নিয়েছিল তনু। মাকে ঘরের কাজে হাত দিতেই দিত না। ঘরে যেন লক্ষ্মী শ্রী ফিরে এলো। উন্নতির রাস্তায় তরতর করে আগে বাড়তে লাগল তপন। এক একর জমি কিনে ফেলল। দুই কামরার একটা পাকা বাড়ীও বানিয়ে ফেলল তপন। তপনের মা এক দিন তনুকে বলল"তনু তু ই পাকাপোক্ত ভাবে এই বাড়িতেই থাক–তপনের বোউ হয়ে।" তনু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েছিল। ও খুব কম কথা বলতো। ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক করলো মা। ওরা দুজন কেনাকাটার জন্য বেরিয়েছিল। ভাগ্যের পরিহাসে রাস্তায় এক্সিডেন্টে স্পটেই মারা যায় তনু। ও বেঁচে যায়। কিন্ত কি ভাবে?এটা বুঝতে পারে না তপন। মনের মধ্যে ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন জাগে। তনুর কোন পুরান শত্রুর কাজ নয়তো ? এবারের ধাক্কায় মায়ের নুতনের সাথে পুরান ক্ষত আবার তাজা হয়েছে। মাকে কি করে সামাল দেবে তপন?।আর নিজে---?

সমাপ্ত

যমুনার মাটি– বীরেন্দ্রনাথ মন্ডল একবার বিখ্যাত ব্যারিস্টার সুবিনয় রায় মথুরা বৃন্দাবন গিয়েছিলেন। তীর্থ করতে নয় অবশ্য। গিয়েছিলেন কিছু কানুনি পরামর্শ দিতে মঠের মহন্ত মহারাজকে ।সঙ্গে ছিল সাগরেদ অসিত। সুবিনয়ের সহকারী প্রাইভেট সেক্রেটারি ।মোটকথা সুবিনয়ের সব রকম কাজের সহায়তা করতো অসিত। কটক স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে দুজনে টেক্সি করে বাড়ি ফিরছিল ।হঠাৎ ছোট একটা ব্রিজের কাছে এসে বিড়বিড় করে সুবিনয় অসিতকে বলল বড় ভু ল হয়ে গেছে। সে ব্রিজ পার হলে ড্রাইভারকে ট্যাক্সি থামাতে বলল ।হাতের খবর কাগজটি অসিতকে দিয়ে ক্যানেলের পাড় থেকে কিছু মাটি পেপারে করে নিয়ে আসতে। অসিত দৌড়ে গিয়ে নদীর পাড় থেকে কিছু মাটি পেপারে প্যাক করে সুবিনয়ের হাতে দিল ।সুবিনয় পকেট থেকে পরিষ্কার রুমাল দিয়ে বেঁধে নিজের দামি ব্যাগটার ভিতর যত্ন করে রাখল। একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ধীরে ধীরে বলল যাক বাঁচা গেল। অসিত কিছু ই বুঝতে পারল না।যন্ত্রের মত কাজ করে সুবিনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

পরদিন সুবিনয় তার বন্ধু ব্যারিস্টার রজতের স্ত্রী চিত্রার হাতে মাটির প্যাকেটটি দিল। চিত্রা মাটির প্যাকেট মাথায় ঠেকিয়ে একটা পরিষ্কার কাচের জারের ভিতর রেখে দিল। এর ভিতর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। সুবিনয় ও বন্ধু রজত বুড়ো হয়ে গেছে। সুবিনয়ের ছেলের সাথে রজতের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদেরও ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে। তারা এখন বিদেশে থাকে। মাঝে রজতের ভিশন শরীর খারাপ হয়। বড় ডাক্তার দেখানো হয়। কিছু তেই শরীর ঠিক হয় না। বড় দুশ্চিন্তায় তাদের দিন যায়। রজত একদিন স্ত্রী চিত্রাকে বলে তোমার যমুনা নদীর পাড়ের যে মাটি সুবিনয় বৃন্দাবন থেকে এনে দিয়েছিল তার একটু দাও। খেয়ে দেখি যদি শরীরটা ঠিক হয়। চিত্রা ভক্তি ভরে ঠাকুর ঘর থেকে একটা প্লেটে অল্প যমুনা নদীর মাটি এনে রজত কে দিল।রজত সেই মাটি মাথায় ঠেকিয়ে রাধে গোবিন্দ বলে জল দিয়ে খেয়ে ফেললেন। আশ্চর্যজনকভাবে পরদিন থেকে ধীরে ধীরে রজত ঠিক হয়ে গেল। রজত ও চিত্রা সুবিনয় কে ফোন করে সব কথা বলল। সবাই বেশ খুশিতে সন্ধ্যায় রজতের বাড়িতে একদিন খাওয়া দাওয়া করে হইহুল্লোড় করল। কিছু দিন পরে সুবিনয় স্বস্তৃ ক সুইজারল্যান্ডে ছেলে বউয়ের কাছে তিনমাস থেকে এলেন। এখানকার আবহাওয়ায় দুইজনেরই শরীর মন উৎফু ল্ল। একদিন দুই পরিবারের মিলন উৎসব হল। হঠাৎ সুবিনয় বুকে ব্যথার অসুস্থ হয়ে পড়ল। ঘটক মেডিকেল কলেজে তার নানা রকম চেকআপ আর চিকিৎসা চলল। একমাস চিকিৎসার পর সুবিনয় কিছু টা সুস্থ হয়ে ঘরে এল। আর লাঠি ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে লাগলো। নিয়ম করে ওষুধপত্র খেত কিন্তু আগের মতো বল পেত না। একদিন রজত আর চিত্রা সুবিনয়ের ঘরে এলো সেই যমুনা নদীর মাটি নিয়ে । চিত্রা সুবিনয়কে সেই মাটি একটু খেতে বলল। আর মাথা ঠেকিয়ে রাধাগোবিন্দের নাম উচ্চারণ করলো। উপায় না দেখে সুবিনয় সেই মাটি একটু খেলেন। দুই চার দিন পর সুবিনয় রজ্ত আর চিত্রাকে নেমন্তন্ন করে খাওয়ালো।সুবিনয় এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কে জানে যমুনার তটের পবিত্র মাটি খেয়ে না, ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে। আমার কাছে জিনিসটা একটু রহস্যজনক লাগলো। সমাপ্ত

অধরা শমিতকর্মকার ----------------------শীতের দিন তার উপর ঠান্ডাও পরেছে প্রচন্ড।সবাই এদিক ওদিক ঘুরতে যাচ্ছে পিকনিক করছে। মিঠু নের মায়ের খুব ইচ্ছা এবারে সে তাপসীদের সাথে পিকনিক করতে যাবে।এ বছর খুব ঠান্ডা পরেছে পিকনিকটা জমবে।তাপসীরা সামনের সপ্তাহে পিকনিকে যাচ্ছে।বাড়িতে বসে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দরজার বেলটা বেজে উঠলো।মিঠু ন স্কু ল থেকে ফিরেছে।মিঠু ন খেতে খেতে ব্ল্ল মা সামনের সপ্তাহ থেকে আমাদের পরীক্ষা।মা আকাশ থেকে পরলো! সমাপ্ত

সত্যি হয়ে গেলো– বহ্নি শিখা নিপা ভেবে পায় না হঠাৎই কেনো তারএকথা মনে হলো! মনের ভেতর জেগে ওঠা লোকটি বাঁচবে না। চেনা নেই জানা নেই তাকে নিয়ে কেনো এ কথার উদয় ? নিজেকে যারপর নাই অপরাধী মনে হচ্ছে। এমন ভাবনা কেনো আসবে? তবে এটা সত্য যে, সে ঘুনাক্ষরেও ওঁনার মৃত্যু কামনা করেনি। নিজের কাছে সে নিজেই জবাবদিহি করতে মরিয়া। কোনভাবেই শান্তি পাচ্ছে না। এ ঘটনা নতু ন নয়। এমন আরো হয়েছে। তবে ক্লাস ফ্রেন্ড শচীনের বাবা শতক ছুঁ ই ছুঁ ই। শচীন তার বাবাকে ছোট বেলা থেকে পছন্দ করতো না। শচীনের সাথে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কেনো যে সে তার বাবাকে পছন্দ করতো না সেটা জানা হয়নি। শচীনই সে বিষয়টি বার বার এড়িয়ে গেছে। কোন কিছু র প্রয়োজন হলে শচীন সব সময় আর মায়ের কাছেই আবদার জানাতো। নানা বিষয়ে কথা বলতো। বাবাকে নয়। পাঁচ সন্তানের হিংসা বিদ্বেষে জড়ানো যৌথ অন্নে প্রতিদিনের ঝা ঝা রোদ্দুর,মা'য়ের চোখে বর্ষার প্লাবন বয়ে যেতে যেতে ডোবা চোখ দুটি'তে এখন কষ্ট আর হতাশার ছবিও নেই। শচীন যতোক্ষণ কাছে থাকে ততোক্ষণ ওকে ঘিরেই যেনো তার প্রাণবায়ু জেগে থাকে। একদিন মাকে বলে কয়ে বাধ্য হয়েই শচীন বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে ওঠেছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা স্বর্গে পাড়ি জমালেন। মা মারা যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছে শচীন। এখোনো যখন মনে হয় কেঁ দে বুক ভাষায় আর মনে মনে বলে,আর কিছু টা দিন বেঁচে যেতে পারতে মা। সব ঠিকঠাক করে যখন তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো ভেবেছি তখনই তু মি চলে গেলে। কেনো মা ? তু মি ছাড়া আমার কেউ নেই,তা তো তু মি জানতে,,,। বাড়ির আর সবার মতের সাথে তার মনের খুবই অমিল। শচীনের মন সার্বজনীন এবং মানবতার স্বতঃস্ফূ র্ত একটা প্রাণময় চরিত্র । তাকে যে কোন ভাবেই বেঁধে রাখার নয়- তা বাড়ির সকলে অনেকপরে বুঝেছিল। নিপার সাথে শচীনের কথা হয়। তবে খুব কম। ওর কথায় শরীরে মাটির গন্ধ। ভালো লাগে শচীনের। বাড়ি যাবার আগে নিপার ফোনে শচীন বলেছিলো ফিরে এসে আগামীকাল কথা বলবো। না, শচীন আসেনি,কথাও হয়নি। আটকে গেলো শচীন,শোকগ্রস্ত মন। শচীন ফেসবুকে জানালো, তার বাবা মারা গেছে। হাজার হলেও জন্মদাতা পিতা। কষ্ট পাওয়াই স্বাভাবিক। তবুও মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখেছে, মা'য়ের উপর কতো অন্যায় আচরণ করেছে বাবা। কত মা'রই না মেরেছে মা' কে। ছোট বলে ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি মারের ভয়ে। আজ যেনো ছেলে শচীনের ক্ষোভের কাছে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সমস্ত কিছু র ক্ষমা চেয়ে গেলো তার বাবা। ফেসবুকে দেখে আঁতকে ওঠলো নিপা। সে মনে মনে বললো, এটাও সত্যি হয়ে গেলো!

________

নোনাবৃষ্টি– রমা কর্মকার মাঝে মাঝে রাতে ঘুমের ঘোরে মুষলধারে বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে পাই, আর কেউ শুনতে পায় কিনা জানিনা তবে আমি পাই অঝোরে l চোখ বুজেই টের পাই আমি ভিজতে চেয়ে হাত বাড়াচ্ছি কিন্তু যেন কেউ পিছু টানছে... কিন্তু আমি গভীর আনন্দে ভিজেই চলেছি,, পুরো শরীর ভিজে চু পচু পে হয়ে একাকার l চু ল বেয়ে জল চুঁ য়ে ফোঁটাফোঁটা করে চোখে পড়ছে, গলা বেয়ে বুকে তারপরে সারা শরীরে শুধু বৃষ্টি.. সেই বৃষ্টি আবার ছন্দেছন্দে কথাও বলে , দূর থেকে যার সোঁদা গন্ধ মন ছুঁ য়ে যায় l টের পাই হঠাৎ করে বৃষ্টি ভেজা শরীরেই খুব খিদে পায়, অন্ধকারেই খাবার খুজি ঁ , কিন্তু ঘুমের ঘোরে আর খাওয়া হয়না.... ভিজে ভিজে শুধু এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছু টে বেড়াই, কেউ কোথাও নেই শুধু আমি আর আমি... চোখ বুজেই দুইহাতে এক আঁজলা বৃষ্টি ধরি, তারপর ওর সাথে খেলি কথা বলি l সে চু প করে মন দিয়ে আমার কথা শোনে তারপর বলে... ''এসো আলিঙ্গন করি, তোমার কাছে যেটু কু মেঘ জমা আছে ? আজই তা ধুয়ে মুছে দিয়ে যাই l আবার যদি কখনো দেখা না হয় ! তাই... তু মি একটু একটু করে মেঘ গুছিয়ে রেখো, এরপর যেদিন আসবো ? সেদিন এর চাইতেও জোরালো বৃষ্টি হবো... আমি চোখ বুজি, প্রতিদিন অপেক্ষা করি, জমা করা মেঘগুলো খুলে রাখি, কি জানি যদি বৃষ্টি এসে আমাকে খুজে ঁ না পায় !! "

ধ্বংসস্তূ প থেকে মুক্তি – রূপা বাড়ৈ সজীব মুক্তি চায় পার্থিব অনৈতিক ধ্বংসস্তূ প থেকে----পৃথিবীর ভয়াবহতা দেখে দেখে আর শুনে শুনে সজীব একদম নীরব হয়ে গেছে। সারাক্ষণ খবর দেখা ও শোনার আশায় টিভির সামনে বসে থাকে আর ইউটিউব দেখে, ঘরে থেকে থেকে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সজীবের মা-বাবা খুব চিন্তিত, ছেলেটার দিন দিন এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে। এক গ্লাস দুধ হাতে সজীবের মা ঘরে ঢু কে বলে সজীব দুধটু কু খেয়ে বাহির থেকে একটু ঘুরে আয় তো বাবা। মন ও শরীর ভালো লাগবে। মায়ের অনুরোধে সজীব ঘর থেকে বের হয়েছে একটু প্রকৃ তির কাছাকাছি গিয়ে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে। নদীর কূল ঘেঁষে বিশাল জঙ্গল সেখানে এসেছে সজীব, প্রকৃ তির খুব কাছে এসে প্রাণ খুলে শ্বাস টেনে নিয়ে আবার ছেড়ে দিচ্ছে, খুব আনমনে উন্মুখ হয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছে। আর প্রকৃ তির সৌন্দর্যের সাথে মানুষের মনের সাথে কিছু মিল খোঁজার চেষ্টা করছে। প্রকৃ তির এতো সৌন্দর্যের মাঝেও কিছু ক্ষতিকারক উপাদান আছে যা দ্বারা পৃথিবীর অনেক ক্ষতি হয়। তেমনি মানবের এতো সৌন্দর্যের মাঝেও কিছু মানব দানবকেও হার মানায়। এমন গভীর ভাবনার সময় হঠাৎ অনেক লোকের চিৎকার সহ ছোটাছু টি দেখে একজন পরিচিত লোককে কাছে ডেকে সজীব জানতে চায় কোথায় কি হয়েছে। লোকটি বলে পাশের বাড়ীর সখিনাকে দুইদিন ধরে অনেক খোঁজা খুজি ঁ করেও পাওয়া যাচ্ছিলো না, আজ পাওয়া গেছে এই জঙ্গলে। কারা যেনো ধর্ষণ করে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। পাশাপাশি বাড়ী বলে সখিনাকে সজিব খুব ভালো করে চেনে। সজীব খবরটা শুনে থমকে যায়, আর বিষয়টা কতটা মর্মান্তিক সেটা ভাবতে থাকে। মাত্র কয়েকদিন আগে এমন আরো একটা ঘটনা ঘটেছিলো একই এলাকায়, সে মেয়েটিও সজীবের পরিচিত ছিলো। মেয়েটির নাম ঝর্ণা, তাকেও পাষণ্ড ধর্ষকরা ধর্ষণ করে অর্ধনগ্ন অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যে গর্ত খুড়ে ঁ পুতে ঁ লবন ঢেলে মাটিচাপা দিয়ে চলে যায়। সে সময় এলাকার লোকজন ধর্ষকদের যথাযত বিচার চেয়ে অনেক তোলপাড় করে, মানব বন্ধন করে। কিন্ত কয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু আবার শান্ত হয়ে যায়। কারণ ধর্ষকরা ক্ষমতাশালী। হয়তো সেই লোকগুলোই এই খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। কারণ তারা এলাকার অন্যায়কারী প্রভাবশালী গুণ্ডা তাই যতই অন্যায় করুক আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে তারা বুক ফু লিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর খুন, গুম, দখলদারি, ধর্ষণ সব রকম অন্যায় করে বেড়ায়। হায়রে কুচিন্তার অমানুষ তোমরা বুঝলে না, তোমাদের সামান্য উত্তেজনাময় সুখের কারণে নারী'দের কতোটা নরক যাতনা সইতে হয়। একজন নারীর কাছে খুনের থেকেও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হলো, ধর্ষণ। কেননা খুন নারীকে কলঙ্কিত

করে না, কারণ মৃত্যুর পরে কয়েকদিনের মধ্যে সবাই সব কিছু ভু লে যায়। কিন্তু ধর্ষণের কারণে নারীকে দেহ সহ মানসিক চাপ খেতে হয় প্রতি পদে পদে, আর সামাজিক কু-আচারণের রক্তচক্ষু র শিকার হতে হয় প্রতি মুহুর্তে । একটি নারী একবার ধর্ষণ হবার পরে, জীবন নামের মর্মান্তিক নরক বাস করতে হয়, তার আর কোন নিস্তার নেই, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতি মুহুর্তে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নির্যাতিত হতে হয়। নির্যাতিত নারীর পক্ষে যারা বিচারের আশায় ঘোরে তারাও নির্যাতিত হয় পদে পদে। কারণ বিচারকগণও ধর্ষণকারীর সামীল হয়। তাই এই কঠিন সমাজে ধর্ষণকারী বিচারে শাস্তি পায় না, বরং একজন ধর্ষিতা নারী নমনীয় আচরণ করেও প্রতিনিয়ত কুচিন্তা যুক্ত ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। বিচারের কাঠগড়া তাকে বার বার ধর্ষণ করে, ফলে প্রকৃ ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একজন ধর্ষিতা নারী। পুরুষশাসিত এই সমাজে পুরুষের দায়িত্ব সব বিষয়ে নারী'কে নিরাপদ রাখা, অথচ সেখানে কিছু সংখ্যক পুরুষের কাছে নারী কখনোই নিরাপদ নয়। নারী কি করে সত্য সুন্দর উৎকৃ ষ্ট মননের পুরুষ চিনবে, যার কাছে তার সোনালি স্বপ্ন পূরণ সুখ লুকিয়ে আছে। একজন ধর্ষকের কাছে নারী ভোগের সামগ্রী মাত্র আর কিছু ই নয়। পুরুষ যদি নারীকে একজন মানুষ হিসাবে দেখতো তাহলে ধর্ষণের মতো এমন কুচিন্তা যুক্ত কাজ করে নারীকে অসম্মান করতে পারতো না। কুরুচি পূর্ণ ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য সমাজ ও পুরুষের উপর থেকে নারীর আস্তা দিন দিন নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। তাই নারীকেই হয়ে উঠতে হয় বিদ্রোহী বীরাঙ্গনা এ ছাড়া নারীর আর কোন উপায় নাই। সখিনার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে সজীবের মন খারাপ। সজীব ঘরে ফিরে মা- বাবাকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলো বলতে বলতে বলে এ সমাজ কবে কলুষিত মুক্ত হবে। কবে অমানুষ গুলো মানুষ হবে। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখার জন্য আমি আর এ সমাজে থাকতে চাই না, আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলো, বলেই ঘরে ঢু কে দরজা বন্ধ করে দেয়। সজীবের মা - বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর সজীবের বাবা সিদ্ধান্ত নেয় সজীবকে নিয়ে কোথাও মনোরম পরিবেশে ঘুরতে যাবে। তাই একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে, ঘুরতে যাওয়ার জন্য। যথাসময়ে গাড়ী চলে আসে সজীবের পরিবার স্রষ্টাকে স্মরণ করে রওনা হয়। কিছু দর ূ যাবার পরে গাড়ীর ভিতরে থাকা সকলে জানালার গ্লাসে দৃষ্টি রেখে দেখতে পায় ওদের এলাকায় আগুন জ্বলছে, সকল বাড়ীঘর পুড়ছে। সারা গ্রাম ঘুর্নায়মান আগুনের কুণ্ডলি হয়ে আকাশ ছুঁ য়েছে সেই কুণ্ডলির মাঝে থেকে মানুষের চিৎকার ভেসে আসছে। মানুষগুলো সবকিছু র সাথে শূন্যমাঝে পুড়ছে আর সম্পূর্ণ পুড়ে গেলে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে গাড়ীর ভিতরে থাকা সকলে আতঙ্কিত হয়। ড্রাইভার সবার উদ্দেশ্যে বলে সবাই নিশ্চিন্ত ও শান্ত থাকেন আমাদের কারো কোন ক্ষতি হবে না। আমরা নিরাপদ, কারণ গাড়ীটা বুলেট প্রুফ ও অগ্নি নির্বাপক গ্লাসে আবৃত করা। আগুনের মধ্য দিয়ে গাড়ীটি ছু টছে কোন সমস্যা হচ্ছে না, এমন কি ভিতরে কোন প্রকার আগুনের তাপ আসছে না। কিন্তু সকলে দেখতে পাচ্ছে, একটি বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। চতু র্দি কে মানুষ পোড়া কালো কালো লাশ ছাঁই যুক্ত দগ্ধ মাটিতে পড়ে আছে। গাড়ীতে বসে থাকা অবস্থায় সকল জীবন্ত চোখগুলো এমন নির্মম মর্মান্তিক দৃশ্য দেখছে। সজীব মানুষের হাতে ক্ষমতা নেই জেনেও কিছু অমানুষ স্রষ্টার উপরে ওঠার জন্য ছড়ি ঘুরায়। নির্বোধ মানুষ বোঝে না তার ক্ষমতার পরিমাপ কতোটু কু। সম্মুখে চলছে সজীবদের গাড়ী, যাওয়ার জন্য কোন পরিচ্ছন্ন গন্তব্যে। সমাপ্ত

স্রোতস্বিনী সন্ধ্যা রায় আমি বাজারে যাই ,অফিসে যাই, যেখানেই যাই, এই মোড়টা পার হতেই হবে। আজ এই মোড়ে এসে গাড়িটা থামিয়ে দিলাম, হঠাৎ মনে হল মিসেস প্রদীপ মালহোত্রা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাঁকে বললাম, এত সকালে কোথায় যাচ্ছেন? উনি অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বুঝলাম না আমাকে তিনি কেন ইগনোর করতে চাইলেন ! আমি তাঁর সামনে গিয়ে বললাম, কি হল ভাবী, প্রদীপের উপর কি আপনি রাগ করেছেন ? চলুন, আমি আপনাকে পৌঁছে দি। এত নারাজগী কেন? সব ফ্যামিলিতে এমনি হয়। দেখি ভবী কাপড়ের আঁচল দাঁতে কাটছেন। আর হাসছেন। আমার কোন জবাব দিচ্ছেন না, আমার দিকে তাকাচ্ছেন না, আমিও চু প থাকলাম। মনে হল, ওনাকে কেমন যেন আনমনা লাগছে। ঠিক আছে, প্রদীপকে একবার ফোন করে দিই। তারপর আবার ভাবলাম ওকে গিয়ে খুব কথা শোনাবো এত সুন্দর বউটাকে কেউ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখে? প্রদীপকেও তো আশেপাশে দেখছি না, কোন ঘটনা ঘটেই যেতে পারে । আমি বললাম, ভাবি, চলুন, আমি আপনাকে ঘরে ছেড়ে দিই, বলে ,কারের দরজাটা খুলতেই উনি উঠে বসে পড়লেন আমার গাড়িতে। ওঁকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম প্রদীপের ঘরের দরজায়। ভাবিকে বললাম, আপনি বসুন, প্রদীপকে নিয়ে আসি, আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে । ভাবিকে গাড়িতে বসিয়ে আমি ঢু কলাম প্রদীপের ঘরে। বেল বাজাতেই মিসেস মলহোত্রা দরজা খুলে দিলেন । দেখে ত আমি আশ্চর্য। মানুষের মধ্যে এত মিল? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পারলাম না, মনটা গাড়িতে পরে রইল। এদিকে বিছানায় বসে মোবাইল দেখছে প্রদীপ। আমি গেলে একটু পরে ভাবি চা বানিয়ে আনলো আমি দেখে তো আশ্চর্য ভাবি এখানে, তবে আমার গাড়িতে কে? আমি অনেক দিন এখানে আসিনি, আর দেরি করলাম না । এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মেয়েটা ঠায় বসে আছে, একটাও কথা বলছে না। আমি জানতে চাইলাম – কোথায় থাকো? কি করো ? তোমার বিয়ে হয়েছে ? তোমার নাম কি ? আমি আশ্চর্য হলাম আপনি থেকে কখন যেন তু মিতে নেমে এসেছি।

গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবলাম মানুষে মানুষে এত মিল! খুব ভালো লাগলো দেখে, কিন্তু একটা ভয় ভীষণ কাজ করছিল মনে মনে। একে কোথায় নিয়ে যাব ? এত সুন্দরীকে ছারবো কোথায়? ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিয়ে গেলাম নিজের ঘরে। ওকে এতগুলি প্রশ্ন করলাম কিন্তু কোন জবাব নেই। এ জন্যে জোর করতে পারি না। দেখলাম ওর ভিতর একটা ভয়ও কাজ করছে। ও বাচ্চাদের মত দরজার কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকে। কোন খিদা-তৃ ষ্ণা নেই। আমার ঘরে যে বুড়ি মেয়েছেলেটা রান্না করে, সে বলে, বাবু ওর চিকিৎসা করান কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। তাই আর ভয়ে যাইনি। ওকে বলেছি, বাইরে যাবে না । ওর বাইরে যাবার ইচ্ছে মোটেই নেই। ও ঘরে শুয়ে বসে সময় কাটায়, কোন বিরক্তির ব্যাপার নেই । খাইয়ে দিলে খায়। না হয়ত ক্ষিদে নিয়ে থেকে যায়। এমনি করে দিন চলছিল ওর জন্য পেপারে বা টিভিতে কোন খবর নেই। হারিয়ে যাওয়া খবরগুলি মন দিয়ে শুনি, দেখি, কিন্তু কোনো কিছু ই পাইনি। এমনি করে প্রায় ছটা মাস পার হয়ে গেল। আমার কার্শিয়াং বদলি হল। ওখানে গিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হলাম। যাক আর কোন ভয় নেই। ঘরে কাউকে না জানিয়ে আমি ওকে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করলাম। আমি ওর নতু ন নামকরণ করেছি। ওর নাম রেখেছি অন্তরা । অন্তরা বিয়েতে বাচ্চাদের মত খুব খুশি হয়েছে। সুন্দর শাড়ি, সুন্দর গয়না, নতু ন ঘরবাড়ি, নতু ন সব কিছু পেয়ে ও খুব খুশি এটা বোঝা যায়। আমার কার্শিয়াং দু'বছর আসার পর অন্তরা মা হতে চলেছে। ওর রূপ আরো ফু টে উঠেছে। ওকে খুব সুন্দর লাগে দেখতে। দেখতে দেখতে সময় হয়ে এল, অন্তরা মা হল। আমাদের একটা সুন্দর জীবনের আরেকটা নতু ন মোড় এলো। আমার ছেলে হল। অন্তরাকে ধীরে ধীরে অনেক স্বাভাবিক হতে দেখছি। ও ছেলে নিয়ে অনেক আদর যত্নে মানুষ করছে। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম, ভাবতাম অন্তরা হয়ত ছেলেকে ঠিকঠাক দেখাশোনা করতে পারবে না। যেহেতু ও নিজের খেয়াল রাখতে পারত না কিন্তু ওর ছেলেটা হওয়ার পর অনেকটা স্বাভাবিক আচরণ শুরু করলো। আমিও নিশ্চিন্ত হলাম। আমরা চিমনি গ্রামে থাকি। চা বাগানের ম্যানেজার আমি। আমার এখন কাজও খুব বেড়েছে। দেখতে দেখতে আমার ছেলের পাঁচ বছর বয়স হল। সে স্কু লে যাচ্ছে। অন্তরাই আনা নেওয়া করে। এমনি করে ছেলের বয়স দশ বছর হল। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান নেই। একটাই ছেলে। আমার মার শরীর খারাপ হলে আমরা কলকাতা গেলাম। গিয়ে দেখি মার খুব খারাপ অবস্থা। হাসপাতালে মা মারা গেলেন। ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিল সুখেন পাত্র । ও আমার স্ত্রীকে দেখে বলল – কিরে খুশি, তু ই এত দিন কোথায় ছিলি? আমি তোকে কত খুজে ঁ ছি। বলে লোকটা কান্না শুরু করলো। আমার স্ত্রী ভয়ে ছেলের হাতটা ধরে আমার কাছে এসে দাঁড়াল, আমিও আকাশ থেকে পড়লাম। খুব ভয় ও পেলাম। আমার জীবনের সব আনন্দের আজ হয়ত অবসান হবে। আমি মার জন্য মন খারাপ করছি। কিন্তু সব সময় মনটা পড়ে আছে আমার অন্তরার জন্য। মায়ের সব কাজ সেরে ঘরে এলাম। ঘরে এসে দেখি সুখেন বসে। ও বলল, ওর বোনের স্বামী মারা যায় তখন খুশিকে ওর শশুর বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ওর বোনের তখন থেকেই মাথাটা কেমন খারাপ হয়ে যায়। ও একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসত, খাওয়া দাওয়া, কোন কাজই করত না। তাই সুখেনের বউ ওকে তাড়িয়ে দেয় তখন সুখেন ঘরে ছিল না। সুখেন অনেক খুজে ঁ ছিল। ও বোনকে অনেক খুজে ঁ ও পেয় নি। সুখেনের বউ বন্ধ্যা ছিল। কোন বাচ্চা ওদের নেই। সুখেন তখন একটা রাইস মিলে কাজ করে। সুখেন আরো বলে, পয়সার অভাবে খুশির চিকিৎসা ও করাতে পারিনি। সুখেন আজ খুশি হয়েছে, ওর বোন এখানে ভালো আছে দেখে। সমাপ্ত

ফাঁকা জায়গা– তাপসকিরণ রায় বৃদ্ধের মনের মাঝে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে। রমাকান্তর তাই মনে হয়। কখনও দুপুরের উদাস হাওয়ায় মনের শ্যূন্যতাটু কু শুধু যেন ধরা পড়ে। কিছু নেই--অনেক খানি ফাঁকা জাগা পড়ে আছে, সেখানে স্মৃতি নেই, কল্পনা নেই, স্বপ্ন নেই। সবার ঘরের মত রমাকান্তর ঘরেও একটা টিভি আছে। এটা নিয়ে সময় ভাঙার খেলা চলে তাঁর। সময়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া--আরও আরও আগে--পরিণতির দিগন্তে ! না, এ নিয়েও ভাবতে চান না তিনি। এই তো বেশ তো এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ঘন্টা দিন মাস বছর কেমন যেন অজান্তে এগিয়ে যাচ্ছে ! মন্দ কি ! সংসারের পাট ভেঙে গেছে অনেক দিন। আজ কাজ থেকে অবসর পেয়েছেন প্রায় পনেরটা বছর হল। এখন তো তাঁর হাত পা ঝাড়া। মাসে মাসে পেনশন পাচ্ছেন আর একলা দিনগুলি তাঁর মসৃন ভাবেই কেটে যাচ্ছে বলতে হয়। হ্যাঁ, আবার টিভির কথায় ফিরে এলেন তিনি। এ একটা অদ্ভু ত জিনিস বটে। সময় কিল করে বলা যায়, আবার জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা যায়। ওই তো নায়ক এগিয়ে যাচ্ছে--অন্য দিকে একটা নারী ধর্ষিত হবার পথে। গুন্ডা-ষন্ডার দল মেয়েটাকে ঘিরে নিয়েছে। মেয়েটা পালাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু পালাবে কি ভাবে ? চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে যে তাকে ধর্ষণকারীরা ! তবু এক চিলতে ফাঁক দিয়ে মেয়েটা দৌড় দিল। আর দশটা দর্শকের মত রমাকান্তও চাইছিলেন মেয়েটা ওই গুন্ডা-ষণ্ডা ধর্ষকদের হাত থেকে বেঁচে যাক। কিন্তু বাস্তব সে কথা বলে না। কি ভাবে সে বাঁচবে--ওর শত্রুরা যে সংখ্যায় অনেক আর ওরা মেয়েটার চে ভাল দৌড়াতে পারে। তাই তাকে ধরে ফেলবার চান্স্ অনেক বেশী। হলও তাই, মেয়েটি ধরা পড়ল। আর যথারীতি ছেলেরা এগিয়ে গেলো মেয়েটার কাছে, তার কাছে ঘন হয়ে দাঁড়াল। মেয়েটি নিজেকে বাঁচাবার জন্যে, নিজেকে ছাড়াবার জন্যে ছটফট করছিল। নায়িকা যত ছটফট করছিল তত ধর্ষণকারীদের নারীর

শরীরের লোভ বেড়ে যাচ্ছিল। তরপর মেয়টির বেশবাশ টেনেটু নে ছিঁড়ল ওরা। মেয়েটা চীৎকার করছিল। একজন তার মুখ চেপে ধরে থাকল। হ্যাঁ, এদিকে নায়ক, নায়ীকাকে বাঁচাতে এলো না। কারণ সে দেখল অনেকগুলি গুন্ডার সঙ্গে সে পারবে না। কারণ সে যে সাবেকি সিনেমার নায়ক নয়। সে যে বাস্তব আর্ট ফিল্মের নায়ক। সে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। এদিকে সাবেকি নায়ক লাফিয়ে পড়ল ধর্ষণকারীদের ওপর। সে শক্তিমান, সে পারে দশজন গুণ্ডার সঙ্গে লড়াই করে জিততে। তাই সে ঝাঁপিয়ে পড়ল গুণ্ডাদের ওপর। এদিকে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে একটা গুন্ডা বারবার চু মু খাচ্ছিল। এর পরেই বুঝি সে নায়িকাকে রেপ করবে। একটু সময় নিচ্ছিল। ইতিমধ্যে সব কটা ধর্ষনকারী পরাস্ত হল. নায়ক এসে জড়িয়ে ধরল নায়িকাকে। নায়ক নায়িকাকে নিয়ে চলে গেল। সাবেকি ফিল্ম যেমনটা হয়। দর্শকরা চাক আর নাই চাক--এ মত দেখতেই বুঝি তাঁরা ভালবসে। কিন্তু সত্যি কি শেষ হল ? জীবন তো বারবার ফিরে আসে, তাকে ঘিরেই যত সব অনুষ্ঠান। ওই যে লুকিয়ে থাকা নায়ক--ও কিন্তু এবার বেরিয়ে এলো গাছের আবডাল থেকে। এবার সে এগিয়ে গেল নায়িকার দিকে। তাকিয়ে থাকল তার দিকে। ধর্ষিতা নায়িকার দিকে। তারপর ধীরে ধীরে তাকে দু হাতে তু লে নিল। আর এগিয়ে গেল নিজের ঘরের দিকে। আর্ট ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম এখানেই শেষ. হ্যাঁ, রমাকান্তর মনে হল এ নায়ক যেন স্বয়ং রমাকান্ত ! তাঁর মনের আশা আকাংখা মিলেমিশে গেছে লুকিয়ে থাকা নায়কের মাঝে। সমস্ত দৃশ্যের বাস্তবতার মাঝে যেন রমাকান্তই ছিলেন। এমনি কাহিনীর দৃশ্য পটের সুখ দুঃখের শরিক যেন তিনিই হয়ে ওঠেন তাঁর নিজের জীবন তখন হারিয়ে যায়। এক একটা কাহিনির মাঝে তিনি বারবার মরে যান, আবার বারবার বেঁচে ওঠেন। এখানে তিনি নায়ক। তাঁর নায়িকারা আছে। এখানে তিনি লেখক না হলেও লখককে টেনে নিয়ে যেতে পারেন নিজের অভীষ্ট শেষ পরিণতির দিকে। সমাপ্ত

Get in touch

Social

© Copyright 2013 - 2024 MYDOKUMENT.COM - All rights reserved.