Alok -2022 Flipbook PDF

Alok -2022

100 downloads 114 Views

Story Transcript

সম্পাদকের কলমে

দু র্গা পুজ�ো হল�ো আবেগপ্রবণ বাঙালির আবেগপূর্ণ ঐতিহ্য। শরতের নীল আকাশকে

সাক্ষী রেখে কাশের বনের দ�োলা আর শিউলি- ফু লের মন মাতান�ো গন্ধ নিয়ে আসে আমাদের

শারদ উৎসব। আর এই শারদীয়া দু র্গোৎসব আরও প্রাণবন্ত ও ঝলমলে হ�োক আল�োক এর

প্রতিফলনে। আগমনীর সুর নিয়ে সকলের শুভ কামনায় এবং সহয�োগিতায় এই শারদ শিশিরে প্রকাশিত হল�ো 'আল�োক' শারদ সংখ্যা ।

আল�োক পত্রিকা'র জন্ম মুহুর্তে

আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃ তজ্ঞতা জানাই সেই সকল বিশিষ্ট

সাহিত্যিক,লেখক,কবিদের। যারা তাদের মূল্যবান লেখা উপহার দিয়ে

পরিপূর্ণ করেছেন আল�োক শারদ সংখ্যা। আল�োক শারদ সংখ্যায় আছে মন ছঁু য়ে যাওয়া গল্প,

কবিতা, রান্না-বান্না এবং আরও নানান রকম চমক। আপনাদের সকলের সহয�োগিতায়,শুভ কামনায় আল�োক শারদ সংখ্যা হয়ে উঠু ক মা দু র্গার মত�ো

শক্তি রূপেন , মাতৃ রূপেন ,শান্তি রূপেন সংস্থিতা।

শুভেচ্ছান্তে, সুস্মিতা সাহা, দামিনী

3

আল�োক

শারদীয়া 2022

আল�োক বর্ষ- ১য় | সংখ্যা- ১ম | শারদীয়া ২০২২ | আশ্বিন- ১৪২৯ চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার: সুদীপ ঘ�োষ চিফ এডিটর: সুস্মিতা সাহা ম্যানেজিং এডিটর: দামিনী কভার ইলাস্ট্রেশন: শন্দিপ গ্রাফিক ডিজাইনার: শন্দিপ পত্রিকায় প্রকাশিত সকল লেখা ও বিজ্ঞাপনের বিষয়ের জন্য আল�োক পত্রিকা ক�োন ভাবে দায়বদ্ধ নয়। পূর্বলিখিত অনুম�োদন ছাড়া ক�োনরকম পুনর্মুদ্রণ নিষিদ্ধ। ্ আল�োক, বসিরহাট-৭৪৩৪১২, উত্তর ২৪ পরগণার পক্ষে সুদীপ ঘ�োষ করতৃক প্রকাশিত ও কর্পোরেট পাবলিসিটি, ৮৭৭৭৩২২৬৭৪ বসিরহাট-৭৪৩৪১১, উত্তর ২৪ পরগণা থেকে লেটার সেটিং ও মুদ্রিত। সম্পাদকীয় বিভাগের সাথে য�োগায�োগের জন্য: আল�োক, বসিরহাট-৭৪৩৪১২, উত্তর ২৪ পরগণা। 9614993137, [email protected]

মূল্য: ১৫০/4

আল�োক

শারদীয়া 2022

দুর্গাপূজার উপর বাছাই করা তিনটি

প্রবন্ধ

প্রচ্ছদ কাহিনী

কবিতা ৫ ৫ ৬ ৬ ৬ ৬ ৬ ৭ ৭ ৭ ৭ ৮ ৮ ৮ ৯ ৯ ১০ ১০ ১০ ১১ ১১

শুভ শক্তির মহা আয়�োজনে মাতৃ পূজা

সুজান মিঠি দেবাশীষ ঘ�োষ পলটু বাসার দীপক ব্যানার্জী তূ য়া নূর চন্দ্রানী মজুমদার ক�ৌশিক গাঙ্গুলি স্বরূপ ভঞ্জ শক্তিপ্রসাদ ঘ�োষ অমিতাভ সরকার সঙ্গীতা নির্মলেন্দু কুণ্ডু বলাকা দাস হারাধন ভট্টাচার্য্য দামিনী দেবাশীষ চক্রবর্তী স�ৌতম সরকার আখির হ�োসেন সিদ্ধার্থ সিংহ ঝিলিক রায় সুদীপ ওম ঘ�োষ

রুপম চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম থেকে লিখেছেন

১৫ চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা অনির্বাণ সাহা

২০ বাংলার প্রথম দুর্গা পুজ�ো চন্দ্ররূপ ব্যানার্জী

5

আল�োক

শারদীয়া 2022

১২

ভ্রমণ গল্প ২২ ২৭ ২৯ ৩১ ৩৫ ৩৮ ৪০ ৪২ ৪৭ ৫১ ৫৩ ৫৭ ৬০ ৬১ ৬২ ৬৪ ৬৭ ৭১ ৭৪ ৭৬ ৭৯

ডি. অমিতাভ শঙ্কর চ্যাটার্জী শুভব্রত বসু মানসী রায় চট্টোপাধ্যায় মিলন গাঙ্গুলী শরণ্যা বটব্যাল রূপালী মান্না দীপক আঢ্য শম্পাশম্পি চক্রবর্তী রাজকুমার ঘ�োষ বুম ব�োস সুমনা সাহা অভিষেক সরকার ম�ৌমিতা সাহা রাই পারমিতা আইচ ঝিলিক মুখার্জি গ�োস্বামী হিমবন্ত দত্ত অভিষেক ঘ�োষ সাগ্নিক সিনহা শান্তনু দাশ অমৃতা ঘ�োষ

৮৬ প্রতিমা ভট্টাচার্য্য মন্ডল

৮৯ গ�ৌতম ঘ�োষ-দস্তিদার

পেটপুজ�ো ৯২ চন্দ্রাবতী চ�োংদারের ৯৩ মনিকা বিশ্বাস ৯৩ অমৃতা বিশ্বাস সরকার

রম্যরচনা খেলা ৯৪ ৮২ রাজা দেবরায় ৮৩ প্রদীপ দে ৮৪ সুস্মিতা সাহা

6

আল�োক

শারদীয়া 2022

সঙ্গীতা আইচ সাহা

কবিতা ঃ

বিজয়া

সুজান মিঠি অতি স্নেহে বাবা নাম রেখেছিলেন আগমনী। মাস তিনেক পরেই বাবা মায়ের গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু… আমার নাম হয়ে যায় অভাগী। আমার বুদ্ধি হালকা ছিল। শরীর ছিল ভারী। জেঠি মারতে মারতে হাত ব্যথা করে ছেড়ে দিয়ে বলত, আবাগী মরে না বাপু! বই পত্তর ছু ঁয়েও দেখিনি ক�োন�োদিন দেখিনি কেমন করে ভাল�োবাসা হয় ছ�োটকার বন্ধু এসে আমার গালে ট�োকা দিয়ে বলত, কী খুকু কেমন আছ�ো? বেশ লাগত আমার। আমার বুদ্ধি বড় হালকা। কিন্তু হৃদয় ছিল ভারী। কেঁপে কেঁপে উঠত সেই ট�োকায়। র�োজ র�োজ এমন চলতে চলতে আমার শরীরে গজিয়ে উঠল জেঠির সঙ্গে দেখতে যাওয়া যাত্রা পালা… একদিন ফাঁকা বুদ্ধির ঘরে কী এক বিস্ময় প্রবেশ করল। কী এক আনন্দ… জাপটে ধরে আঁচড়ে কামড়ে ভাল�োবেসে ভেসে গেলাম। ছ�োটকার বন্ধু সেদিন আমার গালে স্নেহ রাখতে আসার সুয�োগ পেয়ে আর তাকে ছাড়িনি… হালকা বুদ্ধি বলে কি শরীর বড় হতে নেই? ছ�োটকা মাথায় ছু ঁড়ল চ্যালা কাঠ… জ্যাঠা বলল, বাড়ির কলঙ্ক। আজ দশমী। বিজয়ায় বিজয় করে দিয়ে আয়।

7

আল�োক

শারদীয়া 2022

এসব অনেক জন্ম আগের কথা। এখন আমি মাটি। ছ�োটকার বন্ধু কুম�োরটু লি। আমায় গড়ে। আগমনী থেকে বিজয়া হই। আবার জলে ভেসে ভেসে ফিরে আসি কুম�োরটু লিতে। সব ভাল�োবাসা কী আর প্রতি জন্মে রক্ত মাংসে হয়?

ক্যানভাসে দেবাশীষ ঘ�োষ কবিতার ক্যানভাসে নিজেকে খ�োঁজা  রংতু লি আঁকিবকি ু একটু ছ�োঁয়া , বিকেলের জানালায় উঁকি দেয় সূর্য  তবু মনকে ছু ঁয়ে যেতে চায় l  আরামকেদারায় এক কাপ গরম চা এ  একরাশ সবুজ এতে মন যে হারায় , গ�োধূলির পথের বাঁকে কিচিমিচি পাখির ডাকে  দূরে মন্দিরে কে যেন ঘন্টা বাজায় l জলরঙে আবছা জীবনের কল্পনা  র�োজকার অভিয�োগ অভ্যাস বয়, তাই দেখে সারাদিন নিঝু ম ক্লান্তিহীন  একরাশ প্রশ্নই সামনে দাঁড়ায় l যদি ভাগ্যের চাকা ঘ�োরে আয়না অচেনা লাগে  সাদা পায়রার দলে চিল মিশে যায় , তখন নিজেকে খ�োঁজা অসহায় একা একা  পথের ঠিকানা খ�োঁজা থমকে দাঁড়ায় ll

শিক্ষকের ছড়ি

ব্যাঙের চাপাবাজি

পলটু বাসার/ ঢাকা

তূ য়া নূর / আমেরিকা

একটা ভূ কম্পন, সম্ভবত সুনামি ছিল কেঁপে উঠল চারদিক থর থর করে কেঁপে উঠলেন শিক্ষক তাঁর হাতের ছড়ি ছিটকে পড়ল ভাগাড়ে যেখানে ছিল শিল্পব�োধের অসংখ্য বিন্যাস যা ঠু কে ঝু ঁকে চরিত্র খচিত হত�ো মানুষের-মানবতার ভাগাড়ের স্যাঁতস্যাঁতে আস্তাকুঁড়ে ছড়িটা ক্রমান্বয়ে লাঠি হয়ে উঠল লাঠির গায়ে লেগে আছে পাওয়ারম্যান অভিশাপ পচনশীলতা, সে ক্রমশঃ হকিস্টিক, ছু রি, জুতার মালা, অনুশাসন তৈরি হল এবং এক লাফে উঠে এল�ো তাদের অধিকারে অতঃপর শিক্ষকের দায়িত্বের বিস্তৃত স্কন্ধে শপাংশপ কত সহজে লাশ হতে শুরু করল ব�োধের ফেরিওয়ালারা, শিক্ষকের ঘিলু রাস্তায়, জুতার মালা গলায় অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে

ব্যাঙের জিহবা অনেক লম্বা মুখের ভেতর ভাঁজ করা, ঘরে বসেই শিকার ধরা যায় যে অনেক কাজ করা।

কালকে রাতে একটা তারা ক’জনা তার নাম জানে? জিহ্বাটাকে ছু ঁড়ে দিয়ে নামায় নীচে এক টানে।

বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিজীবী, সমাজজীবী, ম�োড়লজীবী, শাসনজীবী, বাক্যবাগীশ, নাগরিক কমিটি কার�োরই কষ্ট হল না, শুধু বৃক্ষগুল�ো তাঁর সবুজ পত্র-পল্লব ঝেড়ে ফেলল শরীর থেকে বলল, আমরা লজ্জা পেলাম

ছ�োট্ট একটা ব্যাঙ ছিল�ো যে—‫آ‬ কাঁপল�ো ঠ�োঁটের ক�োণা কী! বলল�ো সে ত�ো, হায়রে বাপু! সেটা ছিল�ো জ�োনাকি।

ব্যাঙের ভেতর একটা ছিল�ো একটু বেশী চাপাবাজ, সে বলে কি—জিহ্বা দিয়ে করি অনেক মাপা কাজ।

শরৎ

বাঁচাও প্রাণ

রাতের কবিতা

দীপক ব্যানার্জী

চন্দ্রানী মজুমদার

ক�ৌশিক গাঙ্গুলি

সাদা সাদা মেঘের ভেলা সারা আকাশ নীল অরুণ কিরণ ঢেলে তার লাগায় ঝিলমিল । হালকা মেঘে বৃষ্টি খানিক ঝির ঝির ঝির ঝির ভ্রমরা তার গান ধরেছে দেখে শিউলি ফু লের ভিড় । গন্ধ ছড়ায় মাধবীলতা ফু টল�ো টগর রাশি হিমেল বাতাস বয়ে চলে যায় বাজিয়ে মধুর বাঁশি । হওয়ার স্রোতে ছিপ ছু টেছে নীল সাগরের বুকে পুজ�ো পুজ�ো গন্ধ লাগে চিত্ত জাগে সুখে । অপরূপা এসেছে আজ ভু লিয়ে ধরাধাম ছ�োট্ট মেয়ে সুচরিতা শরৎ তার নাম ।

কত বড়�ো বড়�ো বাড়ি, শহরটা হল ভীষণ ভারী। নেই ক�োন�ো গাছপালা র�োদ্দুরের ভীষণ জ্বালা । যানবাহনের ধ�োঁয়া কত, শহরটা আজ কালচে মত�ো । বৃক্ষ র�োপন কর�ো সবে, অমূল্য প্রাণ বাঁচবে তবে ।

আমার রাত পাঠয�োগ্য আমার রাত কাব্যচর্চার , আমার রাত অয�ৌন আমার রাত কান্নার । আমি রাতের সঙ্গীত শুনি আমি থাকি ফ�োনের অপেক্ষায় আমি ভাবতে শিখেছি রাতে আমি ছবি আঁকি বিছানায় । রাত আমার আর আমি তার সারারাত আমাকে জ্যোৎস্না ঘিরে রাখে , আসে ঘুম তাতে মিশে থাকে সুখস্বপ্ন । চাঁদ মামা কপালে চু মু খেয়ে যায়।

8

আল�োক

শারদীয়া 2022

এখনও...

পুজ�ো এলে

ব ৃষ্টি পাড়ার মেঘ জলসায়

স্বরূপ ভঞ্জ

শক্তিপ্রসাদ ঘ�োষ

অমিতাভ সরকার

এখনও দাঁড়িয়ে আছি বন্ধু । হ�োঁচট খেয়েছি হয়ত�ো ; কিন্তু সামলে নিয়েছি নিজেকে শেষমেশ টলটলায়মান শিশুর মত�ো।

পুজ�ো এলে বাদ্য বাজে ঢ্যাম কুরা কুর কুর পুজ�ো এলে মিষ্টি বাতাস ফু লের গন্ধে সুমধুর পুজ�ো এলে নতু ন প�োশাক কেনাকাটার ধুম পুজ�ো এলে নীল আকাশ আনন্দ আর ঘুম পুজ�ো এলে সাজ সাজ সবার ঘরে ঘরে পুজ�ো এলে ঠাকুর দালান মায়ের আল�োয় ভরে।

এখন বিহানবেলা সময়ের গ্রামে বাতাসে মগ্ন দিঠি মন্দ্রিত স্বর কাজ র�োদ সংঘাত বিবশতা নামে জ্যোৎস্নার বাড়ি ফেরা সেই তারপর।

এখনও আছি বন্ধু । শীতঘুমে শায়িত সরীস ৃপের মত�ো নয়, নয় ছাইচাপা তু ষানলের ন্যায় পুড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশায়। টিকে আছি ঘুমন্ত অ্য‍াডেনিয়াম সদৃশ বাহারী বসন্তের কামনায়, পাতায় পাতায় ভরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়, নীলাভ শীতের দংশন সহ্য করেও ত�োমার হৃদয়ে প্রস্ফুটিত পুষ্পের প্রতীক্ষায়।

এইভাবে সবকিছু আমাদের কাছে ভু ল করে হারান�ো সে সুর কবেকার ভাল�োবাসা মুঠ�োফ�োনে দূরে গিয়ে বাঁচে আপনার সাথে দেখা এক দুই বার। আমি শুধু মন খুঁজি আকাশের গায় ফু ল ভেবে মালা গাঁথা স ৃষ্টির ঘর চাওয়া-পাওয়া আশা নদী খেয়াতরী বায় জেগে ওঠে কাল�ো বাতি ঘুমের শহর।

আমরা মেকআপ করি সঙ্গীতা

9

আল�োক

হ্যাঁ, আমরা মুখে আটা ময়দা মাখি কারণ আমরা কাল�ো হবার যন্ত্রণা ঢাকি। আমরা র�োজ মেকআপ-এ অভ্যস্ত থাকি কারণ আমরা অত্যাচারের কালশিটে দাগ আড়ালে রাখি। যখন প্রিয়জনের কাছে আমরা শুধু প্রয়োজনেই ব্যবহৃত থাকি তখন অনাদরের ছ�োপ ঢাকতে মুখে রঙ মাখি । ডু বে থাকি যখন বিরামহীন সাংসারিক ব্যস্ততায় বেলা শেষে শুনতে হয় 'নিজেকে দেখেছ�ো আয়নায়? অপমানের আগুন কুড়িয়ে যখন মনের দুঃখ মনেই রাখি হ্যাঁ , তখনও আমরা বেদনা ঢাকতে মেকাপের রঙ মাখি। সব রঙ কিন্তু বলিরেখা ঢাকার জন্য মাখা নয় কিছু রঙ মদ্যপ স্বামীর আঙ্গুলের চিহ্ন মুছতে মাখতে হয় । কিংবা ধর্ষকের দেওয়া কাটা ছেঁড়া আঁচড়ান�োর স্পষ্ট দাগগুল�ো ঢাকতে আমরা বাধ্য হই মেকআপ নামক আটা ময়দা মাখতে। প্রেমের প্রত্যাখ্যানে যখন একটা ক�োমল সুন্দর মুখ অ্যাসিডে ঝলসে যায় প�োড়ার ক্ষত ঢাকতে এই মেকআপই আমাদের দেয় সায় । শারদীয়া 2022

মা আসছে

নির্মলেন্দু কুণ্ডু

বলাকা দাস

লাঠি

বলব কি আর, ভাল্লাগে না লিখতে লাগে কষ্ট, ছ�োট্ট হলুদ মুখগুল�োতেই মনের ভাবটা স্পষ্ট ৷

আমায় কি কেউ বলতে পারিস পুজ�োর গন্ধ কি! তবে কি ত�োরা ঠিক ভাবছিস পুজ�ো এল কি! আয় রে খ�োকন, ওরে ছ�োটন ঢাক নিয়ে আয়, নাচের একটু মহড়া দিই আজকে আঙিনায়। শিউলি কুঁড়ি উঠল ফু টে, কাশ ফু লের গন্ধ ছ�োটে, মেঘের ভেলা আজ আকাশে, খুশির ঢেউ উথলে ওঠে। মায়ের গন্ধ ভেসে আসে আগমীর সুরে সুরে, শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে মা কে নেব বরণ করে। যাব আমরা ঠাকুরতলায় মিলব সবাই গলায় গলায়, কত গল্প আড্ডা হবে, ভাসব সবাই গানের ভেলায়। আকাশ বাতাস জনে - মনে আনন্দের ঢেউ ভাসছে, আর কটা দিন সবুর কর, মা আসছে, মা আসছে।।

বন্ধু ত�োমায় না পেলে আমার চলা-ই হত�ো দায় এই বুড়ো বয়সে হায়। চ�োখেতে ভাল�ো হয়না ঠাওর খানা-ড�োবায় পা মচকায় এ হাত ত�োমায় ছাড়তে নাহি চায়।

ইম�োজি

হাসবে তু মি কেমন করে মুচকি নাকি অট্ট, সবার জন্য মুখটা বাঁকা ভাইটি উদার বড্ড ৷ কাঁদছ�ো তু মি, হাপুস নয়ন কিংবা বইছে বন্যা, দেখাও তু মি বেবাক হয়ে পুত্র হও বা কন্যা ৷ হলুদমুখ�ো সবকিছু ই দেখায় অবিরত, কিন্তু সে ত�ো নয়গ�ো ভায়া মুখের কথার মত�ো ৷ ত�োমার বলা শব্দ-দুট�ো মনে আনে শান্তি, কখন�ো বা জাগিয়ে ত�োলে মিটিয়ে অসার ক্লান্তি ৷ হলুদমুখ�ো থাকুক না ভাই ফেবু-হ�োআর বুকে, কথা যেন ফু র�োয় না ভাই ত�োমার-আমার মুখে ৷

10 আল�োক

শারদীয়া 2022

হারাধন ভট্টাচার্য্য

পাড়ার কুকুর করলে তাড়া ত�োমায় দেখেই ছু ট লাগায় তু মি ভায়া ছেড়োনা আমায়। ত�োমায় নিয়ে খেলেছি কত আমার সেই জ�োয়ান বেলায় মাঠে ঘাটে রথের মেলায়। রাত-বিরেতে থাকলে হাতে চ�োরেরা ভয়ে মুর্ছা যায় গেরস্থ সুখে ঘুম লাগায়। সে সব দিনের অনেক কথা মনের ভেতর শ�োনা যায় বন্ধু তু মি ছেড়োনা আমায়। আমার সুখের দিনের বন্ধু যারা সময় থাকতে কেটেছে ক�োথায় এখন বন্ধু , তু মি বিনে আমি অসহায়। মরণকালেও সঙ্গে থেক�ো সখা হরি ব�োলে তু লবে যখন চিতায় তু মি ই আমার পরম বন্ধু , বলছি কৃতজ্ঞতায়।।

আয়রে আমার শারদীয়া

বাঘের মত�ো

দামিনী

দেবাশীষ চক্রবর্তী

শরৎ স�োহাগ অঙ্গে নিয়ে আয়রে আমার শারদীয়া বছর পরে আয়রে এবার অপেক্ষার অতু লনীয়া । শিব স�োহাগী শিবানী তু ই আয়রে চড়ে ঘ�োটকরাজে কান পেতে শ�োন ভু বন জুড়ে স্বাগতমের বাদ্যি বাজে । ব�োধন সুরের বেণু নিয়ে রূপংদেহী আসবি ধরায় আগমনীর বার্তা পেয়ে শিউলি রানী সুবাস ছড়ায় । রাজার বেটি গ�ৌরী মা তু ই আয়রে নিয়ে খুশির মেলা দেখরে চেয়ে ত�োর আশাতেই মা মেনকার কাটছে বেলা । শূলধারিণী দশভু জা ওঠ মা জেগে চণ্ডীপাঠে ত্রিনেত্রা তু ই নয়ন মেলে বাড়িয়ে দে পা পূজার বাটে । সংস্থিতা মা জননীর শক্তি রূপে শান্তি রূপে হ�োক অভিষেক বছর পরে জাঁক প্রদীপ আর সুগন্ধী ধূপে। অলঙ্কারে সাজ গ�ো মা তু ই গলায় দুলুক ফু লের মালা আরতিতে ত�োর জয় গান উপচে উঠু ক ভ�োগের থালা । তিথির বাঁধা সন্ধিক্ষণে রুদ্রাণী জ্বাল আগুন চ�োখে জাগ্রত হ�োক ত�োর মহিমা দেখুক ভবের সকল ল�োকে । আল�োর দ্যুতি ছড়িয়ে দিক অষ্টোত্তর শত বাতি মহামায়ার আরাধনায় বিভেদ ভু লে সবাই সাথী । সন্ধিক্ষণে বর দে মা তু ই দে সুমতি সবার মনে ত�োর গরিমার মন্ত্র বলে অঞ্জলি দিই ত�োর চরণে । তিথির শেষে বরণডালায় দুর্গা ত�োকে বিদায় জানাই ছলছলে চ�োখ বাজবে বুকে নহবতের করুণ সানাই । ত�োর সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে মাতবে বধূ সিঁদুর খেলায় বল�ো দুর্গা মাইকি রব তু লবে সবাই বিদায় বেলায় । ফিরবি মা তু ই শিবের ঘরে বছর ঘুরে আসবি কবে ? মন কেমনের বিসর্জনেও বলি আসছে বছর আবার হবে । যাবার আগে মনুষ্যতে জাগিয়ে দে মা স্নিগ্ধ হিয়া আলিঙ্গনে মিষ্টি মুখে ধন্য হ�োক শুভ বিজয়া ।

একটা শেয়াল চেঁচাচ্ছিল অনেকটা ঠিক বাঘের স্বরে; গিন্নি সেটা শুনতে পেয়ে রাগছিল খুব রান্নাঘরে। খুন্তি হাতে দ�ৌড়ে এল, " সকালবেলা চেঁচাও কেন? বাঘের গলা নকল করে নিজেকে বাঘ ভাবছ যেন! আবার যদি চেঁচাও, তবে শাস্তি পাবে সাথে সাথে, খাওয়া ত�োমার বন্ধ হবে দুপুরবেলা এবং রাতে। " শেয়াল একটু ভয় পেয়ে যায়, করুণ স্বরে চিঁ চিঁ করে, " গিন্নি তু মি রাগছ�ো কেন? রাগলে ত�োমার রক্ত চড়ে, এবার ভ�োটে প্রার্থী হব, ভাষণখানা ঝালাচ্ছি তাই শেয়াল-ইঁদুর সব নেতাদের বাঘের মত�ো মেজাজটা চাই!" গিন্নি তখন গদ গদ, " না গ�ো আমি করিনি রাগ, বাঘিনী ত�ো আমিই হব, জিতলে তু মি হবেই যে বাঘ। ঝালাও তু মি, যাচ্ছি আমি কাজ রয়েছে গাদা গাদা; একটু বাদে দিচ্ছি ত�োমায় নুন মাখিয়ে টু কর�ো আদা।" শেয়াল বলে দুষ্টু হেসে," সঙ্গে যেন ত�োমাকে পাই!" গিন্নি বলে মিষ্টি হেসে," আসছি, তবে বাঘটাকে চাই!"

11 আল�োক

শারদীয়া 2022

অন্তরের ভাল�োবাসা স�ৌতম সরকার

জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়তে হয় আখির হ�োসেন

আমিও চেয়েছিলাম, কিন্তু বলতে পারি নি, তু মিই পেরেছিলে মনের বাঁধন খুলতে। তু মিই ত�ো এগিয়ে এসে বলেছিলে, 'এস�ো না...আমরা এক সুত�োয় বাঁধা পড়ি'। ইতস্তত করতে করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম ভাল�োবাসার হ্যাঁচকা টানে-এক ঝটকায় ত�োমার মনের গহীনে জায়গা দিয়েছিলে আমায়। 'আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছ�ো তু মি হৃদয় জুড়ে'-গানটি শুনিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে বলেছিলে, 'ত�োমায় বড্ড ভাল�োবাসি গ�ো'। কুঞ্জকানন পার্কে বসে তু মি আর আমি, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় চলে গেছে, বাদাম ছাড়িয়ে আমার মুখে দিয়ে বলেছিলে, 'এই পথ যদি না শেষ হয়---' কিন্তু নিষ্ঠু র বাস্তবের অম�োঘ পরিহাস, বাবার পছন্দকে অমান্য করতে পার�ো নি। আজ তু মি খুন্তি হাতে তার স্বাদ তৈরী করছ�ো, আর আমি? আর একজনের আদেশ পালনে ভীষণ ব্যস্ত।

জলে বাস করেও কুমিরের সাথে লড়তে হয় কুমিরকেও ব�োঝাতে হবে জলটা তার একার নয়। জলের কুমির শান্ত থাক�ো নইলে বুঝবে জ্বালা চড় মেরে দাঁত ফেলব�ো যখন বুঝবে ব্যাটা ঠেলা । আজব দেশের ভীতু মানুষ নইরে আমি ভাই বাড়লে বেশি কাটব�ো লেজ বলছি আমি তাই । মানুষ আমি প্রতিবাদী কুমির তু মি জান�োনা ধার ধারিনা ত�োমার রাগের এটা কেন�ো মান�োনা ? লড়াই করেই কুমির ত�োমায় ডাঙায় দেব�ো ছু ঁড়ে আমায় ব�োকা ভাবলে নিজের কবর রাখ�ো খুঁড়ে । তাই বলছি চু প হয়ে যাও শান্তিতে থাক�ো জলে জলটা ত�োমার একার নয় এটা না বুঝলে কি চলে?

বাসে উঠতেই সিদ্ধার্থ সিংহ বই দিয়েছি, পেন দিয়েছি সঙ্গে লেখার খাঁচা ও কেবলই টানছে বালিশ পুর�োন�ো লেপ-কাঁথা। দুধ দিয়েছি, কলা দিয়েছি সঙ্গে সেঁকা রুটি আধ ঘণ্টা পরেও দেখি খেলছে কাটাকুটি। তেল শ্যাম্পু সাবান দিয়ে বলছি চানে যা না এসে দেখি হাঁ করে সে দেখছে কাকের ছানা। ব্যাগ দিয়েছি, সঙ্গে টিফিন ব�োতল ভরা জল বাসে উঠতেই রাস্তাখানা আনন্দে ঝলমল।

12 আল�োক

শারদীয়া 2022

নাম রেখেছি অপ্রিয়া

ভু লে যেওনা

ঝিলিক রায়

সুদীপ ওম ঘ�োষ

সে স্বেচ্ছায় ভূ মিষ্ঠ হয়নি জান�ো, মা...নিজের 'বাঁজা' নাম ঢাকতে ওকে এনেছিল ধরিণীর বুকে, নিজের বুকে ধরেনি... প্রদীপ জ্বালাতে চেয়ে সলতে পুড়ল প্রদীপ্তায় কিন্তু 'বাবা'র বুকে জ্বলেছিল সেদিন হাজার বাতির র�োশনি... বড় হচ্ছিল মেয়ে, ক্ষীণদৃষ্টি তায় কাল�ো... "কি হবে চশমা পরে?? আরও কুৎসিত লাগবে, বিয়ে করবে কে??"....মায়ের ফত�োয়া হল জারি... বাবার জ�োরে চশমা হল... দৃষ্টি হল প্রখর, রুদ্ররূপে 'মা'... "ত�োমার জন্য মেয়েটার চ�োখের হল ক্ষতি"... বলল বাবা...না বাবা, লাভই হল ভারি মেয়ে বহুগুণে মেধাবী, পাশ দিল রেকর্ড নম্বরে... প্রাপ্তি??? "বিয়ের বয়স, কাল�ো, কত পণ দিতে হবে জানা আছে???"... মায়ের দুশ্চিন্তা বছর ঘুরতেই মেয়ে ঘরণী থেকে জননী, কালচক্রের অগ্নিকুণ্ডে দিল গুণের জীবনাহুতি... মা এবার অসুস্থ, মেয়ের কর্তব্যের পালা, রান্না-বাচ্চা-ওষুধ একার হাতে, বাবাও সাথে... হল মা নীর�োগ। "তু ই না হলেও চলে যাবে, জামাই আমার দুর্লভ সন্তান...ওই আমাদের বুড়�ো বয়সের লাঠি..." মেয়ে,আবার হল বিয়�োগ...বিশাল পুরস্কার মেয়েটি গায়, আঁকে, ভাল�ো নাচে। মায়ের আঁচল ছাড়াই মেয়েটি ভাল�ো আছে... বাবার হিয়ার কাছে.. নাম রেখেছি অপ্রিয়া...

আজ ত�োমার বৃহস্পতি তু ঙ্গে দিনের পর যেমন রাত আসে ত�োমার ও ঠিক আসবে শনির দশা, আজ তু মি বেতাজ বাদশাহ ভাবছ বসে ত�োমরই দিন থাকবে, ভু লেছ তু মি ইতিহাস, এমন ভেবেছিল অনেক রাজা পেয়েছিল তাঁরা শেষে সাজা। আজ ত�োমার হাতে পাওয়ার তাই ত�োমাকে সবাই সেলাম করে, একদিন সকালে উঠে দেখবে ত�োমাকে সবাই কেমন ঘৃণা করে। মানুষ সবাই সব ব�োঝে শুধু তু মি বুঝতে চাও না, তু মি হারতে চাওনা তু মি শুনতে চাওনা। আজও যারা ত�োমার পাশে ভিড় করে আছে ত�োমাকে সামনে রেখে মজা ল�োটে, দেখবে একদিন কেউ পাশে নেই কেউ পাশে থাকে না, এসেছি একা যেতে হবে একা এটা ভু লে কখনও যেও না।

13 আল�োক

শারদীয়া 2022

প্রবন্ধ

শুভ শক্তির মহা আয়�োজনে মাতৃ পূজা রূপম চক্রবর্ত্তী/বাংলাদেশ কবিগুরুর ভাষায়, তু মি নব নব রূপে এস�ো প্রাণে/ এস�ো গন্ধে বরণে, এস�ো গানে/ এস�ো অঙ্গে পুলকময় পরশে/ এস�ো চিত্তে অমৃতময় হরষে,/ এস�ো মুগ্ধ মুদিত দু'নয়নে/ তু মি নব নব রূপে এস�ো প্রাণে। শ্বশুর আলয় থেকে মেয়ে আসবে বাপের বাড়িতে। তাই সকলের মুখে হাসির ধারা বহমান। পাড়া প্রতিবেশীর চ�োখে ঘুম আসেনা, সবাই চেয়ে আছে নতু ন প্রভাতের দিকে। সবার একটাই আকুতি কখন তাদের মেয়ে ঘরে আসবে, কখন তাদের মেয়েকে শিউলি ফু লের মালা গেঁথে পরাবে। বার্তা প্রেরকের ভূ মিকা নিয়ে মহালয়া আসে। বাপের বাড়িতে শুরু হয়ে যায় প্রেমানন্দের সমার�োহ। ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ ভক্ত সজ্জনদের কাছে মহালয়া তিথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহালয়া এলেই বাংলার মাটি-নদী – ৃ জ ূ ার মহালগ্নকে আকাশ প্রস্তুত হয় মাতপ বরণ করার জন্য। কাশফু ল ফু টলে শরৎ

14 আল�োক

শারদীয়া 2022

আসে, না শরৎ এলে কাশফু ল এসব নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। কিন্তু মহালয়া এলেই যে দুর্গাপূজা এসে যায়, তা নিয়ে তর্কের ক�োনও অবকাশ নেই। মহালয়া এলেই সেই দেবী-বন্দনার সুর ধ্বনিত হয় বাংলার হৃদয়ে। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। বুকের মধ্যে জাগে আনন্দ-শিহরিত কম্পন, মা আসবেন সেই অপেক্ষায় থাকে ভক্তকূল। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা। নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা। এস�ো গ�ো শারদ লক্ষ্মী, ত�োমার শুভ্র মেঘের রথে। যে মেয়ে বাপের বাড়িতে আসবেন তিনি দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা। তিনি অসুর বিনাশিনী, মহিষাসুরমর্দিনী। মহিষাসুরকে যুদ্ধে তিনি নিহত করেছিলেন। মহিষাসুর রম্ভ নামক এক

অসুরের পুত্র ছিলেন। দুর্দান্ত মহিষাসুর দেবতাদেরকে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত করেন। রাজ্যহারা দেবতারা বিষ্ণুর কাছে এর প্রতিকার প্রার্থনা করলেন। সকলে মিলে কঠ�োর তপস্যায় বসলেন। তাদের তপস্যা প্রভাবে দেহ থেকে তেজ বিনির্গত হল। সেই তেজ সম্ভূ ত দেবী মহামায়া দুর্গা। নানাবিধ অলংকার ও বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেবী অট্টহাস্য করে ঘন ঘন গর্জন করতে লাগলেন। ভয়ংকর যুদ্ধে মহিষাসুর দেবীর কাছে পরাজিত হলেন। যিনি উগ্রভাবে জগতকে কামনা করেন তিনি মহিষাসুর। কাম, ক্রোধ,ল�োভ, ম�োহ, মদ ও মাৎসর্যের ঘনীভূ ত মূর্তি মহিষাসুর। এই অশুভ অহংকারী অসুরকে মা যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। জগতের প্রায় প্রতিটি জায়গায় প্রতিনিয়ত এই সুর আর অসুর শক্তির সংগ্রাম চলছে। মহাশক্তির প্রভাবে সুরশক্তি অসুরশক্তিকে পরাজিত করতে পারে।

প্রতিটি মানুষ সংসার বন্ধনে আবদ্ধ। সংসারের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে ঘুরতে মানুষ হয়ে পড়ে স্বার্থান্ধ। স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারকল্পে মানুষ তার মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়ে হিংসার দাবানলে নিজেকে দহন করতে থাকে। কেউবা চায় অন্যকে ছ�োট করতে আর কেউবা চায় পরের সম্পত্তি দখল করে নিজেকে বিত্তশালী করে সমাজে উপহার দিতে। কেউবা চায় অপরজনকে জুলম ু নির্যাতন করে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা। আমরা পূজ�ো বাড়িতে যখন যায় তখন দেখি মায়ের পদতলে বিজিত মহিষাসুর। আবার মায়ের উপরে থাকে মঙ্গলের প্রতীক শিব। এখানে একটা ৃ াঠাম�ো অনুপম শিক্ষা আমরা মাতক থেকে পেয়ে থাকি। মঙ্গলকে ধারণ করে আমাদের শক্তি দিয়ে সেই অসুর শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। পশুশক্তি এত বেশি বেড়ে গেছে যার প্রেক্ষিতে এখন সমাজে শুভশক্তির মানুষগুল�ো দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। স্বার্থান্ধ মানুষগুল�োর অনাচার সহ্য করার সীমা সংকুচিত হচ্ছে। মা দুর্গা সেই পশুশক্তি স্বরূপ স্বার্থান্ধ নামক দুর্গম অসুরের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন। মা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এসে আমাদের রক্ষা করেছেন। দেবী ভাগবতে আছে, সেয়ং শক্তির্মহামায়া সচ্চিদানন্দরূপিণী। রূপং বিভর্ত্যরূপা চ ভক্তানুগ্রহ হেতবে।। সেই সচ্চিদানন্দরূপিণী মহামায়া পরাশক্তি অরূপা হইয়া ভক্তগণকে কৃপা করিবার জন্য রূপ ধারণ করেন। মা এত করুণাময়ী কেউ থাকে সকামভাবে ডাকুক অথবা নিষ্কামভাবে ডাকুক তিনি মায়ের কৃপা অবশ্যই পাবেন। মা জগৎজননী আমাদের স ৃষ্টি করেন এবং তিনিই আমাদের মায়াম�োহে আবদ্ধ করে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছেন। মাকে নিষ্কামভাবে আরাধনা করলে তিনি আমাদের কৃপা করেন।

15 আল�োক

শারদীয়া 2022

ৃ াবনা জাগ্রত করার অনুপম শিক্ষা মাতভ পেয়ে থেকে দুর্গা পূজার মাধ্যমে। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাই বলেছেন, ত�োমরা যাকে ব্রহ্ম বল আমি তাকে মা বলি, মা অতি মধুর নাম। প্রতিটি ঘরে ঘরে মাত ৃজাতি সম্মান লাভ করুক। মাত ৃ আরাধনা তখনই সার্থক হয়ে উঠবে, যখন ঘরে ঘরে দুর্গার মত মেয়েদের প্রকাশ ঘটবে। বছর বছর ঢাক-ঢ�োল বাজিয়ে দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা করেও কেন আমাদের দুর্গতি দূর হচ্ছেনা তা এখন ভেবে দেখতে হবে। পূজার মর্ম কথা আমাদের জানতে হবে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বললেন, ‘পূঁজা পার্বণ তু ই যতই করিস, ফু ল, তু লসী, গঙ্গা জলে অনুশীলনী ক�ৌশল ছাড়া, ফল পাবে না ক�োন কালে।’ তাই, দুর্গা পূজা কেবল মাত্র পুস্প বিল্বপত্রের এবং ঢাক-ঢ�োলের পূজা নয়। এ পূজা মানবতার এক বিরাট মিলন উৎসব। ঈশ্বর এক, অদ্বিতীয় ও নিরাকার। বিভিন্ন দেব-দেবীও এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের বিচিত্র শক্তির প্রকাশ মাত্র। ভক্ত ঈশ্বরের প্রতীক। মূর্তিতে তার হৃদয়ের অর্ঘ্য দেবতার পাদপদ্মে নিবেদন করে করুণা লাভের চেষ্টাই পূজা বা উপাসনা। তাই পূজারী আরাধ্য দেবতার মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে চিন্ময়ী জ্ঞানে অর্চনা করেন। ভক্তের হৃদয়ের অকৃত্রিম শ্রদ্ধাভক্তিতে মৃন্ময়ী মূর্তি তার মানসল�োকে চিন্ময়ী হয়ে ওঠে। চিন্ময়ী মা আমাদের সকল মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি প্রদান করেন। আজকে চারদিকে যদি তাকাই তাহলে দেখব আমরা প্রতিনিয়ত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি। মায়ামুগ্ধ জীব ভাবে প ৃথিবীতে সে চিরদিন জীবিত থাকবে। যা ভ�োগ করতে ইচ্ছা করে তিনি সেটাই ভ�োগ করতে চেষ্টা করেন। মায়া শক্তির কারণে জীব ভাবে আমিই কর্তা। পাপ কর্মপরায়ণ

বিবেকশূন্য মানুষ প্রতিনিয়ত মায়া দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজের অস্তিত্ব বিনাশী অবিদ্যা রূপ মায়াকে যিনি ধ্বংস করেন তিনি জগৎ জননী মা দুর্গা। মা হচ্ছেন অভীষ্টদায়িনী, পরমা ইচ্ছা শক্তি। মানুষের মধস্থিত আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে মুক্তি পথের সন্ধান দেন মা জগৎজননী। আমাদের মত�ো ব্যক্তিদের মায়ার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া খুবই দুরহ ব্যাপার। মায়ার কাজ হচ্ছে যারা ধর্মবিমুখ তাদেরকে প্রতিনিয়ত আবদ্ধ করা। শ্রী চৈতন্য চরিত্রামৃতে বলা হচ্ছে, " কৃষ্ণ ভু লি সেই জীব অনাদি বহির্ম্মুখ। অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুখ।। কভু স্বর্গে উঠায় কভু নরকে ডু বায়। দন্ড্যজনে রাজা যেন নদীতে চু বায়।। ৃ জ ূ ায় আমাদের প্রার্থনা থাকবে মাতপ আমরা যেন ধর্মপথে অথবা ইষ্টপথে পরিচালিত হতে পারি। কেননা মানব জীবনে অর্থের প্রাচু র্যতা থাকতে পারে কিন্তু সে অর্থ যদি সঠিকভাবে বন্টিত না হয় তাহলে সুন্দর জীবন গঠন করা যাবেনা। ধর্মীয় অনুশাসনবাদ মানুষের চ�োখ খুলে দেয়। আমরা যারা দুর্গা পূজা করি, সরস্বতী পূজা করি তাদের খেয়াল রাখতে হবে পুজ�োর ভিতরের রহস্যগুল�ো নিজের জীবনে অধিষ্ঠিত করতে পারি। যেমন ধরুন পূজা করতে বসলাম কিন্তু দেখা গেল ভক্তি করে মায়ের শ্রীচরণে অঞ্জলি দিলামনা। তাহলে ভাবুন আমরা কি সঠিকভাবে পূজা করেছি। সমাজে কিছু কিছু ল�োক পাওয়া যাবে যারা আত্মপ্রচারের জন্য অথবা আত্মপ্রতিষ্ঠা করার জন্য পূজা করছেন। সেই পুজ�োগুলিতে রাজসিকতা আর তামসিকতায় পূর্ণ। একবার আমি চট্টগ্রাম শহরের একটি নামকরা পূজামণ্ডপে তন্ত্রধারকের কাজ করেছিলাম। আমি প্রত্যক্ষ করলাম জগৎজননী মায়ের পূজা হচ্ছে অথচ ক�োন�ো একজন মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছেনা একটু উলুধ্বনি করার

জন্য। ব্রাহ্মণ পুজ�ো করছেন আর তাকে সাহায্য করার জন্য ক�োন�ো ব্যক্তি নাই। আমরা যদি প্রকৃত ভক্ত হয়ে উঠতে না পারি তাহলে দেখা যাবে মাত ৃ কৃপা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। হিংসা ও অহমিকার প্রচন্ড আঘাতে জর্জরিত সনাতন সমাজকে সাত্ত্বিক পূজা করে মাত ৃ করুণা লাভ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেবী মাহাত্ম্যে মহাদেবী বলেছেন,"যে আমার উৎকৃষ্ট মাহাত্ম্য ভক্তি সহকারে পাঠ করিবে তাহার ক�োন�ো পাপ বা পাপজনিত বিপদ হইবে না। নিজের পরমার্থিক মুক্তির জন্য আমরা শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে মায়ের কাছে আত্মনিবেদন করব। পাশাপাশি দুর্গাপূজার মূলশিক্ষা সার্বজনীনতাকেও আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। পারস্পরিক ভেদাভেদ

16 আল�োক

শারদীয়া 2022

ভু লে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতি প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হতে হবে। মা কৃপাময়ী, তাই মায়ের কৃপা লাভের জন্য শুদ্ধ ভক্তি প্রয়�োজন।হিংসা ও অহমিকার প্রচন্ড আঘাতে জর্জরিত সনাতন সনাতন সমাজকে সাত্ত্বিক পূজা করে মাত ৃ করুণা লাভ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেবী মাহাত্ম্যেও বলা হয়েছে "শ্রোষ্যন্তি চৈব যে ভক্ত্যা মম মাহাত্ম্যমুত্তমম। ন তেষাং দুষ্কৃ তং কিঞ্চিৎ দুষ্কৃত�োত্থা ন চাপদঃ।। যে আমার উৎকৃষ্ট মাহাত্ম্য ভক্তি সহকারে পাঠ করিবে তাহার ক�োন�ো পাপ বা পাপজনিত বিপদ হইবেনা। ঋষি মেধস শ্রোতা সুরথ রাজা ও সমাধি বৈশ্যকে দেবীর চরণে শরণাগত হতে বললেন, "তামুপৈহি মহারাজ শরণং পরমেশ্বরীম।

আরাধিতা সৈব নৃণাং ভ�োগস্বর্গাপবর্গদা।। সেই পরমেশ্বরীর শরণাগত হও। তাঁহাকে আরাধনা করিলে তিনি মনুষ্যদিগকে ভ�োগ, স্বর্গ ও অপবর্গ দান করিয়া থাকেন। নিজের পরমার্থিক মুক্তির লক্ষ্যে আমরা শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে মায়ের কাছে আত্মনিবেদন করব। পাশাপাশি দুর্গাপূজার মূলশিক্ষা সার্বজনীনতাও আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে যাতে একে অপরের প্রতি প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হতে পারি। সুন্দর পরিবার, সমাজ নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় মূল্যব�োধ জাগ্রত হয়। প্রত্যেক পূজার্থীর জীবন সুন্দর ও মধুময় হ�োক। শুভ ও সুন্দর শক্তির জয় হ�োক।

চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা অনির্বাণ সাহা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর, জগৎজননী জগদ্ধাত্রীর শহর চন্দননগর, আল�োর ঠিকানা চন্দননগর । হাওড়াবর্ধমান রেলপথের মেইন লাইনে অবস্থিত এই চন্দননগর শহর । বিখ্যাত কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির স্মৃতি বিজড়িত এই ফরাসডাঙা (চন্দননগর শহরটি এই নামেও অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল) এখন বিশ্বমানচিত্রে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজ�োর জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত ও আল�োচিত । অথচ জগদ্ধাত্রী পূজার থেকেও প্রাচীন দুর্গাপূজা রয়ে গিয়েছে এই শহরেরই বুকে । আনুমানিক ৫৫০ বছরেরও বেশি পুরান�ো, বাংলার অন্যতম প্রাচীন খলিসানির বসুবাড়ির দুর্গাপূজা । যা চন্দননগরের প্রথম পারিবারিক দুর্গাপূজা

17 আল�োক

শারদীয়া 2022

হিসেবে পরিচিত । চন্দননগর শহরে আরও একটি পারিবারিক দুর্গাপূজা রয়েছে যা বর্তমানেও যথেষ্ট ঐতিহ্যের দাবি রাখে । তা হল চন্দননগর শহরের পালপাড়া অঞ্চলে অবস্থিত "শেঠ বাড়ির" দুর্গাপুজ�ো । হুগলি জেলার মহানাদ গ্রাম থেকে হুগলির হারিট গ্রাম হয়ে প্রায় তিনশ বছর আগে চন্দননগরে আসে শেঠ পরিবার । তারা তৎকালীন সময়ে ছিল প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী । শেঠ পরিবারের চতু র্থ পুরুষ হলেন শম্ভুচন্দ্র শেঠ । তার পিতার নাম রাধাম�োহন শেঠ এবং মাতা রাধারানী দেবী । পণ্ডিত শ্রী শীবেন্দ্রনারায়ন শাস্ত্রী মহাশয়ের লেখা "বাংলার পারিবারিক ইতিহাস" বইটিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী

মনে করা হয় কালীচরণ শেঠের (যদিও কালীচরণ শেঠ মহাশয়কে শেঠ বংশের প্রথম পুরুষ হিসেবে মনে করা হয়) কনিষ্ঠপুত্র প্রাণকৃষ্ণ শেঠ মহাশয়ের দ্বিতীয় পুত্র রাধাম�োহন শেঠ থেকেই বর্তমান শেঠ বংশের উৎপত্তি হয়েছে । পিতামহ কালীচরণ শেঠ মহাশয় চন্দননগরের ব�োড় কৃষ্ণপুরে প্রায় সাড়ে ষ�োল�ো কাঠা জমির উপর একটি ভবন প্রস্তুত করেন । বংশানুক্রমে পাওয়া চন্দননগরের ব�োড় কৃষ্ণপুরে তৈরি ভবনেই রাধাম�োহন শেঠ সপরিবারে বসবাস করতেন । রাধাম�োহন শেঠ ও রাধারানী দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন শম্ভুচন্দ্র শেঠ । তার দাদার নাম ছিল রামনারায়ণ শেঠ (মাধ্যম পুত্র) এবং দিদির নাম ছিল পদ্মমণি দেবী (জ্যেষ্ঠ

কন্যা) । রাধাম�োহন শেঠ মহাশয় ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক এবং দানবীর ব্যক্তি । তিনি মুক্ত হস্তে দরিদ্র মানুষের কাছে তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠা ব�োধ করতেন না । পণ্ডিত শ্রী শীবেন্দ্রনারায়ন শাস্ত্রী মহাশয়ের লেখা "বাংলার পারিবারিক ইতিহাস" বইটি থেকে জানা যায় যে, জীবনের শেষলগ্নে এক ব্রাহ্মণের কাতর অনুর�োধে তার নেওয়া ঋণের ম�ৌখিক জামিনদার হন রাধাম�োহন শেঠ মহাশয় । আনুমানিক ১৮১৬ সালে সেই ব্রাহ্মণ ঋণ শ�োধে অসমর্থ হলে চন্দননগরের ব�োড় কৃষ্ণপুর নামক জায়গার পদ্মপুকুর পল্লীর পৈত্রিক বাসভবনটি বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশ�োধ করেন তিনি । ফলস্বরূপ জীবন সায়াহ্নে এসে রাধাম�োহন বাবু চরম অর্থকষ্টের মধ্যে পড়েন, সাথে সাথে তার সন্তানাদিরাও এই কষ্ট ভ�োগ করতে থাকে । এই অত্যধিক দারিদ্রতার জ্বালা রন্ধ্রে রন্ধ্রে কষ্ট দিতে থাকে শম্ভুচন্দ্র শেঠকে । জীবন ও সংসার চালনার দায়ভার কাঁধে নিয়ে মাত্র ৬৭ টাকা মাস মাহিনার পরিবর্তে কলকাতার এক সাধারণ তু লার দ�োকানের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন । পরবর্তী সময়ে চন্দননগরের বারাসত নিবাসী অত্যন্ত বিত্তশালী ব্যবসায়ী কার্তিক প্রসাদ শ্রীমানীর কন্যা অন্নপূর্ণা দাসীর সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন । পৈত্রিক বাসভবনটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার ফলে বিয়ের ঠিক পরপরই শম্ভুচন্দ্র শেঠের শ্বশুরমশাই তৎকালীন পালপাড়া অঞ্চলে একটি দুর্গাদালান সহ ভবন প্রদান করেন (যদিও স্বর্গত হরিহর শেঠ মহাশয়ের শ্রাদ্ধবাসরে তার পুত্র-কন্যা দ্বারা প্রকাশিত "পরমপূজ্য পিত ৃদেবের উদ্দেশ্যে অন্তরের গভীরতম ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন" নামক বংশ পরিচয় সম্বলিত পত্রিকায় বলা হয়েছে এই বাসভবনটি শম্ভুচন্দ্র শেঠ মহাশয় নির্মাণ

18 আল�োক

শারদীয়া 2022

করেন) । এই বাসভবনটিতে শেঠ বা সদস্যা প্রতিবছর পুর�োহিতদের (এই বংশের বর্তমান প্রজন্মের মানুষের পরিবারের প্রধান পুর�োহিত হিসেবে বসবাস করেন । বর্তমানে শ্রীযুক্ত নিতাই চ্যাটার্জী মহাশয় বংশানুক্রমিক ভাবে রয়েছেন । তিনি এই পূজার প্রাচীনত্ব বা প্রতিষ্ঠাকাল নিজেই প্রায় ২৫-৩০ বছর এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না । তবে পরিবারের সাথে প্রধান পুর�োহিত প্রচলিত ধারা ও পারিবারিক মতে এই হিসেবে যুক্ত রয়েছেন) পূজা শুরু করার পূজাটিও আনুমানিক ৫০০-৫৫০ আনুষ্ঠানিক অনুমতি প্রদান করেন । বছরের পুরান�ো বলে অনুমান করা হয় । বর্তমানে এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন হরিহর শেঠ মহাশয়ের প্রপ�ৌত্র শ্রীযুক্ত এই পরিবারের বর্তমান বয়:জ্যেষ্ঠা গ�ৌতম শেঠ মহাশয়ের কথায় এই সদস্যা শ্রীমত্যা অল�োকা শেঠ মহাশয়া । পূজাটি বহুকাল আগে থেকেই শ্রীমানি এই পরিবারের ঠাকুরদালানেই বা পরিবারের পারিবারিক পূজা ছিল বলে ঠাকুরমঞ্চেই প্রতিমা তৈরীর রীতি বহু জানা যায় । আর সেখান থেকেই পূর্ব থেকেই চালু রয়েছে । প্রতিমা শিল্পী শম্ভুচন্দ্র শেঠ মহাশয় এই দালান সহ হিসেবে চন্দননগরের কুন্ডুঘাট নিবাসী ভবনটি বৈবাহিক সূত্রে শ্বশুরমশাইয়ের শ্রীযুক্ত অসিত পাল মহাশয় থেকে পাবার পর এই পূজাটি নির্দিষ্ট বংশানুক্রমিকভাবে বর্তমানে নিযুক্ত রীতিনীতি মেনে এই শেঠ পরিবারে চালু রয়েছেন । এক চালচিত্রের শেঠ রাখেন । সেই সময় থেকেই এই পরিবারের দুর্গা প্রতিমার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও দুর্গাপূজাটি "শেঠ বাড়ির পূজা" বলে উচ্চতা হল যথাক্রমে 5 ফু ট 3 ফু ট ও 6 পরিগণিত হয় । শুধুমাত্র দুর্গাপূজায় নয়, ফু ট । পিছনের চালচিত্রে থাকে পটের এই ঠাকুরদালানে দক্ষিণা শ্যামা কালীর ছবি আঁকা । আটবাংলা স�োনালী সাজে আরাধনাও আরও প্রাচীন । এই দক্ষিণা চালচিত্র ও দেবী মা সেজে ওঠেন শ্যামা কালী পূজাটি দুর্গাপূজার থেকেও অপরূপা সাজে । তবে পুর�োন�ো একটি বেশি প্রাচীন বলে এই শেঠ পরিবারের ছবি থেকে জানা যায় যে, এই পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শ্রীযুক্ত গ�ৌতম শেঠ দুর্গা ঠাকুরের চালচিত্রটি পূর্বে ময়ূরের মহাশয় মনে করেন । সাথে এই বাড়িতে পালক দিয়ে সুসজ্জিত করা হত�ো । দ�োল উৎসবও পালিত হত�ো একসময় দ�োল পূর্ণিমার দিন । বর্তমানে দ�োল প্রতিবছর মহাষষ্ঠীর দিন বাড়ির সংলগ্ণ উৎসবের সেই জাঁকজমক ও ক�ৌলিন্য পুকুরে ঘট ও কলাবউ স্নান করান�োর হারালেও, খুব ছ�োট পরিসরে পরিবারের মাধ্যমে (ঘটস্নান করান�োর গুরুদায়িত্ব মধ্যে সেই রীতি এখন�ো বজায় রয়েছে । বর্তমানে পালন করেন শ্রীযুক্ত গ�ৌতম শেঠ মহাশয়) এই পরিবারের দূর্গা পূজার চন্দননগর শহরের পালপাড়া অঞ্চলে শুভ সূচনা হয় । ঘট ও কলাবউ স্নান অবস্থিত এই "শেঠ বাড়ি" বা দেশশ্রী করিয়ে দুর্গাদালান আনার পর হয় দেবীর হরিহর শেঠের পরিবারের এই ব�োধন, শুরু হয় মহিষমর্দিনী দশভূ জা দুর্গাপূজাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল�ো আরাধনা । চারদিন মহা আড়ম্বরে দেবী এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মায়ের আরাধনা করা হয় । বড় বড় সকলেই পূজা দিতে পারেন এবং ঠাকুর থালায় ফল, সবজি, চাল, ডাল, মিষ্টি দর্শন করতে পারেন । এই পরিবারের ইত্যাদি সহয�োগে নৈবেদ্য সাজান�ো হয় রীতি অনুযায়ী পরিবারের বরিষ্ঠ সদস্য দেবী প্রতিমার সামনে । পূজার কার্যে

প্রয়োজনীয় মিষ্টি বাইরের দ�োকান থেকে ক্রয় না করে, এই বাড়িতে ভিয়েন আয়োজন করার রীতি আজ অব্দি অক্ষুন্ন রয়েছে । পূজার সময়ে এই বাড়িতে ক�োন�োরকম বলির রীতি ক�োনদিনই ছিল না, এমনকি ফল বলিও এই পূজা করা হয় না । দিনের বেলায় আরতির সময় রান্না করা খিচু ড়ি ভ�োগ দেবার রীতি এই বাড়িতে প্রথম দিন থেকেই প্রচলিত ছিলনা এবং আজও নেই । সন্ধ্যেবেলায় মায়ের সন্ধ্যা আরতির সময় লুচি ভ�োগ করা হয় ষষ্ঠী থেকে নবমী প্রতিদিনই । শুভ বিজয়ার দিন মাকে মিষ্টিমুখ ও বরণ করার পর বাড়ির সকল মহিলাদের মধ্যে সিঁদুর খেলার রীতি আজও বিদ্যমান রয়েছে স্বমহিমায় । বর্তমানে জেলে সম্প্রদায়ের অন্তত একজন প্রতিনিধি মাকে কাঁধে করে লরিতে ত�োলেন বিজয়ার উদ্দেশ্যে । শেঠ পরিবারের দুর্গা বিগ্রহ বিসর্জিত হন চন্দননগরের বালি ঘাটে । যে ঘাটটি অবস্থিত বর্তমানে যেখানে আদি মা জগদ্ধাত্রী পূজার মন্দির রয়েছে তার পিছনে । এই শেঠ পরিবারের বাড়িতে লক্ষ্মীনারায়ন অবস্থান করছেন বহু প্রাচীনকাল থেকে । হরিহর শেঠ মহাশয়ের পুত্র মন�োরঞ্জন শেঠ মহাশয় স্বপ্নে প্রাপ্ত আদেশানুসারে এই নারায়ন শিলাকে সারাবছর রাখার জন্য একটি ধাতু নির্মিত ময়ূর সিংহাসন প্রস্তুত করেন । ময়ূর সিংহাসন সহ লক্ষ্মী-নারায়ন এই বাড়ির দ�োতলায় সারাবছর ঠাকুর গ ৃহে অবস্থান করেন । কিন্তু পুজ�োর সময় দ�োতলা থেকে ঠাকুরদালানে ময়ূর সিংহাসন সহ লক্ষ্মী-নারায়নকে নিয়ে আসার রীতি বহুদিন থেকেই প্রচলিত রয়েছে । এই লক্ষ্মী-নারায়নকে ঠাকুরদালানে নিয়ে আসার যথেষ্ট অভিনব । বাদ্যযন্ত্র সহয�োগে সম্ মুখভাগে গঙ্গাজল ছড়ান�ো হয়, তার পিছনে থাকে নতু ন বা শুদ্ধ

19 আল�োক

শারদীয়া 2022

বসন পরিহিতা বাড়ির কুলবধুদের ক�োলে লক্ষ্মী বিগ্রহ এবং তার পিছনে কুল�োপুর�োহিত ময়ূর সিংহাসন সহ নারায়ণকে তার ক�োলে করে ঠাকুরদালানে নিয়ে আসেন । ঠাকুরদালানে নিয়ে আসার পর ময়ূর সিংহাসন সহ লক্ষ্মী-নারায়নকে যথাস্থানে রাখা হয় । দেবী মায়ের আরাধনার সাথে সাথেই চারদিন ধরে লক্ষ্মী-নারায়নকেও পুজ�ো করা হয় । এখানে উল্লেখ্য হল�ো ময়ূর সিংহাসনটিও দেবতা জ্ঞানে নিত্য পূজিত হয় । শেঠ পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শ্রীযুক্ত গ�ৌতম শেঠ মহাশয় আরও জানান যে, দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ের পিতা নিত্যগ�োপাল শেঠ মহাশয়ের আমল থেকেই এই বাড়িতে ময়ূর প�োষা হত, কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে তাদের পরিবারের গ ৃহদেবতা হল�ো ময়ূর (নারায়ণের প্রতিনিধি স্বরূপ) । তৎকালীন সময়ে বাড়ির সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী বাগানে ময়ূরগুলি ছাড়া থাকতে বলে তিনি জানান । তবে পরবর্তী সময়ে বিশালাকৃতি খাঁচার মধ্যে রাখা হত�ো । শেষে অত্যন্ত দুঃখের সাথে তিনি জানান ২০০৯ সালে বনদপ্তরের হস্তক্ষেপে বাড়িতে রাখা বন্ধ করে দেওয়া হয় । সেই সময় এই শেঠ পরিবারে দশটি ময়ূর ছিল বলে গ�ৌতম শেঠ মহাশয় জানান । আদি পরিবারের মধ্যে তৎকালীন সময়ে বেশকিছু রীতিনীতি চালু থাকলেও বর্তমানে অর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলস্বরুপ সেইসব রীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে । সেইরকমই শেঠ পরিবারে চালু থাকা বেশকিছু নিয়ম-রীতিও বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে । বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও বহু কঠিন সময় মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে এই পরিবারের সময় । বহু সামাজিক নিয়মের মধ্যে থেকেও এই

পরিবারের দুর্গা পূজার রীতি কখন�ো বন্ধ হয়নি । দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ের প্রপ�ৌত্র গ�ৌতম শেঠ মহাশয় জানান যে, পূজার যাবতীয় জ�োগাড় বাড়ির মহিলারাই প্রথম দিন থেকেই করতেন । কিন্তু তৎকালীন সময়ে সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী বাড়ির মহিলারা ছিলেন পর্দানশীন । ফলস্বরূপ তারা কখন�োই পর্দার আড়ালে জনসমক্ষে আসতে পারতেন না । তৎকালীন সময়ে বাড়ির মহিলারা বাড়ির অন্দরে বসে পূজার সমস্ত জ�োগাড় করতেন । মূল গ ৃহ থেকে ঠাকুরদালানে বাড়ির পিছনের একটি রাস্তা দিয়ে আসতেন এবং ঠাকুরদালানের দ�োতালায় চিক (তৎকালীন যুগে সরু-সরু করে বাঁশ কেটে, তার দিয়ে সেগুলিকে একত্রে জুড়ে, সুত�ো দিয়ে ঝ�োলান�ো হত পর্দার মত�ো করে । যার একদিক থেকে দৃশ্যমান কিন্তু বাইরে থেকে ভেতরের ক�োন কিছু ই এর মাধ্যমে দেখা যেত না) দেওয়া জানালার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা দর্শন করতেন । দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ের আমল থেকে বাড়ির মহিলাদের পর্দানশীন থাকার রীতি এই পরিবারে বন্ধ হয়ে যায় । তারা জনসমক্ষে থেকেই পূজার সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করতেন এবং সকলের মধ্যে থেকেই দেবী মাকে ও মায়ের আরাধনাকে স্বচক্ষে প্রাণভরে দর্শন করতে শুরু করেন । গ�ৌতম বাবুর থেকে আরও জানা গেল যে, তার দাদু মন�োরঞ্জন শেঠ মহাশয়ের আমলের শেষ পর্ব পর্যন্ত এই বাড়িতে দেবীর ব�োধন চালু হত শুভ মহালয়ার তিথিতে । উক্ত দিনে সহকারী সহ কুলপুর�োহিত মহাশয় দেবীর ব�োধন করতেন এবং চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী আরাধনার সূচনা করতেন । কিন্তু বর্তমানের বিভিন্ন অর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক পরিবর্তনের ফলস্বরুপ দেবীর ব�োধন ও দেবীর আরাধনা শুরু

হয় মহাষষ্ঠীর দিন থেকে । এছাড়াও একসময় এই বাড়িতে বন্দুক থেকে গুলি বর্ষণ করে সন্ধিপুজ�োর সূচনা করার রীতি চালু ছিল । কিন্তু সেই রীতিও বিভিন্ন কারণবশত বিগত কুড়ি বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে । তৎকালীন সময়ে দেবী মা যতদিন ঠাকুরদালানে অবস্থান করতেন ততদিন পর্যন্ত ঠাকুরদালান এক মুহূর্তের জন্য জনশূন্য রাখা যেত না । রাত্রিবেলাতেও অন্তত একজন পারিবারিক সদস্যকে সেই ঠাকুরদালানে থাকতে হত দেবী মায়ের প্রহরায় । পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে রাত্রিবেলায় পরিবারের সদস্যদের ঠাকুরদালানে থাকা সম্ভব না হওয়ায় ব্রাহ্মণ পান্ডে সম্প্রদায়ের এক পাহারাদার নিযুক্ত হন দেবী মায়ের প্রহরায় । তিনি ঢালতল�োয়ার (জানা যায় ঢালটি গন্ডারের চামড়া দিয়ে নির্মিত ছিল) নিয়ে রাত্রিবেলায় সদাসতর্ক অবস্থায় দেবী মায়ের পাহারা দিতেন । কিন্তু কালের নিয়মে সেই রীতিও আজ বন্ধ হয়ে গেছে । বিজয়া দশমীর দিন শেঠ পরিবারের ঠাকুর ভাসানের রীতি অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরাই মায়ের বিগ্রহ গঙ্গার ঘাট অব্দি নিয়ে যেত । ঠাকুর বিজয়ের পর প্রত্যেকে নতু ন গেঞ্জি ও ধুতি পড়ে শেঠ পরিবারের আসত�ো বিজয়া দশমীর স�ৌহার্দ্য বিনিময় করতে । সেই সময়ে জাতিভেদ, বর্ণভেদকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যেই নয় শেঠ পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে তারা শুভ বিজয়ার স�ৌহার্দ্য বিনিময়ের সুয�োগ পেত । এখন বিভিন্ন কারণবশত জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরা অন্যান্য জীবিকানির্বাহের মাধ্যমে জীবনযাপন করায় বর্তমানে শুধুমাত্র সেই সম্প্রদায়ের অন্তত একজন ঠাকুর বিজয়ের সময় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকে । হ্যাজাকের আল�োর পরিবর্তে বর্তমানে

20 আল�োক

শারদীয়া 2022

বৈদ্যুতিক এল.ই.ডি. আল�োয় সুসজ্জিত হয় দুর্গা দালান ও সমগ্র বাড়ি । শেঠ পরিবারের এই দুর্গাপূজায় চারদিন ধরে পারিবারিক সকল সদস্য সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হত�ো কিন্তু বর্তমানে বেশ কিছু বছর হল এই খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র পারিবারিক সদস্য এবং যারা পূজার কার্যে নিয়োজিত থাকেন তাদের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে । কথায় কথায় গ�ৌতম শেঠ মহাশয়ের থেকে জানা যায় যে, হরিহর শেঠ মহাশয়ের ভ্রাতা বিপ্লবী দুর্গাদাস শেঠ পন্ডিচেরি গমনের আগে পর্যন্ত পারিবারিক এই পূজায় বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন । দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ার বড় নাতব�ৌ শ্রীমত্যা অল�োকা শেঠ মহাশয়ার (শ্রীযুক্ত গ�ৌতম শেঠ মহাশয়ের মাতা) থেকে জানা গেল স্বাধীনতার পূর্বে এই বাড়ির সাথে বিপ্লবীদের গ�োপন য�োগায�োগ ছিল । চন্দননগর শহর তৎকালীন সময়ে ফরাসিদের অধীনে থাকায় এই শহরে বিপ্লবীরা নিশ্চিন্তে আত্মগ�োপন করে থাকতে পারত । আর হরিহর শেঠ মহাশয়ের ভ্রাতা বিপ্লবী ৃ ার প্রতি দুর্গাদাস শেঠ ছিলেন দেশমাতক নিবেদিত প্রাণ । ফলস্বরূপ তার সাথে য�োগায�োগ ও অন্যান্য গুপ্ত বৈপ্লবিক আল�োচনার জন্য এই বাড়িতে বিপ্লবীদের আনাগ�োনা লেগে থাকত বলে মনে করা হয় । অল�োকা দেবী আর�ো জানান যে হরিহর শেঠ মহাশয়ের নির্দেশে এই বাড়িতে পুজ�োর সময় এমনকি বছরের অন্যান্য সময়েও রান্না করা খাবার রেখে দেওয়া হত�ো । পরদিন সকালে দেখা যেত সেই খাবার কেউ খেয়ে গেছে । খুব সহজেই অনুমেয় রাতের অন্ধকারে কারা সেই খাবার গ্রহণ করতে আসতেন বা কাদের উদ্দেশ্যে এমন রীতি এই শেঠ

পরিবারের

চালু

ছিল



এই বাড়ির শুধুমাত্র দুর্গাপূজাই নয় এই বাড়ির কালী পূজাটিও যথেষ্ট প্রাচীনত্বের দাবি রাখে । পারিবারিক সদস্যদের থেকে জানা যায় যে অমাবস্যা তিথিতে দুদিন ধরে আয়োজিত এই কালীপুজ�োটিও একসময়ে শ্রীমানি পরিবারের পারিবারিক পূজা ছিল । মা কালীর কাঠাম�োতেও যথেষ্ট প্রাচীন তা দেখলেই ব�োঝা যায় । মা কালী এই বাড়িতে দক্ষিণা শ্যামা কালী রূপে পূজিত হন । কালী পূজার দিন আতশবাজির (শব্দবাজি ছাড়া) মাধ্যমে পূজার শুভ সূচনা করা হয় এবং সমগ্র বাড়ি আল�োকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় । দুর্গাপুজ�োর মত�োই কালীপূজাতেও ক�োন�ো রকম বলি উৎসর্গ করা হয় না । এই পরিবারের সকল পূজাই অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব মতাদর্শ অনুযায়ী । পূর্বে ঠাকুরদালানের মধ্যে রাখা কাঠাম�োর ওপর মায়ের বিগ্রহ নির্মিত হলেও বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কুম�োরবাড়ি থেকে প্রস্তুত করা দক্ষিণা শ্যামা কালীর বিগ্রহ সেই কাঠাম�োর উপর রেখে পুজ�ো করা হয় । দুদিন ধরে নিয়ম-নীতি মেনে মায়ের আরাধনা সম্পন্ন করার পর জেলে সম্প্রদায়ের অন্তত একজন প্রতিনিধি উপস্থিতিতে আদি মা মন্দিরের পিছনে অবস্থিত বালি ঘাটে বিগ্রহের বিসর্জন করা হয় । দুর্গাপূজা ও কালীপূজার পাশাপাশি এই পরিবারের দ�োলযাত্রা উৎসবটিও বহুদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে । এই পরিবারে ঈশ্বর লক্ষ্মী জনার্দন জিউয়ের বিগ্রহ বহুদিন ধরেই নিত্য পূজিত হয়ে আসছেন । দ�োল পূর্ণিমার দিন ঠাকুরদালান থেকে ঈশ্বর লক্ষ্মী জনার্দন জিউয়ের বিগ্রহ সহ দ�োল মঞ্চটি নিচে নির্দিষ্ট স্থানে নামান�ো হত । সেখানে দ�োলমঞ্চটি ফু ল দিয়ে

সুসজ্জিত করে নির্দিষ্ট নিয়ম-রীতি সহয�োগে পূজাপাঠ করা হত�ো এবং আবির খেলা হত�ো । দ�োলমঞ্চের পার্শ্ববর্তী নির্দিষ্ট একটি স্থানে পূজাপাঠের পরে হ�োম করা হত�ো । পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণবশত দ�োল বহুদমঞ্চটি ঠাকুরদালানের নিচে না নামিয়ে নারকেল পাতা দিয়ে দ�োলমঞ্চ প্রস্তুত করে এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি পালিত হত�ো বহুদিন । কিন্তু বর্তমানে অর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন কারণবশত দ�োলযাত্রা উৎসব তার ক�ৌলিন্য হারিয়েছে । উৎসবটি বন্ধ হয়নি ঠিকই কিন্তু আনুমানিক ২৫-৩০ বছর আগে থেকে এই প্রথাটি আবদ্ধ হয়ে গেছে পরিবারের

ঠাকুরঘরের অন্তরালে । ঠাকুরদালানের নিচে যে স্থানে দ�োলমঞ্চটি নামান�ো ও প্রথিত হত, সেই স্থানে চারটি গর্ত ছিল । বর্তমানে সেই গর্তগুলি ভরাট করে কংক্রিটের করা হয়েছে । কিন্তু সেই গর্তগুলির অস্ফুট চিহ্ন বর্তমানেও পুরন�ো ঐতিহ্যের কথা নিশ্চুপে বলে যায় সকলের কানে কানে । এই বাড়ির প্রতিটি ক�োনায় রয়েছে প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্যের ছ�োঁয়া । বর্তমানে এই দুয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে আধুনিকতার পরশ । বর্তমান অর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে পূজার ক�ৌলিন্য কিছু টা কমলেও, বাড়ির সদস্যদের মধ্যে

উৎসাহ-উদ্দীপনার ক�োন�ো অন্ত নেই । দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই পরিবারের সদস্যরা এই উৎসবের দিনগুলিতে অতিঅবশ্যই এই বাড়িতে সকলে একসাথে মিলিত হন । সকলের ক�োলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে চন্দননগরের "শেঠ ভবন" । পারিবারিক সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় ও মূলত কলকাতার বড়বাজারস্থিত দেব�োত্তর সম্পত্তি থেকে বার্ষিক আয়ের মাধ্যমেই আজও চন্দননগরের "শেঠ বাড়ির দুর্গাপূজা" যথাসম্ভব অভিজাত্য ও ক�ৌলিন্যকে অক্ষুন্ন রেখে পরিচালিত হয়ে আসছে ।

তথ্যসূত্র : → পণ্ডিত শ্রী শীবেন্দ্রনারায়ন শাস্ত্রী মহাশয়ের লেখা "বাংলার পারিবারিক ইতিহাস" । → স্বর্গত হরিহর শেঠ মহাশয়ের শ্রাদ্ধবাসরে তার পুত্র-কন্যা দ্বারা প্রকাশিত "পরমপূজ্য পিত ৃদেবের উদ্দেশ্যে অন্তরের গভীরতম ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন" নামক বংশ পরিচয় সম্বলিত পত্রিকা । → সবিতা রায় চ�ৌধুরীর ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত "Harihar Seth O Chandannagar Seth Barir History" নামক একটি তথ্যচিত্র । → হরিহর শেঠ মহাশয়ার বড় নাতব�ৌ শ্রীমত্যা অল�োকা শেঠ মহাশয়ার থেকে প্রাপ্ত তথ্যবলি । → দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ের প্রপ�ৌত্র শ্রীযুক্ত গ�ৌতম শেঠ মহাশয়ের সাথে আলপাচারিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ।

21 আল�োক

শারদীয়া 2022

বাংলার প্রথম দুর্গা পজ�ো ু চন্দ্ররূপ ব্যানার্জী

শরতের আকাশে পেঁজা তু ল�োর মত�ো মেঘের আনাগ�োনা শুরু হলেই আমাদের মনের অন্দরে পুজ�োর ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। বাংলায় সাধারণত দুর্গা পুজ�োয় যে সপরিবার দুর্গা মূর্তির পুজ�ো হয়ে থাকে, ধারণা করা হয় তা রাজা কংসনারায়ণের সময়ে প্রচলিত হয়। আবার অনেকের মতে বাংলায় সর্বপ্রথম দুর্গা পুজ�োটি ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে জগৎমল্ল দ্বারা প্রচলিত হয়। এই পুজ�োয় দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের রীতিকে জগৎমল্ল-প্রথা বলা হয়। আজ আমরা সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস‌ই খ�োঁজার চেষ্টা করব�ো। সময়টা ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ। তখন মল্লভূ মে রাজত্ব করছেন ঊনবিংশতম মল্লরাজ জগৎমল্ল। প্রসঙ্গত তখন মল্লভূ ম বলতে আজকের বাঁকুড়া জেলাসহ তার পার্শ্ববর্তী 22 আল�োক

শারদীয়া 2022

বর্ধমান , মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু অংশ এবং বিহারের ছ�োটনাগপুর অঞ্চলকে ব�োঝান�ো হত�ো। আজকের বিষ্ণুপুর তখন ছিল গভীর জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল। সেই জঙ্গলে হরিণ থেকে শুরু করে বাঘসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর শিকার করতে আসতেন প্রদ্যুম্নপুরের মল্লরাজারা। সেরকম‌ই একদিন মল্লরাজ জগৎমল্ল তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এই জঙ্গলে শিকার করতে এলেন। কিন্তু অসাবধানতাবশত ক�োন�ো শিকারের পিছনে ছু টতে ছু টতে তিনি পথ হারিয়ে ফেললেন। গভীর জঙ্গলে পথ হারিয়ে চিন্তিত রাজা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই দেখলেন এক সুন্দর দেখতে হরিণ তাঁর থেকে কিছু টা দূরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি হরিণটির দিকে

তির নিক্ষেপ করতেই হরিণটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। এমন অদ্ভুত ঘটনায় স্বভাবতই রাজা হকচকিয়ে গেলেন। এই ঘটনার কিছু ক্ষণ পর অনেকক্ষণ ধরে হাঁটার পরিশ্রমে তিনি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় এক বিশাল গাছের নীচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁর চ�োখ গেল গাছের মগডালে বসা এক বকের দিকে। তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর হাতের উপর বসা প�োষা বাজকে ছেড়ে দিলেন। শিকারী হিংস্র বাজ বকের দিকে ছু টে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই ঘটে গেল আরেক আশ্চর্য ঘটনা। বকের আক্রমণে তাঁর প�োষা বাজটি রক্তাক্ত হয়ে পালিয়ে এসে তাঁর প�োশাকের আড়ালে আশ্রয় নিল�ো। রাজা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন চিরকাল বককে বাজ শিকার করে

এসেছে কিন্তু এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটে গেল। এ কিভাবে সম্ভব ? এমন সময় হঠাৎ করেই সেই গভীর নির্জন অরণ্যে রাজার সামনে এক পরমা সুন্দরী নারীর আবির্ভাব ঘটল�ো। চিন্তিত রাজা সেই নারী মূর্তিকে প্রশ্ন করলেন , কে তু মি ? কি ত�োমার পরিচয় ? কিন্তু সেই নারী মূর্তি চু পচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন শুধু। রাজা রাগে কাঁপতে কাঁপতে তাঁর তরবারি ক�োষমুক্ত করতেই সেই নারী মূর্তি আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এমন সময় আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে এক নারী কন্ঠস্বর ভেসে এল�ো, ওরে মূর্খ ! এখন�ো ত�োর ব�োধ�োদয় হল�ো না ? এই হরিণ,বক,নারী এদের আসলে ক�োন�ো প্রকৃত অস্তিত্ব‌ই নেই, সব‌ই মায়া। ছলনা করে আমি , দেবী মৃণ্ময়ী , ত�োকে এখানে টেনে এনেছি। তু ই এখানে মাটির তলায় আমার মুখের এক ক্ষুদ্র আকৃতি পাবি। তাকে উদ্ধার করে দেবী দুর্গার ( মৃণ্ময়ী) মূর্তি তৈরি করিয়ে এবং মন্দির নির্মাণ করে আমার পুজ�ো শুরু কর। আর এখানে দুর্গ তৈরি করে

ত�োর রাজধানী এখানে সরিয়ে নিয়ে আয়। আমার আশীর্বাদে ত�োর কখন�ো ক�োন�োকিছু র অভাব হবে না। এই দৈবাদেশে রাজা জগৎমল্ল আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে মন্দির নির্মাণ করে দেবীর পুজ�ো শুরু করে দিলেন। দেবীর আদেশানুসারে তাঁর রাজধানী প্রদ্যম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করলেন। নাম দিলেন বিষ্ণুপুর। রাজার পরিশ্রমে এবং দেবীর আশীর্বাদে সেই সময়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়েছিল বিষ্ণুপুর। ঐতিহাসিকরা মনে করেন জগৎমল্লের হাত ধরেই বাংলায় প্রথম দুর্গা পুজ�ো শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজা কংসনারায়ণের পুজ�ো সকলের জন্য উন্মুক্ত হ‌ওয়ায় এবং বাংলায় এই ধাঁচের মূর্তি পুজ�ো বেশি প্রচলিত হ‌ওয়ায় অনেকে মনে করেন বাংলায় বর্তমান দুর্গা পুজ�োর প্রচলন সর্বপ্রথম রাজা কংসনারায়ণ‌ই করেন।জগৎমল্ল-প্রথার এই মূর্তির বৈশিষ্ট্য হল�ো দেবী সপরিবারে

থাকলেও মূর্তি নির্মাণের সময়ে দেবী লক্ষ্মী ও শ্রী গণেশ এবং দেবী সরস্বতী ও দেব সেনাপতি কার্তিকের স্থানবদল করা হয়ে থাকে। বাঁকুড়ার অনেক প্রাচীন পরিবারে আজ‌ও জগৎমল্ল-প্রথায় নির্মিত দুর্গা মূর্তির পুজ�ো হয়। এইসব প্রাচীন পুজ�োয় হয়ত�ো পুজ�োর গন্ধের সাথে আজও মিশে আছে হারিয়ে যেতে বসা ইতিহাসের গন্ধমাখা রাজা জগৎমল্ল ও দেবী মৃণ্ময়ীর উপাখ্যানটি।

তথ্য কৃ তজ্ঞতা : ১)গল্প কথায় বিষ্ণুপুর, শ্রীঅনিলবরণ কর। ২)বাঙলার পূজা পার্বণ, য�োগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি।

আপনার একক গ্রন্থ প্রকাশ করতে চাইলে শীঘ্র য�োগায�োগ করুন আল�োক প্রকাশনীর সাথে। আর মাত্র ‌কিছু গ্রন্থের পান্ডুলিপি নেওয়া হবে। স্বপ্ন পূরণ হ�োক:

*জেলায় বইয়ের দ�োকানে সারাবছর বই এর প্রাপ্তিস্থান * কলকাতার বিভিন্ন বইমেলার স্টলে গ্রন্থের প্রাপ্তিস্থান * জেলায় বইমেলায় প্রাপ্তিস্থান

কেন আল�োক জেনেনিন-

* সাহিত্য আকাদেমি ও ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে বই সংরক্ষণ

* ISBN যুক্ত বই * আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ * NS পেপারে প্রিন্ট্রিং * ৮০ জিএসএম প ৃষ্ঠা * বেস্ট হার্ডব�োর্ড বাইন্ডিং * লেমিনেটেড কভার জ্যাকেট বই * সর্বোচ্চ রয়্যালটি * বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের হাত ধরে আড়ম্বরে বই প্রকাশ * অনলাইনে সারা প ৃথিবীতে Flipkart এ বিপনী * অনলাইনে সারা ভারতে এ বিপনী * কলকাতার কলেজ ষ্ট্রিটে সারা বছর বই এর প্রাপ্তিস্থান

* বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পুরষ্কারের জন্য নমিনেশন দেওয়া

23 আল�োক

শারদীয়া 2022

* সাহিত্যিকের ও গ্রন্থের প্রচার, প্রসার, সম্মাননা প্রদান ফেসবুক পেজ,হ�োয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বিভিন্ন ম‍্যাগাজিন ও সংবাদ পত্রে। সত্বর য�োগায�োগ করুন:

৯৬১৪৯৯৩১৩৭

গল্প ঃ

দুধের দাম ডি. অমিতাভ “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।” ধ্রুপদপ্রভু বেশ সুরেলা গলায় এবং গলা খুলে বলে চলেছে নামকথা। মাটির দাওয়া, তার উপর ডেকরেটার্স থেকে ভাড়া করা পাল। ধর্মের কাজ বলে মাধাই ডেকরেটার অবশ্য বেশ ফর্সা পালটাই দিয়েছে। ক�োথাও ন�োংরা নেই। এরকম পালে ব’সে একটা ত ৃপ্তি আসে ধ্রুপদের। এখানে অবশ্য সবাই তাকে ধ্রুপদপ্রভু বলে। বয়েসে প্রায় সবাই তার থেকে বড়। বেশির ভাগই মহিলা। পুরুষ নেই বলা যাবে না। পুরুষও আছে। সংখ্যায় কম। অবশ্য জমা ল�োকও কম। এ লাইনে ল�োক বড়ই কম। পেঁয়াজ, রসুন, মসুরডাল ছাড়া নিরামিষ খেতে হয়। মাছ মাংসের ত�ো প্রশ্নই নেই। বৈষ্ণবের হাতে ছাড়া অন্ন গ্রহণ চলবে না। এত�ো বিধি

24 আল�োক

শারদীয়া 2022

নিষেধ থাকলে কেউ আসে বৈষ্ণব হ’তে? আজ গ�োপাল দ�োয়ারীর বাড়ি নামহট্ট। গ�োপালও বৈষ্ণব অতএব গ�োপালপ্রভু । মুদি দ�োকানে কাজ করে গ�োপাল। আগে ল�োকে গ�োপলে, গ�োপে সব অবজ্ঞা সূচক নামে ডাকত�ো। মাঝ বয়েসে এসে কুচকুচে কাল�ো গ�োপাল দ�োয়ারী দীক্ষা নেয়, বৈষ্ণব হয়। গলায় তার তু লসীমালা। মাথায় কাঁচাপাকা চু লের লম্বা টিকি। দ্বাদশ অঙ্গে খড়ি মাটির গ�োপীচন্দন। ল�োকে আগে ভড়ং বলত�ো। গ�োপাল কানে নিত�ো না। খেটে খাওয়া সৎ মানুষ। ধর্মে মন টেনেছে। আর ক�োন দিকে তাকায় না। কে কী বলল মনেও করত�ো না। দু-এক বছরে পুর�ো ব্যাপারটা একটু একটু ঘুরে যায়। গ�োপালকে কেউ ভক্তিমার্গ থেকে ফেরাতে পারে না। মুদি দ�োকানে যেমন খাটার তেমনি খাটে। শুধু তার জীবনে

গ�োবিন্দের প্রতি ভক্তিটাই পাল্টে দেয় সব কিছু । দ�োকানে সময় পেলে মালা জপে। খদ্দের এলে মাল দেয়। গ�োপালের মালিক তার থেকে দু-এক কথা কৃষ্ণকথা শুনতে শুনতে ঝপ করে ঝাঁপ মারে কৃষ্ণসগরে। আর সেই থেকে হরিহরপুর অঞ্চলে গ�োপাল দ�োয়ারীকে আর কেউ তু চ্ছ করে না। বরং বৈষ্ণবরীতি মেনে গ�োপালপ্রভু বলে। গ�োপাল দ�োয়ারী নামহট্টে জ�োগাড় ভাল�োই করেছে। হরিহরপুর প্রত্যন্ত গাঁ। এ গাঁয়ে কাঠের চেয়ার পাওয়া বড়�ো মুশকিল। গ�োপাল তাও করেছে। কাঠের চেয়ারে গুরুদেবের ছবি সাজিয়েছে। পাশে টবে তু লসীগাছ। তু লসীগাছের গ�োড়ায় সাইকেল মার্কা ধূপ। গুরুদেবের বাঁধান�ো ছবির সামনে চেয়ারের নীচে মাটির প্রদীপ। গুরুদেবের

ছবি আজকালকার প্লাস্টিকের চেয়ারে বসান�ো যাবে না। বিধান। কাঠের চেয়ার অথবা ভু মিতে। কিন্তু ভূ মিতে গুরুদেবকে বসান�ো অসম্মানের। তার আসন উপরে। এটাও বিধান। তাই গ�োপাল পাশের গাঁ হাসিনপুরের সরকারদের বাড়ি থেকে একটা পুরান�ো কাঠের চেয়ার চেয়ে এনেছে। হাসিনপুরের সরকাররা পুরান�ো বড়ল�োক। ল�োকে বলে এককালে নাকি জমিদার ছিল। সরকারদের মেজকত্তা গ�োপালকে চেয়ারটা দেওয়ার সময় অনেক কথা জানতে চেয়েছে। মানে বয়েস হয়েছে, ধর্মে মতি আসছে। কী খেতে হয়, দুবেলা নাম করতে হয় কিনা। গ�োপাল বলে এসেছে ধ্রুপদপ্রভু কে পাঠিয়ে দেব, উনি সব বুঝিয়ে দেবে। ধ্রুপদ গ�োপাল দ�োয়ারীর বাড়ির নামহট্টে ভাগবত পাঠ করার পর এখন বলছে বৈষ্ণবদের কী কী করনীয়। মানে মূল সাধারণ কথা। নিরামিষ খাওয়া কেন শরীরের পক্ষে ভাল�ো, উপবাস কেন জরুরী তা অল্প বিস্তর বিজ্ঞানের সঙ্গে মিশিয়ে ধর্মকথা রূপে পরিবেশন করছে ধ্রুপদ। যতটা সে অন্য বড়�ো বড়�ো প্রভু , মহারাজ, গুরুদেবের থেকে শুনেছে সেগুল�োই নিজের ভাষায় বলছে নিজের অঞ্চলের মানুষের মনের মত�ো। এ অঞ্চলে বৈষ্ণবদের মধ্যে ধ্রুপদপ্রভু বেশ জনপ্রিয়। তাকে পাওয়াও যায় ডাকলেই। তার চাহিদাও কম। মাঠে খাটলে যে র�োজ সেই টাকা দিলেই সে খুশি। কৃষাণের টাকায় ধর্মকথা শ�োনান�োর মানুষ পেয়ে গরীবল�োকে ধ্রুপদকে মাথায় ক’রে রাখে। সেই দুপুর থেকে ভাগবত পাঠ শুরু করে এখন শেষের পর্বে। ধ্রুপদ মনে মনে তাড়াহুড়�ো করছে। সন্ধে হব�ো হব�ো। আর দেরি করা যাবে না। অনেকটা রাস্তা যেতে হবে। হরিহরপুর আর তাদের গ্রাম পঞ্চান্নখালির মধ্যে বেশ বড়�ো একটা মাঠ। সেই মাঠের রাস্তা দিয়ে ল�োকজন

25 আল�োক

শারদীয়া 2022

বড়�ো একটা যায় না। পঞ্চান্নখালির হাট-বাজার, রেল স্টেশান উল্টোদিকে। আবার হরিহরপুরের ল�োকজনও দিনের বেলা চাষের কাজ ছাড়া বগেরমাঠের দিকে যায় না। বগেরমাঠের চারিদিকে জায়গায় জায়গায় ম�োটা ম�োটা তালগাছ। আগেকার দিনে ঠেঙাড়েরা ঐ সব তালগাছের আড়ালে একজন একজন লুকিয়ে থাকত। এখন অবশ্য সে মেঠ�োপথ নেই। বেশ চওড়া রাস্তা। পঞ্চায়েত থেকে প্রতি বছরই মাটি ধরান�ো হয়। শ�োনা যাচ্ছে ও রাস্তায় ইট পড়বে সামনে বছর। ধ্রুপদ খুব একটা সাহসী মানুষ না। ভয়ে পড়লে কৃষ্ণকে প্রাণপণে ডাকে। সময় সময় জ�োরে জ�োরে ডাকে। কৃষ্ণ নামে তার এতটু কু সামাজিক লজ্জা নেই। সেই কৃষ্ণ নাম জপার পদ্ধতি জানিয়ে সে তার ধর্মকথা শেষ করে, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ; হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। এই ষ�োল�ো নামে তু লসীমালার একটা তু লসী জপা হবে। এরকম ভাবে ষ�োল নাম একশ�ো আট কাঠির মালা পুর�ো জপতে হবে প্রতিদিন এবং আমৃত্যু। তবেই পরপারে সপ্তম স্বর্গে ভগবানের দেখা মিলবে। }{ ২ }{ বছর ছাব্বিশের ধ্রুপদ বিয়ে করেছে পাঁচ বছর আগে। মালতী আর তিন বছরের টু কাইকে নিয়ে সংসার। তার বাবা মা থাকে ভাইএর কাছে। ভাই একটা প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে। অল্প হলেও ভাই এর নিয়মিত আয়। ভাই সাবেক বাড়িতে থাকে। ধ্রুপদ সেই বাস্তু ভাইকে দিয়েছে মা বাবাকে জীবনসত্ত্ব দেখভালে শর্তে। নিজে বাসরাস্তার কাছাকাছি জায়গা কিনে নতু ন বাড়ি তু লেছে। সেটা অবশ্য মালতীর জন্য। - এ বাড়িতে আমি থাকতে পারবুনি বলে দিলুম! বিয়ের পরে পরে মালতী ধ্রুপদকে বলেছিল।

- কেন এ বাড়িতে কী হয়ছে? - ত�োমার মা-বাবা-ভাই মাছ মাংস খায়। আমার মাছের গন্দ সজ্য হয় নে। - ওরা ত�ো আলাদা, উদিকে আন্না করে। আমাদের সাতে ত�ো খায়নে! - বিয়ের আগে ত�ো বল�োনি ত�োমরা মাছ মাংস খাও? ধ্রুপদ খুব ছ�োটবেলা থেকে বৈষ্ণব। বৈষ্ণবসঙ্গ তার ভাল�ো লাগে বলে তাদের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়। এরকম ঘুরতে ঘুরতেই মালতীর সঙ্গে আলাপ। ভাল�োবাসা। তারপর পালিয়ে নিয়ে এসে বিয়ে। বিয়ে বলতে তেমন কিছু ই হয়নি। সিন্দুর ত�োলা বিয়ে। মালতী আজন্ম নিরামিষাশী। তার পরিবার কয়েক পুরুষ বৈষ্ণব। লেখা পড়া না করলেও ভাগবদগীতা শুনে শুনে মুখস্ত। চৈতন্য মহাপ্রভু বলতে অজ্ঞান। শ্রীকৃষ্ণ তার একমাত্র আরাধ্য দেবতা। সতের�ো বছরের পুচকে মেয়ের সঙ্গে প্রেম ভাল�োবাসার সময় কে আর কবে বাড়ির প্রকৃত অবস্থার বর্ণনা দিয়েছে! বিশেষ ক’রে সে বাড়িতে যদি অভাব নিয়ত দরজায় কড়া নাড়ে। ধ্রুপদও মালতীকে বাড়ি সম্পর্কে তেমন কিছু বলেনি। এক কাপড়ে মালতীকে নদীয়ার করিমপুর থেকে তু লে এনেছিল ক�োলকাতা পেরিয়ে গঙ্গার ম�োহনা বরাবর। সেই মেয়ে যে বিয়ের মাস ঘুরতে না ঘুরতে ফ�োঁস করবে ধ্রুপদ ধারণা করেনি। তার ইচ্ছা ছিল মালতীর হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে মঠে মঠে। কিন্তু এ মেয়ে যে বড়�োই সংসারী। বিয়ের আগের দু-হাত তু লে নগরসংকীর্ত্তন নাচ কেবল বিছানাতেই সামান্য দাগ রাখে। তার বাইরে ব�োঝাই যায় না এ মেয়ে ক�োন এককালে বুলবুলির মত�ো বুলে বেড়িয়েছে। অগত্যা ধ্রুপদ মঠে মঠে ঘুরে বেড়ান�োর স্বপ্ন ছেড়ে মাঠে মাঠে কাজ করে বেড়ায়। অল্প টাকা জমিয়ে সামান্য জমিও কেনে গ্রামের মধ্যেই পাকা রাস্তার কাছাকাছি।

বিয়ের বছরেই শালিজমি মাটি ফেলে উঁচু করে। সে বছর কী এক ভাগ্যে পঞ্চায়েত থেকে বাড়ি তৈরীর টাকাও মেলে। নিজের নামে জমি থাকলেই পাওয়া যাচ্ছিল না পাকা বাড়ি বানাবার সরকারি অর্থ। চঞ্চলদা অবশ্য সেবার খুব সাহায্য করেছিল ধ্রুপদকে। চঞ্চলদা তখন পঞ্চায়েত সদস্য। পরেরবার অবশ্য হেরে যায়। বাড়ি পাওয়ার পরের বছরই মেয়ে টু কাই এর জন্ম। সময়টা খুব সুখের কাটে ধ্রুপদের। তবে টাকাকড়ির টানাটানি ছিলই। জমি কেনার দাম মেটান�ো, মেয়ের জন্মের পর বাড়তি খরচ, তাছাড়া নতু ন ভিটেয় নতু ন নতু ন খরচ ত�ো ছিলই। আজ ঘাট বাঁধ�ো, বর্ষা নামলে বাড়ির রাস্তায় দুট�ো করে ইট বিছান�ো, রান্না ঘরের চালের খড় পাল্টাও। এসব করতে করতে ধ্রুপদ জেরবার হয়ে যাচ্ছিল। সে আরও খাটছিল। দিনে মাঠের কাজ। রাতে নামসংকীর্ত্তন। যে দিন মাঠে কাজ থাকে না দূর দূরান্তে নামহট্টে চলে যায়। সেখানে ভাগবত পাঠ ক’রে মাঠের র�োজ তু লে নেয়। তার দেনা অগাধ, আয় সামান্য। ধ্রুপদ এতটা চাপ নিতে নিতে বেশ কিছু টা বুড়িয়ে যায়; অন্তত মনে মনে। - কী গ�ো, তু মি প্রায় রাতেই ত�ো বাইরে থাকছ�ো! আমার কী হবে? মালতী আদর করে মাসছয়েক আগে ধ্রুপদকে বলেছিল। ধ্রুপদ তখন একটা নামহট্টে যাবে বলে তৈরী হচ্ছিল। বেশ দূরে। শহরে যাওয়ার শেষ বাসটা ধরার তাড়া ছিল। সে ব্যাগে নিজের প্রিয় ভাগবতগীতাটা ভ’রতে ভ’রতে হেসে বলে, তু মিও চল�ো না আগের মত�ো। দুজনে মিলে ভাগবতপাঠ করব�ো। এই বইটা দুজনে এক সঙ্গে কত পাঠ করেছি মনে আছে? - ভাগবতপাঠ করলে কি ক্ষিদে মিটবে? - আরে পাগলী আমাদের দেনাগুল�ো মেটাবার জন্য, ভাল�ো দুট�ো খাবার জন্য,

26 আল�োক

শারদীয়া 2022

টু কাইকে ভাল�ো করে মানুষ করার জন্যই ত�ো এত�ো খাটছি। কাল সকালেই ত�ো ফিরব গ�ো। ধ্রুপদ আদর করে গাল টিপে দেয় বউ এর। একটা দ্রুত চু মু খেতে যায়। মালতী নাকের পাটা ফু লিয়ে সরে যায়। মুখে বলে, রাতের খাবার দিনে খেলে বাসি লাগে। পুরুষ মানুষ হয়েছ�ো কিছু ই ব�োঝ না? ধ্রুপদের তাড়া ছিল বাস ধরার। ফতু য়াটা চাপিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। বাসে বসে বসেই দ্বাদশ অঙ্গে খড়ি মাটির গ�োপীচন্দন লাগিয়ে নেবে ঠিক করে। শহরের দিকে শেষ বাসে বড়�ো একটা ল�োক থাকে না। শেষ ছ’মাসে ধ্রুপদ খুব খেটেছে। দেনা প্রায় শ�োধ করেও এনেছে। মেয়ে টু কাইএর স্কুলে ভর্তি হতে এখনও দেরি আছে কিন্তু সে যেন তার সমস্ত উৎসাহ টু কাইএর স্কুলে ভর্তি নিয়ে মাতিয়ে রেখেছে। মালতীর সঙ্গেও তার বেশীর ভাগ কথাই হয় মেয়ের পড়াশ�োনা নিয়ে। - টু কাইকে ভাল�ো ইস্কুলে ভর্তি করব�ো কি বল�ো? ধ্রুপদ বাড়ির দ�োলায় বসে সকালের মুড়ি খেতে খেতে মালতীকে বলে। - ইস্কু ল যাবেক�োণ রে বাবা! অনেক দেরি আচে তার। - তা দেরি থাক আমি কিন্তু প্রাইমারী ইস্কুলে টু কাইকে দুবুনি। হুকুমপুরের সারদা কেজি ইস্কুলে দুব�ো ওরে। - সে যে চু ল�োয় দ’ও দেবেক�োন। একন থেকে মাথা খেওনি ত�ো বাপু! কাল কী খাব�ো তার নেই ঠিক আর উনি মেয়েকে বড়�ো ইস্কুলে নেকাপড়া শেকাবে! আর একটা ছেলে হ’লে চালাবে কী ভাবে ভেবেচ�ো?

একদম পাশের গ্রাম। গ্রামের মেয়েরা সন্ধে্যর শাঁখ বাজাতে শুরু করেছে আর সেও বাড়ির বাঁশের বেড়া ঠেলে ঢু কে পড়ে। অনেকটা রাস্তা হেঁটে এসেছে ভাদ্রমাসের ভ্যাপসা গরমে। বেশ কদিন বৃষ্টি হয়নি। খুব পিপাসা লাগে ধ্রুপদের। দাবায় বসে হাঁক মারে, মালতী জলদে একটু কুন। আজ পাওনা গন্ডাও বেশ ভালই হয়েছে। মনটা বেশ ফু রফু রে। সে আরও নরম করে হাঁক দেয়, যাতে সামনের রাস্তায় শব্দটা না যায়, ম�োলু, একটু জল দাও গ�ো! তার আদুরে ডাকে অন্য একটা পিপাসাও ধরা পড়ে। কিন্তু ধ্রুপদের পিপাসার ডাকে কেউ সাড়া দেয় না। সে নিজেই উঠে মাটির ঘড়া থেকে স্টিলের গ্লাসে জল গ’ড়িয়ে খায়। এক কামরা ঘর আর দাওয়া। সংসারের বেশীর ভাগ জিনিষ ঘরের ভেতরে ঠাসাঠাসি। বাইরে শুধু দ�োলা, জলের ঘড়া আর মাদুরটা চালের বাতায় গ�োঁজা। সে মাদুরে মেয়ে সারাদিন হামা টানে। জল গড়াতে গিয়ে সে লক্ষ্য করে ঘরের দরজায় তালা মারা। ধ্রুপদ দ�োলাটা পেড়ে বসে। পাওনা গন্ডা ভরা ব্যাগ দরজার পাশে হেলান দিয়ে রাখে। ভাবতে থাকে বউ ক�োথায় গেল এই ভর সন্ধ্যাবেলা! মনে মনে ভাবে হয়ত�ো ওবাড়িতে মাকে দেখতে গেছে। শাউড়ি বউ এ খুব ভাব না থাকলেও মায়ের কদিন ধ’রে জ্বর বলে হয়ত�ো দেখতে গেছে। সে দ�োলায় হালকা দুলতে দুলতে অপেক্ষা করতে থাকে। তার বাড়িটা একটু একেনে। কারেন্ট এখনও নিতে পারেনি। হুক করে টেনে জ্বালায়। সেটা দিনে খ�োলা থাকে। সন্ধে হ’লে মালতীই আঁকশি দিয়ে লাগিয়ে দেয়। সেটাও আজ লাগান�ো হয়নি। }{ ৩ }{ ধ্রুপদ ঠিক লাগাতে পারে না। অভ্যাস গ�োপাল দ�োয়রীর বাড়ির নামহট্ট থেকে নেই। মালতীই ওকাজটা করে। ধ্রুপদ ফিরতে ধ্রুপদের বিশেষ দেরি হয় না। অন্ধকারেই চু পচাপ ব’সে অপেক্ষা করতে

থাকে বউএর। ঘুম ভাঙে মশার কামড়ে। ক্লান্তিতে বেশ লম্বা একটা ঘুম ঘুমিয়ে নিয়েছে ধ্রুপদ। বাড়ি পাশেই কচু বাড়ি থেকে মশাগুল�ো তেড়ে না এলে আরও ঘুম�োত�ো সে। ঘুম ভেঙেও দেখে বউ বাড়ি ফেরেনি। সে ধীরে সুস্থে দ�োলা থেকে নামে। ভরা ব্যাগটা ঘরের জানলায় বেঁধে ঝু লিয়ে দেয়। কুকুর বেড়ালে মুখ দিতে পারে। ওবাড়িতে যেতে হবে। উঠ�োনের বেড়াটা ভাল�ো করে লাগিয়ে দেয়। তারপর রাস্তা দিয়ে ওবাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে। আজ যেন বেশি অন্ধকার লাগে তার। রাত্রি বেশি হয়নি কিন্তু রাস্তায় একটা জনপ্রানী নেই। - মা জ্বর কমেচে ত�োর? - না রে খ�োকা! তু ই এত�ো রেতে কেন এলি? - ত�োর বউমা ঘরে নেই। ভাবলুম ত�োর জ্বর শুনে দেকতে এয়েচে। - বউ ঘরে নেই? বউ ত�ো অনেক দিন এবাড়ি আসেনি। বাপের বাড়ি যায়নি ত�ো? খুব চিন্তায় পড়ে যায় ধ্রুপদের মা। এটা ওটা বলতে বলতে বউ এর হাজারটা দ�োষ শুনিয়ে অভিয�োগ করতে শুরু করে ছেলের কাছে। ধ্রুপদ উঠে আসে মায়ের কাছ থেকে। ভাবে এখানে দেরি করে লাভ নেই। হয়ত�ো এতক্ষণে মালতী বাড়ি চলে এসেছে। অভিমান আর রাগের মাঝামাঝি একটা অনুভূ তি নিয়ে অন্ধকার রাস্তায় বাড়ি ফিরতে থাকে ধ্রুপদ। আজ মালতীর জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে। অনেকদিন আদর করা হয়নি বউটাকে। আজ খুব বড়�ো-আদর করার ইচ্ছা করছে তার। আর আজকেই বউটা বাড়ি নেই! রাস্তায় হরেনকাকার সঙ্গে দেখা হয় তার। হরেনকাকা স্টেশানে তাস খেলে সন্ধেবেলা। ধ্রুপদ কিছু ই জিজ্ঞাস করে না। তার বদ্ধমূল ধারণা সে বাড়ি

27 আল�োক

শারদীয়া 2022

গিয়ে দেখবে মালতী বাড়িতে তার জন্য অপেক্ষা করছে। রাত অনেকটাই হয়েছে। সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিল দ�োলায়। তারপর ওবাড়ি গিয়েছিল মালতীর খ�োঁজে। রাত ব�োঝা যায় ঝিঁঝিঁ প�োকার ডাকে, ব্যাঙেদের করর্ কর্ ডাকে। জ�োনাকিগুল�ো অন্ধকারে আজ রাতে যেন জ্বলছে আরও বেশি উজ্জ্বলতায়। ধ্রুপদ ঘরে ফিরে দেখে একই রকম প’ড়ে আছে তাদের সাধের বাড়ি। এই প্রথম যেন মনে হয় বাড়িটা হাঁ করে যেন গিলতে আসছে। খুব কান্না পায় তার। তার থেকেও বেশি ভয় লাগে ধ্রুপদের। সে জ�োরে জ�োরে হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম জপতে থাকে। ধ্রুপদ জলের কুঁজ�ো থেকে বড়�ো করে একগ্লাস জল গ’ড়িয়ে খায়। তারপর চালের বাতা থেকে মাদুরটা টেনে শুয়ে পড়ে। মাদুরে মেয়ের হিসুর গন্ধ। খুব আপন মনে হয় সেই গন্ধটা। মনে হয় পাশেই মেয়ে শুয়ে আছে। আর তার পাশে ম�োলু! }{ ৪ }{ মশার কামড়ে ধ্রুপদের সারারাত ভাল�ো ক’রে ঘুম হয়নি। ভ�োর রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। তাতেই তার ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে গাঁময় রটে গেছে ধ্রুপদবৈরাগীর বউ পালিয়েছে। এ গ্রামে অনেকদিন পর বউ পালাল�ো। বউ পালান�োর খবর প্রতিবেশীর কাছে সব সময়ই বেশ মুচমচে ু । তাও আবার বছর বাইশ-তেইশের কচি বউ। গতর নাকি ভাল�ো ছিল! ছু ঁকছু ঁকে মাগী ছিল! সবই কানে আসে ধ্রুপদের। শুনতে না চাইলেও কানে কানে শুনিয়ে দিয়ে যায় পড়শীরা। ধ্রুপদের কিছু ই বিশ্বাস হয় না। ম�োলু তার মনের সবটা জুড়ে আছে। ভাল�োবেসে বিয়ে করা বউ কখনও পালায় না! ক�োথাও একটা ভু ল হচ্ছে ভাবে ধ্রুপদ। তার মনে হয় বউ রাগ ক’রে বাপের বাড়ি চলে গেছে।

ধ্রুপদ কাউকে কিছু না জানিয়ে ট্রেন ধরে। ঘরের দরজা যেমন চাবি তালা লাগান�ো আছে তেমনই থাকে। শুধু কাল বিকালে গ�োপাল দ�োয়ারীর নামহট্টে পাওয়া ধুতিটা পাল্টে নেয়। বাকী মাল ওবাড়ি মায়ের কাছে প�ৌঁছে দেয়। শিয়ালদা থেকে ট্রেন পাল্টে স�োজা শ্বশুরবাড়ি। পালিয়ে বিয়ে করে তার শ্বশুরবাড়ি বলে কিছু ছিল না। এই প্রথম যে শ্বশুরবাড়ি গেল; তাও বউ খুঁজতে। কিন্তু মালতী সেখানেও যায়নি! ধ্রুপদ তবুও তার ভাল�োবাসার নারীর প্রতি মনে মনেও ক�োন অভিয�োগ করে না, নিতান্তই তার মনে আক্ষেপ ‘না বলে’ যাওয়ায়। বললে সে হয়ত�ো ঠিক তার প্রয়�োজনীয় বস্তুর জ�োগান দিয়ে তাকে ধরে রাখতে পারত�ো। তার দিক থেকে ত�ো ক�োন ফাঁক ছিল না। তবু জীবনের ক�োন ফাঁক দিয়ে হঠাৎ হারিয়ে গেল ম�োলু। কান্না এসে নদী হয়ে উঠতে চায় চ�োখের ক�োণে আর বুকের ভাঁজে। তবু সে কাঁদে না। মনের দুঃখ মনের মধ্যে চেপেই বাড়ি ফিরে আসে পরদিন। বাড়ি এসে তালা খ�োলে চাবির মিস্ত্রি ডেকে। তালা ভাঙতে মন চায় না। চাবি আছে মালতীর কাছে। সে বাড়ি না থাকলে যদি বউ বাড়ি ফেরে কী ক’রে ঘরে ঢু কবে! গ্রামের ল�োক অবাক হয়, বউএর প্রতি ধ্রুপদের ক�োন রাগ নেই দেখে। ধ্রুপদের বন্ধুবান্ধব বড়�ো একটা নেই! খুব ছ�োটবেলা থেকেই তার জীবনচর্চা অন্যরকম খাতে বইছে। তবু পরের দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ি ফিরলে জানতে পারে মালতী নাকি চঞ্চলদার সঙ্গে পালিয়েছে। তাদের গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। তার সরকারিবাড়ি পেতে খুব সাহায্য করেছিল চঞ্চলদা। সে খুব অবাক হয়। তার থেকে বয়েসে অন্তত: দশ বছরের বড়�ো চঞ্চলদার সঙ্গে মালতীর কিসে মনের মিল হ’ল�ো? মালতীর থেকে ত�ো প্রায় পনের

বছরের বড়। কী করবে ভবে পায় না ধ্রুপদ। চঞ্চলদা ত�ো রাজনীতির ল�োক! ক্ষমতাবান ছিল এক সময়। ধ্রুপদ ভয়ে ভয়ে থানায় ডাইরী করে। সেখানে সে কার�ো নামে অভিয�োগ করে না। মিসিং ডাইরী। বউ নিখ�োঁজের সন্দেহর জায়গায় কারও নাম বলার সাহস পায় না। থানার ডিউটি অফিসার বার বার অশ্লীল প্রশ্নের কিনারা দিয়ে ঘুরে যাচ্ছিল। ধ্রুপদ একরাশ হতাশা আর বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফেরে। বউ পাওয়া গেলে আপনাকে জানিয়ে দেব : এই আশ্বাস পায় থানা থেকে। বউ পালান�োর গল্পটা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। ভাদ্রের পর আশ্বিন পড়তেই গাঁয়ের মানুষ দুর্গা পূজা নিয়ে মেতে ওঠে। নতু ন জামা কাপড়ের সুগন্ধে পুরন�ো হয়ে যায় ধ্রুপদের পালান�ো বউ নিয়ে ভাল�োবাসার বাড়াবাড়ি। মা দুর্গার রূপের ছটায় চাপা পড়ে কচি বউএর গতরের বর্ণনা। পূজা কাটতে না কাটতে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। ধ্রুপদ এ বছর আর ধান কাটার কাজে নামে না। তার বদলে দূর দূরান্তের নামহট্টে চলে যায়। ভাগবতপাঠ করে। যা অল্প সল্প পায় তাতেই চলে যায়। থাকা খাওয়া ফ্রি। হাতে পয়সা জমলেই সে বেরিয়ে পড়ে মালতীকে খুঁজতে। মালতীর আগে গল্পচ্ছলে বলা দূর সম্পর্কের আত্মীয় বা পুরান�ো বান্ধবীর বাড়িতেও উপস্থিত হয়, যদি খুঁজে পাওয়া যায় বউকে। শীতের শুরুতে এক সন্ধে নাগাদ ধ্রুপদ

28 আল�োক

শারদীয়া 2022

বাড়ি ফেরে। তার বুঝি মনে হয়েছিল বউ, বাচ্চা নিয়ে আর বাইরে থাকতে পারবে না, বাড়ির নিশ্চিত উষ্ণতায় ফিরে আসবে। এসে আশাহত হয় আবার। ধুল�ো পড়েছে ঘরের জানলা দরজায়। ভাঁজ করে গুটান�ো বিছানার উপর বিড়ালের থাকার জায়গা হয়েছে। প�োড়�োবাড়ি মনে হয় বাড়িটাকে। তবু আজ রাতটা এই বাড়িতেই কাটাতে হবে। একটু সন্ধে হ’তে মনে হয় মার সঙ্গে একবার দেখা করা উচিত। হয়ত�ো মায়ের কাছে মালতীর ক�োন খবর থাকতে পারে। অন্ধকারেই বেরিয়ে পড়ে ধ্রুপদ। ওবাড়ি যাওয়ার পথেই পড়ে চঞ্চলদার বাড়ি। কী মনে করে ঢু কে পড়ে সে বাড়িতে। মাটির বাড়ি। দাবায় বাঁখারীর বেড়ায় জাফরী। ধ্রুপদ অবাক হয় কিছু টা। চঞ্চলদা বহু ল�োকের সরকারী টাকায় বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে আর নিজে একটা ঘর নেয়নি! - বউদি, বাড়ি আছ�ো? ধ্রুপদ দাবার নীচে থেকে হাঁক মারে। বাঁখারীর জাফরীর উপর পলিথিনের ঝাঁপ। চঞ্চলের বউ ভেতর থেকে উঁকি মারে পলিথিন সরিয়ে। বলে, ভেতর এস�ো ঠাকুরপ�ো। - না ব�ৌদি ওবাড়ি যাব। একটা কথা জানার ছিল। - হ্যাঁ! - ত�োমার কাচে চঞ্চলদার ক�োন খপর আচে? - সে ওলাওটার খপর রেকে কী করব�ো! কচি মাগী পেয়ে আমাকে তিন তিনটে

বাচ্চা-কাচ্চা গচিয়ে ফু র্তি মারাচ্চে! ধ্রুপদ এই ভয়টাই পাচ্ছিল। চঞ্চলদার বউএর কাছে এলে একটা হইচই কাণ্ড ফেলে দেবে। সে চু পচাপ উঠ�োনে দাঁড়িয়ে শ�োনে চঞ্চলদার র�োগা লম্বা অস্থি চর্মসার বউএর কথা। ব�োঝা যায় তার উপর দিয়েও শেষ কমাস ঝড় বয়েছে এল�োমেল�ো। ঝড় সামলে নিয়েছে কিন্তু ঝড়ের তিক্ততা রয়ে গেছে তার মুখে। - বাবু নাকি নেতা ছেল। গরীবের নেতা। ঝ্যাটা মারি অমন নেতার মুকে। পিরিতের নাঙেদের সব ঘর বাইনে দেচে আর আমার জন্নে নবডঙ্কা। তিন তিনটে বাচ্চা বিইয়ে গতরের কিচ্চু রাখেনে হারামীর বাচ্চাটা। এই গতর খাইটেই চারটে পেরানি বেঁচে আচি। ত�োমার বউ আমার ভাতার নে ভেগেচে। ডবগা মাগ সামলাতে পারুনি তু মি। আর নিরামিষ খেলে কী আর ও মাগী সামলান�ো যায়! আমার ভাতারকে দ্যাক�ো গিয়ে ও মাগীর হাল কী করেচে। দুবেলা বাংলা খেয়ে মাগীর গতরের দফারফা করে দেচে এদ্দিনে। যাগ গে ওসব ঢ্যামনা ঢ্যামনীদের কতা। আমার ছ�োট�োছেলে দুদ খায়। আমার শুকন�ো বুকে দুদ নেই। দুদের দামটা দিও গ�ো ঠাকুরপ�ো। ত�োমারই মেয়ের মত�ো ত�ো বয়েস গ�ো!

ওপারের ডাক শঙ্কর চ্যাটার্জী আমি বড়�ো একটা ভ�ৌতিক বা অল�ৌকিক গল্প লিখি না..l কয়েক বছর আগেও লিখতাম l কিন্তু ইদানিং আর ওই পথে হাঁটি না l কেননা একটা বইয়ে পড়েছিলাম , নেগেটিভ এনার্জি নিয়ে বেশি চর্চা করা নাকি ভাল�ো নয় ! নেতিবাচক শক্তি মনকে নাকি ক্রমশ দুর্বল করে দেয় l. বুঝতে পারিনি হঠাৎ, আমি এক অল�ৌকিক ঘটনার সম্ মুখীন হয়ে পড়ব�ো ! বেশ কয়েকমাস এই বিষয় নিয়ে ক�োথাও মুখ খুলিনি l কারণ নিজেই এখনও পর্যন্ত ঘটনাটার সমাধান করতে পারিনি l সেইজন্যে আজ সিদ্ধান্ত নিলাম , কাহিনীটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব�ো l জানিনা এই ঘটনা পড়ে আপনি শিহরিত হবেন কি না ? বা অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেবেন কি না ? কিন্তু হলপ করে

29 আল�োক

শারদীয়া 2022

বলছি- ঘটনাটার সাক্ষী আমি নিজে l এখনও পর্যন্ত ক�োন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি l কয়েকদিন ধরে অঙ্কুরের ঘুমটা ঠিক রাত একটার সময় ভেঙে যাচ্ছে l বুঝে পাচ্ছে না কারণটা কি ? সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার - এরপর এপাশ ওপাশ করতে করতে ঠিক এক ঘন্টা পরেই চ�োখে ঘুম নেমে আসছে l তাহলে কি কলেজের পরীক্ষা এগিয়ে আসছে বলে , দুশ্চিন্তার জন্যে এমন হচ্ছে ? কিন্তু একই সময়ের পুনরাবৃত্তি র�োজ র�োজ কেন হবে ? রাত একটা ! এটা কি তবে ক�োন বিশেষ সাংকেতিক সময় ? যে সময়ে তার ইন্দ্রিয়গুল�ো ক�োন অজানা রহস্যের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাইছে তাকে ? ও ভূ তের গল্পে পড়েছে - গভীর রাত্রে বিদেহী আত্মারা

মানুষের সংস্পর্শে আসতে চায় ! কিছু বলতে চায় l যা জীবিত অবস্থায় বলা হয় নি l কথাটা মনে হতেই ওর বুকটা ভয়ে শিরশির করে ওঠে ! কিন্তু তাকে কেন অজানা অচেনা অশরীরী আত্মা কিছু বলতে চাইবে ? তাছাড়া তার ক�োন চেনা জানা আত্মীয় কিছু দিনের মধ্যে মারা যায় নি ত�ো ! কিছু তেই এ রহস্য ভেদ করতে পারে না সে l রাত্রি একটা বাজলেই তার চ�োখের পাতা দুট�ো আপনা থেকে খুলে যায় l যেন ঘড়ির আল্যার্ম লাগান�ো আছে চ�োখে .l কি অদ্ভুত কান্ড l অঙ্কুর বিছানায় শুয়ে শুয়ে কার�ো যেন ফিসফিসানি কণ্ঠস্বর শুনতে পায় ! কিন্তু বুঝতে পারে না ক�োথা থেকে এই চাপা শব্দ আসছে ! কি বলতে চায় ওই অস্ফুস্ট কণ্ঠস্বর ! কান দুট�োকে সজাগ রেখেও বুঝতে পারে

না l বরং উৎকণ্ঠা ক্রমশ বেড়ে যায় l ৃ ্য বিছানায় উঠে বসলেই সেই অদশ কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যায় ! অবশেষে দিন আষ্টেক বাদে অনর্গল ফিসফিসে শব্দ শুনে একটা বাক্য বুঝতে সক্ষম হয় l সা-ব-ধা-ন....! মাত্র একটা কথা l সাবধান l কে কাকে সাবধান হতে বলছে ? কথাটার ক�োন মানে খুঁজে পায় না অঙ্কুর l মনের মাঝে একটা অস্বস্তি দেখা দেয় l র�োজ রাত্রে একই ঘটনা ওকে বিচলিত করে ত�োলে l একদিন বা দুদিন হলেও মনের ভু ল বলে উড়িয়ে দিতে পারত�ো ! এখন ধীরে ধীরে মনের মধ্যে একটা সুপ্ত ভয় জেগে উঠছে l ইদানিং স্পষ্ট শুনতে পায় - সাবধান ধ্বনি l অবশেষে ঠিক করে , কাউকে তার এই অভিজ্ঞতার কথা জানাবে l আমার দূর সম্পর্কের ভাইপ�ো অঙ্কুর ,

সেদিন ফ�োনে আমাকে ওপরের ঘটনাটা জানাল�ো l ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বয়সের বিশাল পার্থক্য থাকলেও ছিল�ো বন্ধু র মত�ো.. l বললাম l ' ওসব ছাই -পাঁশ চিন্তা ছেড়ে পরীক্ষার জন্যে তৈরী হ l ভূ তের গল্পগুল�ো পড়া কিছু দিন বন্ধ রাখ l " ও নিজেও হাসল�ো l ওকে সান্ত্বনা দিলেও আমার মনে সন্দেহের একটা কাঁটা বিঁধল�ো l কি কারণে প্রতিদিন ওর মনে এই অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে ? কিছু অঘটনের পূর্বাভাষ কি কেউ ওকে জানাতে চাইছে ? কিন্তু ভাবতে পারিনি - ওর কথাগুল�ো কতখানি সত্যি ছিল l ওই সাবধান বাণীর মধ্যে ভবিষ্যতের অঘটনের নির্মম সত্যির ইশারা ছিল l আমিও বুঝতে সক্ষম হই নি l ভেবেছিলাম তরুণ মনের কল্পনা ! কয়েক দিন পর ওর বাবার

ফ�োন পেলাম l " বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রণ খেয়ে বাইকে করে গভীর রাত্রে বাড়ি ফিরছিল�ো অঙ্কুর l ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্পট ডেড l " কান্নায় ভেঙে পড়ল�ো আমার খুড়তু ত�ো ভাই l আমার মনে পড়ে গেল�ো অঙ্কুরের বলা কথাগুল�ো l তখনি আমি উত্তর পেয়ে গেলাম এতদিন না জানা প্রশ্নের l ওর নিজের আত্মাই ওকে বারবার সাবধান করছিল�ো আগামী বিপদের বিষয়ে ! অন্তরাত্মা বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কখন�ো কখন�ো আমাদের সচেতন করে আগামী বিপদের বিষয়ে l যা সহজে আমরা বুঝতে পারি না l ওর বাবাকে শুধু জিজ্ঞাসা করলাম l " রাত কটার সময় ঘটনাটা ঘটল�ো ? " ভাঙাচ�োরা গলায় জবাব পেলাম l " তখন ঠিক রাত একটা l " আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম ll

গ্যাস, সুগার, থাইর�োয়েড, গাইন�ো সমস্যা, চু ল পড়া, ম�োটা হয়ে যাওয়া, ইউরিক এ্যাসিড, সেক্য় সু াল সমস্যা ৃ র�োগের চিকিৎসা প্রাকৃ তিক পদ্ধতিতে যত্নসহকারে করা হয়। য�োগায�োগ: 9126729111 প্রভতি 30 আল�োক

শারদীয়া 2022

মাল

শুভব্রত বসু লজের নাম দেবল�োক। শহরের হৃৎপিণ্ডেই এই লজের অবস্থান। এ শহর - এমন কিছু বড় নয়। মাঝারি টাউন বলা চলে। গ�োটা কয়েক স্কু ল, দুট�ো কলেজ, ভেঙে পড়া তিনটে সিনেমা হল নিয়ে একটা শহর। বড় শহরের নকল করে শপিং মল, মাল্টিক্যুইজিন রেস্তোরাঁ, কটা আধ�ো আঁধারি বার‌ও মাথা তু লেছে এই শহরে। মূলতঃ একটা প্রকান্ড বাজার - পাইকারি বাজারে জড়িয়ে মড়িয়ে এই শহরের অলিগলি। যতরকমের মালের পাইকারি হতে পারে সব মালের দ�োকানে ভরা এই শহর। বাজার ও ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের মানুষ তৈরি করেছে আম�োদ প্রম�োদের নানা বন্দোবস্ত। শুধু শহরের মানুষ! তার সঙ্গে আছে ব্যবসার খাতিরে আসা ভিন

31 আল�োক

শারদীয়া 2022

শহরের, গ্রামের এমন কী ভিন রাজ্যের মানুষজনের আসা যাওয়া। তাদের‌ও চাই নানা আম�োদের সম্ভার। কেউ ছ�োটে শপিং মল লাগ�োয়া মাল্টিস্ক্রীন হলে, কেউ সন্ধ্যে হলে খ�োঁজে বারের আল�ো আঁধারি। গ্লাসে ছলকে ওঠে তরল আগুন। অনেকের চাই অন্য কিছু । যারা এই শহরের ঘ�োচঘাঁচ জানে, তারা ওঠে দেবল�োক লজে। যারা শহরের পূবদিকের গ�োঁসাই গলিতে যেতে চায় না, তারা এই লজের খদ্দের। তাদের চাহিদা জানে মনুয়া। সঠিক জায়গায় সঠিক মাল পাঠিয়ে দেয়। তবে সব‌ই কী আর বাঁধা খদ্দের ? ব্যবসার খাতিরে আসা নতু ন ল�োক তারাও গন্ধে গন্ধে এসে হাজির হয়। এর তার মুখে খবর পেয়ে।

নতু ন মানুষ দেখলে মনুয়া চলে আসে খবর নিতে। কেমনটা মাল চাই সেই মানুষটার ? নানা রকমের জ�োগান পাওয়া যায় এই মফস্বল থেকে হঠাৎ শহর হয়ে ওঠা জায়গাটায়। সবাই টাকার পেছনে ছু টছে। যেন প্রতিয�োগিতা লেগেছে। তাছাড়া কাঁচা টাকা উড়ছে। হাত বাড়ালেই মুঠ�োর মধ্যে। দিনে হাজার পনেরশ - কী দুহাজার‌ও মিলে যায়, তেমন শাঁসাল�ো খদ্দের হলে। মনুয়ার কমিশনের রেট‌ও তৈরি। ফিফটিন পার্সেন্ট। একশ টাকায় পনের�ো টাকা রেট। ক্যাশ! ** তবে দেবল�োকের অবস্থা গত দুবছরে বেশ খারাপ। লকডাউনে লকডাউনে জেরবার। ব্যবসার মন্দা। ল�োকজনের যাতায়াত‌ও ছিল বেশ কম। সরকার

থেকে এসে লজ‌ও বন্ধ রেখেছিল। লজের কর্মচারীরা ফিরে গেল নিজের ঘরে, গ্রামে। মালিক লজে তালাচাবি লাগিয়ে জমান�ো টাকায় দিন চালাতে লাগল। সব মিলিয়ে ব্যবসাকেন্দ্রিক শহরটায় ভাঁটার টান এল�ো। মনুয়া ক�োন�োদিন ভাবেই নি এমন দিন আসবে। তার আয়পয় যথেষ্ট হলেও, টাকা জমাতে হয় - এমন চিন্তা কখন‌ই মাথায় আসেনি। যা দুহাতে কামিয়েছিল তা চারহাতে খরচ করেছে। দ�োতলা বাড়ি, লেটেস্ট মডেলের বাইক, গলায় ম�োটা চেন, হাতে স�োনার বালা। ম�ৌকেও সে মুড়ে দিয়েছে স�োনাদানায়। দামি দামি শাড়ি, ড্রেস, গয়না, পারফিউম, সাজগ�োজ, হেয়ার স্পা, বিউটি পার্লার - সব খরচ করেছে। ম�ৌ সুন্দরী হয়েছে, গ্ল্যামার ফেটে পড়ছে তার। দিন গেলে যে পাঁচ ছ' হাজার কামাত�ো, তার এখন অবস্থা খারাপ। বাইক গেল, গলার চেন, হাতের বালা শেষ হল�ো। একটা লকডাউন উঠল�ো। দেবল�োক খুলল। আবার মানুষ আসতে শুরু করল। কিন্তু মনুয়ার মালের চাহিদা ফিরে এল না। দ�ো' গজ কী দুরি - এই দুরি তে মনুয়ার ব্যবসা চলে না। যে মনুয়ার পেছনে একসময় কাস্টমারের লাইন লেগে থাকত, সেই মনুয়াই এখন সন্ধ্যে নামলে দেবল�োকে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। কাস্টমারের খ�োঁজে। ঘরে ঘরে কাস্টমার। তবুও চেনা কাস্টমারেরা আজ অচেনা হয়ে আছে - মুখে মাস্ক। প ৃথিবীর কঠিন ব্যাধি। মানুষের মনে ভয় ঢু কিয়েছে। প্রাণের ভয়। এমন ভয় - আদিম রিপুও তার সামনে নতজানু হয়েছে। সেই ল�োকগুল�োর কাছে মনুয়ার আজ প্রয়োজন নেই। মনুয়ার মালের আজ দরকার নেই। সে না থাক - মনুয়ার দরকার। টাকার । মনুয়া কাস্টমার 32 আল�োক

শারদীয়া 2022

খুঁজতে বের�োয়। রাতে ফেরে মনুয়া। বাইক বেচা টাকায় মাস তিনেক চলেছে। চেন আর বালায় বাকি চারমাস। কর�োনা আবার চ�োখ রাঙাচ্ছে। আবার নাকি ফিরে আসছে। আর�োও ভয়াবহ রূপে ফিরে আসছে। এবার ? মনুয়ার মাথা কাজ করে না। ক�োন�োমতে মুখ নিচু করে ঢ�োকে বাড়িতে। ব�ৌএর দিকে তাকাতে পারে না। রূপ য�ৌবন ঠিকরে পড়া ব�ৌ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া শেষ‌ করে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসে না। ছটফট করে। এক একদিন ব�ৌটা অভ্যস্ত শরীর নিয়ে এগিয়ে আসে। মনুয়া সাড়া দেয় না। দিতে পারে না। ব�ৌ নানাভাবে চেষ্টা করে। কানের লতিতে কামড়ে দেয়। সারা শরীরে হাত ব�োলায়। মনুয়া চু প করে থাকে। মনুয়ার শরীর জাগে না। ব�ৌয়ের গরম নিঃশ্বাস ঠান্ডা হয়ে যায়। তার দিকে পেছন ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। ** গাড়িটা চেনা মনুয়ার। মন্ডলবাবুর গাড়ি। আজ প্রায় আট মাস পরে মন্ডলবাবুকে দেখল মনুয়া। দেবল�োকের বাঁধা খদ্দের। মনুয়ার‌ও। বলে ব্যবসায় খদ্দের হল লক্ষ্মী। মন্ডলবাবু হলেন মনুয়ার সত্যিকারের লক্ষ্মী খদ্দের। মাল পছন্দ করতে সময় নেন বটে। সে সময়ে তাঁর নানা বায়নাক্কা। মনুয়ার নানা রকমের মালের সম্ভার। তার থেকে একটা পছন্দ হলে, পাঁচ থেকে ছ দিন মন্ডলবাবুর টানা ব্যবসা। শেষদিনে ম�োটা পেমেন্ট। লকডাউনের এই বাজারে অন্যান্য অনেক বাঁধা খদ্দেরের মত মন্ডলবাবুও আসেন নি। আজ ব�োধহয় ভগবান মুখ তু লে চেয়েছেন। গাড়ি থেকে নামতেই হাসি মুখে এগিয়ে গেল মনুয়া। "স্যার ভাল�ো ত�ো!" স্যার আড়চ�োখে তাকালেন। সামান্য চ�োখের

ইশারা। ড্রাইভার আছে। এখানে মুখ খুলবে না মালিক। ঘরে যাওয়ার আমন্ত্রণ। মনুয়ার মন খুশ হয়ে গেল। ম�ৌ চাউমিন খেতে খুব ভাল�োবাসে। আজ এগ চিকেন চাউমিন নেবে। সঙ্গে চিলি চিকেন। মন্ডলবাবু ল�োক ভাল�ো। চাইলে আজকেই কিছু অ্যাডভান্স করে দেবেন। লিফটের দিকে এগ�োতে এগ�োতে জিভে আসা জলটাকে সুরুৎ করে টেনে নিল সে। *** ঘরে উজ্জ্বল আল�ো। মনুয়া দাঁড়িয়েছে এসে। মন্ডলবাবু ফতু য়া আর সিল্কের লুঙ্গী পরে বসেছেন স�োফায়। আঙুলে আটটা আঙটি ঝিলিক দিচ্ছে। চেনা পরিবেশ, চেনা স্থান, কাল, পাত্র। মালের অর্ডার - সেটাও চেনাই হবে। হল। মাঝারি মাপ। উঁচু খাড়া স্তন। গভীর নাভি। হালকা ল�োমে ঢাকা য�োনি। শালিনী... নাহ, এই সময়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। আর ক'টা দিন যাক। নন্দিতা... ফ�োন ধরল�ো না। সুজাতা... এখন সম্ভব নয়। শ্বশুর শাশুড়ি কলকাতা থেকে এসে এখানে আছে। আর কে ? আর কে? কে আছে? মাথার ধূসর ক�োষের লিস্ট থেকে নাম পড়ছিল মনুয়া। এইরকম দেহ ক�োথায় আছে? ক�োথায় দেখেছে? ক�োথায়? ক�োথায় ? পাঁচদিনে কুড়ি হাজার পেমেন্ট! মনুয়া লিস্ট মেলাচ্ছিল... পেয়েছে! পেয়েছে! মনুয়া পেয়েছে। চাউমিন খেতে বড় ভাল�োবাসে ব�ৌটা। উঁচু ভরাট বুক - ব্রা মনুয়াই কেনে- থার্টি সিক্স। শাড়িটা একটু নামিয়ে পরলে যেখানে চ�োখ স্থির হয় - সেটা কুয়োর মত গভীর নাভি। প্যান্টিটা নামালেই হালকা ল�োমে ঢাকা ... চাউমিনের গন্ধ চিলি চিকেনের গন্ধ নাকে মেখে বাড়ির দিকে দ�ৌড়চ্ছিল মনুয়া!

ফাঁদ মানসী রায় চট্টোপাধ্যায় আজকাল মাঝে মাঝেই শরীরটা খুব খারাপ লাগে লীনার। আগে ক�োন�োদিন এমন সমস্যা হয়নি। নতু ন এই বাড়িটায় আসার পর থেকেই শরীরে একটা অদ্ভুত কষ্ট শুরু হয়েছে। রাতে ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসছে বারবার। অমিতাভ বিনয়ের কথা শুনে কেন যে এই বাড়িটা ভাড়া নিল কে জানে ! স্টেশনের বেশ কাছেই বাড়িটা। ছ�োট্ট নির্জন স্টেশন, নাম ডু য়া...... বেশিরভাগ ট্রেন এখানে দাঁড়ায় না। এমন জায়গায় অমিতাভকে চাকরি করতে আসতে হবে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি লীনা। এই ছ�োট্ট স্টেশনের নতু ন স্টেশন মাস্টার অমিতাভ। বিনয় ওর কলিগ। ভীষণ হাসিখুশি আর প্রাণ�োচ্ছল

33 আল�োক

শারদীয়া 2022

ভদ্রল�োক। মাধবী নামের এক মহিলাকে কাজের জন্য ঠিক করে দিয়েছে বিনয়। মহিলা মাঝবয়সী , বেশ গ�োলগাল চেহারা ! কিন্তু চাহনিটা কেমন যেন অদ্ভুত ! সবচেয়ে অসহ্য এই বাড়ির রহস্যময় পরিবেশ ! মাঝরাতে র�োজ ঘুম ভেঙ্গে লীনার মনে হয়.... জানলার ঠিক বাইরে কেউ যেন ফু ঁপিয়ে ফু ঁপিয়ে কাঁদছে। কেন যে কিছু তেই বিশ্বাস করেনা অমিতাভ....... *†** এই বাড়ির মালিকরা সম্ভবত বহুবছর আগেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে বাড়িটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মাঘের সন্ধ্যা।

কনকনে উত্তরে হাওয়া বইছে। সঙ্গে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গল্পের বইয়ের পাতা খুলেও মন বসাতে পারছে না লীনা। মনে পড়ছে মাস খানেক আগের কথা.... " এত বড় বাড়ি ! বিক্রি করে দিতে পারত, তাই না ?" অমিতাভ বাড়িটার বিশাল ল�োহার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছিল। সেদিন একইভাবে ঝিরঝির বৃষ্টিতে আবছা হয়ে যাচ্ছিল চারদিক..... সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল বিনয়...." আরে, মালিকানা ত�ো একজনের নয় ! এত�ো সাত ভূ তের সম্পত্তি...শরীকী বিবাদ ....বিক্রি হবে কি করে ! সস্তায় এত ভাল�ো বাড়ি আর পাওয়া যাবে না। "

সত্যি বলতে বাড়িটা যেন একটা ভাঙা দুর্গের মত ! বাড়ির বারান্দার ছাদ টা যেন গ�োল চাঁদ�োয়া আকৃতির ! সবকিছু ই কেমন যেন অদ্ভুত.... আর আর�ো মারাত্মক সেই মেয়েটা ! যাকে মাঝে মধ্যে আবছা অন্ধকারে বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখে লীনা ! কিন্তু মুখ টা কিছু তেই দেখতে পায়নি আজ পর্যন্ত...... কিছু বললেই হেসে উড়িয়ে দেয় বিনয় আর অমিতাভ....... ***** আর ক�োন�ো ভাড়াটে নেই বাড়িটায়। সামনে পরিত্যক্ত বিশাল বাগান। পিছনে একটা পুকুর। পাড় বাঁধান�ো.....কিলবিল করছে মাছ..... মাছ দেখতে একা একাই একদিন পুকুরে উঁকি দিয়েছিল লীনা। ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ সজ�োরে ধাক্কা দিয়েছিল। জলে পড়ে গেলেও ক�োন�ো বিপদ হয়নি....লীনা সাঁতার জানেনা। তাই ভয়ে আর ক�োন�োদিন ও মুখ�ো হয়নি। অমিতাভ আর বিনয় মিলে ঠাট্টা করেছিল সেদিন.... বিনয় ত�ো হেসে গড়িয়ে পড়েছিল " ব�ৌদিকে নিশ্চই ভূ তেই ঠেলা মেরেছে..... আচ্ছা ভর দুপুর বেলা ছিল কি ?" ক�োন�ো উত্তর দেয়নি লীনা। ও নিশ্চিত যে নিজে পা হড়কে পড়ে যায়নি...... কেউ ধাক্কা দিয়েছিল ওকে ! কিন্তু কে ! কি তার উদ্দেশ্য ! বাগানটা জুড়ে আগাছার জঙ্গল। গাছগুল�ো কেমন যেন অদ্ভুত! বিশ্রী ভাবে পরগাছা গুল�ো পেঁচিয়ে ধরেছে বড় বড় শিমুল, কৃষ্ণচূ ড়া আর কদম গাছগুল�োকে। যেন এক একটা মস্ত জ�োঁক.... রক্ত চু ষে চু ষে প্রাণশক্তি ছিনিয়ে নিয়ে, ওদের একেবারে শেষ করে দেবে ক�োন�ো একদিন..... *** ঝলমলে র�োদের আশায় আজ তিনদিন পার হয়ে গেল। সূর্যের মুখ আর দেখা

34 আল�োক

শারদীয়া 2022

গেল না। তারই মধ্যে হঠাৎ জরুরী তলব। অফিসের কাজে একদিনের জন্য কলকাতা যেতে হবে অমিতাভ কে। বিকেলের মরা আল�োটা বিলীন হয়ে, সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এলেই, বাড়িটা যেন রহস্যময় হয়ে ওঠে।অন্ধকারে এমনিতেই ভীষণ ভয় লীনার। পুর�োন�ো বাড়িটার বারান্দা পার হয়ে বাথরুমে যাবার সময় বাইরের আগাছার জঙ্গলটা চ�োখে পড়ে.....বড্ড গা ছমছম করে। না জানি কত বিষাক্ত প�োকা মাকড় আর সরীস ৃপ লুকিয়ে আছে ওই অন্ধকারের গ�োপন ক�োণায় ......আর�ো মনে হয় পরজীবী গাছ গুল�ো যেন আষ্টেপ ৃষ্ঠে চেপে ধরেছে বড়গাছ গুল�োকে...... লিকলিকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, টু ঁটি টিপে যেন শেষ করে দিতে চাইছে ওদের..... হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাথরুম থেকেই শুনতে পেল, মুঠ�োফ�োনটা বেজেই চলেছে। প্রায় ছু টে ছু টে ঘরে এসে টেবিলে রাখা মুঠ�োফ�োনটা হাতে নিয়েই দেখল.... অমিতাভ কলিং ..... ফ�োন ধরতেই উত্তেজিত গলা ভেসে এল... " শ�োন�ো, একটু সাবধানে থেক�ো। ফিরে একটা কথা বলব। ভয় পাবার কিছু নেই। তাড়াতাড়ি গেটে তালা লাগিয়ে দিও। কাউকে দরজা খুলবে না। আমি কাল রাতেই ফিরব....." কেটে গেল ফ�োনটা..... " কি হয়েছে ? হ্যাল�ো ! " শিউরে উঠল লীনা ! ফ�োনটা টেবিলে রাখতে গিয়েই চ�োখে পড়ল মেয়েটাকে। টিমটিমে হলদেটে আল�োয় ভরা উঠ�োনে দাঁড়িয়ে একদ ৃষ্টে জানলার দিকেই তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির জলের এল�োমেল�ো ঝাপটা ততক্ষণে ঢু কতে শুরু করেছে ভিতরে.....পুরান�ো

দিনের কাঠের জানলা, বিবর্ণ খড়খড়ি ....বন্ধ করতে গিয়ে লীনার ডান হাতে সামান্য চ�োট লাগল..... " উঃ " একটা অস্ফুট শব্দ বার হল মুখ দিয়ে। পর মুহূর্তেই কিন্তু আর দেখতে পেলনা মেয়েটাকে। ঠিক তখনই টিংটং শব্দে ড�োরবেল বাজল..... গ্রিল দিয়ে ঘেরা বারান্দায় গিয়েই চ�োখে পড়ল মাধবীকে। একটা কাল�ো ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে, দরজার ঠিক সামনেই। " তু মি এত বৃষ্টিতে এলে কেন ?" কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল লীনা। " একটা জরুরী দরকার ছিল ব�ৌদি...." " ও আচ্ছা ! এস�ো....." কাঁপা হাতে গ্রিলের তালা খুলে দেয় লীনা...... কেমন যেন বিশ্রী একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছে লীনার। প্রথম দিন থেকেই মহিলার দ ৃষ্টিটা স্বাভাবিক মনে হয়না লীনার। ম�োটা ফ্রেমের পুরু কাঁচের ভিতর দিয়ে ওর ঘ�োলাটে চ�োখের অদ্ভুত চাহনি দেখে শিরশির করে ওঠে শরীরটা.... হঠাৎ ড�োরবেলটা বেজে উঠল আবার। একবার নয়, সমানে বেজে চলেছে বেলটা ! আশ্চর্য ! লীনা বাইরে যেতেই চ�োখে পড়ল মেয়েটাকে। গ্রিলের গেট ধরে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা ! হলদেটে আল�োয় ওর সাল�োয়ারটা সম্পূর্ণ ভেজা, তবে সেটা বৃষ্টির জলে নয় ! একটা লালচে তরল ওর শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে...... রক্ত ! ঠিক তখনই মনে হল বাগানের রাস্তায় ভারী জুত�োর শব্দ..... " কে ?" কাউকে চ�োখে পড়ল না। ততক্ষণে মাধবী এসে দাঁড়িয়েছে পাশে ঘরঘরে চাপা গলা কানে এল... " কি হল ব�ৌদি ?"

" মেয়েটা !" " ক�োথায় , কেউ নেই ত�ো !" আশ্চর্য ! মেয়েটা ক�োথায় গেল ! বন্ধ জানলার বাইরে বৃষ্টির জলের আছড়ে পড়ার শব্দ কানে আসছে। আবার বেজে উঠল কলিং বেলটা। ছু টে গেল লীনা .....আশ্চর্য ! কেউ নেই ! " ব�ৌদি দু কাপ চা করি ! যা ওয়েদার...." আবার কানে এল ফ্যাসফেসে গলা.... লীনা চাপা স্বরে বলে.... " তার আগে বল�ো, তু মি কি দরকারে এসেছ ?" ঠিক তখনই রান্নাঘর থেকে ঝনঝন করে কাঁচের বাসন ভাঙার শব্দ ভেসে আসে ! ছু টে গিয়ে স্তম্ভিত হয় দুজনেই ! চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সবকিছু .... যেন কেউ প্রবল আক্রোশে তান্ডব চালিয়েছে..... কিন্তু এ যে অসম্ভব ! ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে লীনার মুখ ! তখনই মেয়েটাকে আবার চ�োখে পড়ে রান্নাঘরের ক�োণায়। ফ�োঁটা ফ�োঁটা রক্ত ওর জামা বেয়ে চু ঁইয়ে পড়ছে মাটিতে " কিন্তু এই মুখ যে ওর বড্ড চেনা ! " পিছন থেকে ভেসে এল মাধবীর গলা..... " ব�ৌদি ভয় পেলেন ? ও ত�ো এখানেই থাকে। আপনাকে সেটা ব�োঝাবার চেষ্টা করছে...." " মানে ! কে ও ! একটা মেয়েকে বারবার দেখছি জান�ো !" " ঠিকই দেখছেন। আগের ভাড়াটেরা তাই ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। " " মানে ?" "হ্যাঁ, ও আমার মেয়ে। পেটের দায়ে ঝাড়গ্রাম পাঠিয়েছিলাম কাজ করতে ....আর ফিরল না গ�ো মেয়েটা....ক�োন�ো খ�োঁজ পাইনি আজ পর্যন্ত...." এত শরীর খারাপ লাগছে কেন লীনার ! বুকে একটা চিনচিনে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। না হতে পারেনা ! কিছু তেই না ! চ�োখের সামনে ছবির মত ভেসে

35 আল�োক

শারদীয়া 2022

উঠছে বছর খানেক আগের সেই বর্ষার দিনটা..... অমিতাভর চাকরি সূত্রে তখন ঝাড়গ্রাম থাকত ওরা.... একটা চ�োদ্দ পনের�ো বছরের ব�োবা মেয়েকে জ�োর করে ওদের বাড়িতে কাজে ঢু কিয়ে দিয়ে গিয়েছিল লীনার কাজের মাসি। লীনা প্রথমে রাজি হয়নি। মহিলা বলেছিল " দয়া করে রেখে দাও ব�ৌদি। বড্ড গরীব। চব্বিশ ঘন্টা কাজ করবে শুধু দুবেলা খেতে দিলেই হবে। " দিনরাত লীনা গালাগালি দিত মেয়েটাকে ! কি যেন নাম ! উমা ! রাতদিন বেচারা মুখবজে ু কাজ করত..... কদিনের জন্য কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি এসেছিল লীনা। ফিরে গিয়ে জানতে পারে মেয়েটা নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। কিছু তেই পুলিশকে ইনফর্ম করতে রাজি হয়নি অমিতাভ। তখন ত�ো আসল সত্যি টা জানত না লীনা! " হঠাৎ মনে হল পিছন থেকে দুট�ো সাঁড়াশির মত হাত ওর গলা টিপে ধরেছে ততক্ষণে..... দমবন্ধ হয়ে আসছে ! চ�োখের সামনে নেমে আসছে অন্ধকার ! ক�োন�োমতে নিজেকে ছাড়িয়ে পাগলের মত ছু টে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় লীনা.... পালাতে হবে ! এক্ষুণি পালাতে হবে ! এই গন্ডগ্রাম ! চারদিকে ঘুটঘটে ু অন্ধকার ! কিভাবে পালাবে ! নিরাপদ আশ্রয় বা ক�োথায় ! টেবিলের ওপর সমানে বেজে চলেছে মুঠ�োফ�োনটা..... চ�োখে পড়ে " অমিতাভ কলিং...." ফ�োন ধরেই ডু করে ওঠে লীনা " ওই মেয়েটা এখানে ! উমা ফিরে এসেছে !" কানে আসে " সেটা বলার জন্যই ত�ো ফ�োন করেছিলাম ত�োমাকে। তারপর মনে হল মিছিমিছি ভয় পাবে ! তাই বলিনি ! আসার আগেই আমি স্টেশনে

দেখেছি মেয়েটাকে। " কিন্তু একি ! ঝড়ের দাপটে খুলে গেছে বন্ধ জানলা ! আবছা অন্ধকারে এখন বাইরে দাঁড়িয়ে উমা ! কিন্তু উমা ত�ো বেঁচে থাকতে পারে না ! কত কাঠ খড় পুড়িয়ে ওকে হাসপাতাল থেকে বার করেছিল রাতের অন্ধকারে...... তারপর ..... লুকিয়ে বাড়ি নিয়ে এসে পেট ভরে ভাত খাইয়েছিল মেয়েটাকে। ব�োবা মেয়েটা প্রচু র ভাত খেয়েছিল সেই রাতে। সরল মনের মেয়েটা কল্পনা করতে পারেনি খাবারে বিষ মেশান�ো থাকতে পারে।..... তারপর ওর নিথর শরীরটাকে গাড়ির ডিকিতে ভরে রাতের অন্ধকারে গভীর জঙ্গলে ছু ঁড়ে ফেলেছিল দুজনে...... অমিতাভর অপরাধ লুক�োতে এছাড়া আর ক�োন�ো পথ খ�োলা ছিলনা তখন। ক�োন�ো প্রতিবাদের সাহস পায়নি লীনা। সত্যি বলতে ওর নিজের বাবার নুন আনতে পান্তা ফু র�োয় অবস্থা। ভাই দুট�ো পর্যন্ত বেকার। অমিতাভর টাকাতেই চলে ওদের পুর�ো পরিবার....... লীনা খুব সহজেই বুঝেছিল অমিতাভর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি মেয়েটা, রাতের অন্ধকারে তাই পালিয়ে গিয়েছিল ওই নরক ছেড়ে ! তারপর ওকে হাসপাতাল থেকে লুকিয়ে আবার ফিরিয়ে এনে পরিকল্পনা মাফিক পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়েছিল দুজনে। ব�োবা বলে কাউকে কিছু ই বলে উঠতে পারেনি মেয়েটা। কাজের মাসির একটা সন্দেহ হয়েছিল বই কি ! মুখ বন্ধ করতে কম টাকা ত�ো খরচ হয়নি ! খবরের কাগজের সেই কাটিং টা সঙ্গে রেখে দিয়েছে লীনা। ভিতরের পাতায় সেদিন জ্বলজ্বল করছিল খবরটা ...... উদ্ধার হওয়া কিশ�োরী নিখ�োঁজ হাসপাতাল থেকে .... গতকাল ঝাড় গ্রামের একটি রাস্তা থেকে অচৈতন্য এক কিশ�োরী কে উদ্ধার করে

জনৈক ব্যক্তি ভর্তি করেছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। কিশ�োরী মূক ও বধির। মনে করা হচ্ছে তার ওপরে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগেই সেখান থেকে হঠাৎ করেই নিখ�োঁজ হয়ে গেলেন মূক ও বধির কিশ�োরী..... কম জল ঘ�োলা ত�ো হয়নি ! তবে দুনিয়া টাকার বশ ! কত কষ্ট করে যে সব ঝামেলা মিটিয়ে পালিয়ে এসেছিল দুজনে ! **** দরজায় কেউ মারাত্মক জ�োরে ধাক্কা দিতে শুরু করেছে ..... অন্য দিকের দরজা খুলে পাগলের মত ঊর্ধ্বশ্বাসে ছু টছে লীনা ..... হঠাৎ শক্ত কিছু তে হ�োঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল...... সঙ্গে সঙ্গে একটা অস্ফুট গ�োঙানি বার হয়ে এল ওর মুখ দিয়ে ! আবছা অন্ধকারে উমার নিথর নিস্পন্দ দেহটা পড়ে আছে ! ....চ�োখ দুট�ো বিস্ফারিত.....ঠিক যেমন ছিল সেই রাতে! একটা আর্ত চিৎকার করে উঠে দাঁড়াতেই আবার সাঁড়াশির মত হাত দুট�ো পিছন থেকে জাপটে ধরল লীনা কে। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে লীনা দেখল যে আর�ো একটা কাঠের মত শক্ত হাত চেপে ধরেছে ওর পা....

36 আল�োক

শারদীয়া 2022

উমা ! সেই নিথর দেহটা কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসেছে ! ঠ�োঁটের ক�োণে একটা অদ্ভূত হাসি.... চিৎকার করছে লীনা ...... " না, কিছু তেই তু মি বেঁচে থাকতে পার�ো না ! কিছু তেই না ! " ওর পা আর�ো সজ�োরে চেপে ধরছে উমা.... চ�োখের দৃষ্টি মারাত্মক! ভয়ে , উৎকণ্ঠায় লীনা ডু করে ওঠে আবার...." প্লিজ ছেড়ে দাও ! আমি মারতে চাইনি ত�োমাকে ! প্লিজ ! আর ক�োন�ো উপায় ছিল�োনা....." পিছন থেকে কানে এল ভারী পুরুষ কন্ঠ..... " পালাচ্ছেন কেন ব�ৌদি ! ধরা যখন পড়ে গেছেন সত্যি কথা বলুন .... আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল। ইচ্ছে করেই আপনাদের এনেছিলাম এখানে ! ইনফ্যাক্ট আমি জানতাম পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এই কেস টা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল ! " পিছনেই দাঁড়িয়ে বিনয়। ওর সঙ্গে রয়েছেন একজন পুলিশের প�োশাক পরিহিত ভদ্রল�োক। ভয়ে উৎকণ্ঠায় কাঁপতে কাঁপতে দুহাতে মুখ ঢেকে মাটিতে বসে পড়েছে লীনা ! পাগলের মত চিৎকার করছে সে...." আমি খুন করতে চাইনি ! ....." কানে এল...." আপনাদের মত চতু র অপরাধীদের ধরার জন্য ফাঁদ পাতা

ছাড়া আর ক�োন�ো উপায় ছিল�োনা। এই মেয়েটি উমা নয়, ওর যমজ ব�োন রাধা। আপনাকে ও নানা ভাবে ভয় দেখিয়েছে। আর মাধবী আসলে পুলিশের ইনফর্মার। ওই আপনাকে পুকুরে ধাক্কা দিয়ে লুকিয়ে পড়েছিল।" ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে লীনা ...... বিনয় বলে উঠল.... "আমাকে ওদের সহয�োগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ... ইনি ল�োকাল থানার ইন্সপেক্টর মিস্টার জয়ন্ত দত্ত। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু । আপনার ফ�োন পেয়ে অমিতাভ ফিরে আসবে নিশ্চই। আসুক বা না আসুক আশা করা যায়,খুব তাড়াতাড়ি ওকে এরেস্ট করা সম্ভব হবে ।......" পরের দিন প্রায় সব খবরের কাগজের পাতায় জ্বলজ্বল করে উঠল এক চাঞ্চল্যকর খবর ..... " মূক ও বধির এক কিশ�োরীর ওপর চরম নির্যাতন করে তাকে বিষ প্রয়�োগে হত্যা করা হয়েছিল সুক�ৌশলে । সেই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের আসল অপরাধীরা অবশেষে গ্রেপ্তার হল ডু য়া নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে......"

ক্যাফে- অ্যান্ড-বার মিলন গাঙ্গুলী / নরওয়ে

গাড়িটা এমন জায়গাতে নষ্ট হল যে রাগে দুঃখে নিজের পাছায় নিজেরই লাথি মারতে ইচ্ছে করল ইউসুফের। ব্যাপারটা সম্ভব না তাই বিরত থাকল। কী করা যায় এখন? জায়গাটা অচেনা। সন্ধ্যাও হয়ে গেছে বেশ কিছু ক্ষণ হল। পাহাড়ী জায়গাতে হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে যায়, ব্যাপারটা জানত না ইউসুফ। এখন জানল। তাতে কী লাভ? গাড়িটার উপর নিজের সব বিদ্যা প্রয়োেগ করল। না, গাড়িটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু তেই স্টার্ট নেবে না। ইউসুফের উপর ক�োনও পুরান�ো রাগ আছে ব�োধ হয় ! চারদিকে পাহাড় আর অচেনা গাছপালা।

37 আল�োক

শারদীয়া 2022

ক�োনও বসতি নেই। থাকার কথাও না। আরও মাইল পাঁচেক যাবার পর ল�োকালয় পড়বে। সেটাই রুমানিয়ার প্রথম গ্রাম। শীত লাগছে দারুণ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। গাছপালাগুল�ো জবুথবু ু হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওদেরও কিছু করার নেই। চারদিকে অন্ধকার। আকাশে কয়েকটা তারা। তাতে আবছা দেখা যাচ্ছে চারপাশটা। ক�োথাও কেউ নেই। শুধু শীতের হাওয়ায় টু পটাপ করে গাছের শুকন�ো পাতা ঝরে পড়ছে। একটা বা দুট�ো। ভেউ ভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ইউসুফের। হয়ত�ো তাই করত। এমন সময় আল�োটা দেখতে পেল। ডু বন্ত

মানুষ হাতের কাছে পেল্লায় কাঠের একটা তক্তা পেলে ব�োধ হয় এমন খুশিই হয়। কিংবা, রাস্তার ভিক্ষু ক যখন ডাস্টবিনের মধ্যে পেয়ে যায় এক লক্ষ টাকা। আনন্দে চিৎকার করে ফেলল ইউসুফ। ওই ত�ো সামনেই দেখা যাচ্ছে, মিটিমিটি হলুদ রঙের আল�োটা বেশি দূরে নয়। আবছা বাড়ির কাঠাম�োটাও দেখা যাচ্ছে। এতক্ষণ দেখতে পায়নি কেন কে জানে। উত্তেজনার চ�োটেই হয়ত�ো! গাড়িটা থাকুক এখানেই, ভাবল ইউসুফ। তারপর দ্রুত হাতে ব্যাক প্যাকারটা তু লে নিল গাড়ির ভেতর থেকে। দরকারি সব জিনিসপত্র আছে ব্যাগে। পাসপ�োর্ট, ট্রাভেলারস চেক, টাকা পয়সা। কাগজ-কলম। আরও দরকারি

জিনিসপত্র। ব্যাগটা কাঁধে ঝু লিয়ে হাঁটা ধরল আল�ো বরাবর। কিছু ক্ষণ হাঁটার পরই আরও স্পষ্ট হয়ে গেল বাড়ির কাঠাম�োটা। পাথরের বীম আর কাঠের তৈরি বাড়ি। ডিজাইনটা পুরান�ো, ইউরােপের আর সব সাধারণ বাড়িঘরগুল�োর মতই। বাড়ির বাইরে একটা কাচের লণ্ঠন ঝু লছে। সেটাই দূর থেকে দেখতে পেয়েছে ইউসুফ। দরজার উপরে একটা সাইনব�োর্ডও ঝু লছে। কাঠের ব�োর্ড। রঙ চটে গেছে। তারপরও ক্যাফে এ‍্যান্ড বার’ লেখাটা পড়তে পারল সে। কী ক্যাফে অ্যান্ড বার সেটা পরিষ্কার ব�োঝা গেল না। রঙ চটে গেছে কবে কে জানে ! ‘মেঘ না চাইতেই জল।’ এই সব বাগধারা যেই বানিয়ে থাকুক বড় বেশি জ্ঞানগর্ভ বাক্য এটা। সারারাত পাহাড়ী পথে, অন্ধকারে, গাড়ির মধ্যে বসে থাকার চেয়ে একটা ক্যাফে এন্ড বারে বসে রাত কাটান�ো অনেক ভাল। ভেতরে নিশ্চয় আরও মানুষজন থাকবে। একজন ম�োটর মেকানিকও পাওয়া যেতে পারে। উফ। ভাগ্য ব�োধ হয় এটাই। এখন দরকার গরম ক�োনও পানীয়। যা ঠাণ্ডা বাইরে। শক্ত পাথুরে পথ বেয়ে উঠে গেল ক্যাফেটার সামনে। কাঠের বিশাল দরজা। বন্ধ। কাচের অস্বচ্ছ ঘ�োলাটে জানালার ভেতরে আল�ো দেখা যাচ্ছে। পিনের মত আল�ো। বারান্দাতে দুট�ো চেয়ার আছে। শূন্য। শীত কম থাকলে ল�োকজন হয়ত�ো বসে এখানে। নীচের দিকে ফিরে তাকাল ইউসুফ। দূরে ওর গাড়িটা দেখা যাচ্ছে ছ�োট্ট একটা গুবরে প�োকা মত। হাতের তালু দিয়ে ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। মাঝারি আকৃতির একটা কামরা। বড় জ�োর ছয়টা টেবিল। প্রতিটা টেবিলের সামনে চারটা করে চেয়ার। টেবিলের উপর রূপালী রঙের ম�োমদানি। তাতে

38 আল�োক

শারদীয়া 2022

ম�োম জ্বলছে। চেয়ার টেবিলগুল�ো সবই কাল�োরঙের। ভিক্টোরিয়ান যুগের। বেশ কয়েকজন খদ্দের বসে আছে। সামনে পেতলের পানপাত্র। একপাশে দেয়াল জ�োড়া বার। হাজার পদের ব�োতল ভর্তি। একজন র�োগা মধ্যবয়স্ক ল�োক ন্যাকড়া দিয়ে পরিষ্কার করছে বারের কাউন্টারটা। দরজা খুলে যাওয়ায় সবাই ফিরে তাকাল ইউসুফের দিকে। শান্ত একঘেয়ে দৃষ্টি ! কারও চ�োখে ক�োনও ক�ৌতু হল নেই। কী করবে ঠিক বুঝতে না পেরে ব�োকার মত হাসল সে। মুখে বলল, শুভ সন্ধ্যা।’ উত্তরে দু’একজন মাথা ঝাকাল। ব্যস এই-ই। তারপর সবাই মুখ ফিরিয়ে যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খুব একটা অবাক হল না ইউসুফ। ইউরােপের প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক গ্রামের মানুষই এরকম। নতু ন ল�োকজনের সাথে প্রথম পরিচয়ে সহজ হতে চায় না। কেন কে জানে ! অবশ্য কুসংস্কারপূর্ণ এই মানুষগুলােকে দ�োষ দিয়ে লাভ নেই। হাজার বছর ধরে বিদঘুটে সব ল�োকগাথা, কাহিনি আর রক্ত হিম করা উপাখ্যান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই জনপদ গুল�োতে। অচেনা ল�োকটা মাত্রই আগন্তু ক। রহস্যময় ! বিপজ্জনক। শুধু র�োগা বারটেন্ডার ল�োকটা ওর দিকে তাকিয়ে হাসির মত একটা ভঙ্গি করল। তাও ভাল। স�োজা বারের সামনে এগিয়ে গেল ইউসুফ। কাঠের লম্বা কয়েকটা টু ল রয়েছে সামনে। সবগুল�োই খালি। একটা টেনে নিয়ে বসল সে …‘বাইরে খুব ঠাণ্ডা।’ পেশাদারি ভঙ্গিতে আলাপ জমান�োর চেষ্টা করল বারটেণ্ডার। ‘হঁ্যা।’ সায় দিল ইউসুফ। ভাগ্য খারাপ ! আমার গাড়িটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেছে।’ ‘এই এলাকায় আগে দেখিনি আপনাকে কখনও।’ হঁ্যা। আমি টু রিস্ট।’ ব্যাখ্যা করল ইউসুফ।

ঠিক টু রিস্টও না। আমি একজন লেখক। ইউরােপের প্রত্যন্ত গ্রামগুলােতে যে সব ভয়াল কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে সেগুল�ো সংগ্রহ করে লিখছি আমি। আসলে আমি একজন হরর গল্প লেখক। তিনটে বই বেরিয়েছে আমার। সবই হরর গল্পের। এবার প্রচলিত ঘটনাগুল�ো অবলম্বন করে লিখতে চাই।’ .. ‘যেমন? অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বারটেণ্ডার। কেমন ব�োকা ব�োকা দেখাচ্ছে বেচারার চেহারা। র�োগা মুখটাতে গ�োঁফজ�োড়া ঝু লে আছে। হাসল ইউসুফ। বলল, “রুমানিয়া আর তার আশপাশের গ্রামগুল�োের বাসিন্দারা নাকি আজও ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে, সত্যি নাকি?’ মাথা নাড়ল বারটেণ্ডার। চেহারাতে বিরক্তির ছাপ। ‘আরে ধ্যাত !’ বলল সে। এসব আবার আছে নাকি? ভ্যাম্পায়ার, রক্তচ�োষা, সারাদিন মরে থাকে, সন্ধ্যার পর কবরস্থানের কফিন খুলে বেরিয়ে আসে ! যত সব ফালতু গল্প।’ ‘তাই নাকি !’ অবাক হল ইউসুফ। ‘আমি ত�ো শুনেছি, এই এলাকার মানুষজন আজও কাঁচা রসুন খায় ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে বাঁচার জন্য। আমি নিজেও সের তিনেক রসুন নিয়ে এসেছি। গাড়িতে রয়ে গেছে অবশ্য।’ বিরস মুখে ইউসুফের কথাগুল�ো শুনল বারটেণ্ডার। সম্ভবত ইউসুফকে পাগল ভাবছে। আশপাশের টেবিলের নরনারীগুল�ো পর্যন্ত কান খাড়া করে বসে আছে। শুনছে ওরা ইউসুফের কথাগুল�ো। ‘ভ্যাম্পায়ারের গল্প আমরাও শুনেছি ।’ বলল বারটেণ্ডার। তবে ওরা যদি থাকেও আমাদের ক�োনও ক্ষতি করেনি কখনও। কাজেই ওরা থাকলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের পাশের গ্রামের মানুষ মাঝেমধ্যেই তাদের মৃত-আত্মীয়স্বজনদের কফিন খুলে হৃৎপিণ্ডের মধ্যে

কাঠের ক্রু শ ঠু কে দেয়, যাতে ভ্যাম্পায়ার না হতে পারে । যত্তোসব ফালতু কুসংস্কার। মানুষ মঙ্গলগ্রহে কুমড়ার চাষবাস করার চিন্তা-ভাবনা করছে আর এরা কী না…! কথাটা শেষ করল না বারটেণ্ডার। পাছে ইউসুফ মনে দুঃখ পায়। সমঝদারের মত মাথা নাড়ল ইউসুফ। নাহ। বারটেণ্ডারটাকে পছন্দ হল তার। বেশ যুক্তিবাদী মানুষ। অজ পাড়াগাঁয়ে থেকে থেকে মনটাকে কুসংস্কারের খামার বানিয়ে ফেলেনি। শুধু অবাক হল�ো এই ভেবে এখনও ল�োকটা ওকে ক�োনও পানীয় পরিবেশন করেনি কেন? এমন কী জানতেও চায়নি কিছু লাগবে কিনা ! আজব ত�ো। ‘আপনার এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে?’ বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করল ইউসুফ। না, আগে ছিল। এখন নেই। খদ্দের পাই না তেমন। সবাই শুধু পান করতেই আসে।’ দিন তা হলে ক�োনও পানীয়। যেটা এই এলাকায় বিখ্যাত। আপনি বারটেণ্ডার, আপনি ব�োধ হয় জানেন, সব জায়গাতেই বিখ্যাত পানীয় থাকে, যা ওই দেশের বা এলাকার ঐতিহ্য…বা ব্রাণ্ড নেমের মত। আমাদের দেশের মানুষ ভাত পচিয়ে মদ বানায়। ওইটাই ঐতিহ্য। ক্যারিবীয়ান দ্বীপগুলােত নারকেলের মদ বা আফ্রিকাতে আখ পচিয়ে মদ…জানেন ব�োধ হয় এসব।’ হাসল বারটেন্ডার। এরকম জ্ঞানী খদ্দের পেলে কার না ভাল লাগে। তার উপর লেখক মানুষ ! মাটির একটা সুরাই থেকে পেতলের পান পাত্রের মধ্যে লাল রঙের মদ ঢালল বারটেণ্ডার। তারপর সেটা যত্নের সাথে এগিয়ে দিল ইউসুফের দিকে। মুখে হাসি । “নিন, স্যর। আপনার ভাল লাগবে।’ বলল। পেতলের পাত্রটা হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে

39 আল�োক

শারদীয়া 2022

নিল ইউসুফ। ইউর�োপের এই নিঝু ম এলাকা গুল�োতে এখনও কাচের পাত্র জনপ্রিয় হয়নি। ভাবতেই হাসি পেল। গ্লাসের ভিতরে কালচে লাল রঙের পানীয় আঙুরের মদ। ঠাণ্ডা পাহাড়ি এই জায়গাগুল�োতে আঙুরও হয়। অগুনতি। পানপাত্রটা হাতে নিয়ে ভাবল ইউসুফ বারটা এত ময়লা কেন। এত ধূলার স্তপ। মাকড়সার জাল । এত কম খদ্দের হলে টিকে আছে কীভাবে? এক চু মক ু মদ মুখে দিয়ে টু প করে গিলে ফেলল ইউসুফ। সাথে সাথেই চমকে উঠল। ওয়াক থুঃ করে বমি করার দশা হল�ো ওর। তড়াক করে উঠে দাঁড়াল টু ল থেকে। ঘেন্নায় বিকৃত হয়ে গেছে চেহারা। রাগে কাঁপছে থর থর করে। হাতের ধাক্কায় উল্টে পড়ে গেছে পেতলের পানপাত্রটা। ‘এটা কী ধরনের রসিকতা?’ গম গম করে উঠল ইউসুফের কণ্ঠস্বর । মানে কী এসবের? কাঠের বারের উপর সুন্দর তৈলচিত্রের মত ডিজাইন করে ছড়িয়ে পড়েছে তরলগুল�ো যেটা দিয়ে ভর্তি ছিল ইউসুফের পানপাত্রটা। আঙুরের মদ নয়। তাজা রক্ত। তরমুজের রসের মত তরল লাল রক্ত। আঁশটে । ঘিনঘিনে। ‘কী মানে এই ফাজলাম�োর?’ আবার চিৎকার করে উঠল ইউসুফ। ঘেন্নায় বমি – আসছে ওর। হঠাৎ খেয়াল করল ইউসুফ কামরার ভিতরের সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সবাই যেন দেখছে ক�োনও মঞ্চ নাটক। শুধু তাই নয়, সবাই যেন কীসের জন্য অপেক্ষাও করছে। র�োমহর্ষক ক�োনও শেষ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছে ওরা সবাই । ‘দুঃখিত, স্যর।’ দুঃখীমানুষের মত গলায় বলল বারটেণ্ডার র�োগা ল�োকটা। সত্যি বড় করুণ লাগছে বেচারার চেহারা । ‘কিন্তু …’ একটু থেমে হতাশ গলায় আবার

বলল বারটেণ্ডার, আমাদের আর ক�োনও উপায় নেই, ‘স্যর। এই একটা জিনিসই আমরা পান করতে পারি। রক্ত । এটা খেয়েই বেঁচে আছি আমরা।’ এই প্রথম হাসল ল�োকটা। কামরার ভিতরের কমলা রঙের লণ্ঠনের আল�োতে ঝিক করে উঠল তার মুখের দুই পাশের বড় বড় দাঁত দুট�ো। তীক্ষ্ণ, সাদা, সূঁচাল, যা শুধু পশুদের থাকে। আতংকে এক পা পিছিয়ে এল ইউসুফ। পায়ের সাথে টু ল বেধে চিৎ হয়ে পড়ে গেল সে শক্ত পাথরের মেঝেতে। তাকিয়ে দেখল কামরার ভেতরে বসে থাকা নারী-পুরুষগুল�ো সবাই ওর দুরাবস্থা দেখে হাসছে। সবার মুখের দুই ক�োণ দিয়ে ঠেলে বেরিয়ে এসেছে সাদা বড় বড় শ্বদন্ত । ভয়াল। বীভৎস ! সবাই এক সাথে ঝট করে উঠে দাঁড়াল যার যার চেয়ার ছেড়ে । এক ঝাঁক বাদুড়ের মত উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা ইউসুফের উপর । সবার লক্ষ্য ওর গলার দিকে।

দু নম্বর প্ল্যাটফর্ম শরণ্যা বটব্যাল

গভীর রাত, ঝড়ের বেগে সাঁ, সাঁ করে ছু টে চলেছে নামখানাগামী ট্রেন। স�ৌমেনবাবু কখন যে খবরের কাগজে চ�োখ ব�োলাতে ব�োলাতে চ�োখে চ�ৌক�োনা ফ্রেমের ম�োটা কাঁচের চশমা এঁটেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন! অবশ্য সারাদিনের ক্লান্তির পর ওনার মত প্রৌঢ ব্যক্তির পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। রবিবার থাকায় ট্রেনের ভিড়ও সেদিন হাল্কা ছিল। ওনার গন্তব্যস্থল ছিল দক্ষিণ বারাসত। স�ৌমেনবাবু পেশায় অধ্যাপক, কর্মসূত্রে কলকাতা শহরে বসবাস। কলকাতায় থাকলেও ওনার ভিটেমাটি সব গ্রামেই। অবশ্য দক্ষিণ বারাশত জায়গাটি শহরের থেকে ক�োন�ো দিক থেকেই কমতি যায় না; শুধু নামটাই যা মফ:স্বল!

40 আল�োক

শারদীয়া 2022

স্টেশন আসার বহুক্ষণ আগেই স�ৌমেনবাবু ঘুমের ঘ�োর কাটিয়ে দরজার কাছে কিছু টা এগিয়ে গেলেন। দূর থেকে রাতের অন্ধকারে আবছা দেখা যাচ্ছে ঝাউগাছের সারি আর তারই একফাঁক দিয়ে ধ্রুবচাঁদ হালদার কলেজ, যেখান থেকে তিনি স্নাতক স্তরে প্রথম বিভাগে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কৈশ�োরের স্মৃতি যেন আর�ো একবার দ�োরগ�োড়ায় এসে হাতছানি দিতে লাগল। স্টেশনে ট্রেন এসে গেলে নামার আগে কিঞ্চিৎ থমকালেন তিনি। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলেন- ' সর্বনাশ! ট্রেন ত�ো দু নম্বর প্ল্যাটফর্মে দিয়েছে। ট্রেন বেশ উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে, এবার কী হবে!' এত

ভয় হত না যদি না হাঁটুতে বাতের ব্যথাটা বাড়ত হঠাৎ করে। অথচ গাড়ির তেলের যা আকাশছ�োঁয়া দাম! গাড়ি থাকলেও এখন বিশেষ প্রয়�োজন ছাড়া সেটি ব্যবহার করা হয় না। এককথায় শুধু শুধু হাতি প�োষা। নামতে যাবেন এমন সময় নীচে থেকে একটি হাত এগিয়ে এল। গুরুগম্ভীর গলায় কে যেন বলে উঠল- 'আমার হাতটা ধরে নীচে নেমে আয় সাবধানে।' সাদা ধবধবে ধুতি আর পাঞ্জাবি পরিহিত এক ছিপছিপে চেহারার ভদ্রল�োক। চিনতে অসুবিধা হল না। ' আরে অনুব্রত যে!'' চিনতে পেরেছিস তাহলে বাল্যকালের বন্ধুকে!' ' না চিনে উপায়! সেই ছ�োট�োবেলা থেকে বরাবর সকলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে

দেওয়া সেই বন্ধুটাকে চিনব না?' দুজনেরই বাড়ি এবং পড়াশ�োনা দক্ষিণ বারাসতে, তারপর বড় হয়ে কর্মসূত্রে যে যার মত আলাদা হয়ে যাওয়া। বিশেষ য�োগায�োগ করে ওঠা হয়না সময়ের অভাবে। যাইহ�োক, স্টেশন চত্বরে কিছু টা আল�ো আঁধারি থাকায় বন্ধু র মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না। ব্যাগ হাতড়ে স�ৌমেনবাবু সবেমাত্র টর্চলাইট বের করতে যাবেন। বাদ সেধে বন্ধু বলে উঠলেন- ' আরে আবার টর্চ লাইট জ্বেলে কি নতু ন কনে বউ এর মুখ দেখবি নাকি!' তারপর দুজনে গল্প আর হাসিঠাট্টা করতে করতে স্টেশন চত্বর পার করে অবশেষে যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। পরদিন কাকভ�োরে উঠে, চায়ের

কাপ হাতে নিয়ে আবার স�ৌমেনবাবু আগের দিনের কাগজের খবরাখবরেই মন�োনিবেশ করলেন। হঠাৎ চমকে উঠে হাত থেকে কাগজের পাতাগুলি মাটিতে পড়ে সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় ছড়িয়ে গেল, চায়ের কাপটিও হাত থেকে পড়ে ভেঙে টু কর�ো টু কর�ো হয়ে গেল। ঠক ঠক করে সারা শরীর কাঁপতে লাগল। ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লেন তিনি। কাগজে লেখা ছিল- "আজকের বিশেষ বিশেষ খবর- গতকাল রাতে অর্থাৎ শনিবার অনুব্রত চ�ৌধুরী নামে দক্ষিণ বারাসতের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। দু নম্বর প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত নীচু হওয়ায় ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার পর এলাকায় সাময়িক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীদের

কথায়- বহুদিন থেকেই দক্ষিণ বারাসত স্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্ম অনেকটা নীচু হওয়ায় ট্রেন থেকে নামতে এবং উঠতে খুব অসুবিধা হত। অনেক অনুর�োধ এবং তদারকির পর কিছু দিন হল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মটি উঁচু করার কাজ কিছু টা এগ�োলেও দু নম্বর প্ল্যাটফর্মে এখনও ক�োন�ো কাজ এগ�োয়নি। এখন দেখা যাক এইরকম একটি ভয়াবহ ঘটনার ্ ক্ষের টনক নড়ে পরও উর্দ্ধতন করতৃপ কিনা।" মনে দ�োলাচল নিয়ে বিছানায় চু পচাপ বসে রইলেন স�ৌমেনবাবু, সারা শরীর কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। তাঁর বিস্ফারিত চ�োখ দুটি যেন এখনও হাওয়ায় তছনছ হয়ে যাওয়া খবরের কাগজের পাতাগুল�োতেই আটকে আছে।

আসছে... আল�োক পরিবার অ্যাওয়ার্ড

41 আল�োক

শারদীয়া 2022

প্রতিচ্ছবি রূপালী মান্না প্রকৃতির সবুজ শ্যামল স�ৌন্দর্য্য বরাবরই মুগ্ধ করে অদিতিকে। হাসিখুশি, মিষ্টভাষী,প্রান�োচ্ছল মেয়েটি ছ�োট্ট থেকেই প্রকৃতির প্রতিটি আদুরে আলাপ মেখে নেয় চরম নিঃসঙ্গতায়। চরম নিঃসঙ্গতায় কেন বললাম ? প্রকৃতিকে নিজের করে পেতে যে ব্যক্তি অনুভব প্রয়�োজন তা হয়ত�ো সঙ্গীদের ভিড়ে ফিকে হয়ে যায় । আসলে, প্রকৃতি প্রেম ও সঙ্গী প্রেমের অনুভব হয়ত�ো একই সঙ্গে হয়না,তাই। বছর ছাব্বিশের অদিতি এখন অপেক্ষারত। না, ক�োন�ো সুপুরুষ, রাজপুত্র জীবনসঙ্গীর জন্য না। অপেক্ষারত, পঙ্গু বাবার দায়ভার এবার মায়ের কাঁধ থেকে নিজের কাঁধে নেওয়ার

42 আল�োক

শারদীয়া 2022

জন্য। অপেক্ষারত,ভাইকে ফার্মাসিস পড়ায় খরচ জ�োগাতে সাহায্য করার জন্য। অপেক্ষারত.......... এসব সাত পাঁচ চিন্তা করতে করতে যখন আনমনে একটার পর একটা, কাশের শিষ ছিঁড়ে ক্যানেলের জলে ফেলছে এমন সময় অনির্বান কাকা সাইকেল দাঁড় করিয়ে শুরু করল�ো তার বাক্যবাণ...... " কী রে ক্যানেলের ধারে কাশবনে কী করছিস ? মা দুগ্গে সাজছিস নাকি ? "

বুঝি ?" তা এবার একটা বিয়ে টিয়ে কর বুঝলি ? ত�োরও একটা গতি হবে। আর জামাই ও শ্বশুড়বাড়ির ল�োক ভাল�ো হলে ত�োদের ফ্যামিলিটারও হিল্লে হবে ।"

অদিতি হেসে বলল�ো - " হুম কাকা বুঝলাম, মাথায় রাখব�ো ত�োমার কথাটা।" তা তু মি ক�োথায় যাচ্ছিলে? ত�োমার কাজের দেরি হয়ে যাচ্ছে না ত�ো আমার ভাল�ো ভাবতে গিয়ে? ( মুচকি হেসে )।" অদিতি মৃদু স্বরে বলল�ো -" না কাকা, অনির্বান কাকা বলল - " আমি এমনি বসে আছি। " যাব�ো একটু রিন্টু প্রামানিকের বাড়ি। বার�োয়ারি দুর্গাপূজায় পঞ্চাশ হাজার " তাই বল ! আমি ভাবলাম দুগ্গে হলি টাকা রিন্টু র একাউন্টে ঢু কবে। সরকার

ঘ�োষণা করেছে ত�ো। এখন�ো ত�ো পুজ�োর অনেকগুল�ো দিন বাকি আছে। ভাবছি ..... মন্দিরের সামনে আটচালাটা বানিয়ে নেব। তারপরও যদি কিছু পয়সা বাঁচে আর সামনের বার যদি আর কিছু টাকা দেয় তাহলে ব�োধন ঘরটা করে দেব�ো বুঝলি ? এই হল পরিকল্পনা। " অদিতি মনে মনে বলল- " মা ব�োধন কি শুধু ত�োমার ? আর আমাদের কেবল বিসর্জন? " অস্ফুটে কথা শেষ না হতেই অনির্বাণ কাকা বলল" আসিরে, আর আমার কথাটা মাথায় রাখিস ওসব চাকরি-বাকরি কিছু হবে না বুঝলি ? শুধু শুধু বয়স বাড়িয়ে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। " অদিতি মৃদুস্বরে বলতে গেল- " না কাকা পরীক্ষা ত�ো ভাল�োই দিয়েছি কিন্তু নানা

জটিলতায়....." " আরে থাম থাম, কত দেখলাম ! ওরম মনে হয়, হে হে...আর তাছাড়া ত�োর বাবা,মায়ের দিকটাও ত�ো দেখতে হবে নাকি? " সবুজ শ্যামল গ্রাম বাংলার মাঠ। শরতের আকাশে ভাসমান নরম তু ল�োর মেঘ। মৃদুমন্দ বাতাস ক্যানেলের জলে মাদকতা ছড়ায় আবার কখন�ো কাশবন লজ্জায় পড়ে মাটিতে। এমন সময় অভিমানী বিকেল কে ঘুম পাড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। প্রকৃতির স�ৌন্দর্য্য আনমনে কয়েক সেকেন্ড উপলব্ধি করতে করতে শেষ কাশ টা গ�োড়া শুদ্ধু টেনে ছু ঁড়ে, ক্যানেলের জলে ছু ড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় অদিতি। দুহাত মেলে চিৎকার করে বলে "যেখানে নারী শক্তির প্রতীকরূপে পূজিত

হয় মা, যেখানে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা, যেখানে চলে নারীর শাসন, রাজ্যপাটের ক্ষমতা, যেখানে অজস্র কবি নারীবাদী কবিতা লিখে লাভ করেন একাধিক সাহিত্য সম্মান , সেখানে বছর ছাব্বিশের বি.এড করা যুবতীকে বেকারত্বের ব�োঝা কাঁধে নিয়ে চলতে হয়। খুঁজতে হয় ক্লাস এইটে ফেল করা অনির্বাণ কাকুর মুখের " গতি " শব্দের মানে কী ? শরতের আকাশ, বাতাস, শিউলি কিংবা কাশফু লে ত�োমরা আবাহনের সুগন্ধ পেতেই পার�ো সমাজ, আমার চ�োখে শুধু বিসর্জনের প্রতিচ্ছবি।"

কলকাতা বইমেলায় প্রকাশ করুন আপনার একক বই পাণ্ডুলিপি নেয়া শুরু হয়ে গেছে।

9614993137, [email protected] 43 আল�োক

শারদীয়া 2022

সহস্র আল�োর ঝলকানি দীপক আঢ্য আজ অফিসে আসা ইস্তক মনটাকে কিছু তেই নিজের বশে আনতে পারছে না অনির্বাণ। মাঝেমধ্যে এমন যে হয় না তা নয়। তবে আজ যেন অতীতের সকল রেকর্ডকে ভাঙ্গার পণ করেছে তার এই ‘মন’ নামক সত্ত্বাটি। অবশেষে ফার্স্ট হাফ শেষে অফিস থেকে প্রায় পালিয়েই বেরিয়েছে সে। আজ পাঁচদিন ধরে একই হারে গ্রীষ্মের দহন চলছে। বৃষ্টির ছিটেফ�োঁটাও নেই। কালবৈশাখীর ক�োনও আগাম বার্তা দেয়নি হাওয়া অফিস। রাস্তায় বেরিয়ে তার একবার মনে হল, অফিস থেকে না বেরুন�োই ভাল ছিল। কিন্তু একবার বেরিয়ে এলে আর ফিরে যাওয়া ভাল দেখায় না। বিশেষ করে তার পাশের টেবিলের

44 আল�োক

শারদীয়া 2022

সুমনবাবু আর শিখাদিকে সে যখন বলেই এসেছে, যাচ্ছি। স্বাস্থ্যভবনে তার বাইশ বছর কেটে গেল। ঠিক যে বয়সে সে এই চাকরিতে ঢু কেছিল তার সমান। এখনও তার পেটাই চেহারা। ফর্সা। এককথায় সুপুরুষ। হাতের ঘড়ির দিকে তাকাল অনির্বাণ। একটু পা চালালেই দুট�ো দশের ট্রেন সহজে ধরা যাবে। এইসময়ে ভিড়ও থেকে বেশ কম। চারটেয় প�ৌঁছন�ো যাবে বসিরহাট। কিন্তু সেখানে প�ৌঁছিয়ে হবে টা কী? তার চেয়ে এই দুপুরে বারে গিয়ে যদি একটা চিলড্ বিয়ার মারা যেত! নাহ! নিজের ভাবনার সঙ্গে একমত হতে পারে না সে। তার চেয়ে…। পকেট থেকে ম�োবাইল ফ�োন বের করে

কন্টাক্ট লিস্ট থেকে পর্ণার ফ�োন নম্বর বের করল সে। পর্ণা অশ�োকনগরে মার্কেটের ওপরে মেয়েদের একটা এক্সক্লুসিভ স্টোর চালায়। তিন-চারজন কাজ করে সেখানে। ফলত সকল সময় তার স্টোরে না থাকলেও চলে। অনির্বাণের চ�োখে বেশ গ�োলমেলে চরিত্রের মহিলা এই পর্ণা। ডিভ�োর্সি কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক একে বারে ছিন্ন হয়নি। লিভ টু গেদার করে তারই বন্ধু অল�োকের সঙ্গে। বন্ধু র বন্ধু হওয়ার সুবাদে তার সঙ্গে সম্পর্কও বেশ মধুর। বরং বলা ভাল�ো বেশ ঘনিষ্ঠ। দ�োষগুণে অল�োক ছেলেটি খারাপ না। পর্ণার শরীরী গঠন ঠাঁটঠমক যে ক�োনও পুরুষেরই নজরে লাগার কথা। অবশ্য সেসব পুরুষ যদি অনির্বাণের মত মুক্ত

উদার হয়। তার জীবনেও নারী কম আসেনি। কিন্তু ক’জনইবা পেরেছে তার বাসনাকে উম্ল মু করতে, তাকে উদ্রিক্ত করতে? ঘরে আট বছরের ছেলে আর চ�োদ্দ বছরের স্ত্রী আছে তার। পরিবারে ক�োনও অভাবই সে রাখেনি। কিন্তু পরিবার পরিবারের মত হয়। সেখানে অনেক বন্ধন- অনেক দায়িত্ব। অনির্বাণ সে সকল দায়িত্ব যথাযথ পালন করে বলেই বিশ্বাস করে। কিন্তু সে নিজের কাছে কখন�ো কেবল চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকা মানুষ হতে চায়নি। সে যেমন জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভ�োগ করতে চায়, তেমনটা ঘর বন্দী হয়ে পায় কই? সেখানে তার স্ত্রীর কেবল সংসার, ছেলে, তার পড়াশুন�ো এসব নিয়েই অষ্টপ্রহর। অনির্বাণের জীবনেসমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার ইচ্ছে বা ক�ৌতূ হল ক�োনটাই সেখানে তার নেই। এ নিয়ে কী তার নিজের মনে ক�োনও খেদ আছে? অনির্বাণের ভাবনা বিস্তৃত হয়। কিন্তু বুঝতে পারে না সে। হাতে ধরে থাকা ফ�োনে পর্ণা নামটি জ্বলজ্বল করছে। কলার বটনে চাপ দিয়ে দুবার রিং হতেই ওপার থেকে পর্ণার গলা শ�োনা গেল, কী ব্যাপার? ভু ল করে ফ�োন করেছ নাকি? না অন্য ক�োনও পর্ণাকে ফ�োন করতে গিয়ে আমাকে ফ�োন করে ফেলেছ? অনির্বাণ জানে, পর্ণাকে আগডু মবাগডু ম কিছু বুঝিয়ে ম্যানেজ করা তার কর্ম নয়। ফলত সে উত্তর দিল না পর্ণার কথায়। মেয়েছেলের সঙ্গ পাওয়া অনির্বাণের বাঁ হাতের খেল। ‘চল�ো যাই’ বললেই এলডিসির স্বরূপা, মিতালী এই মাঝ-দুপুরেই তার সঙ্গে যাওয়ার জন্যে বেরিয়ে পড়বে। তারপর হয় আইনক্স, না হয় প্রিন্সেপঘাট সঙ্গে ক�োন�োএক কেবিন বুক করে লাঞ্চ। গ�োচ্চারখানিক টাকাপয়সা খরচ ছাড়া তার আর সেখানে লাভটাই বা কী? এই প ৃথিবীতে যা

45 আল�োক

শারদীয়া 2022

সহজলভ্য তার প্রতি ত�ো কারুর আকর্ষণ থাকার কথা না। ওরা সকলেই তার কাছে অতিক্রম্য। বরং পর্ণা সেক্ষেত্রে অনেক বেশি অনতিক্রম্য। দুরূহ। প্রতিপক্ষ কঠিন হলেই ত�ো খেলতে মজা। অনির্বাণ কথার জাল না ছড়িয়ে পর্ণাকে জিজ্ঞেস করল, বিকেলে ফাঁকা আছ�ো কিনা বল�ো। আর যদি ফাঁকা থাক�ো ত�ো আমার সঙ্গে ঠিক চারটেয় বেরুতে পারবে? ত�োমাকে ত�োমার স্কুটিটাও সঙ্গে আনতে হবে কিন্তু । আর কিছু ? জিজ্ঞেস করল পর্ণা। না। বেড়াতে যাব। উত্তর দিল অনির্বাণ। দু-এক সেকেন্ড সময় নিয়ে পর্ণা বলল, আচ্ছা। ** ঘড়িতে তিনটে পঞ্চাশ। অনির্বাণ পর্ণাকে হ�োয়াটস্অ্যাপে লিখল, ঠিক চারটেয় ট্রেন ঢু কবে স্টেশনে। ওখানেই চলে এস�ো। ম�োবাইলের স্ক্রিন অফ করল না অনির্বাণ। দুট�ো সবুজ টিক দেখতে পেল সে। নিশ্চিত হল। উত্তরের অপেক্ষা না করে জিনসের প্যান্টের সামনের পকেটে ঢু কিয়ে নিল ফ�োনটাকে। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের মূল গেট দিয়ে নেমে আসল অনির্বাণ। স্টেশন চত্ত্বরে মানুষের ভিড় চ�োখে পড়ার মত। অট�ো আর ট�োট�োদের হাঁকডাক। কয়েক মিনিটের মধ্যে সে হাঁকডাক থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন চত্ত্বরও প্রায় ফাঁকা। অনির্বাণ দেখতে পেল, একটু দূরেই স্কুটির ওপরে দু’ধারে পা রেখে বসে আছে পর্ণা। অফ হ�োয়াইট কুর্তি। নীল জিনস্। তাকে দেখা মাত্রই সেদিকে এগিয়ে গেল সে। স্কুটি নিয়ে এগিয়ে এল পর্ণা। পর্ণার স্কুটির পিছনে চেপে বসল অনির্বাণ। স্টেশন র�োড শেষ হতেই ডান দিকে টু পাইস হ�োটেল। এখানকার সকলেই জানে হ�োটেল ব্যবসার পিছনে

এখানে পাওয়া যায় পার্থিব প্রায় সকল কিছু ই। হ�োটেলের সামনে আসতেই অনির্বাণ বলল, একটু দাঁড়াও। আসছি। স্কুটি থামতেই ধাঁ ক’রে হ�োটেলের ভিতরে ঢু কে গেল অনির্বাণ। ফিরল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। হাতে দুট�ো চিলড্ বিয়ার। ক্যারিব্যাগ থেকে মাথা উঁকি দিচ্ছে। সঙ্গে একটা বড় সাইজের কাজুর প্যাকেট। স্কুটির কাছে এসে অনির্বাণ বলল, ডিঁকিটা খ�োল�ো। নির্বাক পর্ণা স্কুটি থেকে নেমে দুট�ো বিয়ারের ব�োতল স্কুটির ভিতরে দু’ জায়গায় রাখল। একটা সিটের তলায় অপরটা স্কুটির সামনের অংশে। সেই সঙ্গে হাতের কাজুর প্যাকেটটাও। পর্ণা স্কুটি চালাতে শুরু করল। বসিরহাট রেলগেট পার হয়ে বড় জিরাকপুর, ছ�োট জিরাকপুর পার হয়ে শ�োশনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। এদিকে এর আগে একবারও আসেনি অনির্বাণ। এই একটা ব্যাপারে সে অনেকের থেকে পিছিয়ে। নিজের শহরের চারপাশে ক�োথায় কী আছে তাই সে ভাল করে জানে না। রাস্তার দুপাশে বড় বড় শিরীষ, মেহগনি, রাধাচূ ড়া ও কৃষ্ণচূ ড়ার গাছ। মেহগনি গাছগুল�ো গ্রীষ্মের নতু ন পাতায় ঘন সবুজ হয়ে আছে। রাধাচূ ড়া ও কৃষ্ণচূ ড়া গাছের তলা দিয়ে পার হওয়ার সময় অদ্ভুত স�ৌন্দর্যে যেন ম�োহিত হয়ে পড়ে অনির্বাণ। লাল আর হলুদ আর লাল ফু লের ছায়া এসে পড়েছে রাস্তায়। পথে যেন আল�ো ছায়ার জাফরিকাটা। কৃষ্ণচূ ড়ার লাল আভা এসে পড়ছে পর্ণার অফ হ�োয়াইট সাল�োয়ারে, ঘাড়ে, গলায়। পর্ণা স্কুটি চালাচ্ছেও বেশ জ�োরে। এতক্ষণ পর্ণার দুই কাঁধে হাত দেওয়া ছিল অনির্বাণের। সে ধীরে ধীরে হাতদুট�ো নামিয়ে পর্ণার ক�োমর জড়িয়ে ধরল। না করল না পর্ণা। কানের আছে মুখ নিয়ে গিয়ে অনির্বাণ পর্ণাকে বলল, ত�োমার কী খুব তাড়া আছে?

পর্ণা স্কুটি শ্লথ করল। এতক্ষণে যেন তার ব�োল ফু টল। বলল, কেন? না এই যে এত জ�োরে স্কুটি চালাচ্ছ তাই। এত জ�োরে চালালে বাইরে প্রকৃতির এই অপরূপ স�ৌন্দর্য্য কী আর উপভ�োগ করা যায়? একসঙ্গে কত কিছু উপভ�োগ করবে তু মি? একটু হেসে অনির্বাণ বলল, কী-ইবা আর উপভ�োগ করলাম? একসঙ্গে আমার কমপ্যানি, বিয়ার আর এই সুন্দর বিকেল—তাতেও মন উঠছে না? এবার একটু সজ�োরেই আসল অনির্বাণ। হাসি থামিয়ে বলল, বিয়ার আর খেলাম কই? এতক্ষণে নিশ্চয় ঠাণ্ডা কেটে গিয়েছে। তু মি একটা ভাল�ো জায়গা দেখা দাঁড়াও। দু’জনে ওই দুট�োকে উদ্ধার করি। আমি? সচকিত হয়ে বলল পর্ণা। হ্যাঁ। সে জন্যেই ত�ো দুট�ো নিলাম। নাব্বাবা! আমি ঘরের বাইরে ওসবে নেই। তাছাড়া স্কুটিও চালাতে হবে। বরং ও তু মি ফিরিয়ে নিয়ে যেও। শ�োশনে পার হয়ে কিছু টা ডানদিকে এগিয়ে গিয়ে একটা চালা ঘরের সামনে সামনে স্কুটি দাঁড় করাল পর্ণা। চালা ঘরের ওপরে বড়বড় করে সাইনব�োর্ড টানান�ো। তাতে লেখা সবুজায়ন নার্সারি। সকল রকমের চারাগাছ পাওয়া যায়। পর্ণা নার্সারির সামনে দাঁড়িয়ে তারস্বরে ডাকল, হামিদ ভাই। হামিদ ভাই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘর থেকে বেরিয়ে এল বছর পঁচিশ- তিরিশের যুবক। সদ্য স্নান করে এসে ঘরে মনে হয় প�োশাক ছাড়ছিল। চু লগুল�ো এখনও অবিন্যস্ত। চিরুনি পড়েনি। পর্ণাকে দেখে বলল, ভাবিজী! কতদিন পরে এলেন। আসুন আসুন। পর্ণা হাসি হাসি মুখে বলল, আমরা বাগানের ভিতরে গেলাম। গাড়ি নিয়েই

46 আল�োক

শারদীয়া 2022

যাওয়া যাবে ত�ো? হ্যাঁ, হ্যাঁ। অসুবিধে নেই। উত্তর দিল হামিদ নামক ছেলেটি। পর্ণা স্কুটিটাকে আবার স্টার্ট দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করল নার্সারির ভিতরে। তার পিছনে পিছনে একটু দীর্ঘ পা ফেলে পর্ণাকে অনুসরণ করল অনির্বাণ। হামিদ ছেলেটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভিতরে ঢু কে গেল। অনির্বাণের দিকে একবার তাকিয়ে দেখল মাত্র। কিন্তু সে দেখার মধ্যে বিশেষ কিছু খুঁজে পেল না অনির্বাণ। তবে পর্ণার এমন একটা নির্জন জায়গায় চেনাজানা আর এমন প্রবেশাধিকার কেমন যেন অস্বস্তিতে ফেলল অনির্বাণকে। মুহূর্তে সে অস্বস্তির ভাব মন থেকে ঝেড়ে ফেলে যেন মনে মনে বলল, ধুর! কে আর এখানে আমাকে চিনছে? বরং বিয়ারটার ঠাণ্ডা মনে হয় এতক্ষণে কেটে গিয়েছে! নার্সারির ভিতরটা যেমন গ�োছান�ো তেমনই নজরকাড়া সুন্দর। কয়েক বিঘে নিয়ে তৈরি নার্সারি। চারিদিকে ছ�োটছ�োট চারা গাছ। প্লাস্টিক পেপারকে টব হিসেবে ব্যবহার করে তার মধ্যে তৈরি করেছে ছ�োট ছ�োট পেয়ারা আর কুল গাছের চারা। অপেক্ষাকৃত একটু বড় গাছগুল�ো মাটিতে। কতকগুল�ো গাছে পেয়ারা ঝু লছে ছবির মত। একটু দূরে বেশ বড় সাইজের আম গাছ ঘন সন্নিবদ্ধ ভাবে বেড়ে উঠেছে। তারই একপাশে অজস্র মেহগনির চারা প্রায় তারই মাথা সমান। আর একটু দূরে বিভিন্ন রকমের গাছে। সবগুল�ো চিনতে পারল না অনির্বাণ। তবে বেশকিছু গাছকে দেখে তার তেজপাতা আর সবেদার চারা বলেই মনে হল। মেহগনির চারার পিছন দিকে নার্সারির সীমানা বরাবর দীর্ঘ পাঁচিল। সে পাচিলের গা ঘেঁসে এক জায়গায় পড়ে রয়েছে কাঁঠালগাছের গুঁড়ি। দুপাশের হলুদ রঙের আভা দেখে ব�োঝা যায়

খুব বেশি দিন কাটা হয়নি সে গুঁড়ি। হয়ত সিজন করতে ফেলে রাখা। সে গুঁড়ির পাশে গিয়ে স্কুটি বন্ধ করল পর্ণা। নার্সারির ভিতরে প্রায় হাঁটিয়ে আনার গতিতেই স্কুটি চালাচ্ছিল পর্ণা। অনির্বাণ তার পিছনে পিছনে। কাঁঠালগাছের গুঁড়ির কাছে স্কুটি থামিয়ে পর্ণা বলল, এই জায়গাটা বেস্ট। আমি এর আগেও কয়েকবার এসেছি। একবার ফ্যামিলির সকলে মিলে পিকনিক করতেও এসেছিলাম। সে অবশ্য চার বছর আগের কথা। অনির্বাণ সামান্য হাসল। পর্ণা কি তার গ�োপনীয়তার কৈফিয়ত দিচ্ছে? কে জানে! তার এখন মন টেনেছে বিয়ারের দিকে। সে আর সময় নষ্ট না করে বলল, এবার ওটা বের করা যাক। পর্ণা কালক্ষেপ না করে গাড়ির ডিকি খুলে বের করে আনল প্লাস্টিক ম�োড়া বিয়ারের ব�োতল। কাজুর প্যাকেট। অনির্বাণের দিকে সেগুল�ো বাড়িয়ে দিতেই অনির্বাণ বলল, সত্যি তু মি খাবে না? না, না। জ�োর দিয়ে বলল, পর্ণা। ড্রিংক্সের ব্যাপারে অনির্বাণ কাউওকে কখন�ো জ�োর করে না। তার এথিকসে বাধে। অগত্যা সে একটু প্লুতস্বরে বলল, বেশ। তাহলে তু মি ঐ কাজুই খাও। সে খেতে পারি। কাজু আমার খুব ফেভারিট। কিন্তু খুব বেশি না। যেভাবে দিনদিন মুটিয়ে যাচ্ছি…। দাঁড়াও, ত�োমার জন্যে একটা জিনিস নিয়ে আসি, বলেই তৎক্ষণাৎ নার্সারির ছ�োট ছ�োট গাছের ভিতর দিয়ে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গেল বাগানের ভিতরে। সে চলে যেতেই বিয়ারের ব�োতলের ছিপি দাঁতের চাপে অতি ক�ৌশলে খুলে ফেলল মুহূর্তে। সঙ্গে সঙ্গে ঢক ঢক করে দু-তিন ঢ�োক বিয়ার গলর্ধিকরণ করে গা ঝাড়া মেরে নিল অনির্বাণ। স্কুটির সিটের ওপর পড়ে রয়েছে কাজুর প্যাকেট। সেটাও দাঁত

দিয়ে ছাড়াল সে। দুট�ো কাজু মুখে দিয়ে বিয়ারে হালকা তিত�ো হয়ে যাওয়া মুখের আস্বাদ পালটে নিল সে। ত�োমার এই অবস্থায় একটা ছবি তু লব�ো? ডান দিক থেকে কখন তার কাছাকাছি চলে এসেছে পর্ণা টের পায়নি অনির্বাণ। এখন তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তার দুহাতে দুট�ো ডাঁশা পেয়ারা। আরিব্বাস!এখানেই পেলে? হ্যাঁ। এই দুট�োই খুঁজে পেলাম। আর যা আছে বেশ কাঁচা। সবুজ রঙ ছাড়ায় নি। তাহলে আর দেরি কেন? দাও। ভাল চাট্‌ হল। ভাগ্যিস তু মি ছিলে! সে-ই! বলে দীর্ঘ একটা সুর টানল পর্ণা। হাতের একটা পেয়ারা সাল�োয়ারের ঝু ল অংশ দিয়ে মুছে এগিয়ে দিল সে অনির্বাণের দিকে। অনির্বাণ সেটাতে একটা বড় কামড় বসিয়ে মুখের অংশ শেষ করে বলল, বিয়ারটা একটু তাড়াতাড়িই খেতে হবে বুঝলে? নাহলে ঠাণ্ডা ভাবটা একদমই থাকবে না। এমনিই যেন ঠাণ্ডা কেটে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পর্ণা সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল, আর আমি যদি আসতে না চাইতাম? অনির্বাণ পর্ণার চ�োখের দিকে কয়েক মুহূর্ত সরাসরি তাকাল। তারপর একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, এই মুহূর্তে আমি অনির্বাণ ব�োসকে ভু লে যেতে চাই। তু মি কি পারবে না পর্ণা সেনগুপ্তকে ভু লতে? অনির্বাণ আবার অনেকটা বিয়ার খেল। আবার দুট�ো কাজু মুখে পুরে বলল, কিছু কিছু সময় মনে হয়, সময় যদি স্থির হয়ে থাকত ত�ো কত ভালই না হত। কিন্তু , “লাইক অ্যাস দ্যা ওয়েভস মেক টু য়ার্ডস্ দ্যা পেবেল শ�োর্ / স�ো ডু আউয়ার মিনিটস্ হ্যাসেন টু দেয়ার এন্ড”। দ্যাখ�ো এই আসতে না আসতেই প্রায় ছটা। এখনও একটা বিয়ার পড়ে রয়েছে।

47 আল�োক

শারদীয়া 2022

তা তু মি ওটাও খাবে না-কি? বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল পর্ণা। বাহ! সে ত�ো তু মি যখনই বলেছ খাবে না, তখনই আমার প্লান করা হয়ে গেছে, উত্তর দিল অনির্বাণ। আশ্চর্য! স্কুটিতে ঠিক করে বসে থাকতে পারবে ত�ো? ঠ�োঁটের ক�োণে আলত�ো হাসি ফু টিয়ে তু লল অনির্বাণ। সে হাসিতে যেন পর্ণার প্রশ্নের উত্তর লেখাই ছিল। সেদিকে তাকিয়ে আলত�ো একটা শ্বাস ফেলে পর্ণা বলল, সহ্য হলেই ভাল�ো। দ্বিতীয় ব�োতলটা শেষ করতে একটু বেশিই সময় নিল অনির্বাণ। ততক্ষণে সে আর পর্ণা দুজনে একচক্কর হেঁটে এসেছে নার্সারির এমাথা-ওমাথা। অনির্বাণ সযত্নে আড়ালেই রেখেছিল বিয়ারের ব�োতলটাকে, যাতে হঠাৎ করে কেউ এসে পড়লে সেটা তার অগ�োচরে থাকে। ওরা যখন নার্সারি থেকে বের হল, তখন রাস্তার ইলেকট্রিক প�োস্টের আল�োগুল�ো সব জ্বলে গিয়েছে। তবুও সূর্যের শেষ আল�োক রশ্মি তার মধ্যে দিয়ে যেন নিংড়ে দিচ্ছে দিনের শেষ আল�োকচ্ছটা, যে আল�োকচ্ছটা প ৃথিবীর বুকে এসে প�ৌঁছন�োর আগেই ওপরের আকাশ যেন শুষে নিচ্ছে। পর্ণা স্কুটি স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার গলা ছেড়ে ডাকল হামিদভাই, হামিদভাই। কিন্তু ক�োনও উত্তর পেল না। অনির্বাণকে শ�োনান�োর মত করে বলল, মনে হয় বাগানের ভিতরে কাজ করছে। চল�ো আমরা যাই। বলেই গাড়ি স্টার্ট দিল পর্ণা। নার্সারির ভিতরে সকল কিছু থাকলেও প্রকৃতির বাতাস ছিল কম। এখন পর্ণার স্কুটির পিছনে বসে বাতাস খেতে খেতে তার চ�োখ যেন জুড়িয়ে এল। নেশাটা বেশ জব্বর ধরেছে বুঝতে পারল অনির্বাণ। সে পর্ণার কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, খুব ভাল�ো লাগছে। পর্ণা স্কুটি চালাতে চালাতে বলল, কী?

সঙ্গে সঙ্গে একটু ফ্লার্ট করার আছিলায় অনির্বাণ বলল, ত�োমাকে। পর্ণা উত্তর দিল, সে ত�ো ত�োমার সকল সময় লাগে বলেই মনে হয়। তাই? আস্তে আস্তে বলল অনির্বাণ। এতক্ষণ পর্ণার কাঁধে রাখা হাতটা দিয়ে তার ক�োমর জড়িয়ে ধরল সে। অনির্বাণ অনুভব করল, একটু পিছনে সরে এসে গাড়ির গতি শ্লথ করল পর্ণা। অনির্বাণ তার মুখটাকে পর্ণার কানের কাছে নিয়ে গেল। পর্ণা আলত�ো করে মুখটা বাঁকাল। এই মুহূর্তে অনির্বাণের মনে হল, পর্ণা অশ্লিষ্ট চু ম্বন প্রত্যাশা করছে তার কাছে। তার নিজের কী ইচ্ছে করছে? অনির্বাণ যেন নিজেকে ঠিকঠাক বুঝতে পারল না। তবে তাদের উভয়ের নিঃশ্বাস যে ক্রমশ আরও নৈকট্য পাচ্ছে, তা বেশ বুঝতে পারল অনির্বাণ। আর একটু এগিয়ে একটু আঁধার জায়গা দেখে স্কুটি দাঁড় করাল পর্ণা। অনির্বাণ তখনও দুহাতে জড়িয়ে রয়েছে তার ক�োমর। পর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে বলল, কী হল? ঠিক আছ ত�ো? অনির্বাণ উপলব্ধি করল, এবার ব�োধহয় বাসনার বিস্ফোরণ ঘটবে তার। সে আস্তে আস্তে বলল, থামলে কেন, চল�ো। পর্ণা একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে তার মাথার চু লে আঙুল ড�োবাল। চু লগুল�ো সামান্য ঘেঁটে দিয়ে বলল, পাগল! পরক্ষনেই স্কুটি স্টার্ট দিল পর্ণা। আরও কিছু দূর এগিয়ে যেতেই পর্ণা বলল, ত�োমার কাছে একটা জিনিস চাইব অনির্বাণ? বল�ো। স্তিমিত স্বর অনির্বাণের। হাতদুট�ো এখনও আগের মত�ো জড়িয়ে আছে পর্ণাকে। ত�োমার কাছে আমারও ত�ো কিছু চাওয়ারও থাকতে পারে তা ভেবেছ কখনও? মুহূর্তে অনির্বাণের হাত দুট�ো যেন শ্লথ হল। সামনের দিকে তাকাল সে। দূরে

একটা চার-মাথার ম�োড় দেখা যাচ্ছে। আরও একটু ভাল করে নিরীক্ষণ করল সে। এবার চিনতে পারল। বসিরহাট চ�ৌমাথার অনতি দূরে রয়েছে তারা। চ�ৌমাথা থেকে রিকসা ধরলে তার বাড়ি দশ মিনিটের পথ। এক ঝটকায় তার নেশা যেন উধাও হয়ে গেছে বলে মনে হল অনির্বাণের। সে অস্থিরতার সঙ্গে পর্ণাকে বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও। এখানেই দাঁড়াও। একটু অবাক হয়ে পর্ণা বলল, এখানেই? চ�ৌমাথায় নামিয়ে দিই অন্তত।

48 আল�োক

শারদীয়া 2022

না, না এখানেই। এখানেই। জ�োরের সঙ্গে বলল, অনির্বাণ। স্কুটি দাঁড় করাল পর্ণা। সে যেন কিছু বলতে চাইল সে মুহূর্তে। তার মুখের কথাকে থামিয়ে দিয়ে অনির্বাণ বলল, গুড নাইট। তু মি যাও। যাও। অনির্বাণ যেন জ�োর করে ঠেলে দিল পর্ণাকে। স্কুটি স্টার্ট দিল পর্ণা। এগিয়ে গেল আস্তে আস্তে। তারপর স্কুটির গতি বাড়াল। অন্ধকারে ঠায় দাঁড়িয়ে অনির্বাণ। সামনে যেন সহস্র আল�োর ঝলকানি। অনির্বাণ

দেখল, সে আল�োর ঝলকানির মধ্যে দিয়ে স্কুটি চড়ে এগিয়ে যাচ্ছে পর্ণা-অনেক অনেক পর্ণা। সাদা শাল�োয়ার পরা পর্ণা, ধূসর শাল�োয়ার পরা পর্ণা, আকাশী শাল�োয়ার পরা পর্ণা, সবুজ শাল�োয়ার পরা পর্ণা… । বিস্ময়ের সঙ্গে অনির্বাণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে কিন্তু ক�োনও লাল শাল�োয়ার পরা পর্ণাকে সে দেখতে পেল না।

অল�ৌকিক আয়না শম্পাশম্পি চক্রবর্তী ১ জমিদার রাজশেখর চ�ৌধুরী যখন একজন সামান্য ট�োল পন্ডিতের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে মনস্থির করেন তখন বড়�ো ব�ৌরাণী সুনন্দা যিনি সম্পর্কে রাজশেখরের বড়�ো ব�ৌদি বেশ ক�ৌতু কের সুরে বলে উঠল--" মরণ। এই বুড়�ো বয়সে ত�োমার ভীমরতি জাগল�ো ঠাকুরপ�ো। য�ৌবনকালে ব্রহ্মচর্য পালন করে এখন বৃদ্ধ বয়সে এসেছ বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হতে। তা ওই মেয়ের মধ্যে কী এমন দেখলে যা ত�োমার ব্রহ্মচর্য পালনে বিঘ্ন ঘটাল�ো? " রাজশেখর স্বল্পভাষী। এক কথায় বলা যায় সে অতিরিক্ত বাকবিতণ্ডা পছন্দ করে না। আর বড়�ো ব�ৌরাণী সুনন্দার ক্ষেত্রে ত�ো

49 আল�োক

শারদীয়া 2022

একদমই না। কারণ সে সুনন্দা কে ভাল�ো মত চেনে। সে যে বিয়ে করে ব�ৌ নিয়ে আসতে পারে তা সুনন্দার কাছে ভাবনার ও অতীত এবং অপছন্দের ও বিষয় । হয়ত�ো এ ও হতে পারে তার বিবাহ শুনে বুকের ভেতরটা সুনন্দার জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে । বলা যায় সেই কারণেই স্বল্পভাষী রাজশেখর স্মিত হাসি হেসে চলে যেতেই সুনন্দা রাগে দুঃখে অপমানে নিজের ঘরে এসে তার প্রিয় আয়নাটির কাছে দাঁড়িয়ে বার বার নিজেকে দেখতে লাগল�ো। রূপ য�ৌবন এই তিরিশ বছর বয়সে তার মধ্যে ত�ো অটু ট রয়েছে। কী খামতি আছে যার জন্য রাজশেখরকে সে নিজের অসামান্য রূপের জালে আবদ্ধ করতে পারে নি আজ দশ বছর এই

চ�ৌধুরী পরিবারের ব�ৌ হয়ে এসে অবধি। সে ত�ো রাজশেখরকেই মনে প্রাণে স্বামী রূপে বরণ করেছিল ,শৈলেশ্বর কে ত�ো নয়। শৈলেশ্বর তার জীবনে অভিশাপ ছাড়া ত�ো কিছু ই নয়। এক পঙ্গু স্বামী। তাকে নিয়ে দশ বছর স্বামী স্ত্রীর খেলা করে জীবন কাটাতে ত�ো সে চায় নি। সে ত�ো রাজশেখরের মত�ো সুন্দর, সুঠাম, পুরুষ�োত্তম কে চেয়েছিল। কিন্তু হয়নি। তার ইচ্ছেতে জল ঢেলে দিয়ে রাজমাতা অম্বিকা দেবী মিথ্যার জালে আবদ্ধ করে নিজের কনিষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে তার সম্বন্ধ করা সত্ত্বেও জ্যেষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। ২

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার না এরপর শাস্ত্রীয় মতে শৈলেশ্বরের সঙ্গে কিছু পূর্বে শুভদৃষ্টির সময় সুনন্দা চমকে সুনন্দার বিবাহ হলেও সুনন্দা ক�োন�ো উঠেছিল। ভাবেই নিজেকে শৈলেশ্বরের স্ত্রী রূপে --" এ কী! যে স�ৌম্যকান্তি পুরুষ তাকে মনে করতে পারেনি দশ বছরে। বরং কী বিয়ে করবে বলে দেখতে এসেছিল সে ভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে ত�ো এ নয়। এ ত�ো পঙ্গু । জড়বুদ্ধি সম্পন্ন সচেষ্ট হয়েছে বার বার। এমন কী রাতের । না না এ হতে পারে না। প্রতিবাদ অন্ধকারে রাজশেখরের ঘরের দরজায় করে ওঠে সুনন্দা। আমি বিয়ে করব�ো আলত�ো করে কড়া নেড়ে তার উপস্থিতি না। আমাকে ঠকান�ো হল। আমি ত�ো বুঝিয়ে দিয়ে নির্লজ্জের মত�ো বলেছে--এনাকে স্বামী রূপে ভাবতেই পারছিনা। "রাজশেখর আমাকে ত ৃপ্ত কর�ো। আমার আমি যাকে দেখেছি,কল্পনা করেছি শরীরে যে বড়�ো জ্বালা। তু মি আমাকে মানসপটে, সে ত�ো জমিদার রাজশেখর ভরিয়ে দাও ত�োমার ভাল�োবাসার বারি । তবে কেন এর সঙ্গে আমার বিয়ে হতে ধারায়। চলেছে? এ বিয়ে কিছু তেই আমি করব�ো আমি যে ত�োমাতে মিশে যেতে চাই। না। রাজশেখর অদূরে তখন দাঁড়িয়ে । পরম ত ৃপ্তি পেতে চাই ত�োমার থেকেই।" ছু টে আসে সুনন্দার কাছে। করজ�োড়ে ---" চলে যাও ব�ৌরাণী এ আমার বলে ওঠে-- "আপনি ভু ল ভেবেছেন। শ�োনাও পাপ। তু মি আমার জ্যেষ্ঠর স্ত্রী । ৃ মা। ত�োমাকে আমি ভ�োগ করব�ো আমি আপনাকে দেখতে গিয়েছিলাম মাতস ঠিকই কিন্তু আমি নিজের জন্য নয় এ ভাবনা আনলে কেমন করে? আর আমার বড়�ো দাদার স্ত্রী রূপে আপনাকে আমি ত�ো ত�োমাকে বলেছি এ জীবনে আমাদের জমিদার পরিবারে নিয়ে যেতে ঈশ্বর চিন্তাতেই আমি জীবন কাটিয়ে চাই। আপনি রাজী হ�োন। কারণ নইলে দেব�ো। তাহলে ভাবলে কী করে আমি আপনি লগ্নভ্রষ্টা হবেন। " ত�োমার শরীর উপভ�োগ করব�ো?যাও সুনন্দা চিৎকার করে উঠেছিল -- না যদি ব�ৌরাণী ঘরে ফিরে যাও। ত�োমাকে বিয়ে করতে হয় তবে আপনাকেই করব�ো আমি যে পূজনীয় স্থানে রেখেছি তাতেই নয়ত�ো কার�োকে করব�ো না।" থাক�ো চিরদিন।" বন্ধ দরজার অপর প্রান্ত ---" কিন্তু আমি যে ব্রহ্মচর্য পালন করব�ো থেকে রাজশেখর বলে উঠতেই সুনন্দা বলে দীক্ষা নিয়েছি। এ জীবনে আমি ফিরে এসেছিল নিজের ঘরে। দরজায় কার�োকে ক�োন�ো দিন বিয়ে করতে অর্গল দিয়ে পঙ্গু স্বামীর শয্যার পাশে পারব�ো না। " বজ্রগম্ভীর স্বরে কথাগুলি শুয়ে পড়েছিল। বলে উঠেছিল রাজশেখর । সুনন্দা কাটিয়ে ছিল বিনিদ্র রজনী। স্তম্ভিত । এত�ো বড়�ো প্রতারণা! কুড়ি ৩ বছরের যুবতী দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল সেই ----"আমি ত�োর দুঃখ বুঝেছি বড়�ো মুহূর্তে। হাতে ধরা রজনীগন্ধার বরমাল্য ব�ৌরাণী। তু ই তাকে চাস ।কিন্তু সে যে খানি শৈলেশ্বরের গলায় পরিয়ে দিয়েছিল বড়�ো ধার্মিক । তাকে টলান�ো কঠিন। বটে তবে মনে মনে শপথ করেছিল ---" তবে আমি ত�োকে একটি অল�ৌকিক রাজশেখর তু মি আমারই থাকবে। আমি আয়না দিতে পারি যার মধ্যে তু ই মনে প্রাণে শুধু ত�োমার । কেবল ত�োমার দেখতে পারবি ত�োর ভবিষ্যত। তবে । আজ স্বামী রূপে ত�োমাকে আমি সব সময় নয়। এমনিতে এটি স্বাভাবিক পেলাম না কিন্তু আমার মনে ত�োমার আয়নার মত�োই। যখন ত�োর মন অশান্ত স্থানই থাকবে আমার স্বামীর আসনে।" থাকবে। মনে থাকবে দ�োটানা। নিশ্চিন্ত

50 আল�োক

শারদীয়া 2022

হতে পারবি না নিজের ভবিষ্যত ভেবে ঠিক তখন তু ই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চাইবি ত�োর প্রকৃত ভবিষ্যত। আয়না ত�োকে ত�োর ভবিষ্যতে চলার দুটি পথ দেখাবে। একটি ন্যায়ের অপরটি অন্যায়ের । ত�োকে তখন বেছে নিতে হবে তু ই ক�োন পথে যেতে চাস। তু ই যে পথে যেতে চাইবি আয়না ত�োকে সেই পথেই নিয়ে যাবে। তবে মনে রাখিস ন্যায়ের পথে ত�োর ভাল�োবাসা অটু ট থাকবে। কিন্তু অন্যায়ের পথে ভেঙেচু রে ছাড়খার হয়ে যাবে।" কথাগুলি বলেছিল শ্যামাসুন্দরী । অমাবস্যার রাত। মুক্তকেশী শ্যামাসুন্দরীর কাছে রাজশেখরকে নিজের করে পাওয়ার আশায় শ্মশানে এসে এক প্রকার পায়ের ওপর আছড়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সুনন্দা। সুনন্দার কষ্টের কথা কাপালিনী শ্যামাসুন্দরী সবটু কু শুনে একটি অল�ৌকিক আয়না এরপর সুনন্দার হাতে তু লে দেয় । সুনন্দা সেটি হাতে নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব মেশান�ো কন্ঠস্বরে বলে উঠেছিল--" আমি রাজশেখর কে পাব�ো ত�ো মা ?" শ্যামাসুন্দরী অট্টহাস্য হেসেছিল। তারপর কঠ�োর কন্ঠস্বরে বলে উঠেছিল--"আমি একশ�ো বছর ধরে তপস্যা করে আসছি। আর তু ই আমার কাছে কিছু চাইতে এসেছিস সে চাওয়া ত�োর পূরণ হবে না তা কী হয়? আমার কাছে কেউ এসে ফিরে যায় না। তবে হ্যাঁ সবটাই ত�োর ওপর নির্ভর করবে। তু ই তাকে কীভাবে পেতে চাস। সেটাই ত�োর বিবেচনার বিষয়। । ত�োর ভবিষ্যত ত�োর চাওয়ার ওপর। এখন যা। আমাকে ধ্যানে বসতে হবে।" ফিরে এসেছিল সুনন্দা জমিদার বাড়িতে। তারপর নিজের ঘরের দক্ষিণ দেয়ালে টাঙিয়ে দিয়ে ছিল সুদৃশ্য সেগুন কাঠের কারুকার্যে আবৃত ছ�োট আকারের আয়নাটি।

৪ ক'দিন আগে দাসী বিন্দুর থেকে রাজশেখরের বিয়ে ও হবু স্ত্রীর বর্ণনা পেয়ে যারপরনাই ক্ষু ব্ধ হল সুনন্দা। সে না কী তার চাইতে ঢের গুন সুন্দরী । গিন্নী'মা অম্বিকা না কী তার রূপে মুগ্ধ হয়েই রাজশেখর কে নির্দেশ দিয়েছেন চিরতরে ব্রহ্মচর্যকে দূরে সরিয়ে ফেলে এই চল্লিশ বছর বয়সে বিয়ে করতে । সামনের মাঘে মানে আর দু'মাস বাদেই তার বিয়ে। রাজশেখর রাজী না হলেও গিন্নীমা'র শেষ আদেশ মৃত্যুর পূর্বে সে ছেলেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখে যেতে চান। সব শুনে সুনন্দা নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় এখন রাজশেখরকে বিয়ে থেকে বিরত করতে তাকেই রাজশেখরের মুখ�োমখু ি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে ---" সে কী সত্যিই বিয়ে করতে চলেছে?"তা ই করল�ো সুনন্দা । কিন্তু আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে এসে অল�ৌকিক আয়নার সামনে দাঁড়াল�ো। নিজেকে দেখে ম�োহিত ও হল। সেই সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।। এত�ো রূপ তার অবহেলাতেই শেষ হয়ে গেল। এক পঙ্গু, জড়বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ক�োন�ো দিনও তাকে ছু ঁয়ে দেখল�ো না। সময়ের সাথে সাথে সে ত�ো মা হতে চেয়েছে। দাসীদের সন্তানদের দেখে তারও হৃদয় মা ডাক শুনতে ব্যাকুল হয়েছে। তবে কী এ জীবনে তার কিছু ই প্রাপ্তি নেই। যে তার স্বামী সে সন্তান দিতে অপারগ আর যার নাম তার মনের ক�োণে পরম যত্নে লেখা হয়ে রয়েছে সে ত�ো তার দিকে ফিরেও দেখে না। তবে কী তার ভবিষ্যত? তাকে এবার জানতেই হবে আর আয়নাই বলে দেবে তার ভবিষ্যত। আজ তার মন অশান্ত । আর এই অশান্ত মনই উত্তর খুঁজে পাবে আয়নার কাছে ।কারণ এমন করে জীবন কাটান�োর চাইতে তার মরণ ভাল�ো।

51 আল�োক

শারদীয়া 2022

ভাবতে ভাবতে সুনন্দা আয়নার দিকে তাকিয়ে তার অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকল�ো। স্থির দ ৃষ্টি নিবদ্ধ করল�ো আয়নার ওপর। কিছু সময় পার হয়ে গেলে অদ্ভুত আল�োকরশ্মি ভেদ করে আয়নায় ফু টে উঠল তার ভবিষ্যত। প্রথমে ন্যায়ের ভবিষ্যত। এ কী সে কী দেখছে ? শৈলেশ্বরের চ�োখে কামাগ্নি। সে তাকে কাছে চাইছে। গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে চু ম্বনে চু ম্বনে তাকে ভরিয়ে দিচ্ছে। তার দীর্ঘ দশ বছর ধরে মরচে পরা অত ৃপ্ত শরীর শৈলেশ্বরের পুরুষত্বের ছ�োঁয়ায় পরিত ৃপ্ত । ও কী? উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি জানান দিচ্ছে সে মা হতে চলেছে। জমিদার পরিবারে আসতে চলেছে তার আর শৈলেশ্বরের সন্তান !!! হা ভগবান এ কেমন করে সম্ভব? শৈলেশ্বর পঙ্গু । তার কাছ থেকে সন্তান প্রাপ্তি সে ত�ো অসম্ভব । তবে কী আয়না মিথ্যা বলছে ন্যায়ের পথটি। ৫ তবে অন্যায়ের পথ কী? সুনন্দা চলেছে । হাতে ডালিমের রসপাত্র। বিষ মিশিয়েছে সে। রাজশেখরকে সে আজ চির নিদ্রায় শুইয়ে দেবে তাই তার পরিকল্পনা। রাজশেখরের দরজা ভেজান�ো। ভেতরে থেকে ভেসে আসছে গিন্নীমা অম্বিকা ও রাজশেখরের কথ�োপকথ ---" মা এই বিয়ে কী করা খুব প্রয়�োজন? তু মি ত�ো জান�ো আমি ক�োন�ো দিনও ক�োন�ো নারীর জীবনে উপযুক্ত স্বামী হয়ে উঠতে পারব�ো না কারণ আমি নপুংসক। আজ এই মেয়েটিকে বিয়ে করে আমি কী সুখ দেব�ো? আজ যে পুরুষটি বিছানায় পড়ে রয়েছে দশ বছর ধরে আমার জ্যেষ্ঠ যিনি তিনি ত�ো সুস্থ হলেই ব�ৌরাণীকে গর্ভবতী করতে পারেন।। দিতে পারেন এই পরিবারে সুস্থ সুন্দর বংশধর। আমি ত�ো তা ক�োন�ো দিন ও পারব�ো না। তাই

বিয়ে করে কী করব�ো? আমার থেকে ত�ো চ�ৌধুরী পরিবার ক�োন�ো সন্তানই লাভ করতে পারবে না। তাই ত�ো ব�ৌরাণী সুনন্দাকে আমি পছন্দ করে আসলেও নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে জ্যেষ্ঠর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। তা বলে কী আমি সুনন্দাকে ভাল�োবাসি না? কিন্তু ও ত�ো আমার থেকে ক�োন�ো সুখই পাবেনা। তা ত�ো তু মি জান�ো।" সুনন্দার হাতে ধরা বিষ মিশ্রিত রসপাত্রখানি মাটিতে পড়ে গেল। একটি বিড়াল তা চাটবার অভিপ্রায় এগিয়ে এলে সুনন্দা তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে বিড়ালটি দক্ষিণের জানলা পথে বের হতে গিয়ে ক�োন�ো ভাবে আয়নাটির কানায় আঘাত লাগল�ো। আয়নাটি দড়ি ছিঁড়ে মুহূর্তে ঝনঝন শব্দ তু লে মাটিতে পড়ে ভেঙে চু রমার হয়ে গেল। সুনন্দা সম্বিত ফিরে পেল। কী দেখল�ো এ সব? এটাই কী তার ভবিষ্যত? ন্যায় আর অন্যায়ের ভবিষ্যত!! ফ্যালফ্যাল করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকল�ো সুনন্দা ভাঙা কাঁচের টু কর�ো গুলির দিকে। ৬ --" তু ই আবার আসবি আমি জানতাম। এবং কেন আসবি তাও জানতাম। তু ই এক কাজ কর আমি ত�োকে মন্ত্রপূত মাটি দিচ্ছি তা নিয়ে নিজের স্বামীর সর্বাঙ্গে মাখিয়ে দে র�োজ নিয়ম করে দিনে তিনবার। ত�োর স্বামী সুস্থ হয়ে যাবে। তার অসুস্থতা ত�োর মনটাকে রাজশেখরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সুনন্দা । স্বামীর কাছে উপযুক্ত ভাল�োবাসা পেলে তু ই রাজশেখরকে ঠিক ধীরে ধীরে ভু লে যাবি। সর্বোপরি তু ই মা হবি। সন্তান সুখ ত�োকে সব ভু লিয়ে দেবে এমন কী রাজশেখর কে। এখন বল ক�োন পথে চলতে চাস? অন্যায়ের পথে যেখানে রাজশেখর কে তু লে দিতে যাচ্ছিস বিষপাত্র?রাজশেখরের

মৃত্যুতে যা ত�োর সুখ এনে দেবে। না কী ন্যায়ের পথে। যেখানে ত�োর শরীর চায় ত ৃপ্তি। ত�োর মন চায় মাত ৃত্বের স্বাদ?ত�োর স্বামী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ত�োর সামনে প্রকৃত পুরুষ হয়ে ধরা দিয়েছে। ত�োর গর্ভে এসেছে সন্তান।তু ই হয়েছিস মা।" শ্যামাসুন্দরীর কথাগুলির প্রত্যুত্তরে সুনন্দা কাতর কন্ঠস্বরে বলে ওঠে ----" মা আমি মা হতে চাই।" ---" জানতাম তু ই তা ই চাইবি। তবে তা ই হ�োক।" ৭

দীর্ঘ কুড়ি বছর পার হয়ে গেছে চ�ৌধুরী পরিবারের নতু ন জমিদার অরুনাংশুর আজ জমিদারি নিজের হাতে তু লে নেবে তার আয়�োজন সাজিয়েছে রাজশেখর নিজ হাতে। স্বামী শৈলেশ্বর পাশে স্ত্রী সুনন্দা তাদের সন্তান জমিদার হতে চলেছে তারা তাই তার মঙ্গল কামনায় হ�োমাগ্নিতে ঘি ও বিল্বপত্র প্রদান করছে। অদূরে রাজশেখর। তার চ�োখে আনন্দের বারিধারা। এত�ো দিনের স্বপ্ন তার সফল হতে চলেছে। সে ত�ো এটাই চেয়েছিল। তিরিশ বছর আগে গ্রামের পুকুরে

সদ্যস্নাত সুনন্দাকে আড়াল থেকে দেখে প্রেমাশক্ত হয়েও নিজের অক্ষমতার জন্য নিজে বিয়ে না করে জ্যেষ্ঠর স্ত্রী রূপে আনতে চেয়েছিল। নিজে না পেলেও সুনন্দা ত�ো তার সামনে থাকবে তাদের পরিবারের বধূ হয়ে। এটু কু কম কী পাওয়া? অস্ফুট কন্ঠস্বরে সে বলে ওঠে ---" তু মি আজ সুখী ত�ো সুনন্দা? এইটাই ত�ো চেয়েছিলাম।"

অবসরপ্রাপ্ত মানুষ, বেকার যব ু ক, যব ু তী, গ ৃহ বধূ, ছ�োট ব্যবসায়ী রা য�োগায�োগ করুন: ৯১২৬৭২৯১১১ (কল/হ�োয়াটস এ্যাপ)

52 আল�োক

শারদীয়া 2022

আসমানী রাজকুমার ঘ�োষ - ওগ�ো, ছেলেটাকে খুব মারছে। প্লিজ যাও, ওকে ওই পাষণ্ডর হাত থেকে বাঁচাও৷ - হল�ো কী রিনা? এমন চেল্লাচ্ছ কেন ? - তু মি দেখ�ো একবার সত্যি ত�ো, রাস্তায় ছেলেটাকে ধরে পেটাচ্ছে একটা বাপের বয়সী ল�োক। সেখানে গিয়ে রাজেন জিজ্ঞেস করল�ো, - ও মশাই, বাচ্চাটাকে এই ভাবে মারছেন কেন? - যা জানেন না, মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করবেন না। যান ত�ো এখান থেকে৷ - অবশ্যই জানতে চাই, ঠিক আছে আপনাকে বলতে হবে না। যাকে মারছেন তাকেই জিজ্ঞেস করছি। এই বাবা, কি করেছিস? ত�োকে এইভাবে

53 আল�োক

শারদীয়া 2022

জান�োয়ারটা মারছে কেন? - কি বললেন, আমি জান�োয়ার? - ঠিকই শুনেছেন। জান�োয়ার না হলে এইভাবে ছেলের বয়সী কাউকে মারে। ছিঃ লজ্জা করে না আপনার, নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে... - এত�ো বড় আস্পর্ধা। জানেন আপনি, আমি কে? - যেই হ�োন, জানার দরকার নেই। জান�োয়ারের একটাই পরিচয়, সে একটা জান�োয়ার। - দেখুন বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন। এই খচ্চরটা আমার নতু ন বাইকে ধাক্কা মেরেছে। - চার চাকা দিয়ে ধাক্কা মেরেছে? - না, ফাজলামি হচ্ছে কিন্তু । সাইকেল দিয়ে ধাক্কা মেরেছে।

- সে ত�ো বুঝতেই পারছি, এই সাইকেল মেরামত করতে ম�োটামুটি ৫০০ টাকা দিন এবং কেটে পড়ুন। সেই স্থানে চলে এসেছে রাজেনের স্ত্রী রিনা। এইত�ো দু'সপ্তাহ ওদের বিয়ে হয়েছে। নতু ন ব�ৌ বলে কথা। গটগট করে সামনে এসে সেই ল�োকটাকে সপাটে চড় কষাল�ো। নতু ন ব�ৌ এর এমন কীর্তি দেখে আশেপাশের সবাই একজ�োট হয়ে গেল। ল�োকটাকে উত্তম মধ্যম দিল�ো। অন্তত ১০০০ টাকার মত ল�োকটার থেকে আদায় করল। একজন সাইকেলটা নিয়ে সারাতে চলে গেল। রিনা ও রাজেন এবার ছেলেটাকে পরম স্নেহে বাড়িতে এনে আঘাত পাওয়া স্থানগুল�োয় ডেটল দিয়ে দিল। রিনাই জিজ্ঞসা করল,

- ত�োর নাম কিরে? - স্বপ্ননীল - বাহ খুব সুন্দর নাম ত�ো। রাজেন জিজ্ঞেস করল, - থাকিস ক�োথায়? আর ল�োকটা এ ভাবে ত�োকে মারল কেন? রিনাই জবাব দিল, বারান্দা থেকে আমি দেখলাম, স্বপ্ননীলের ক�োন�ো দ�োষ নেই। ল�োকটাই ওকে ধাক্কা মারল�ো। ও সাইকেল থেকে পড়ে যায়। কিছু বলার আগেই ওকে মারতে শুরু করে। আহারে কত সুন্দর মুখটা... জান�োয়ারটাকে পুলিশের হাতে তু লে দিলে ভাল�ো হত। - ঠিক আছে, ঠিক আছে। আর উত্তেজিত হয়�ো না। এরপর স্বপনীলকে, -এই বাবা শ�োন, ত�োর বাড়ি ক�োথায়? ল্যান্ডফ�োন থাকলে নাম্বার দে। জানাই ত�োর বাবাকে। - না, আমাদের ক�োন�ো নাম্বার নেই। আমার বাড়ি অনেক দূরে। এখানে এক বন্ধু র কাছে এসেছি। আমি এখন যাই কাকু। বাড়িতে মা চিন্তা করবেন। - যাবি কিরে, কিছু খেয়ে যা - রিনা বলল - না আন্টি, দেরি হয়ে যাবে আরও। আর একদিন না হয়। আর সাইকেলটা নিয়ে আসলে আপনারা রেখে দেবেন, বাবা বা আমি পরে এসে নিয়ে যাব। ক�োন�ো অসুবিধা নেই। আমি এখন যাই। অগত্যা ওরা বিদায় জানাল�ো স্বপ্ননীলকে। এরপর স্বামী-স্ত্রী পড়ন্ত বিকেলে ছাদে গেল। দুজনের হাতেই চা এর প্লেট, আর স্বপ্ননীলের চিন্তায় বিভ�োর। নীরবতা ভঙ্গ করে রিনাই বলল, কি সুন্দর দেখতে বল�ো ছেলেটাকে। মুখটা কেমন যেন মায়া মাখান�ো। আর জান�োয়ারটা ঘুসি মেরে মুখটার কি হাল করেছে? ওর মা-বাবা দেখে কত কষ্টই না পাবে গ�ো। আমার মন যে ব্যকুল হয়ে উঠছে স্বপ্ননীলের জন্য। - আহা, মন খারাপ কর�ো না। আমরা যা

54 আল�োক

শারদীয়া 2022

করার করেছি। ঐ দেখ�ো পুব আকাশের দিকে পড়ন্ত বিকেলের শ�োভা। দেখেছ�ো, মেঘেদের কেমন বৈচিত্র। সাজিয়ে রয়েছে যেন। এমন অপরূপ শ�োভার দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করে নাও রিনা। এমন সুয�োগ পাবেনা আর। মন কেমনের মাঝে এক অপরিসীম সুখ পাচ্ছি যেন। স্বপ্ননীল ভাল�ো হয়ে যাবে চিন্তা কর�োনা। ওর স্বপ্ন সফল হ�োক। - ঠিক আছে, বলছ যখন, আমি তবে প্রার্থনা করে নিই প্রকৃতি ভগবানের কাছে। - তাই কর�ো, পাগলি আমার। দু'দিন পরে স্বপ্ননীলের বাবা এসে সাইকেল নিয়ে গেছে। এরপর আর ক�োন�োদিন রিনা আর রাজেন স্বপ্ননীলের দেখা পায়নি। সে যে ক�োথায় থাকে সেটাও জানতে পারেনি। আর ওর বাবা এসেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেছে। বাড়িতে রিনা, রাজেন কেউ ছিল না। তখন রাজেনের বাবা ছিল। কেটে গেছে জীবনের কুড়িটা বছর। লকডাউন আর কর�োনা অতিমারীতে সারাবিশ্ব স্তব্ধ। কাজের ঠিক ঠিকানা নেই মানুষের। এইরকমই আবহে ক�োন�ো এক রবিবার রাজেন একটু ছাদে উঠে পায়চারী করছে। পড়ন্ত বিকেলের শ�োভাতেও আকাশটা রাজেনের কাছে ফ্যাকাসে মন হচ্ছে। হঠাৎই পেছন থেকে ঋত্বিক বলল - বাবা, দেখ�ো ম�োবাইলে কটা ছবি তু লেছি, যেটা সবচেয়ে ভাল�ো হবে তু মি সেটা ফেসবুকে প�োস্ট করতে পার�ো। - কি এমন তু লেছিস দেখি... ছবিগুল�ো দেখে রাজেন ত�ো হকচকিয়ে গেছে। - একটা কাজ কর, ত�োর মা'কে একবার ডাক। ঋত্বিক তার মাকে ডাকতে গেল�ো, ক্লাস টেনে পড়ছে ঋত্বিক। এমন লকডাউনের পরিমণ্ডলে ওর স্বপ্নগুল�োর

বুনন, সত্যি কি পূরণ হবে ? জানা নেই রাজেনের। এবার রিনাও চলে এল�ো। কি হল�ো, আমাকে আবার ছাদে ডাকলে কেন? - দেখ�োই না একবার ম�োবাইল স্ক্রিনটা ছবিটা দেখে রিনাও অবাক। এও কী করে সম্ভব? ঋত্বিক চলে গেল�ো সেখান থেকে। রাজেন আর রিনার চ�োখে ফিরে এল�ো বিস্মৃত হয়ে যাওয়া স্বপ্ননীল। সেদিন স্বপ্ননীল চলে যাবার পর বিকেলের ছাদে এমন ছবিই ত�ো দেখেছিল ওরা। ছিলনা ক�োন�ো মাধ্যম, যাতে ছবিটা নিয়ে ৃ ্য দেখে রিনা কি রাখতে পারত। সেই দশ একটা প্রার্থনাও করেছিল। আজ ওদের সন্তান ঋত্বিক ম�োবাইল স্ক্রিনের এই ছবিতে কেমন যেন এক মায়ায় হঠাৎই ফিরিয়ে আনল স্বপ্ননীলকে।

ধূম মামার গপ্প বম ু ব�োস নমস্কার। আমার নাম দ্বৈপায়ণ ঘ�োষ, আদর করে ল�োকে আমায় দীপু বলে ডাকে। বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ি আর থাকিও বালিগঞ্জেই। তবে আজকের গল্পটি যাকে নিয়ে, তার নাম হল শ্রীযুক্ত ধূমকেতু বসু, মানে আমার ধূমমামা। ত�ো এই ধূমমামা থাকত গিয়ে বেহালায়। বালিগঞ্জ থেকে বেহালার দূরত্ব তেমন কিছু বেশি নয়, তবুও মামার বাড়ি আমার ক�োন�োদিনই যাওয়া হয়নি। মা বলত মামা নাকি ব্যাপক রকমের বাউন্ডুলে। তার নাকি ঘরবাড়ি - সংসার, ক�োনও কিছু তেই ক�োন�োরকম টান নেই। যদিও ধূমমামা মাঝে মধ্যেই আমাদের বাড়িতে এসে উঠত। কয়েকদিন থাকত,

55 আল�োক

শারদীয়া 2022

তারপর আবার চলে যেত। বাবা বলত, “পকেটে টান পড়লেই ব�োনের কথা মনে পড়ে, নইলে কি আর তার টিকিপাত্তা পাওয়া সাধারণ মানুষের সাধ্যি।” বাবার কথা শুনে মা হাসত, আবার মাঝে মধ্যে দুঃখ করে বলত, “ত�োর মামা আগে এমন ছিল না জানিস, একটা ম�োটামুটি চাকরি করত। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হাসিখুশি জীবন ছিল ওর। তারপর মাথায় কী ভূ ত চাপল জানি না, চাকরি বাকরি সব ছেড়ে দিয়ে বলল কলেজস্ট্রীটে বইয়ের দ�োকান দেবে। ব্যস, দ�োকান ত�ো আর হলই না, মানুষটাই কেমন যেন ক্ষ্যাপাটে হয়ে গেল।” ধূমমামাকে সবাই অপছন্দ করলেও

আমি কিন্তু মামার বেশ ন্যাওটা ছিলাম। মামা তখন দিনরাত ভূ তের গল্প লিখত, বেশ কয়েকটা বইও বেরিয়েছিল তার। আমাদের বাড়িতে এলেই আমায় নানান রকমের গল্প বলে শ�োনাত। সবাই বলত মামা নাকি জীবনে কিছু ই করতে পারেনি, তবে তার মত�ো ভাল�ো গল্পবলিয়ে আমি খুব কম দেখেছি। আজ যেদিনের কথা বলছি সেদিন বিকেল থেকেই আকাশ কাল�ো করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মা ঘরে শুয়ে শুয়ে সিরিয়াল দেখছিল আর আমি কম্পিউটারে গেম খেলছিলাম।তখনই বাজল কলিংবেলটা। আমি গেমটা পজ করে বারান্দায় গিয়ে দেখি ধূমমামা গেটের বাইরে কাগভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চটজলদি গেট

খুলে মামাকে ভেতরে আসতে বললাম। মামা ভেতরে এসে বারান্দার চাতালে বসল। “দীপু... বাবা একটা গামছা দেত�ো, আজ যা ভিজেছি না, মনে হচ্ছে সিওর নিউম�োনিয়াতেই মরব।” আমি ঝটপট ভিতর থেকে আমার টাওয়ালটা এনে দিলাম মামাকে। মামা মাথাটা মুছতে মুছতে বলল,“আর বলিস না, সকালে যখন বের�োলাম দেখি নীল চকচকে আকাশ, খটখটে হলদে র�োদ। যথারীতি ছাতাটা আর নিইনি সঙ্গে। ও মা..... বিকেল পড়তেই এমন মুষলধারে নামালে যে ধুয়েমছে ু একেবারে সাফ হয়ে গেলাম।” হাত-মুখ, মাথা সব ভাল�ো করে মুছে নিয়ে টাওয়ালটা আমায় ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “ত�োর মা কই রে? এক কাপ চা দিতে বল না, মনটা বড্ড চা চা করছে।” আমি এক ছু টে ভিতরে গিয়ে মাকে চা দিতে বললাম। মা গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেল। আমি বারান্দায় এসে দেখলাম মামা ওই ভিজে গায়েই চাতালের উপর বেশ আয়েশ করে বসেছে। আমি ভেতরে যেতে বললাম, কিন্তু সে এল না। বলল, “এই ভিজে গায়ে আর ভেতরে যাব না। চা খেতে খেতে একটু ত�োর সঙ্গে গল্প করি, বৃষ্টিটা একটু ধরলে টু কটু ক করে বেরিয়ে পড়ব।” মা ইতিমধ্যেই গ�োমড়া মুখে এসে চা আর একজ�োড়া মেরি বিস্কুট দিয়ে গেছে। মামা চ�োখদুট�ো বুজে চায়ে একটা ত ৃপ্ত চু মক ু দিল, তারপর বিস্কুটে একটা ম�োক্ষম কামড় বসিয়ে বলল, “গেলবার শীতে কাকিনাড়ায় এক বন্ধু র বাড়ি গেছিলাম বুঝলি...” মামার কথা শুনে আমি বেশ একটা গল্প গল্প গন্ধ পেলাম। চ�োখেমুখে একরাশ উৎসাহ নিয়ে বললাম, “কিছু ঘটেছিল বুঝি?”

56 আল�োক

শারদীয়া 2022

মামা বিস্কুটে আরেকখান কামড় বসিয়ে বলল, “নইলে আর কথাটা পাড়লাম কেন রে ব্যাটা?” বলেই এক চু মকে বাকি ু চাটু কু শেষ করে চায়ের কাপটা পাশে রেখে শুরু করল... “দীর্ঘদিন বেসরকারি অফিসে কেরানির চাকরি করার পর আমার বন্ধুবরের ইচ্ছা হয়েছিল নিজের কিছু করার। পুঁজিও কিছু জমিয়েছিল কষ্ট করে। অনেক ভাবার পর সে ঠিক করে যে একটা প্রকাশনী খুলবে।এবং তার প্রকাশনীর প্রথম বই হিসেবে সে আমারই লেখা একটি ভ�ৌতিক উপন্যাস ছাপিয়ে বের করবে। তাই প্রাথমিক আল�োচনার জন্য বন্ধু আমায় তার কাকিনাড়ায় তার ডেরায় ডেকে পাঠাল। বলল, “চলে আয় ভাই, বেশ চু টিয়ে কয়েকদিন আড্ডা মারা যাবে, সঙ্গে প্রকাশনী নিয়েও জব্বর আল�োচনা হবে। প্রতু ত্তরে আমি কিঞ্চিৎ গদগদ হয়ে হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তা ভায়া খাওনদাওনের ব্যবস্থা যুতসই হবে ত�ো?” বন্ধুবর হেসে বলল,“ও জিনিস নিয়ে এই শর্মা ক�োন�োদিন কার্পণ্য করে না।” বন্ধুবরের এহেন সুপ্রস্তাব শুনে মনটা আমার বড়ই উৎফু ল্ল হয়ে উঠল। আমিও তাই তল্পিতল্পা গুটিয়ে রওনা দিলাম কাকিনাড়ার উদ্দেশ্যে।” বন্ধু র বাড়ি প�ৌঁছে প্রথম কয়েকদিন বেশ জম্পেশ কাটল। ক�োনওদিন চিংড়ির মালাইকাড়ি, ক�োন�োদিন আবার কচি পাঁঠার ঝ�োল.... পেট এবং মন উভয়ই খুশি খুশি হয়েছিল। অতঃপর জায়গাটিও ছিল বেশ নিরিবিলি। ভাবলুম এখানে যখন আছি কয়েকদিন, বন্ধুবরের প্রকাশনীর জন্য লেখাটি এখানেই শুরু করে ফেলি। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। শুরু করে ফেললাম আমার লেখার কাজ। তারপর একদিন রাতের বেলায় লিখতে লিখতে একটু ঝিমুনি এসে গেছিল, অমনি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনে ঝিমুনিটা

কেটে গেল। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দ�োতলার জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, কিন্তু কিছু ই দেখতে পেলাম না। বেড়াল টেড়াল ভেবে শুয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে বেশ ভাল�োরকমের একটা গ�োলমালের শব্দে ঘুম ভাঙল আমার। আমি একটা মস্ত আড়ম�োড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসলাম। তারপর বারদুয়েক চ�োখ কঁচলে দ�োতলা থেকে নীচের তলায় নেমে এলাম। বন্ধু র বাড়ির বিপরীতে যে চালের দ�োকান আছে সেখান থেকেই আসছে গ�োলমালের শব্দটা। বন্ধুবর স�োফায় বসে সকালের চা খাচ্ছিল, তাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, “ওপাশের চালের দ�োকানে গতকাল রাতে চ�োর এসেছিল। তালাটা ভাঙা।” আমি বুঝলুম আগের দিনের শব্দটা ব�োধহয় বেড়ালের ছিল না। যাইহ�োক আমি আর কথা বাড়ালাম না। প্রাতঃকৃত্য সারতে চলে গেলুম বাথরুমে। বিকেলের দিকে পাড়ায় হাঁটতে বেরিয়ে পুর�ো ব্যাপারটা শুনলুম। চ�োর বাবাজি নাকি মাঝরাতে তালা ভেঙে ঢু কেছিলেন চু রি করতে, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল এই যে সে কিছু ই চু রি করতে পারেনি। চালের দ�োকান থেকে চাল ছাড়া আর কিই বা নেবে। ক্যাশ বাক্সেও তালা ছিল, সেটা ক�োনও কারণে বাবাজী ভাঙতে পারেননি। মনে মনে ভাবলুম যে এত কষ্ট করলে আমি অন্তত কিল�ো বিশেক চাল নিয়ে যেতু ম। অন্তত সারা মাসের ভাতটু কু ত�ো নিশ্চিত হত। এর দিন দুয়েক পরে পাড়ায় আবার চু রি হল। এবার কিন্তু চ�োর বেশ বড়সড় হাত মেরেছিল। একটি স�োনার বালগ�োপাল ঝেড়ে দিয়ে চম্পট দিয়েছিল চ�োর। চু রিটা হয়েছিল আমার বন্ধুবরের বাড়িটি থেকে তিনটি বাড়ি ছেড়ে চ�ৌরাসিয়া নিবাস নামক বাড়িটায়। বাড়ি ত�ো নয় সে এক পেল্লাই অট্টালিকা। বাড়ির মালিক জীবন

চ�ৌরাসিয়ার স�োনার কারবার। জিনিসটা নাকি তার ঘরের মধ্যেই আলমারির মধ্যে থাকত। সেদিন নাকি কি একটা কারণে আলমারি খুলতেই দেখেন যে স�োনার বালগ�োপাল হাওয়া। এরপর থেকে পাড়ার ল�োকে বেশ সতর্ক হয়ে গেল। আমি আর ওসব নিয়ে না ভেবে নিজের উপন্যাসে মন দিলাম। দ�োতলার ঝু ল বারান্দায় বসে আমার লেখা বেশ চলছিল। লিখতে লিখতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করলাম। একটা র�োগা মত�ো ফরসা ছেলে প্রায়শই সামনের চালের দ�োকানে আসছে। কিছু ই কেনে না, ফিসফাস কথা বলে আবার চলে যায়। একদিন ক�ৌতূ হলবশত চালের দ�োকানের মালিক রবিনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার‍টা। তিনি বললেন, “ওটি ত�ো ওই চ�ৌরাসিয়াদের ছেলে। সে নাকি চালের ডিলারশিপ নেবে, তাই মাঝেসাজে এটা ওটা জানতে আসে, আমিও বলি যতটা পারি।” আমিও সবটা শুনে ঘাড় নাড়লাম। ওই ঘটনার দিন দুয়েক পরের ঘটনা। আমি যথারীতি রাত জেগে ভূ তের গপ্প লিখছি। এমন সময় আমার ভীষণ সিগারেট পেল। প্যাকেট থেকে এক পিস বের করে ধরালাম। তারপর জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফু কফু ক করে সিগারেটে টান দিচ্ছিলাম আর নিজের উপন্যাসের কথা ভাবছিলাম এমন সময় অন্ধকার রাস্তায় কি যেন একটা নড়ে উঠল। আমি চ�োখ কচলে আরেকবার ভাল�ো করে দেখার চেষ্টা করলাম। অন্ধকারটা একটু চ�োখে সয়ে যেতেই নড়নচড়নের উৎসটাকে দেখতে পেলাম। দেখলাম একটা মিশমিশে ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগ�োচ্ছে সামনের বন্ধ চালের দ�োকানের দিকে। আমি আর দেরি করলাম না। সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিয়ে স�োজা নেমে

57 আল�োক

শারদীয়া 2022

এলাম একতলায়। তারপর সদর দরজা খুলে পা টিপে এগিয়ে গেলাম চালের দ�োকানের দিকে। দ�োকানের গেটের কাছাকাছি প�ৌঁছতেই দেখি চ�োর বাবাজি মনের সুখে তালার মধ্যে অ্যাসিড জাতীয় কিছু একটা ঢালছে। আমি চু পিচুপি ওর পেছনে গিয়ে এক লাথি মারলাম সজ�োরে। চ�োর বাবাজী ছিটকে পড়লেন সামনে মাটিতে। হাত থেকে অ্যাসিডের শিশি পড়ে ভেঙে চু রমার হয়ে গেল। আর চ�োরবাবাজীও ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেন। আমি এইবার এক্কেবারে হিন্দি সিনেমার হির�োদের মত�ো চ�োরের বাবাজীর উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। তারপর তারস্বরে চিৎকার করে উঠলাম, “চ�োর.... চ�োর..... চ�োর ধরেছি, চ�োর।” রাত বিরেতে আমার এমন গলা ফাটান�ো চিৎকার শুনে আসেপাশের সকলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। চালের দ�োকানের মালিক রবিনবাবুও বেরিয়ে এলেন হন্তদন্ত হয়ে। সবশেষে ঢু লুঢুলু চ�োখে বের�োল�ো আমার বন্ধুবর। ততক্ষণে চ�োর বাবাজী একেবারে নেতিয়ে গেছেন। আল�োটাল�ো জ্বালার পর পালা এল চ�োর মুখ থেকে রুমাল সরান�োর। শুভ কাজটা আমিই সম্পন্ন করলাম।৷ মুখ থেকে রুমাল সরাতেই ওইখানে উপস্থিত সকলে যারপরনাই তাই চমকে উঠল। আমি যদিও মুহূর্তের মধ্যে ব্যাপারটা ধরে ফেললাম। তখন আমার ঠ�োঁটে খেলে গেল গর্বের চওড়া হাসি। তক্ষুণি চালের দ�োকানের মালিক রবিনবাবু সবিস্ময়ে বলে উঠলেন, “আরে এ যে চ�ৌরাসিয়াদের ছেলে।” বন্ধুবর বলল, “যার বাড়ি থেকে স�োনার বালগ�োপাল চু রি যায় সে যে আবার চালের দ�োকানে চু রি করতে ঢ�োকে এমনটা ত�ো জানা ছিল না!” আমি মুচকি হেসে বললাম, “ও ত�ো চু রি করতে আসেনি, ও এসেছিল চ�োরাইমাল উদ্ধার করতে।”

“মানে?” বলল বন্ধুবর কিন্তু চমকে উঠল সকলে। আমি এবার গলাটা খাঁকড়ে নিয়ে বললাম, “রবিনবাবু আপনি যদি আপনার চালের বস্তা গুল�ো ভাল�ো করে সার্চ করেন তাহলে আশা করছি ওতেই চু রি যাওয়া স�োনার বালগ�োপাল পাওয়া যাবে। এবং হলও তাই। কয়েক মিনিটের খানাতল্লাশির ফলস্বরূপ বালগ�োপালটি একটি মিনিকেটের বস্তার ভিতরে পাওয়া গেল। চ�োরাইমাল পাওয়া গেলেও, ঘটনাটি পাড়ার ল�োকেদের কাছে তখনও পরিষ্কার ছিল না। অতঃপর আমাকেই মাঠে নামতে হল। আমি বললুম, “জীবন চ�ৌরাসিয়ার আলমারি থেকে বালগ�োপাল চু রি করেছিল তারই এই গুণধর ছেলে। কিন্তু চ�োরাই মাল নিয়ে পালান�োর সময় আচমকাই সে তার মত পালটায় এবং এক চালের দ�োকানের তালা ভেঙে একটি চালের বস্তায় জিনিসটি লুকিয়ে দেয়। ভাবনা ছিল এই যে কয়েকদিন পর ব্যাপারটি ঠান্ডা হলেই ফাঁকতালে চ�োরাইমাল হাতিয়ে নেওয়া যাবে। আর চালের দ�োকানের ভর্তি বস্তা ত�ো আর মাস খানেকের আগে ফু র�োবে না! তবে চ�োরের মন ত�ো, খুঁতখুঁত ত�ো করবেই। তাই মাঝে মধ্যেই এই ছ�োকরা রবিনবাবুর কাছে এসে চালের ডিলারশিপ নেওয়ার গুল দিত, আর উক্ত বস্তাটিকে চ�োখে চ�োখে রাখত। চ�োর হয়ত�ো নিজের উদ্দেশ্যে সফল হয়েই যেত যদি না আমি আজ সিগারেট নিয়ে জানলায় দাঁড়াতু ম।” বলেই আমি তাকিয়েছিলুম চ�োর বাবাজীর মুখের দিকে। সে কাঁদ�ো কাঁদ�ো গলায় বলল,“পিতাজি হামায় ব�োর্ডিং স্কুলে পাঠাবেন বলেছিলেন,তাই হামি ভেবেছিলাম পিতাজির বালগ�োপাল চু রি করে ইঁহাসে বহত দূর পালাব, কিন্তু সেদিন বালগ�োপান লিয়ে বার হওয়ার পর আমার মনে হল যে এই জিনিস নিয়ে আমি ক�োথাওই পালাতে পারব

না। বেঁচতে ভি পারব না, তাহলেই ধরা পড়ে যাব। কিন্তু জিনিসটা নিয়ে বাড়ির ফেরাও ঠিক বাত হবে কিনা সমঝ নহি পায়া। তাই ওটা আমি এই চালের বস্তায় ছু পিয়ে দিয়েছিলাম।” “তার মানে জীবনবাবুর বালগ�োপাল চু রি আর রবিনবাবুর চালের দ�োকানে চ�োরের হানা, দুট�োই একই দিনে ঘটেছিল!” বন্ধুবর বলল। “একদম ঠিক। কিন্তু জীবনবাবু তার সাধের বালগ�োপাল খ�োয়া যাওয়ার কথা জানতে পারেন ঘটনার দিন দুয়েক পর। তাই সকলের মনে হয়েছিল দুটি ঘটনা আলাদা।” আমার এমন জলের মত�ো ব্যাখ্যা শুনে ঘটনাটি আর কার�োরই বুঝতে বাকি রইল না।

চ�োরবাবাজীর অকপট স্বীকার�োক্তির পর অনেকেই পুলিশ ডাকার কথা বলছিলেন, তবে আমি বললুম বাপের জিনিসই যখন চু রি করেছে তখন আগে বাপকে খবর দেওয়াটাই ঠিক কাজ হবে। তৎক্ষনাৎ জীবন বাবুকে ডেকে আনা হল। ছেলের কান্ড দেখে ত�ো যথারীতি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। সকলের সামনেই ছেলেকে একটা কষিয়ে থাপ্পড় মারলেন জীবন বাবু, তারপর কলার ধরে টেনে নিয়ে গেলেন নিজের বাড়ির দিকে। আমার সাহসিকতা নিয়ে মাঝরাতে বেশ খানিক আলাপ আল�োচনা চলল। সব শেষে গর্বের চওড়া হাসি হেসে, বুক ফু লিয়ে ফিরে এলাম পূর্বোক্ত দ�োতলার ঘরে।

তারপর এই রহস্যভেদের মূল কান্ডারী, আমার প্রিয় সিগারেটের প্যাকেট আর ভ�ৌতিক উপন্যাসের খসড়াটিকে প্রাণ ভরে ধন্যবাদ জানালাম।” গল্প শেষ হতেই ধূমমামা হাসল আলত�ো করে, তারপর বলল, “কী রে দীপু কেমন লাগল ত�োর মামার গ�োয়েন্দাগিরি?” আমি চ�োখ টিপে বললাম, “জম্পেশ।” আলত�ো হেসে ধূমমামা উঠে পড়ল চাতাল ছেড়ে। বৃষ্টিটা ততক্ষণে প্রায় কমেই গেছে। মামা আধভেজা চটিটা পায়ে গলিয়ে বারান্দা থেকে নেমে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেল রাস্তার ওপারের অন্ধকারে।

কবিতা, গল্প, উপন্যাস এর একক বই প্রকাশ করুন। রয়ালটিসহ বিভিন্ন সর্বাধিক সুয�োগ সুবিধা গ্রহণ করুন।

য�োগায�োগ: ৯৬১৪৯৯৩১৩৭

আল�োক প্রকাশনী

9614993137, [email protected]

58 আল�োক

শারদীয়া 2022

ল�োকান্তর সুমনা সাহা লাল-নীল আল�ো দেখতে দেখতে, দুলুনি অনুভব করতে করতে প্যাঁ প�োঁ প্যাঁ প�োঁ তীব্র হর্নের শব্দে আচ্ছন্ন হয়ে কল্যাণের দারুণ ঘুম পেল। মুখের উপর ঝু ঁকে পড়া বুবনু ের উদ্বিগ্ন মুখ, “কতবার বলেছি বাবা, ড্রিংক করাটা কমাও!” সফটওয়্যার কম্পানিতে উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ার সুজন সরখেল বাবার হার্ট অ্যাটাকের সংবাদ পেয়েই পড়ি কি মরি করে ছু টে এসেছে। মা-মরা ছেলে, বাবা আজও ছ�োট ছেলেটির মত মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ঘুমান�োর আগে। নাম কি? কল্যাণময় সরখেল। বয়স? সিক্সটি এইট, উমম... সিক্সটি সেভেন।

59 আল�োক

শারদীয়া 2022

ওকে, এই টাকাটা জমা করুন ওই কাউন্টারে। ইতিমধ্যে কল্যাণের ঘুম ভেঙেছে। অনেকদিন বাদে শরীরটা অসম্ভব ফ্রেশ লাগছে। কী অপূর্ব ওয়েদার আজ! এখন কি শীতকাল? নাকি বসন্ত? বাঃ ভারি সুন্দর ফু লের গন্ধ আসছে ত�ো! আর অনেক পাখিও ডাকছে! কল্যাণ শুয়ে শুয়ে চারপাশটা ব�োঝার চেষ্টা করে। বুবন ু কি তাকে চেঞ্জ-এ নিয়ে এসেছে? মসুরিতে? চমক লাগে পরমা সুন্দরী এক নার্সএর প্রবেশে। ভু বনভ�োলান�ো হাসি দিয়ে মেয়েটি বলে, “কী? এখন কেমন লাগছে?” কল্যাণ কান-এঁট�ো হাসি সমেত ঘাড়

কাঁত করে, “খুব ভাল! আচ্ছা, বুবন ু ক�োথায়? এটা কি ক�োন নার্সিং হ�োম, নাকি হ�োটেল?” মেয়েটি চিন্তিত মুখে কল্যাণের দিকে তাকায়, “ওহ�ো, আপনার ত�ো দেখছি পাস্ট মেমরি রেমনেন্টস থেকে গেছে! শুনুন, এটা ভু বর্লোক। ভূ -ল�োকের ঠিক ওপরে। আপনি ভাল ল�োক। সম্ভবত এরপরের ল�োকে, স্বর্লোকে, মানে স্বর্গে আপনাকে পাঠান�ো হবে। তার আগে কিছু দিন এই ল�োক উপভ�োগ করুন। আমাদের এদিকে এখন অ্যাটেন্ডেন্ট কম আছে। তাই আপনাকেই কষ্ট করে একটু দেখেশুনে নিতে হবে। তার আগে আপনার মেমরিটা ডিলিট করি।” মেয়েটি তার চাঁপার কলির মত আঙুল

কল্যাণের দুই ভ্রু-র মাঝে আজ্ঞাচক্রে মৃদু চাপ দিয়ে রাখল কিছু ক্ষণ। কল্যাণের মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল। “বুবন ু , বুবন ু , আমার লেখাগুল�ো ত�োর জিম্মায় থাকল। দুট�ো শারদ সংখ্যার লেখা এখনও প�োস্ট করা হয়নি। মহালয়ার পর নতু ন বই বের�োবে। তু ই সব বুঝে নিস...।” কল্যাণ ঘুরতে ঘুরতে একটা নদীর ধারে চলে এল। আগে কখনও দেহে-মনে এত আরাম ব�োধ হয়নি। শরীরটা মেঘের মত হালকা হয়ে গেছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ক�োথাও একটা আঁচড়ের দাগও নেই, একেবারে অক্ষত। খিদে-তেষ্টা সব গায়েব। ছ�োটবাইরে, বড়বাইরের বেগও আসছে না। খানিক ঘ�োরাঘুরি করতে করতে দূরে ছেলেবেলার বন্ধু অশ�োককে দেখতে পেল। মেঘের মত ভাসতে ভাসতে ও গিয়ে স্পর্শ করল অশ�োকের গা। অশ�োক চমকে উঠে দেখল ওর দিকে, তারপর জড়িয়ে ধরল, অথচ ওরা মেঘের মত একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গেল না। কল্যাণ অবাক হয়ে বলল, “অশ�োক, ত�োর কী সুন্দর চেহারা হয়েছে রে! আগে ত�ো এত সুন্দর ছিলিস না?” “আরে তু ইও কি কিছু কম যাচ্ছিস? একেবারে হির�ো লাগছে! হবে না? এটা মর্ত্যল�োক নয় ত�ো! এখানে আমাদের দিব্যদেহ হয়েছে। দেখ না, আমার ত�ো এর পরের ল�োকে যাওয়ার প�োস্টিং ন�োটিফিকেশন এসে গেছে। এই ল�োকের একজন প্রতিনিধি এসে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে ছু টিতে আছে, তাই আমার যাওয়া পিছিয়ে গেছে। ভাগ্যিস! তাই ত�োর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।” কল্যাণ অবাক হয়ে গেল অশ�োকের কথা শুনে। এতক্ষণে সবকিছু পরিষ্কার হল। তাহলে ও মরে গেছে। ও বলল, “বুবনট ু াকে ভারি দেখতে ইচ্ছে করছে। কী করছে ও কে জানে?”

60 আল�োক

শারদীয়া 2022

“ওমা সেকি? এখনও দেখতে পাসনি? চাইলেই দেখা যায় ত�ো! এখানে ত�ো কাল ব্যবধান নেই। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে মধ্যে যে ব্যবধানগুল�ো থাকে, এখানে সেরকম থাকে না। একদন খ�োলা পাতা। ত্রিকালের সবকটা প ৃষ্ঠাকে খুলে ন�োটিস ব�োর্ডে সাঁটিয়ে দিলে যেমন হয়, তেমন করেই তু ই সবটা দেখতে পারিস। কিন্তু সেটা শুধু এখানেই। এরপরের ল�োকে সেসব মুছে যাবে ত�োর মেমরি সিস্টেম থেকে।” কল্যাণ ব্যাজার মুখে বলল, “কিন্তু ঐ মেয়েটা আমার কপালে আঙুল ঠেকিয়ে কিসব করে দিল, তারপর থেকে সব ঝাপসা হয়ে গেছে।” অশ�োক আফস�োসের সুরে বলল, “তু ই কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিলি? মানে আগেকার কথা? আমি ত�ো মুখই খুলিনি। তাই ব্যাটারা কিছু করেনি। এরা এফিসিয়েন্ট নয় ততটা। ত�োর স্মৃতি ঝাপসা করে থাকলে মেয়েটা অন্যায় করেছে, নতু ন প�োস্টিং ব�োধহয়, তাই জানে না। কিন্তু তবুও ত�ো তু ই আমাকে চিনতে পেরেছিস? ছেলের কথাও মনে পড়ছে। বুবন ু ত�োর ছেলে ত�ো? তার মানে পুর�োপুরি মেমরি ডিলিট করতে পারেনি। আয়, আমি ত�োকে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমিও প্রথম প্রথম এসে খুব দেখতাম। ত�োর ব�ৌদি কী করছে। এখন আর ইচ্ছে করে না। টানটা আলগা হয়ে গেছে।” অশ�োক কল্যাণের গা ঘেঁষে দাঁড়াল�ো, ওর হাতটা ধরে বলল, “হাতের তালুতে তাকিয়ে দেখ।” ভূ র্লোকে সুজন নিরিবিলিতে একটা ক�োকাক�োলার ব�োতলে খানিকটা বিয়ার ঢেলে নিয়ে বসেছে। বাবা লেখালিখি করতেন। মা মারা যাওয়ার পর সুজনকে মানুষ করতে গিয়ে অফিস সামলে হিমিসিম খেতেন।

তবে রিটায়ারমেন্টের পর নিয়মিত লিখতেন। বড়সড় পত্রিকায় ছাপা না হলেও অনেকগুল�ো ছ�োট পত্রিকায় বাবা লিখতেন, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, রম্যরচনা—এইসব। সুজন ক�োনদিন বাবার লেখা তেমন করে পড়েনি। বাবার খুব ইচ্ছা ছিল সব লেখাগুল�ো নিয়ে একটা বই ছাপিয়ে বের করার। একজন প্রকাশকের সঙ্গে কথাবার্তাও চলছিল। সুজন শুনেছিল, ক�োন এক প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি জমা করেছেন বাবা, পূজ�োর আগে বই বের�োবে। এই নিয়ে বাবা খুব এক্সাইটেড ছিলেন। বলতেন, “সুজন, বইটা বেরিয়ে গেলে আমি নিশ্চিন্ত। শান্তিতে মরতে পারব। কী জানিস? লেখাগুল�ো সন্তানের মত। তাদের আল�োর মুখ দেখাতে না পারলে শান্তি নেই।” সুজন আদুরে গলায় বলত, “আর ত�োমার ব�ৌমার মুখ দেখবে না? নাতিপুতিদের?” কল্যাণ হতাশ চ�োখে সুজনের দিকে তাকিয়ে থাকতেন, তারপর নিঃশ্বাস ফেলে বলতেন, “সে কি আর তু মি হতে দেবে? ত�োমরা খালি প্ল্যানই করছ। কবে বিয়ে করবে আর? আমি মরে গেলে?” “আরে দাঁড়াও না। মরে যাওয়ার এত তাড়া কিসের? ওর পিএইচডিটা কমপ্লিট হতে দাও। একটা লেকচারারশিপ জয়েন করুক, তারপর বিয়ে। ও নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করবে না ঠিক করেছে।” সুজনের বান্ধবী ও বাগদত্তা শ্রেয়া। এবাড়িতেও এসেছে অনেকবার। অনেকবছরের সম্পর্ক ওদের। কল্যাণ মেয়েটিকে পছন্দও করে। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতিগতি ব�োঝা ভার। বিয়ের পরেও ত�ো পড়াশুন�ো বা চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। যা হ�োক, কল্যাণ নিজের লেখাপড়া নিয়ে মেতে থাকে। তবে ইদানীং তার মনটা খারাপ ছিল।

গত দশ বছর ধরে কম লেখালিখি করেনি। একটা বই বের করবার ইচ্ছে অনেকদিনের। কিন্তু ক�োন প্রকাশকই টাকা না নিয়ে বই ছাপতে চায় না। বলে, “আজকাল বইয়ের বাজার খারাপ। নামী লেখকের বইই বিক্রি হতে চায় না। নতু ন লেখকের বই আমরা ক�োন রিস্কে ছাপব?” ভু ল কিছু নয় কথাটা। তবে নিজের গাঁটের কড়ি খরচা করে বই বের করা? কল্যাণের ঠিক মনঃপূত হয় না। এই নিয়ে বন্ধুবান্ধব মহলে নানা কথা আল�োচনা হয়। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা কাউকে কাউকে বলেওছেন। ঠ�োঁটকাটা বলে তার বদনাম আছে। মুখের উপর তিনি সত্যি কথাটা বলে দেন বলে বাজারে তার শত্রু ও নিন্দুকের অভাব নেই। তবে কেউ কেউ এই সত্যবাদিতার জন্য ভাল�োও বাসে। কল্যাণের নাম এখন উঠতি লেখক মহলে সুপরিচিত। তবে এই বইটা প্রকাশক ছাপতে রাজি হয়েছেন। শর্ত একটাই, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত জনের মধ্যে অন্তত ৫০ কপি বিক্রি করিয়ে দিতে হবে। কল্যাণ

তাতে রাজি। ভেবেছিল বুবনকে পুজ�োয় ু সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু ইদানীং বুকের বাঁ দিকে মাঝেমধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। বুবনকে বলা হয়নি। বললেই ব্যস্ত ু হবে। ডাক্তারের কাছে যেতে বলবে। সুজন ভাবছিল। সেই বুকের ব্যথাই কাল ডেকে আনল�ো। বাবা চলে গেল। অথচ আরও কিছু দিন থাকতেই ত�ো পারত! বাবার পারল�ৌকিক কাজ করার জন্য অফিস থেকে ছু টি নিয়েছে সে। এ-কদিনে রাত্রে বসে বসে বাবার লেখাগুল�ো সব পড়ে ফেলেছে। কদিন ধরে শুধুই ফ�োন আসছে। বাবার যে এত অনুরাগী বন্ধুবান্ধব ছিল, সুজন টেরই পায়নি! ফ�োন এসেছে নামীঅনামী নানা প্রকাশকের। তারা সকলেই কল্যাণময় সরখেলের অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশ করতে চায়। তাকে নিয়ে সাহিত্য-শ�োকসভা আয়�োজন করতে চায় ও তারই জন্য সুজনকে কিছু বলবার অনুর�োধ করেও এসেছে বেশ কিছু ফ�োন। সুজন সব লেখা পড়েছে। এত সহজে ও বাবার সাধের লেখাগুল�ো

একে তাকে দিয়ে দেবে না। ও আজকের ছেলে। ইম�োশনাল হয়ে ক�োন কাজ করবে না। ফেল�ো কড়ি, মাখ�ো তেল। ত�োমরা বাবাকে নিয়ে শ�োক করার ছলে নিজেদের পাবলিসিটি করবে, কত বড় সাহিত্য-দরদী, তা দেখাবে, আর তার জন্য মূল্য দেবে না? রীতিমত পেমেন্ট পেলে তবেই লেখা ছাড়বে সুজন। সুজন বসে আছে। সামনে ছড়ান�ো প্রয়াত সাহিত্যিক কল্যাণময় সরখেলের লেখালিখি। কল্যাণ দেখছে। সুজনকে তার লেখার সামনে বসে থাকতে দেখছে। কল্যাণের মেঘ-চ�োখে কি জল এল? ছবিটা ধীরে ধীরে মেঘের মত ঘেঁটে যাচ্ছে। মুছে যাচ্ছে ভূ র্লোক। ডাক আসছে ল�োকান্তরে যাওয়ার। মুছে যাচ্ছে কল্যাণ, সুজন, অশ�োক সব অবয়বের মায়া। মেঘের মধ্যে দিয়ে মেঘ-শরীরে কল্যাণ চলেছে ল�োকান্তরের পথে।

কবি কথা আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং

সমাজ দর্পণ এর চ�োখ দিয়ে দেখা কিছু ছ�োট ছ�োট ঘটনাগুল�োকে আমার সরল ভাষায় লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করলাম তারই প্রতিফল "চেনা দৃষ্টি" l আমার বিশ্বাস আপনাদের জীবনের ক�োন�ো না ক�োন�ো ঘটনার সঙ্গে হয়ত�ো এর মিল খুঁজে পাবেন খুঁজে পাবেন আপনাদের চ�োখের সামনে ঘটে যাওয়া এমন অনেক ঘটনা আপনার চেনা দৃষ্টি l

প্রকাশিত হতে চলেছে দেবাশীষ ঘ�োষের একক কাব্য গ্রন্থ:

"চেনা দৃষ্টি"।

সারা দেশের যে ক�োন স্থানে বাড়িতে পাওয়ার জন্য য�োগায�োগ করুন: ৯৬১৪৯৯৩১৩৭ প্রকাশক: আল�োক প্রকাশনী মূল্য: ১৮০/- (ডাক খরচসহ) 61 আল�োক

শারদীয়া 2022

অনামিকা অভিষেক সরকার "অমিত! ক�োথায় তু মি? আমার ভীষণ ঠান্ডা লাগছে , আমার কাছে এস�ো। ত�োমার শরীরের একটু উষ্ণতা পেলেই আমি আবার আগের মত সজীব হয়ে উঠব। শুনতে পাচ্ছ? আমার কথা? অমিত!" আজ পরপর তিনদিন ধরে এই একই স্বপ্ন দেখতে পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় অমিতের। স্বপ্ন নয় মনে হয় এ যেন এক বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন ! "অনামিকা? কিন্তু একি করে সম্ভব?" ডিসেম্বরের হাড় কাঁপান�ো শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম ওর কপালে জমতে থাকে। সেদিন অফিসে গিয়েও কাজে মন বসছিল না ওর। বারংবার এই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছু টি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে অমিত। কিন্তু অনামিকা!... কিছু ক্ষণের জন্যে চ�োখ বুঝে আসে ওর। একমাস আগেকার ঘটনা, অমিতের সঙ্গে ঋষিকেশে রিভার রাফটিং করতে গিয়েছিল অনামিকা। অনামিকার ভীষণ প্রিয় অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। এর আগেও অনেকবার রিভার রাফটিং করেছে সে। জলের প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করত অনামিকা। কিন্তু অমিত স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি অনামিকার এই সফর ওর জীবনের অন্তিম ... রাতের বেলায় আবার সেই একই স্বপ্ন। উফঃ এই দৃশ্য র�োজ

62 আল�োক

শারদীয়া 2022

একটু একটু করে গিলতে বসেছে অমিতকে।অনামিকাকে কেনই বা সে বাঁচাতে পারল না? সেদিন যখন খরস্রোতা নদীর উথাল পাথাল ঢেউ টেনে নিয়ে গেল অনামিকাকে তখন কিছু ক্ষণ-এর জন্যে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল অমিত। সেদিন ওর মনে হয়েছিল এক প্রকান্ড দানব এসে অনামিকাকে নিজের কাছ থেকে বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল । শত চেষ্টা করেও অমিত সেদিন কিছু করতে পারে'নি। পাগলের মত খুঁজেও অনামিকার দেহ ফিরে পায়'নি সে। এক অতল গভীরে চিরদিনের জন্যে তলিয়ে যায় সে। অমিতের সারা শরীরে কম্পন ধরে যাচ্ছে। কম্বলের মধ্যে থেকেও সেই উষ্ণতা আজ ক�োন�ো কাজে আসছে না। শরীরের ওপর এখন এক অসহ্য চাপ অনুভব করছে সে। "অমিত ! আমি আর পারছিনা ওখানে থাকতে, এতদিন ধরে সেই হিমশীতল খাঁচায় বন্দি হয়ে রয়েছি আমি। বহুবার ত�োমার কাছে আসবার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বারবার সেই অতল জল রাশি আমায় টেনে নিয়ে আর�ো গভীরে নিয়ে যেত। "আজ ত�োমার শরীরের উষ্ণ পরশের আশায় অনেক কষ্টে আজ ফিরতে পেরেছি। লক্ষীটি! আমায় আজ ফিরিয়ে দিও না।

দীর্ঘায়ু ম�ৌমিতা সাহা উনি আপনার কে হন? - উনি আমার ঠাকুমা। উপ�োষ করে করে শরীরের এই হাল করেছেন। কত বারন করেছি ক�োন কথাই শ�োনেনা। র�োজই ক�োন না ক�োন ব্রত করেন। বলে উপ�োষ করলে দীর্ঘায়ু হয়। হাসপাতালের আইসিইউ ৭ এবং ৮ নম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুল�ো হচ্ছিল�ো। দিদির পাশের বেডে শুয়ে থাকা বছর আশির ভদ্রমহিলার মুখের দিকে ভাল করে তাকালাম। শীর্ণ চেহারা। মাথায় শনের মত সাদা চু ল। বয়সের ভারে চামড়া কুঁচকে গেছে। নাকটা চ্যাপ্টা। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে ব�োধহয় মুখ খ�োলা। কিছু দাঁত অবশিষ্ট কিন্তু সেগুল�ো লালচে এবং ভাঙা। চ�োখ বন্ধ। শ্বাসও পড়ছে খুব ধীরে। বুড়িটা মনে হয় বেশিদিন বাঁচবে না। এরকম বলছ কেন দিদি। আড়চ�োখে দেখলাম নাতি তখন ঠাকুমার মাথার হাত ব�োলাচ্ছে। আজ যখন ডাক্তার আমায় বলল জেনারেল বেডে দিয়ে দেবে, উনি জেগে ছিলেন। আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে কেঁদে দিলেন। ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি এগিয়ে গিয়ে হাতটা ধরলাম। কি ঠাণ্ডা হাতখানা! এটু কু বলার পর রুগি দেখার সময় শেষ হওয়ার ঘণ্টা বেজে

63 আল�োক

শারদীয়া 2022

গেল�ো। বাইরে এসে বসলাম। কিছু ক্ষণ পর সামনে দিয়ে দিদিকে আইসিএউ থেকে জেনারেল বেডে নিয়ে যাওয়া হল। তার আধ ঘণ্টা পর ৭ নম্বরের ভদ্রল�োকের ডাক পড়ল ভেতরে। উনি বেরলেন কাঁদতে কাঁদতে। পারলাম না বাঁচাতে ঠাকুমাকে। শ�োনামাত্র ওনার হাতদুট�ো ধরলাম। কিছু ক্ষণ পর ডাক্তাররা, নার্সরা কেবল ছ�োটাছু টি করছে আইসিএউ আর জেনারেল রুমের ভেতর আর আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। এক সময় আমাদের দুজনের ডাক পড়ল ভেতরে। ডাক্তার আমাদের নিয়ে গেল ৭ নম্বরের কাছে। কিন্তু একি! সেখানে র�োগা শরীরে নিথর হয়ে যে শুয়ে আছে তার মুখ ত�ো আমার দিদির! অথচ দিদিকে আমাদের সামনেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছু টলাম জেনারেল বেডে। ওখানে প�ৌঁছে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল�ো। দিদির বেডে, স্থুলকায় শরীরে শুয়ে আছে সেই বুড়ি। হাসতে হাসতে বলল, বলেছিলাম না উপ�োষ করলে দীর্ঘায়ু হয়। হলুদ জ্বলজ্বলে চ�োখে হাত তু লল। দিদির কথা মনে পড়ে গেল�ো। তবে কি ওই হাতের ছ�োঁওয়াতেই………।

ইসক এ ফরমান রাই পারমিতা আইচ দস্তক অউর আওয়াজ ত�ো কান�ো কে লিয়ে হ্যায় য�ো রূহ ক�ো শুনাই দে উসে খাম�োসি ক্যাহতে হ্যায়... " সুগন্ধী খাতা ও খাগের কলমটা কেঁপে উঠল�ো জ�োরাল�ো আল�োকে... " জ্বালবে না। আল�ো জ্বালবে না। সব আল�ো নিভিয়ে দাও..." নাবালিকার অবুঝ আবদারের মত�ো অভিমানী চিৎকারে ভরে ওঠে ঘর। " জ�ো হুকুম নবাব! কিন্তু রাণিমা যে বললেন ..." " আঃ! চু পকর। আজ একটু একা থাকতে দাও আমাকে। " খানসামা চলে যেতেই কারাগারসম রুদ্ধ গ ৃহের একান্ত উন্মুক্ত বাতায়নে ছু টে যান তিনি। আজ�ো পূর্ণচন্দ্রমা বিছিয়েছে তার ম�োহমায়া সারা আকাশময়। দুহাত বাড়িয়ে ভিজছেন তিনি প্রেম জ্যোৎস্নায়। নিমীলিত চ�োখের পাতায় এখন শুধুই তারামতীর যাতায়াত। তারামতী নরম হাতে এগিয়ে দিচ্ছেন খাগের কলম, পত্রপুট... " কুছ ত�ো হ্যায় তু ঝসে মেরা রিস্তা আভি ভি বরনা ক�োই গ্যায়র ইতনা ভি ইয়াদ ন্যাহি আতা... " " ছু ঁয়ে দেখছ�ো ত�ো তারা আজ�ো আমার লেখনীময় শুধুই তু মি। বুকের কলিজাতে একটাই ত�ো নাম...তাও কেন ছেড়ে গেলে আমাকে!" ××××××××× " শেষে কিনা হায়দ্রবাদের গ�োলকুন্ডার কুতু বশাহী রাজপরিবারের রাজপুত্র আবদুল্লা কুতু ব শাহ এক সাধারণ নর্তকীর প্রেমম�োহে হারিয়ে ফেলছেন নিজের বংশপরিচিতি! রাজপরিবারের অহমিকায় অসম্মানের চূ র্ণ লেপন করে, সকলের অগ�োচরে চালাচ্ছেন প্রেমকীর্তি! মাঠে, দূরবর্তী পতিত দুর্গেও দেখা যাচ্ছে তাদের আজকাল! রাজ পরিবারের মাথা কাটা যাবার জ�োগাড় ...এত�ো হতে পারেনা।" রাজার কানে আসা মাত্র প্রমাদ গুণলেন তিনি। বুদ্ধিবৃত্তিকে মেশালেন নৈপুণ্যে। ××××××××

প্রতি মুহূর্তে বুকে বেজে চলেছে নৈকট্যের সুর। গান-নাচের ব�োল। যা একমাত্র শুধুই তারজন্য রচনা করত�ো তারামতী। স্মৃতিতে প্রথম নাচমহলের সে চাউনি। প্রেমের মূর্ছনা, অনাবিল আলিঙ্গনের রসময় রসায়নের অসহ্য দহনে তিনি পুড়ছেন। জ্বলে যাচ্ছে তার কলিজা। কিন্তু তিনি জানেন এ নির্বাপনের ওষুধ একমাত্র তারামতীর চু ম্বনবারিধারা। আবদুল্লা বিশ্বস্ত বন্ধু র শরণাপন্ন হয়ে কূটক�ৌশলে তারামতীকে নিয়ে এলেন ইংল্যান্ড। কলেজে ভর্তি করালেন। শিক্ষাই যদি গ্রহণয�োগ্যতার মাপকাঠি হয় তাহলে তারাই হবেন তার বেগম। দৃষ্টিনন্দিত রূপ ত�ো তার এমনিই আছে। আছে কল্পনাতীত গুণ। এসব রাজকীয় নিয়ম তিনি ভাঙ্গতে চান। চান সাবলীল জীবন। উন্মুক্ততায় গাছতলার আদুল গায়ের রাখালটা হতে চান। যার বাঁশিতে মুগ্ধ হয়ে প্রেমাস্পদ রাধার মত�ো লেপ্টে থাকবে তার বুকে। তারামতী কে পেয়ে নির্বাসিতের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল�ো। ছদ্মনামে তারা এখন তমান্না। পড়াশ�োনার সাথে রচনা করে চলেছে নিজেদের প্রেমের ইতিহাস। তমান্নার সুখে যেন আল্লা না কিরে দেন, সর্বদা ওরা দ�োয়া করে। নতু ন করে প্রেম নিবেদন করতে আল�ো আঁধারিতে আবদুল্লা ডেকে পাঠিয়েছে তমান্নাকে গাছের নীচে । তার মনেও প্রবল ইচ্ছা কিছু বলার.. কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরচ্ছে না। হাওয়া যেন স্তব্ধ , ঘাড় নেড়ে নীরবতায় সম্মতি জানাচ্ছে তমান্না। ৃ ণা। ত�োমায় আর একবার কত�োদিন ত ৃষিত আমি, মেটাও তষ্ একটু ছু ঁয়ে দেখি! শরীরী উষ্ণতা যেন সূচকের উচ্চমাত্রা ছু ঁয়ে যাচ্ছে বহুদিন পর। হঠাৎ আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টিতে দুজনের শরীরে খাঁজ ক�োণ ভিজিয়ে দিচ্ছে জল। পরম আশ্লেষে আবদুল্লার ঠ�োঁট তমান্নার কপাল ছু ঁল, বহুদিন পর প্রথম অভিজ্ঞতার আবেগ, অনুভূ তি একাকার,... ×××××××××

আর্ত চিৎকার করে ওঠে আবদুল্লা। "নাঃ!" আবার শুরু হয়েছে বুকে সেই ত�োলপাড়। চ�োখ দিয়ে বইছে তপ্ত বারিধারা। রাজপুত্র পিতার নির্দেশে ইস্টইন্ডিয়া ক�োম্পানির এক চরের গুপ্ত শত্রুতায় পিতা সব জেনে অচিরেই দুজনকে নিয়ে লাটের সাথে গেলেন খ�োদ ইংল্যান্ডে। ইংরেজি শিক্ষার পাঠ আসেন গ�োলক�োন্ডা ফ�োর্টে। শাস্তিস্বরূপ আবদুল্লাকে সুলতান নিতে ভর্তি হলেন কলেজে। মনজুড়ে তামশার অন্ধকার। ঘ�োষণা করে তারামতীকে দিলেন কারাজীবন। পিতার মৃত্যুর 64 আল�োক

শারদীয়া 2022

পর তারামতী পেয়েছিলেন শিল্পীর সম্মান। তার গানমহল নবাব ভাল�োবেসে গড়েছিলেন বার�োদরজা সমৃদ্ধ অপূর্ব স্থাপত্যের তারামতী বারদ্বারি। কিন্তু অবহেলার অভিমান মন ছাড়িয়ে অসুখ রূপে তখন শরীরে জাঁকিয়ে বসেছে। ঘৃণাভরে তারামতি ফিরিয়ে দিলে নিকাহের আর্জি। এরপর তারার মৃত্যুতে আহত আবদুল্লা গ ৃহরুদ্ধ করে নেন নিজেকে। অমিলনাত্মক প্রেম ঘুরে ফেরে দুর্গের আনাচকানাচ বেয়ে। ঘুমহীন ঘ�োলাটে দৃষ্টি আবার সজাগ হয়েছে নবাবের " ঐ শুরু হয়েছে তারামতীর স্মৃতির নাচমহলে আগমন... ঘুঙুরের আহ্বান"। উদ্ভ্রান্তের মত�ো উঠে পড়েন "এখুনি যেতে হবে আমাকে..." । ×××××××××××× রাতের অন্ধকার শেষে ভ�োরের হালকা আল�োকে স্যুটিংএর সেট প্যাক-আপ বলতেও ভু লে গেছে যেন�ো পরিচালক। মৃতকাষ্ঠবৃক্ষের মত�ো ব�োবায় পেয়েছিল যেন�ো তাদের সারারাত। তাদের দুজনের ভালবাসা দুর্গের প্রতিটি খিলানের জানা। পরিণতি না পাওয়া এ প্রেমের জন্যই নাকি তাদের মুক্তি মেলেনি। আর সেজন্য নাকি আজও নর্তকী তারামতির অত ৃপ্ত আত্মা দুর্গে ঘুরে বেড়ায়। দুর্গের ভেতরের অন্ধকার প্যাসেজ, ফাঁকা বিস্তৃত স্থান, বড় বড় জানালা নিমেষে জীবন্ত হয়েছিল রাতে। ফু লটিম ভয়ের

65 আল�োক

শারদীয়া 2022

এক শীতল আবহ অনুভব করছেন এখন। সকলেই জানেন দুর্গটি অভিশপ্ত। স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা রাত্রিবেলা দুর্গ থেকে নুপুরের আওয়াজ আর অদ্ভুত এক গ�োঙানির ধ্বনি এমন বহুকিছু শুনতে পান তারা। হায়দ্রাবাদের পশ্চিম প্রান্তে ১১ কিল�োমিটার দূরে অবস্থিত গ�োলকুণ্ডা দুর্গ ভারতের সবথেকে সুন্দর কেল্লাগুল�োর মধ্যে অন্যতম। ভারতের বিখ্যাত কাকাতিয়া রাজবংশের তত্ত্বাবধানে আজ থেকে ঠিক ৬০০ বছর আগে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়। কত যে ইতিহাস, জনশ্রুতি আর অভিশপ্ত কাহিনি ছড়িয়ে আছেন এই দুর্গের আনাচেকানাচে তা বিশ্বদরবারে উপস্থিত করে দেশকে আর�ো সাফল্যমন্ডিত করাই এ দলের উদ্দেশ্য। বিপদ জেনেও এমন দুর্গের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সরকারের থেকে স্পেশাল পারমিশনে বিদেশী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে প ৃথক কিছু উপমা স ৃষ্টি করতে চেয়েছিল দলটি। চটপট দূর্গ থেকে বের�োন�োর জন্য তৎপর হলেন সকলে। ভীত সন্ত্রস্ত মুখে চারটি দলে ভাগ হয়ে খুঁজছেন বের�োন�োর পথ। হঠাৎ আর্তনাদ ভেসে আসছে...। হাওয়ার সাথে মিশে ফিসফিসিয়ে কারা যেন�ো বলছে " এখানে তারা আমার একান্ত শান্তি বিরাজ করে...প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ "। মুহুর্তে আবার জেগে উঠল�ো রাজকীয় থামের গায়ে নতু ন মানব নক্সা।।

আগলি উওম্যান ঝিলিক মুখার্জি গ�োস্বামী মিউজিয়ামে ঘুরে বেড়ান�োর শখ আমাকে প্রায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের অনুসন্ধান করা, লিপির উপর লিখিত হরফের ডিক�োড করা আফিমের নেশার মত�ো নেশাতু র করে তু লেছিল। -" ইউ হ্যাভ ন�ো রাইট টু চয়েজ ইওর লাইফ!" বাবার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু টা বিরক্ত হয়েই উত্তর দিয়ে বলি, -"মাই লাইফ, মাই রুল।" বাবার সাথে একপ্রকার ঝগড়া করেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি, অজানা পথের উদ্দেশ্যে। চাকরিটা সদ্য পেয়েছিলাম বলেই, মনের জ�োর দ্বিগুন পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিতে একটু ও সময় অপচয় করিনি। য�ৌবনের দ�োরগ�োড়ায় প�ৌঁছে অজানার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলাম, প্রত্নতাত্বিকের পেশা নিয়ে। রহস্য র�োমাঞ্চের গন্ধ আমাকে তাড়া করে বেড়াত ছ�োট্ট থেকেই। বিশেষত পুর�োন�ো সভ্যতার অতীতগুল�ো আমায় যেন উন্মাদ করে তু লত। সেই টানেই ইতিহাস বই এর প্রতি আত্মিক য�োগ তৈরি হয়েছিল, ৃ ্য ভাবেই। আরও একটু যখন অদশ জ্ঞানের সুদর্শন চক্র আমাকে ভর করল, তখন ঝ�োঁকটা এমনিই বেড়ে গিয়েছিল। ** স্কু ল,

কলেজ,

66 আল�োক

ইউনিভার্সিটিতে,

শারদীয়া 2022

ইতিহাসের সেরা ছাত্রীর শির�োপা পেয়ে যারপরনাই আপ্লুত ছিলাম। একের পর এক ফলকগুল�ো যত অতিক্রম করে চলেছি, মনের গভীরে আনন্দের চামর দুলে উঠেছে প্রতিবার। সর্বদা ইতিহাসের পাতায় নিজেকে আবিষ্ট করে রাখতাম। ইতিহাসের প্রতি প ৃষ্ঠায় অঙ্কিত ভিন্নধর্মী ছবি দেখে, নিজের অজান্তেই নিজেকে প�ৌঁছে দিতাম সেই জায়গায়। সবথেকে যে জিনিসের প্রতি আমার অম�োঘ টান তৈরি হয়েছিল, তা হল হরপ্পা এবং সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসের প্রতি। যেখানে যা তথ্য পেতাম, নিজের ন�োটবই এর খাঁজে খাঁজে লিখে রাখতাম। সেই ইতিহাসের টানেই আজকের এই পেশার সাথে নিজেকে আষ্টেপ ৃষ্টে জড়িয়ে দিয়েছি। স্কু ল কলেজে থাকার সময়, নিজের অজান্তেই মনের ক�োন�ো গ�োপন ক�োটরে বাসা বেঁধেছিল, হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাদের অনুসন্ধান করার নেশা। তখনও জানিই না আমার এই নেশা কতটা মারাত্মক হতে পারে। ** দিল্লীর প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করছি। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত। গরমের হলকা চ�োখে মুখে ঝাপটা মারছে, জান্তব ঈগলের মত�ো। কামারশালের গরম হাপরের ন্যায় কেউ যেন সারা শরীর জুড়ে, গরম হাপরের ওঠানামা স ৃষ্টি করেছে। এখুনি মনে হচ্ছে একছু টে পালিয়ে যাই, বরফ মাখা পাহাড়ের ক�োলে। কিন্তু এই মুহূর্তে এইসব কথা ভাবারও সময় নেই, পালিয়ে যাওয়া ত�ো অনেক দূর। অগত্যা এগিয়ে চলেছি, অজানা অচেনা গন্তব্যস্থল এর

দিকে। সে যে আমাদের নিষিদ্ধ হাতছানি দিয়ে ডেকে চলেছে অবিরত। দিল্লী থেকে প্রায় দেড়শ কিল�োমিটার দূরে অবস্থান করছে হরিয়ানা। যখন সেখানে প�ৌঁছালাম, দিগন্ত জুড়ে নীলচে আভা মুছে গিয়ে লাল রঙা আবির কেউ যেন ছড়িয়ে দিয়েছে আকাশ জুড়ে। সরকার তরফ থেকে দেওয়া ব্ল্যাক স্করপিও চিতার মত�ো মাইলেজ দেয়। সেই গতিতে ভর করে হরিয়ানা থেকে আরও একটু ভেতরে এবড়�ো খেবড়�ো রাস্তা পেরিয়ে, প�ৌঁছে গেলাম ভারতের সবচেয়ে বড়�ো সিন্ধু সভ্যতার সাইটে। সাইটে প�ৌঁছে বেশ ত ৃপ্ত হলাম। বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে সাইটের অংশটা। কর্মঠ কয়েকজন ল�োকজন তাঁদের কাজের মাঝে, নিজেদের মধ্যে একটু গল্প গুজব করে অবসর সময়টু কু কাটান�োর ব্যবস্থা করে নিয়েছে। এছাড়া তাদের কাছে দ্বিতীয় ক�োন পছন্দ নেই, এই ভাঙাচ�োরা ধূল�োবালি মাখা জায়গায়। এখানে যে সাইটে এসে প�ৌঁছেছি, জায়গাটার নাম রাখিগড়ি। রাখিগড়ি একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। যেখানে স্থানীয় মানুষের দেখা বিশেষ মেলে না। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংস স্তূপ। জায়গাটা দেখে, মনে মনে বেশ উৎফু ল্লিত হয়ে উঠলাম। তখনও বুঝিনি এই আনন্দ, বিষাদে পরিণত হতে শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষায় অপেক্ষিত। *** বাড়ি ছাড়ার সময় আজ বেশ কয়েকটি বছর অতিক্রান্ত করেছে। কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়ির একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করেছে একনিমেষে। প্রত্নতত্ববিদ

থেকে কখন যে অ্যান্টিক সংগ্রাহকারকে নিজেকে রূপান্তরিত করেছি, টের পাইনি। খননকার্যে কাজ চলার সময় কিছু জিনিস ৃ ীয় রিপুর জাগ্রত হয়ে ওঠার দেখে, তত খবর আমার কাছে অজানা থাকলেও তার বিস্তার করা জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি প্রায় অজ্ঞাতেই। ঘরভর্তি সাজিয়ে রাখা আছে বিভিন্ন সভ্যতার নিদর্শনের চিহ্নগুল�ো। আমার একচিলতে ফ্ল্যাটবাড়ি, আস্ত একটা মিউজিয়ামের রূপে নিজেকে মেলে ধরেছে। ঘরের মধ্যে রাখা পাথরের এবড়�ো খেবড়�ো পুতুলগুল�োর সাথে খ�োশমেজাজে গল্প করি, নিজের মনে। কখনও ওদের সাথেই হেসে উঠি অট্টহাসে। পাশের ফ্ল্যাটের স্থায়ী বাসিন্দারা আমাকে এখন আর বিশেষ পাত্তা দেয় না। ওরা আমার চারিত্রিক দ�োষ বা গুণ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামিয়ে, নিজেদের জীবন খাতার পাতাগুল�োকে দুর্বিষহ করে তু লতে চায়নি বলেই আমাকে এড়িয়ে চলে উন্মাদ ভেবে। ক�োথাও যেন ওরা ঠিক মনে হয়। কারণ আমার উন্মাদনা যেন দিনদিন বৃহত্তর রূপে প্রতিভাত হচ্ছে। ** শ�ো কেসের উপর তিনটে পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা আছে সযত্নে। আইসিসহ�োরাস, লজ্জাঘাউরি এবং ভেনাস অফ উইলেনডরফ। ওরা যেন প্রতি মুহূর্তে আমাকে... আমার ফ্ল্যাটবাড়ির ঠিক নীচে একটা ন�োংরা নারীমূর্তিকে বসে থাকতে দেখি র�োজ। নারীমূর্তির পরিধানের বস্ত্র দেখলেই, প্রথম খাওয়া ভাতের দলা কন্ঠনালী বেয়ে উপরে উঠতে চায় যেন। অনেকদিন এইভাবে দেখার পর, কার্যত একদিন বিরক্ত হয়ে আবাসনের ওয়াচম্যানকে ডেকে নির্দেশ দিলাম নারীমূর্তিকে এখুনি আবাসনের বাইরে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিতে। আমার নির্দেশ

67 আল�োক

শারদীয়া 2022

শ�োনা ইস্তক, ওয়াচম্যান একরাশ প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকায় আমি পুনরায় বিরক্ত প্রকাশ করলে ওয়াচম্যান ইতিউতি তাকিয়ে আমার দিকেই প্রশ্নের বাণ দিয়ে আমায় আহত করে চলে গেল নিজের জায়গায়। ওয়াচম্যানের অপস ৃয়মানের পথ বেয়ে ওর দিকে তাকিয়েই তৎক্ষণাৎ নারীমূর্তির দিকে নজর দিতেই, ক্ষয়িষ্ণু দন্তমূল বিকশিত করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে অট্টহাস্য করে উঠল। সেই হাসি, বুকের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনি বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আরও একটা জিনিস আমাকে বেশ অবাক করল, সেই অট্টহাসি আমি ছাড়া কেউ কর্ণগ�োচর করল না। তবে কি... ** রাখাগড়ির খনন কার্য সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, সরকারি তরফ থেকে যথেষ্ট সুনামের সাথে, চাকরির জায়গায় প্রম�োশন হওয়ায় বেশ খুশির হাওয়া বয়ে চলেছিল আমার জীবন জুড়ে। মনে মনে আত্মত ৃপ্তির ভাবটা সুস্পষ্ট ভাবে ফু টে উঠেছিল। আমার কাজের সফলতার নিরিখে, পরবর্তীতে যে ক�োন�ো খনন কার্য সম্পাদনের কাজের ভার আমার ওপর অর্পিত হয়েছিল। রাখিগড়ির খনন কার্যের পর আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় খননকার্য সম্পন্ন করে, চন্দ্রকেতু গড়ের খনন কার্যভার আমার ওপর অর্পিত হয়। চন্দ্রকেতু গড়ে খনন কার্য চলার সময় বেশ কিছু মূল্যবান সব জিনিসের অনুসন্ধান মিলেছিল। বিভিন্ন ধরনের মূর্তি থেকে শুরু করে টেরাক�োটার গয়না। এছাড়াও বেশ কিছু দেহের অস্তিত্বের খ�োঁজ মিলেছিল। যেগুলি স্বাভাবিক ভাবেই ছিল প্রাণ এবং রক্ত মাংসহীন। এককথায় কঙ্কাল বললে খুব বেশি ভু ল হবে না। এখান থেকেই 'ল�োভ' নামক ৃ ীয় রিপু আমাকে আষ্টেপ ৃষ্টে আচ্ছন্ন তত করে ত�োলে। এমন কিছু জিনিসের খ�োঁজ

মিলেছিল যেগুলি দেখার পর আমাদের সকলের চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জ�োগাড় হয়েছিল। একটি বিশেষ মূর্তি তার দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মূর্তির দিকে তাকালেই কেমন যেন ম�োহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম। মনের গভীরে লুক্কায়িত অবচেতন মনে অনুভব করছিলাম, মূর্তির নিষিদ্ধ হাতছানিকে। হাতছানির টান এতটাই নিষ্ঠু র ছিল যে, সেই টানকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে কার্যত কঠিন হয়ে পড়ে। মনের মধ্যে মনের দ্বন্দ্বে, উৎপীড়িত হতে থাকি প্রায়। মূর্তিটা দেখার পর থেকেই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নগুল�ো। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এই মুহূর্তে শুধুমাত্র একজন। তার কথা মনে হতেই, ট্রাউজারের পকেট থেকে ম�োবাইল বের করে, গুগল এর সার্চিং বারে টাইপ করতে শুরু করি। গুগল বলছে, বিশ শতকের গ�োড়ার দিকের মূর্তি এটি। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স এবং সাইবেরিয়াতেও চল ছিল এই মূর্তির। বীভৎস, কুৎসিত, দানবাকৃতি মূর্তি দেখলেই, যে কার�োর আত্মারাম খাঁচা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা অনুভব করছি। প্যালিওলিথিক যুগের নির্দশন, এই বীভৎস মূর্তি। মূর্তিটির অবয়ব, নারী রূপকে নির্দিষ্ট করছে। আরও একটু অনুসন্ধান চালিয়ে মূর্তিটার একটা নাম চ�োখে পড়ল, অ্যান ইনডিপেনডেন্ট আগলি উওম্যান। *** দিল্লীর গরম সত্যিই ভীষণভাবে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল, আমার পক্ষে। অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির তাগিদে, অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে কাজের জায়গা পরিবর্তনের জন্য অনুর�োধ জানাই। প্রথমটায় তিনি, ব্যাপারটা প্রায় এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে আমার মধ্যেও অস্থির ভাবটা ক্রমশ প্রকট হয়ে

উঠছিল। যে করেই হ�োক এখান থেকে, একপ্রকার পালিয়ে যেতে চাইছিলাম। দিল্লির গরমটা ত�ো অজুহাত ছিল মাত্র। সেই অজুহাতের মাশুল যে এইভাবে দিতে হবে, ভাবিইনি সেদিন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অফিসের বড়কর্তাকে রাজি করিয়ে অবশেষে কলকাতার অফিসে নিজের কর্মক্ষেত্র বদল করতে সক্ষম হই। দিল্লি ছাড়ার সময় সঙ্গী হয়, সেই কুৎসিত পাথরের পুতুলটি। অফিসের সবার অলক্ষ্যে আনা, বীভৎসতা মাখা পুতুল যে আমারই ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে একদিন! এতটু কু মাত্র টের পাইনি। অফিস থেকে একপ্রকার চু রি করেই এনেছিলাম, 'আগলি উওম্যান'কে। ল�োভের বশবর্তী হয়ে, সমস্ত শাস্তিকে উপেক্ষা করেও এই কাজে নিজেকে লিপ্ত করেছিলাম। অফিসের দেওয়া শাস্তির আগেই... *আজ অনেকগুল�ো দিন পেরিয়ে গেলেও আর চ�োখে পড়ল না, সেই কুৎসিত নারীমূর্তিকে। খুশিতে ঝলসে উঠে স্বগত�োক্তি করে উঠলাম, 'বাঁচলাম' বলে। একরাশ প্রশান্তি মনকে সিক্ত করে তু লেছে। এতটা পরিমাণ বীভৎসতা, সত্যিই অসহ্য লাগে। শান্তির প্রলেপ মনের মধ্যে সবে মাত্র লেগেছে কী লাগেনি, ঘটল সেই অযাচিত অঘটনটা। যেটা আমার কাছে একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। কলকাতার অফিসে এখন�ো বহাল তবিয়তেই চাকরি করছি, অনেকদিন হয়ে গেল। অনেক অনুসন্ধানের পর, মূর্তি চু রির কেসটা প্রায় মিইয়ে গেল, চু পসে যাওয়া কটন ক্যান্ডির মত�ো। এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম ব�োধহয়। হওয়াটা ব�োধহয় ফিসফিসিয়ে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল, "সত্যিই কি তাই?" অফিস থেকে ফিরে ফ্ল্যাটবাড়ির উপরে উঠে এসে খুট করে চাবিকাঠি ঘ�োরালাম, নিজের ঘরের দরজায়। দরজা খুলতেই

68 আল�োক

শারদীয়া 2022

ব�োটকা গন্ধ নাসারন্ধ্রে আছড়ে পড়ল, অগভীর সমুদ্রের অশান্ত ঢেউয়ের মত�ো। গন্ধটা খুবই পরিচিত। আবাসনের নীচে বসে থাকা, ন�োংরা নারীমূর্তির দেহ থেকে বহুবার ভেসে এসেছে এই দুর্গন্ধ। অফিসের যাতায়াতের পথে বহুবার পেয়েছি, এই ব�োঁটকা গন্ধ। ঘরের মধ্যে হঠাৎই এই দুর্গন্ধ এর উদয়ের ফলে, শরীর জুড়ে বমন করার ভাবের উদ্রেক হল। মনে হচ্ছিল এখুনি মেঝের ওপর... ঘরের আল�ো জ্বালান�োর কথা ভু লে গিয়ে, দ্রুতপদে ওয়াশরুমের দিকে দ�ৌড়ে গেলাম। চ�োখে মুখে জলের অবিরাম ঝাপটা মেরে একটু ধাতস্থ হয়ে, ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে আবারও অবাক হয়ে গেলাম। ঘরের মধ্যেকার সাদা মার্বেলের মেঝের উপর লালচে ফ�োঁটাগুল�ো, রক্তজবার ন্যায় ফু টে উঠেছে। আবাসনের আশেপাশে গজিয়ে ওঠা রাস্তার আল�োর মৃদু ছটায়, ঘরের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিবর্তনের উপস্থিতি টের পেলাম। শ�ো কেসের উপর সাজিয়ে রাখা পুতুলগুল�োর ওপর তেরছা ভাবে তাকাতেই, ভয়ে রক্তশূণ্য হয়ে গেল সমস্ত মুখমন্ডল। শ�ো কেসের উপর সযত্নে লালিত পাথরের পুতুলগুল�োর মধ্যে থেকে, লজ্জাঘাউরির দিকে চ�োখ যেতেই চমকে উঠলাম প্রায়। মৃদু আল�োয়, তার যে রূপের ছটা জেগে উঠেছে তা আমার ভীষণভাবে পরিচিত। আমার চ�োখজ�োড়া ছাড়া আর কেউ টের পায়নি তার উপস্থিতি। প্রতিদিন অফিসের যাতায়াত এর পথে, তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হত। মেরুদণ্ড জুড়ে গরম লাভা স্রোতের উপস্থিতি অনুভব করছি। মনের মধ্যে আরও একটা মনের ঝড় উঠেছে যেন। মনের গভীরে থাকা ঘুমন্ত অবচেতন মন বলে উঠল একটা মাত্র শব্দ, "শাস্তি।" ঘরের মধ্যে পরিবেশ যত ভারি হয়ে উঠছে, আমার শরীর জুড়ে উষ্ণতা

যেন বেড়েই চলেছে ক্রমশ। এতকিছু র মাঝেও হঠাৎই একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পেলাম। সেই অদ্ভুত কান্নামাখা স্বর শ�োনা মাত্র, অবাক কম ভয় বেশি পেলাম। কপালের তিনটে রেখার উপস্থিতির মাঝের রাস্তা ধরে, জলের বিন্দুরাজি সদ্য শুরু হওয়া বৃষ্টির ফ�োঁটার ন্যায় ফু টে উঠল। হাত পা একসঙ্গে পালা করে, একে একে অবশ হতে শুরু করল। কন্ঠনালী ঠেলে উঠে আসা, চিৎকার বেরিয়ে আসার পথে বাধাপ্রাপ্ত হল। প্রচন্ড রকম, প্রাণবায়ুর অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত করলাম। সমস্ত শরীরের শিরা উপশিরাগুল�ো, রক্ত খাওয়া জ�োঁকের ন্যায় ফু লে উঠতে লাগল নিমেষে। ঘরের মধ্যেকার বায়ু, বিষাক্ত হয়ে উঠছে বুঝতে পারছি। মাথার মধ্যে থাকা প্রত্যেকটি তার ছিঁড়তে শুরু করেছে, পরপর। ঘরের মধ্যে থাকা একমাত্র ডিভানের উপর বসে আছে আগলি উওম্যান। প্যালিওলিথিক যুগের অবসান ঘটিয়ে নিওলিথিক যুগের শুরু হতে চলেছে। যার একমাত্র সাক্ষী আমি এবং আমার ফ্ল্যাটবাড়ির চারটে দেওয়াল। ফ্ল্যাটবাড়ি ধীরে ধীরে ধ্বংসাত্মক চেহারা নিতে শুরু করেছে। অবিশ্বাস্য হলেও এই ধ্বংসযজ্ঞ এর আওয়াজ, ঘরের দরজা ভেদ করে বাইরে যেতে অক্ষম। একরাশ অক্ষমতা আমাকেও তখন গ্রাস করেছে। এই তান্ডব লীলা, বসে বসে দেখা ছাড়া আমার কাছে দ্বিতীয় ক�োনও অপশন নেই। লাল আল�ো মাখা পরিবেশ ক্রমেই ভয়ানক থেকে ভয়াল ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। বিষাক্ত বায়ুর রিনরিনে কন্ঠস্বর ভেসে বেড়াচ্ছে। জেগে উঠেছে ইবলিশ। যার চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। বিস্ফারিত চ�োখে একবার মাত্র বন্ধ দরজার ওপারে তাকান�োর চেষ্টা করেই কংক্রিটের মেঝের সাথে নিজেকে প্রায় মিশিয়ে দিলাম।

উত্তরসুরী হিমবন্ত দত্ত বিদ্যুতের ঝলকানির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ঝড়ের প্রক�োপ। বৃষ্টিও বেড়ে চলেছে একই ভাবে। হঠাৎ আসা ঝড়-বৃষ্টিতে কিছু টা হলেও চিন্তায় পড়ে গেল তষৃ া। চিন্তাটা আসলে পরেরদিন সকালেই ওদের ফেরা নিয়ে , কারণ সকালে এখানে আসার পথে আশপাশের রাস্তাঘাটের যা অবস্থা দেখেছে তাতে এই বৃষ্টি আর কয়েক ঘন্টা চললে আগামীকাল ওদের ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। "এই জন্যে বলেছিলাম আজ সন্ধ্যের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে এখান থেকে।" , ম�োমবাতির ধারক এবং বাহক স্ট্যান্ডটা টেবিলের উপর নামিয়ে রাখতে রাখতে স�ৌগতর উদ্দেশ্যে বলল তষৃ া। ম�োমবাতির হালকা আল�োতে অন্ধকার ঘরটা একচিলতে রহস্যে ঢাকা পড়ল। স�ৌগত ম�োবাইলটা নিয়ে কাউকে ফ�োন করার চেষ্টা করছিল বেশ কিছু ক্ষণ ধরে, কিন্তু টাওয়ারের সমস্যার জন্য সেই ফ�োন কল ব্যর্থ হচ্ছিল বারবার। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ�োনটা বিছানার ওপর ছু ঁড়ে ফেলে দিয়ে তষৃ ার দিকে তাকিয়ে স�ৌগত বলল, "ত�োমাকে ত�ো আসার আগেই আমি বলেছিলাম আমাদের পরিবারের নিয়ম হচ্ছে এই বাড়িতে এসে অন্তত একটা রাত কাটাতেই হবে। আজকে ফিরে যাওয়া ত�ো সম্ভব হত�োই না ক�োনওভাবে। আর তাছাড়া ত�োমাকে ত�ো এর কারণটাও আগেই বলেছি।"

69 আল�োক

শারদীয়া 2022

"ত�োমার সেই গল্প! আজকালকার যুগে এসে এইসব এখন�ো বিশ্বাস করে কেউ? প্রেগন্যান্ট মহিলা এখানে এসে একটা রাত কাটালে নাকি সুস্থ, সবল সন্তান জন্মায়! যত্তসব!" আর কথা বাড়াল�ো না স�ৌগত। বাকি রাতটা ঠিকঠাক কাটলেই হয়। কেয়ারটেকারকেও বিকেলের পরে ছু টি দিয়ে দিয়েছে। আজকের রাতটা ওরা দুজন এতবড় বাড়িতে একদম একা। সত্যিই কি সবটা এতই সহজ, না কি সবকিছু র আড়ালে ঘরের ঐ জমাট বাঁধা অন্ধকারের মত�োই অন্য ক�োন�ো রহস্য লুকিয়ে আছে? জমিদারবাড়ির পলেস্তারা খসে পড়া দেওয়াল, রংচটা থাম , কিছু কিছু জায়গায় ভেঙে পড়া রেলিং আর পরিষ্কার করা সত্বেও বেশিরভাগ জায়গায় জমে থাকা ধুল�োর আস্তরণ, এই সব কিছু কে সাক্ষী রেখে ওরা দুজন আজকের রাতটা কাটাচ্ছে এই প্রায় ভ�ৌতিক শতাব্দী প্রাচীন বাড়িতে। সামনের লম্বা বারান্দায় বেরিয়ে এল স�ৌগত, তারপর প্রচন্ড বৃষ্টির ঝাপটা বাঁচিয়ে ক�োণার দিকে একটা জায়গায় গিয়ে তিনবারের চেষ্টায় একটা সিগারেট ধরাল�ো। এই জমিদার বাড়ির বয়স প্রায় দেড়শ�ো বছরের কাছাকাছি। একসময়ের বিশাল বড় আর জমজমাট জমিদারবাড়ি এখন প্রায় ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে গ্রামের এক প্রান্তে। এখন আর কেউই থাকেনা এখানে, থাকার মত�ো অবস্থায়ও নেই সেটা। শুধুমাত্র একজন কেয়ারটেকারের হাতে ছেড়ে রাখা হয়েছে দেখাশ�োনার জন্য। স�ৌগত তষৃ াকে শুধুমাত্র এই বাড়িতে একটা রাত

কাটান�োর পারিবারিক নিয়মের কথাই বলেছে, কিন্তু আসলে যে ঘটনাটা বলেনি সেটা হল�ো, এই বিরাট পরিবারের যে ক�োন�ো পুত্রবধূকেই সন্তানসম্ভবা অবস্থায় একটি রাত গ্রামে এসে এই বাড়িতে কাটাতে হয়। তষৃ া সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আরও আগেই এখানে আসতে পারত�ো স�ৌগত, কিন্তু একটি বিশেষ কারণে এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছে ও। ঘটনার শুরু আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে। এরকমই বৈশাখের এক ঝড় জলের রাত, বিমলা দেবী প্রচন্ড চিন্তিতভাবে ছ�োটাছু টি করছিলেন। তার একমাত্র পুত্রবধূ ময়ূরাক্ষী সন্তানসম্ভবা । বাড়িতে পুরুষ মানুষ বলতে সেদিন কেউই ছিলনা, স্বদেশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে বাড়ির পুরুষ মানুষদের শকুনের শ্যেন দৃষ্টির মত�ো খুঁজে চলেছিল ব্রিটিশ পুলিশ আর তার খ�োচর-রা। সম্পূর্ণ বাড়িটির উপর প্রতিটা মুহুর্তে নজর রেখে চলেছিল তারা, ঘিরে রেখেছিল চারদিক থেকে, যাতে পরিবারের ক�োনও পুরুষ মানুষ এই বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। এরকমই এক দুর্যোগপূর্ণ ঝড়-জলের রাত , প্রসববেদনা উঠল ময়ূরাক্ষীর। খুব তাড়াতাড়ি ক�োনও দাই-মা বা ক�োন�ো ডাক্তারকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ল। কিন্তু কার�োর থেকে ক�োনও সাহায্যই শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পুলিশের ল�োক চারদিক থেকে বাড়িটা ঘিরে রাখার জন্য কাউকেই ঢ�োকার অনুমতি দেয়নি বা বাড়ি থেকেও কাউকে বের�োতে

দেয়নি। তাদের কাছে বারবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করলেও সেই প্রার্থনা ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অন্য ক�োনও উপায় না দেখে নিজেই হাত লাগিয়েছিলেন বিমলা দেবী, কিন্তু অপটু হাতে শেষ রক্ষা হয়নি। সদ্যোজাত শিশুপুত্রটি মারা যায় সেই রাতে, প ৃথিবীর আল�ো দেখার আগেই। বিমলা দেবী এই সম্পূর্ণ ঘটনাটার জন্যই নিজেকে দ�োষী ভাবতে শুরু করেন। তারপর দিন তিনেক পরে জমিদার বাড়ির সামনের খ�োলা জায়গায় জমিদার বাড়ির ছাদ থেকে.... রক্তে ভেসে গিয়েছিল মূল ফটকের সামনের ফাঁকা জায়গাটা। এর পর থেকেই এই বাড়ির সমস্ত সদস্যের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয় যে বিমলা দেবীর অত ৃপ্ত আত্মা নাকি এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আর এই বাড়িতে যেক�োন�ো অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বিমলা দেবী আশীর্বাদ করেন। তাদের বাকি জীবন সুখে, স্বচ্ছন্দে ভাল�োভাবে কাটে এবং তাদের সন্তানের সুস্থ শরীর এবং দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি হয়। যদিও বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই বাড়ির অনেকেই তাদের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে এখানে রাত কাটিয়ে যাওয়ার এই নিয়ম পালন করেনি, তবে স�ৌগত-র বাবা এসেছিলেন। আজ স�ৌগত বেশ ভাল�োভাবেই বুঝতে পারে তার সারাজীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বা এত বড় ক�োম্পানিতে চাকরী, সবকিছু ই ঐ বিমলা দেবীর অদৃশ্য হাতে করা আশীর্ব্বাদের ফল। তবে এই সবের মধ্যেই একটা আশ্চর্যের ব্যাপার হল ময়ূরাক্ষী খুব অদ্ভুত ভাবেই বিমলা দেবীর মৃত্যুর পরদিনই মারা যায়। *** খুব কাছেই একটা বজ্রপাতের শব্দে চিন্তায় ছেদ পড়ল স�ৌগতর। চমকে উঠে দেখল হাতে ধরা সিগারেটটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। শেষ টানটা মেরে

70 আল�োক

শারদীয়া 2022

ফিল্টারটা ছু ঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘরে চলে এল�ো স�ৌগত । হাতঘড়িতে সময় দেখল�ো রাত সাড়ে বার�োটা, তষৃ া শ�োওয়ার ত�োড়জ�োড় করছে। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও এক মুহূর্তের জন্য বৃষ্টি থামেনি এখনও পর্যন্ত, তার সাথে ঝড়ের দাপট এবং মুহূর্মুহু বিদ্যুতের ঝলকেরও ঘাটতি দেখা যায়নি। বিছানায় শুতেই কিছু ক্ষণের মধ্যে দুজনের চ�োখে ঘুম নেমে এল। একটা মহিলা কন্ঠের কান্নার আওয়াজে চ�োখ মেলে তাকাল তষৃ া। কিছু ক্ষণ ভাল�োভাবে সেই কান্নার উৎস খ�োঁজার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারল�ো আওয়াজটা আসছে দরজার বাইরে থেকে। পাশে তাকিয়ে দেখল স�ৌগত ঘুমাচ্ছে। স�ৌগতকে না ডেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল দরজার দিকে, তারপর খুব সন্তর্পনে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াল�ো। বারান্দার ডানদিকের অন্ধকারের চাদর ভেদ করে ভেসে আসছে একটা চাপা কান্নার শব্দ , একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে এল�ো শিরদাঁড়া বরাবর। কিছু ক্ষণের জন্য স্থাণু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেই গাঢ় অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে, তারপর কিছু একটা মনে হতেই সেদিকে এগিয়ে চলল তষৃ া। কিছু টা এগিয়ে যেতেই ডানদিকে একটা সরু জায়গা দেখতে পেল�ো ও। অন্ধকারে চ�োখটা সয়ে এসেছিল ততক্ষণে। খুব সন্তর্পনে সেই জায়গাটা ধরে কিছু টা এগ�োতেই শুনতে পেল আর�ো একটা পায়ের শব্দ, কার�োর হেঁটে যাওয়ার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি। এগিয়ে চলল তষৃ া মন্ত্রমুগ্ধের মত�ো। কিছু টা এগিয়ে একটা ঘরের সামনে এসে থামল তষৃ া, দরজাটা বন্ধ। হাতের ম�োটা বালার পরস্পরের সঙ্গে ঘষাঘষির ছন্ ছন্ ধ্বনি আর আরও একজনের হেঁটে চলার শব্দটা আসছে এই ঘর থেকেই। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার জন্য আলত�ো করে হাত রাখতেই দরজার পাল্লা দুট�ো

খুলে গেল, ঘরটার ভিতরে প্রবেশ করল�ো তষৃ া। হালকা নীলচে আল�োয় ঘরটা ভরে আছে, আল�োর উৎস অজানা। সেই স্বল্প আল�োতে স্পষ্ট দেখা গেল একজন বয়স্ক মহিলা দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কাঁপা কাঁপা গলায় তষৃ া জিজ্ঞেস করল�ো , "কে... কে আপনি?" মহিলা ঘুরে তাকালেন ওর দিকে , তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এলেন ওর সামনে, " আমি বিমলা, ব�ৌমা।", মুচকি হেসে বললেন সেই মহিলা, তারপর তষৃ ার দিকে হাত বাড়িয়ে ওর মাথায় নিজের হাত ছ�োঁয়ালেন। ধীরে ধীরে মাথা থেকে সেই হাত নামতে থাকল�ো গাল পেরিয়ে চিবুক পর্যন্ত, তারপর সেই মহিলার দ ৃষ্টি নীচের দিকে নেমে স্থির হল অন্তঃস্বত্বা তষৃ ার পেটের উপরে। বেশ কিছু ক্ষণ একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে থেকে হাসিমুখে একটা হাত তষৃ ার পেটের উপরে রাখলেন বিমলা দেবী। ঘরের ভিতরে থাকা সেই অজানা উৎসের নীলচে আল�োটা হঠাৎ এসে জমাট বাঁধতে শুরু করল তষৃ ার ফু লে থাকা পেটের কাছে , অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল ও। আল�োটা বেশ কিছু ক্ষণ স্থির হয়ে রইল সেখানে, তারপর ধীরে ধীরে ম্লান হতে হতে একসময় সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। চমকে উঠে সামনে মুখ তু লে তাকাতেই তষৃ া দেখল সেখানে কেউ নেই। একটা জমাট বাঁধা অন্ধকার ঘরে ও একা দাঁড়িয়ে রয়েছে, সম্পূর্ণ একা। *** ঘুমটা ভেঙে যেতেই তষৃ া ধড়ফড় করে উঠে বসল বিছানার উপর। দেখল , জানলার বাইরে থেকে হালকা আল�োর আভা ছড়িয়ে পড়ছে। সকাল হচ্ছে। কিছু ক্ষণ আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে মনে ভাবতে ভাবতে একটা স্বস্তির

নিঃশ্বাস ফেলে ঘরের দরজা খুলে বাইরের বারান্দায় বের�োল�ো ও। বাইরের আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টি থেমে গিয়ে দিনের আল�ো ফু টতে শুরু করেছে। কিছু একটা ভেবে ডানদিকে তাকাল�ো, তারপর স্বপ্নে দেখা সেই ঘরটার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলল তষৃ া। তষৃ ার চ�োখের সামনে একে একে ভেসে উঠতে থাকল�ো বহু বছর আগের একটা রাতের কিছু ঘটনা। সেদিনের সেই রাত্রে সবটাই ছিল বিমলা দেবীর নিজের হাতে তৈরি করা সুনিপুণ ছক, একটা জাল, যাতে বন্দি হয়েছিল স্বয়ং ময়ূরাক্ষী আর তার সন্তান। লুকিয়ে করা শয়তানের উপাসনা আর তন্ত্রসাধনা বিমলা দেবীকে এতটাই পাগল করে তু লেছিল�ো যে সদ্যোজাত একটি শিশুর বলি দেওয়ার জন্য সেদিন উনি বেছে নিয়েছিলেন নিজের একমাত্র পুত্র আর পুত্রবধূর সন্তানকে , আর বাকিটা খুব সুন্দরভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ময়ূরাক্ষী ওর স্বল্প চেতনায় সবটাই বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু সেই মুহূর্তে বাধা দেওয়ার মত শক্তি ওর ছিলনা। প্রতিশ�োধ স্বরূপ তিনদিন পর ছাদ থেকে এক ধাক্কায় বিমলা দেবীকে .... এর পরপরই ময়ূরাক্ষীও মারা যায়, ফলে আসল সত্যিটা আর ক�োনও দিনই কার�োর সামনে প্রকাশ পায়নি। তবে, বিমলা দেবী মারা গেলেও শেষ হয়নি তাঁর এই তন্ত্রসাধনার কাল�ো দিক। এরপর থেকেই এই বাড়িতে ঘটতে থাকে বিভিন্ন অল�ৌকিক ঘটনা । বিশেষত পরিবারের সদ্যবিবাহিতা এবং সন্তানসম্ভবা সদস্যাদের সাথে। ধীরে ধীরে সবাই এখান থেকে অন্যত্র চলে যেতে থাকে । কিন্তু তারপরেও ক�োন�ো এক অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে পরিবারের সদস্যরা তাদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে এখানে আসার আহ্বান অনুভব করতে থাকে। যদিও সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার

71 আল�োক

শারদীয়া 2022

ইচ্ছা থেকে প্রায় সকলেই নিজেদের সংযত রাখে। একমাত্র স�ৌগতর বাবা ওনার অন্তঃসত্ত্ব স্ত্রী-কে নিয়ে আসেন এই বাড়িতে, একটা রাত কাটান�োর জন্য। স�ৌগতর জীবনের সমস্ত উন্নতি আসলে বিমলা দেবীর আশীর্বাদ নয়, বরং ওর মাধ্যমে বংশপরম্পরায় নিজের সেই শয়তানী তন্ত্রবিদ্যাকে বাঁচিয়ে রাখার অভিশাপ। *** সেই নির্দিষ্ট ঘরের দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ান�ো মাত্রই চারদিকের পরিবেশ বদলাতে শুরু করল। তষৃ া স্পষ্ট বুঝতে পারল বাইরে এতক্ষণ যেটাকে দিনের আল�ো ভেবে ভু ল করেছিল, সেটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গিয়ে আবার একটা অন্ধকারের চাদর মুড়ে ফেলছে চারদিকের পরিবেশ, আর একটি নারীকন্ঠ ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে চলেছে, "পালাও , এখনও সময় আছে, পালাও... পালিয়ে যাও।" সামনে থাকা দরজাটা একটা জ�োরাল�ো হাওয়ার দাপটে খুলে গেল। ঝড়ের তীব্রতা এখনও একই রয়েছে , আর তার সাথে মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝলকানি আর বৃষ্টির বেগও সমান তালে ডানা ঝাপটে চলেছে। বিদ্যুতের ঝলকানিতে একঝলক আল�োকিত হল�ো সামনের ঘরটা, আর তাতে তষৃ া স্পষ্ট বুঝতে পারল সেখানে কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে, একজন বয়স্ক মহিলা। ওর কানের সামনে সেই অজানা নারীকণ্ঠের ফিসফিসানিটা আবার ঘুরপাক খেল�ো, "পালিয়ে যাও.... পালাও।" এই গলার স্বর আর অন্য কার�োর নয়, স্বয়ং ময়ূরাক্ষীর। ইতিমধ্যে তষৃ া বুঝতে পারল�ো স�ৌগত এসে দাঁড়িয়েছে ওর পিছনে। পিছন ফিরে স�ৌগতর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল তষৃ া, একটা পৈশাচিক হাসি খেলে রয়েছে স�ৌগতর চ�োখেমুখে । তষৃ ার ষষ্ঠেন্দ্রিয় জানান

দিল বিপদ আসন্ন, ক�োন�োকিছু না ভেবে তষৃ া ক�োন�োরকমে নিজেকে আর ওর শরীরের ভিতরে বাড়তে থাকা সন্তানকে বাঁচান�োর কথা ভেবে দ�ৌড়তে লাগল ছাদের দিকে। স�ৌগত ওর পিছনে এগিয়ে আসতে থাকল ধীর পায়ে, আর বলতে থাকল�ো, "ক�োথায় পালাবে? পালান�োর পথ নেই আর।" ছাদে প�ৌঁছান�োর পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই ছাদের এক ক�োণে গিয়ে ক�োন�োরকমে বসে ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছিল�ো তষৃ া। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই স�ৌগত ছাদে এসে প�ৌঁছাল�ো। বিদ্যুতের ঝলকানিতে স�ৌগতর চ�োখে মুখে যুদ্ধ জিতে যাওয়ার ত ৃপ্তি সুস্পষ্ট, আর সাথে একটা পৈশাচিক উল্লাসের আগাম উত্তেজনা। "ঐ বাচ্চাটা শয়তান হবে। শয়তানের তন্ত্রবিদ্যাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চল আমার সাথে... ঐ ঘরে। ওর আশীর্বাদ নেওয়া বাকি থেকে গেছে এখনও! চল..." । আর�ো অনেকটা সামনে এগিয়ে এসে তষৃ ার মুখ�োমখু ি দাঁড়াল�ো স�ৌগত। এই পৈশাচিক উল্লাসের কারণ কি, সেটা এতক্ষণে কিছু টা হলেও বুঝতে পারছিল তষৃ া, স্পষ্ট বুঝতে পারছিল ওর আর ওর গর্ভের শিশুর চরম ক�োন�ো ক্ষতি হতে চলেছে, নিজেকে আর ওর সন্তানকে বাঁচান�োর জন্য একটা শেষ চেষ্টা করতেই হবে ওকে। স�ৌগত একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "আয়, উঠে আয়, আশির্ব্বাদ নিতে যেতে হবে ত�ো!" বেশ কয়েকটা কথা তষৃ ার মনে পড়ে যাচ্ছিল, স�ৌগতর বাবার বিরুদ্ধে আসা দু'ট�ো বাচ্চাকে লুকিয়ে রাখার অভিয�োগ! যদিও ক�োনও পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় শেষ পর্যন্ত সেই অভিয�োগ ভিত্তিহীন হয়ে যায়, আর স�ৌগতর বাবাও নাকি কিছু বছর পরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সবটাই স�ৌগতর কাছে শ�োনা , তবে কি সবই সত্যি! বাচ্চাগুল�ো কি

তন্ত্রসাধনার বলি হয়েছিল! স�ৌগতর ক্ষেত্রেও ত�ো এরকমই একটা কিছু শুনেছিল! ওর ক�োনও ছাত্র নাকি ওর বাড়িতে পড়তে আসার পর আর ফিরে যায়নি, তাকে না কি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ক�োথাও, তবে কি.....! স�ৌগত , তষৃ ার একটা হাত সজ�োরে চেপে ধরতেই ওর চিন্তায় ছেদ পড়ল। এই প্রচন্ড আসুরিক ক্ষমতার সামনে তষৃ া হার মানতে বাধ্য। কিন্তু তবুও একটা অদম্য জেদ চেপে গেল ওর, লড়াই করার জেদ। এই লড়াই এক মায়ের, তার সন্তানকে বাঁচান�োর জন্য। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে শেষ মুহূর্তে নিজেকে বাঁচান�োর চেষ্টায় স�ৌগতকে একটা জ�োরে ধাক্কা দিল তষৃ া। বৃষ্টিভেজা শ্যাওলা ধরা ছাদে পিছলে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে, ঐ একটা ধাক্কাতেই ছাদ থেকে স�োজা নিচে পড়ে গেল স�ৌগত। ***

পরদিন সকালে সেই একই জায়গায় স�ৌগতর রক্তাক্ত মৃতদেহটা পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে অনেক বছর আগে জমিদারবাড়িরই এক বয়স্ক মহিলাকে পাওয়া গিয়েছিল। তষৃ া সমস্ত ঘটনাটা খুলে বলে নিজের দ�োষ স্বীকার করে নিয়েছিল। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল স�ৌগতর প�োস্টমর্টেম রিপ�োর্টে কিন্তু খুন নয়, বরং আত্মহত্যারই উল্লেখ ছিল। তাই তষৃ া নির্দোষ প্রমাণিত হয় খুব সহজেই। এই অদ্ভুত ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতেই কেটে যায় দীর্ঘ সাতটি বছর। স�ৌগত আর তষৃ ার একমাত্র ছেলে ত ৃষিত অনেকটাই বড় হয়ে উঠেছে, স্কুলে সমস্ত বিষয়ে ধীরেধীরে উন্নতি করে চলেছে। যখন অন্য বন্ধু র মা-বাবারা ত ৃষিতের এই উত্তর�োত্তর উন্নতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়, তখন মা হিসাবে বেশ একটা গর্ব অনুভব করে আজকাল। তষৃ া আর বিয়ে করেনি , সিঙ্গেল মাদার হিসাবে একাই

সামলায় সবটা। 'মা!' রান্নার কাজে ব্যস্ত তষৃ া তেলের কড়াইয়ের দিক থেকে চ�োখ না সরিয়েই জিজ্ঞেস করল, 'কিছু বলবি?' ত ৃষিত শান্ত গলায় বলল, 'একটা পুরন�ো জমিদার বাড়ি, একটা ভাঙাচ�োরা পুর�োন�ো ঘর, আর একটা দিদা...' ছেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই একরাশ ভয় আর বিস্ময়ে ঘুরে তাকাল�ো তষৃ া, এতদিনে হয়ত�ো সেই প�োস্টমর্টেম রিপ�োর্টের রহস্য উদঘাটন করতে পারছে তষৃ া। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, 'মানে, কি সব বলছিস তু ই?' 'স্বপ্ন... স্বপ্নে দেখেছি। ঐ দিদা-টা কেমন একটা নীলচে আল�োর মধ্যে থেকে আমাকে ডাকছে আর বলছে,"আমার কাছে আয়, সবকিছু ত�ো ত�োকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে! আয়... আমার কাছে আয়... ''

অবসরপ্রাপ্ত মানুষ, বেকার যব ু ক, যব ু তী, গ ৃহ বধূ, ছ�োট ব্যবসায়ী রা য�োগায�োগ করুন: ৯১২৬৭২৯১১১ (কল/হ�োয়াটস এ্যাপ)

72 আল�োক

শারদীয়া 2022

ইনস�ো-মুনিয়া অভিষেক ঘ�োষ (১) বেচারা পাপাই ! গত দুট�ো দিন তার কি কষ্টেই না কেটেছে ! ঘুম আসে নি একফ�োঁটাও । কারণটা মনে করলেই অজানা আতঙ্কে ভিতরে ভিতরে শুকিয়ে যাচ্ছে সে । একে ব্রাহ্মণের মেয়ের অভিশাপ, তায় এক্কেবারে ইনস�ো-মুনিয়া ! এই বিপদের শুরুটা হয়েছিল গত স�োমবারে । স্কু ল খুলে যাওয়ার পর একদিন অন্তর একদিন তাকে ক�োচিং সেন্টারে যেতে হচ্ছে । আর সেখানেই পড়ান উমাপতিবাবু, স্কুলের ইতিহাসের প্যারা-টিচার । কথায় কথায় লকডাউন প্রজন্মের গলদ খুঁজে বের করবেন । হ্যাঁ এটা ঠিকই যে, সেসময় বটগাছতলায় বসে তারা একে অপরের থেকে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর টু কে জমা দিয়েছিল । তারপরও যখন যা টু কটাক পরীক্ষা হয়েছে, ব্যাপক ট�োকাটু কি করেছে তারা । মুশকিল হয়েছে, এখন না দেখে, না টু কে লিখতেই পারছে না তারা, হাতের স্পিডও কমেছে । তাছাড়া 'ব'-টা উলটে যাচ্ছে, সাল-তারিখ মনে থাকছে না, 'ই'-'ঈ'-এর ত�ো ঠিক-ঠিকানা নেই । কিন্তু এতে তাদের কী দ�োষ ? যত নষ্টের গ�োড়া ত�ো ক�োভিড, তারা কী করবে ? কিন্তু উমাপতিবাবুকে সে কথা কে ব�োঝাবে ! এই ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও তিনি ছাত্রদের যথেচ্ছ পেটান, কথায় কথায় কানম�োলা । কিন্তু সেসব ও পাপাই সয়ে নিতে পারে । কেবল অসহ্য লাগে তার পিউকে । পিউ তাদের পাশের পাড়ার মেয়ে, ব্রাহ্মণের মেয়ে, খুব তেজ । ওর ক�োন�ো

73 আল�োক

শারদীয়া 2022

দাদা বা ভাই নেই, পিউ তাই টমবয়টাইপ । বড়�োরা বলে, পিউ নাকি ছেলে হতে হতে মেয়ে হয়ে গিয়েছে ! আর�ো সমস্যা, ওরা দুজনেই ক্লাস সিক্সে উঠেছে, নেহাৎ স্কু ল আলাদা । অথচ সবসময় গায়ে পড়ে ওর সাথে ঝগড়া করবে, সহ্য হয় না পাপাইয়ের । দুজনে ক�োচিংয়ে একই ব্যাচে পড়ে । সেদিন বেশ বাড়াবাড়িই হয়ে গেল সেখানে । পাপাই বেশ অর্ণবের পাশে বসেছিল । পিউ দেরি করে এল, এসে অর্ণবকে বলল, "ওঠ" ! অর্ণব ত�ো অবাক, বলল, "কেন ? আমি কেন উঠব ?" "পাপাইয়ের সাথে দরকার আছে, ওঠ তু ই ।" পাপাইয়ের দিকে তখন তাকাতে পারবে না, এমন দিশেহারা অবস্থা তার । গাধা অর্ণবটাও তেমন, সেও জায়গাটা ছেড়ে দিল ! ব্যাস ! কথা নেই বার্তা নেই, উড়ে এসে পিউ জুড়ে বসল পাপাইয়ের পাশে । "শ�োন না, একটা ছবি এঁকে দিবি প্রজেক্টের ? তু ই ত�ো ভাল�ো আঁকিস ।" - সরাসরি পাপাইয়ের কাঁধে কনুই রেখে প্রস্তাবটা দিল পিউ । বন্ধুদের সামনে লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে পাপাই বলল, "আ-আমি পারি না ।" "এঃ পারে না ! এই যে সেদিন শ্যামলের খাতায় টিনটিনের ছবি আঁকছিলি দেখলাম ! বেশ হয়েছিল আঁকাটা । আমার কিন্তু চাইই, সায়েন্সের প্রজেক্ট ।" "ত�ো আমি কী করব ? ত�ো-ত�োর প্রজেক্ট আ-আমি কেন আঁকতে যাব�ো ?" - দ্রুত জবাব দিতে গেলেই ত�োতলায় পাপাই ।

"বাহ্ রে ! আমি না ত�োর প্রতিবেশী, তাছাড়া ছেলেবেলার বন্ধু ।" "ম�োটেই না ! আমি ক�ো-ক�োন�োদিন ট-টমবয়দের বন্ধু হতে চাই না !" - তীব্র প্রতিবাদ জানায় পাপাই, বলতে বলতেই তার গাল লাল হয়ে যায়; কেন, সে জানে না । কিন্তু ওই কথাতেই পিউয়ের গলার স্বর, কথা বলার ভঙ্গি আর হাবভাব বদলে যায় । সজ�োরে পাপাইয়ের বাঁ-হাতটা মুচড়ে ধরে সে, "তবে রে" - মুখে কেবল এটু কুই বলে সে । "আঃ লাগছে । ছাড় বলছি, ডাইনি ক�োথাকার ।" - হাতের ব্যথায় কাতর পাপাই বলে ওঠে । কিন্তু তাতেই আগুনে ঘি পড়ে । স�োজা উঠে দাঁড়িয়ে তর্জনী তু লে পিউ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে ওঠে, "আমায় তু ই ডাইনি বললি ত�ো ! এই ত�োকে অভিশাপ দিলাম, যতদিন না আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইবি, ত�োর রাতে ঘুম হবে না । বামুনের মেয়ে হয়ে ত�োকে এই অভিশাপ দিলাম ।" ব্যাস তারপর থেকে দুট�ো রাত ঘুমহীন কাটছে পাপাইয়ের । এ যে কি যন্ত্রণা ! রাতে ঘুম আসছে না শুনে বড়�ো মেস�ো গম্ভীর মুখে বলেছেন, "মনে হচ্ছে ইনস�ো-মুনিয়া ! কিন্তু ছ�োট�োদের হয় বলে ত�ো শুনি নি !" কিন্তু সেই কথাটা শুনেই একটা প্রবল ভয় জাঁকিয়ে বসেছে পাপাইয়ের মনে । কারণ আর কিছু ই নয়, পিউয়ের ডাক নাম যে মুনিয়া ! ক�োন�ো সন্দেহ নেই, ওই র�োগই তার হয়েছে । কিন্তু শাপম�োচনের উপায় ? পুরুষ মানুষ হয়ে একটা বাচ্চা

মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে সে ! ভাবলেই তার দুই কান গরম হয়ে যাচ্ছে, বুকেতে ঢিপঢিপ ! কেন কে জানে, পিউয়ের সেই রক্তচক্ষু বারবার পাপাইয়ের চ�োখের সামনে ভেসে উঠছে, এই কি তার জন্মাবধি চেনা পিউ ? ওই চ�োখ, অমন চাহনি - কখনও ক�োথাও দেখে নি পাপাই । আর এই কথা ভাবলেই কেন কে জানে তার বুকের ঢিপঢিপ আর�ো বেড়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে মনে হচ্ছে সে যেন একটা হাওয়ার নদীতে বসে বসে দুলছে । পাপাইয়ের মাথা সারা দিন শূন্য হয়ে আছে । (২) প্রথম রাতটা জেগে কাটান�োর সময় বেজায় কষ্ট হয়েছিল তার । মাঝরাতে বিছানা থেকে উঠে এসে ফ্রিজ থেকে টপাটপ দুট�ো মিষ্টি খেয়ে নিয়েছিল পাপাই । রাত জাগলেই ভাত হজম, তারপরই খিদে পায় । তারপর বেশ কিছু ক্ষণ শুয়ে শুয়ে ছটফট, শেষে ভ�োর চারটে নাগাদ উঠে পড়ে শীর্ষেন্দুর 'পটাশগড়ের জঙ্গলে' নিয়ে স�োজা ছাদে চলে যায় সে । সেখানেও কি শান্তি আছে ! সাড়ে চারটের সময় ছাদে উঠে এল ঠাকুমা । সুবালা দেবীর একহাতে ইসবগুলের ভু সি, অন্য হাতে ওষুধের প্যাকেট আর একগ�োছা সমান মাপে কেটে নেওয়া চ�ৌক�ো কাগজ । এসব ঠাকুরদার জন্য ব্যবস্থা, কয়েকটা কাগজে কিছু টা ভু সি আর অন্যগুল�োয় ওষুধ মাপমত�ো পুরে, কাগজ মুড়ে পাপাইয়ের কাছে চালান করলেন । লিখে দিতে হবে, ক�োন�োটায় সকাল, ক�োন�োটায় দুপুর, ক�োন�োটায় রাত । কেবল সকালেরটায় ভু সি থাকবে, সেটা দেখে, লিখতে হবে পাপাইকে । লেখা শেষ হল ত�ো ঠাকুমার কাঁপা-কাঁপা গলার প্রশ্ন, "কবে পরীক্ষা ?" "কীসের পরীক্ষা ?" - স্তম্ভিত পাপাই । "ওমা ! তাহলে ভ�োরবেলায় উঠেচ কেন দাদুভাই ?"

74 আল�োক

শারদীয়া 2022

"ঘুম আসছে না... কী করব ?" "বুড়�োদের র�োগে ধরেচে দেকচি !" - বলে ফ�োকলা দাঁতে একগাল হাসে ঠাকুমা । এরপর ছ�োট�োকাকা ছাদে উঠল ব্যায়াম করতে, হুকুম হল পাপাইকেও ভেজান�ো ছ�োলা খেয়ে ডন দিতে হবে । ক্লান্ত পাপাই নিরুপায় হয়ে গ�োটা দেশেক ডন দিল ক�োন�োমতে । তারপর হাই উঠতে শুরু করল । কিন্তু স্কুলে যেতে হল । ঘামতে ঘামতে বিকেল সাড়ে চারটেয় বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢু কেই পাপাই সঙ্গোপনে একটা কুকর্ম করে ফেলে, প্রায়ই করে থাকে গ্রীষ্মে । স্নানের জন্য তু লে রাখা ছয় ফু টিয়া চ�ৌবাচ্চার ঠান্ডা জলে গলা অবধি ডু বে সে মিনিট দুয়েক বসে থাকে, তারপরই হাঁচতে থাকে । তারপর মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দেখা হয় পিউয়ের সাথে । পাপাইয়ের পাড়ায় ছেলে-মেয়ে সবাই মিলেমিশে ক্রিকেট খেলে, এতে সুবিধে হল মেয়েরা বল করলে ছেলেরা বল পিটিয়ে ভাল�ো মত�ো হাতের সুখ করে নিতে পারে । কিন্তু বাচ্ছুর ওভারের শেষ বলে ইচ্ছে করে 'হিট-উইকেট' হয়ে গেল পাপাই, কারণ পরের ওভারেই পিউ বল করতে আসবে ! এত সব করেও পিউকে পুর�োপুরি এড়িয়ে যেতে পারে না পাপাই । গ�োল ফ্রক ঘুরিয়ে, ধুল�ো উড়িয়ে পিউ নিজেই পাপাইয়ের পাশে এসে বসে, তখন সন্ধ্যা নামছে । পাপাইয়ের বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে ওঠে ! "এই নে ধর্" - বলে প্রায় ম্যাজিকের মত�ো হাত ঘুরিয়ে একটা 'পার্ক'-এর প্যাকেট নিয়ে আসে পিউ । স্তম্ভিত পাপাইয়ের দিকে তাকিয়ে সাফাইও দেয় পিউ, "কাল ত�োকে অমন অভিশাপ দিলাম । নিশ্চই রাতে ঘুম হয় নি ।" ব্যাস অমনি রাগ দেখিয়ে উঠে যায় পাপাই, খেয়াল করে না পিউয়ের মুখ কেমন মলিন হয়ে গেল ! (৩)

বড়মামা এসেছিল সেদিন, সিনেমা দেখে খুব । রাতে পড়াশ�োনা সেরে, একসাথে দেখতে বসল গডজিলা । ছবিতে ভয়াবহ সব দৃশ্য দেখে, যেটু কু-বা ঘুম আসার চান্স ছিল, তাও গেল ! এবার সেই গতরাতের পুনরাবৃত্তি, মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল বহুক্ষণ, পাঁচশ�ো থেকে উল্টা গিনতি চলল কিছু ক্ষণ, তারপর ফের শীর্ষেন্দুর বই । বইটা শেষ করে নাজেহাল পাপাই অন্ধকারেই ছাদে চলে যায় । তখন রাত প্রায় আড়াইটা । গালে হাত দিয়ে চিলেক�োঠায় চ�ৌকাঠে বসে ভাবে সে, ইনস�ো-মুনিয়া থেকে মুক্তির কী উপায় হতে পারে ! ভাঙা একটা চাঁদ উঠেছে তখন । তখনই চমক । দুতলার ছাদের ক�োমরসমান পাঁচিলের ওপার থেকে অস্ফুট শব্দ আসে, "হুই !" "তু মি ? এখানে কি করছ ? ছাদে উঠলে কী করে ? - আকাশ থেকে পড়ে পাপাই । পাঁচিলের আড়াল টপকে তখন একটা শরীর ছাদে নেমে আসে । তপুদা, ভদ্রঘরের ছেলে, স্বভাবে চ�োর । চু রি করতে সে ভাল�োবাসে । কখনওকখনও সে চ�োরাই মাল মালিকের হাতে ফিরৎ-ও দেয়, শর্ত হল যত্নে রাখতে হবে । এভাবেই ঝু মামাসির বিয়ের অ্যালবাম, কানাইদাদুর সেকেলে হাতঘড়ি, ফটিককাকুদের বিখ্যাত শঙ্কর মাছের চাবুক তপুদা শর্তসাপেক্ষে ফিরিয়ে দিয়েছে । সে এগিয়ে এসে একটা লম্বাটে কাচের বয়াম কাঁধের ঝ�োলা ব্যাগ থেকে তু লে দেয় পাপাইয়ের হাতে, "কুলের আচার, পরশু তু লে নিয়ে গিয়েছিলাম, এক ফ�োঁটা খেয়েছি, ভাল�ো হয় নি রে, ফিরৎ দিয়ে গেলাম ।" - বলে চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় তপুদা । ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, "হ্যাঁ রে এত�ো রাতে জেগে ! ঘুম আসছে না !" "নাহ্ ! আমার ইনস�ো-মুনিয়া হয়েছে ।" - শ্বাস ফেলে জানায় পাপাই ।

কিছু ক্ষণ ভ্রূ-কুঞ্চিত করে ভেবে অবশেষে তপুদা একগাল হেসে বলে, "ওটা একটা ইংরেজি শব্দ, 'Insomnia', ত�োর হয় নি, চাপ নেই; ওসব ত�োর মত�ো পুঁচকেদের হয় না ।" "অভিশাপ পেলেও না !" "অভিশাপ ! সে আবার কে দিল !" "পিউ !" সেই কথা শুনেই হাসতে শুরু করল তপুদা । পাপাই তাকে থামাল�ো, "কী

করছ ! সবাই জেগে যাবে যে ! তু মি না চ�োর !" তপুদা এরপর হাসি থামিয়ে পুর�ো ঘটনাটা শুনল পাপাইয়ের কাছে । শেষে মাথা চু লকে বলল, "স্যরিটা বলেই দে পাপাই । একটা স্যরি বললে ত�োর জাত যাবে না । শুধু একটু দেখে, সকলের সামনে না, একটু নির্জনে... বুঝলি.. পাগল ক�োথাকার !" - বলেই অন্ধকারে পাঁচিল টপকে হাওয়া । ভ�োর হতে তখন

সামান্যই দেরি ।

(8) 'স্যরি'-টা বলেছিল পাপাই, হাঁটু গেড়ে বসেই, নির্জন সন্ধ্যায়। তারপর ঘুমটাও ৃ ীয় রাতে হল ভাল�োই । তবে একটা তত স্বপ্নও দেখল সে। দেখল, পিউ একটা প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলে উড়ছে আর সে বসে-বসে প্রজেক্টের খাতায় প্রজাপতিটার ছবি আঁকছে।

Email ID [email protected]

সকল প্রকার গাড়ির বীমা করান�ো হয়।

75 আল�োক

শারদীয়া 2022

সুবর্ণদ্বার সাগ্নিক সিনহা সংকীর্ণ গিরিবর্ত্ম ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল ওরা। চারপাশে রুক্ষ প্রাণহীন পাহাড়, এত উচ্চতায় বাতাসও হালকা হয়ে এসেছে ভীষণ, এক পা চলতে গেলেই হাঁপ ধরে যাচ্ছে। ত্রিশ-চল্লিশ'জনের বিচিত্র এক মিছিল। সামনে পিছনে ঘ�োড়ায় চড়ে চলেছে লাল উর্দিধারীরা, তাদের হাতে দীর্ঘ ফলাওয়ালা বর্শা, ক�োমরে গ�োঁজা তল�োয়ার, পিঠে একনলা মাস্কেট। উর্দির গায়ে আঁকা চিহ্ন বলে দেয়, তারা এই এলাকার মানুষ না। ওরা ইনকুইস্তাদর, লাতিন আমেরিকার ত্রাস। গত দশকের শেষদিকে স্পেন থেকে নেহাত ভাগ্য অন্বেষণ করতে এই নতু ন মহাদেশে এসেছিল তারা, তারপর থেকে শুধু আগুন জ্বলছে গ্রামে, গ্রামে…মৃত্যু আর সন্ত্রাসের পতাকা উড়িয়ে চলেছে সাম্রাজ্য বিস্তার। মাঝের ল�োকগুল�ো স্থানীয়, ওরা ইনকা। পথশ্রমের ক্লান্তিতে, মৃত্যুভয়ে লালচে মুখগুল�ো ধূসর হয়ে গিয়েছে। বাচ্চা, বুড়ো আর অল্প কিছু মহিলা ছাড়া সে দলে ক�োন�ো পুরুষ নেই। থাকার কথাও না। কাল রাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ওদের গ্রাম, ঘুমের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে অর্ধেক। বাকিরা সূর্যদেব ইন্তি'র নাম নিয়ে বীরের মত�ো লড়ে মরেছে। বাকি আছে শুধু ওরা কয়েকজন, ওদের ভাগ্যেও একই পরিণতি অপেক্ষা করে আছে সেটা বলে দিতে হয় না। কাপিতান গঞ্জালেজ ওদের বাঁচিয়ে রেখেছেন, যতক্ষণ না…. ঘ�োড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে নামলেন গঞ্জালেজ। আকাশ এখন সিন্দুর'রঙা, সূর্য পশ্চিম পাহাড়ের ক�োলে ঢলে 76 আল�োক

শারদীয়া 2022

পড়েছে। সারাদিন ধরে পাহাড়ের বাঁকে ঘুরিয়ে যাচ্ছে জংলিগুল�ো, ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে তাঁর। খাপ থেকে একটানে তল�োয়ার বার করে চেপে ধরলেন সামনের বুড়ো ল�োকটার গলায়, সেই এদের গ্রামের মাথা। কুঁচকে যাওয়া চামড়া কেটে বসল ইস্পাতের ফলা, কয়েকফ�োঁটা রক্ত বেরিয়ে এল। চিৎকার করে কি একটা বলে উঠলেন কাপিতান, দ�োভাষী এসে বুড়োকে শ�োনাল, "বিদেশী স�োনার খ�োঁজ চায়। বিদেশী ক্রুদ্ধ। গুপ্ত ভান্ডারের দরজা এক্ষুনি না দেখাতে পারলে সবাইকে জ্যান্ত…" মহিলাদের দিকে ল�োলুপ দ ৃষ্টিতে চেয়ে সে যে ইঙ্গিতটা করল তার অর্থ অনুবাদ করতে হয় না। শীর্ণ শরীরটা তু লে অস্তগামী সূর্যদেবের দিকে চাইলেন বৃদ্ধ দলপতি। এই হিংস্র নেকড়েদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল ত�োলারও আর ক্ষমতা নেই তাঁর, এই কি তবে দেবতার ইচ্ছে! পিঠে একটা নরম হাতের স্পর্শে চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন বৃদ্ধ। সেই ছেলেটা না?…কয়েকদিন আগেই তাঁদের গ্রামে এসে আশ্রয় চেয়েছিল যে। নেহাতই কিশ�োর বয়স, বলেছিল ওর নাকি কেউ নেই…তার বেশি কিছু ই জানায়নি কাউকে। দেখলে মনে হয় অভিজাত রক্ত বইছে শরীরে, অথচ হাবভাব একদম তাঁদের মতই গ্রাম্য, বন্য। কে জানে, হয়ত�ো ওর মা, বাবা, ভাই-ব�োনকেও শয়তানগুল�ো এভাবেইবুড়ো আর কিছু ভাবার আগেই হাত তু লে চিৎকার করে উঠল ছেলেটা। সর্বনাশ, মরতে চায় নাকি! একি বলছে ও! দ�োভাষী চ�োখ বড় বড় করে ছু টে এসে

যা শ�োনাল চমকে উঠলেন দ�োর্দণ্ডপ্রতাপ সেনাধ্যক্ষ। অবিশ্বাস্য! এই পাহাড়টা পুর�োটাই ফাঁপা? এর পেটের ভিতরেই ঠাসা রয়েছে সাত রাজার ধন! ল�োভে আর উত্তেজনায় কেঁপে উঠল গঞ্জালেজের শরীর। ইনকা সম্রাট আকাপালহ্যুয়া বন্দি হবার আগে প্রজাদের হাতেই লুকিয়ে ফেলেছিলেন তাঁর বিখ্যাত রাজক�োষ, সেটা শুনেছেন তিনি। কিন্তু এ যে স্বপ্নাতীত, তাঁর দেশের রাজক�োষে রাখার জায়গাও হবে না এত স�োনা! ততক্ষণে বাকিরাও বুঝে নিয়েছে খবরটা, কাপিতানের হুকুম পেয়ে দুদ্দাড় করে নেমে পড়ল গ�োটা সৈন্যদল। ঘাড় ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে এল ছেলেটিকে, পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে গলায় তর�োয়াল ধরে দরজা খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত করলেন গঞ্জালেজ। ছেলেটি পিছনের দলটার দিকে একবার দেখল, ভয়ার্ত মুখগুল�োয় এখন বিস্ময়। নিজের ভাষায় একবার কিছু বলল ছেলেটা, তারপর এগিয়ে গেল উল্টোদিকের পাথরের দেওয়ালে। ঘন গাছগাছড়ার আস্তরণ একটানে সরিয়ে ফেলতেই বেরিয়ে এল দরজাটা। প্রাচীন ভাষায় খ�োদাই করা শিলালিপির উপর দিয়ে আঁকা রয়েছে ভয়ঙ্কর এক দেবতার মূর্তি, তাঁর দুই হাতে বাঘনখ, মাথায় সারা শরীরে ঈগলের মত�ো লম্বা পালক, ইনিই আঁধারের রক্ষক, রাত্রের প্রহরী.. দেবতা তেজকাতলিপ্কা। ছেলেটা এগিয়ে গেল দরজার দিকে, হাত রাখল পাথরটার উপর। একটু চাপ দিতেই সশব্দে খুলে গেল দরজা। ভিতরে নিকষ অন্ধকার। বাইরের

আকাশেও তখন সন্ধ্যার প্রথম তমিস্রা নেমে আসছে। গঞ্জালেজের স্বাভাবিক ব�োধবুদ্ধি ফিরে এসেছিল ততক্ষণে। এভাবে কি কেউ স্বর্ণভান্ডারের হদিশ দেয়, তাও আবার একটা বাচ্চা ছেলে! ক�োন�ো ফাঁদ না ত�ো, জংলী লালমুখ�োদের বিশ্বাস করা যায় না ক�োনমতেই। আঙ্গুলের এক ইশারায় ডাকতেই বুড়োকে টেনে হিঁচড়ে সামনে এনে হাজির করল সেনারা। হাতে একটা মশাল ধরিয়ে বুড়োকে আর ছেলেটাকে ধাক্কা মেরে দরজার ভিতর ঢু কিয়ে দিল তারা। ভিতরটা বেশ প্রশস্ত। দূর থেকে মশালের আল�োয় দেখা গেল ধাপ ধাপ সিঁড়ি নেমে গিয়েছে আর�ো গভীরে, পাহাড়ের পেটের ভিতর, মশালের স্বল্প আল�োয় সেভাবে কিছু ই স্পষ্ট হচ্ছে না ঠিকই…তবে কেমন যেন একটা স�োনালী আভা উঠে আসছে না ওইদিকটা থেকে ….?! সময় কাটতে লাগল। কিছু ই অন্যরকম ঘটল না, মেঝে ধ্বসে পড়ল না, চ�োরা ফাটল থেকে বের�োল না বিষাক্ত বাষ্প, লুক�োন�ো দেওয়াল থেকে ছু টে এল না ঝাঁক ঝাঁক তীর। দুজনে মশাল হাতে দাঁড়িয়েই রইল। নিরাপদ! যাক বাবা, এইবার রাজা হাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। তাহলে, সাত সমুদ্র তের�ো নদী পেরিয়ে কয়েক হাজার মাইল দূরের এই পাহাড় জঙ্গলের দেশেই

77 আল�োক

শারদীয়া 2022

লুকিয়ে ছিল তাঁর ভাগ্য! হাতের আরেকটা ইশারা। উত্তেজনায় হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠল সৈন্যদলটা। মশালের আল�োয় কিংবা স�োনার স্বপ্নে চ�োখ মুখ চকচক করছে তাদের। হইচই করে দ�ৌড়ে কাপিতানের পিছন পিছন গুহার মধ্যে ঢু কে পড়ল দশ-পনের�ো'জনের দলটা। প্রথমেই লাথি মেরে বার করে দিল ভিতরে থাকা দুজনকে, তারপর তরতর করে নেমে গেল ওপাশের সিঁড়ি দিয়ে। আর ঠিক তখনই মাথার উপর থেকে… হাসিমুখে বাইরে বেরিয়ে এল বুড়ো, একা। তার মনে পড়ে যাচ্ছে পূর্বপুরুষদের ভবিষ্যতবাণী, এক বিস্ময় বালকের কথা, স ৃষ্টির শেষ দিনে নেমে আসা এক অবতারের কথা। দরজার বাইরের লেখা শিলালিপি দেখেই সে বুঝে গিয়েছিল কি হতে চলেছে এইবার। এ দরজা স�োনার ভান্ডারের দরজা না, স�োনার ভান্ডার বলে এই আন্দিজের বুকে যে কিছু ই নেই ক�োথাও। সূর্যপূত্র ইনকাসম্রাট আক্রমণের বহু আগেই পূজারীদের ভবিষ্যতবাণী শুনে সরিয়ে ফেলেছেন তাঁর রাজ-ঐশ্বর্য্য, অনেক অনেক উত্তরের মরুভূ মির দেশে। এ দরজা আত্মার দরজা। উপকথায় লেখা আছে এখানে পাহারা দেন স্বয়ং অন্ধকারের দেবতা। এই দরজার ক�োন�ো চাবি নেই, চাবি হয়না। এ'দরজা খ�োলে মানুষের হৃদয় দিয়ে, যার অন্তরের রূপ

যেমন তার জন্য দরজার ওপারে অপেক্ষা করে তেমনই একটি ঘর। আকাশে চাঁদ উঠেছে, মৃদু রুপ�োলি আভায় মায়াবী পর্দায় ঢাকা পড়েছে দিগন্তজ�োড়া পর্বতমালা। সেদিকে তাকিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল ইনকাদের গ�োটা দলটা। পিছনে গুহার দরজা কি এক জাদুবলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন, আর ভিতর থেকে ভেসে আসছে আর্ত মরণ'চিৎকার। সেখানে নরকের সর্বগ্রাসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে পশুগুল�ো, মাংসপ�োড়ার কটু গন্ধে ভরে গিয়েছে বাতাস, ঠিক কালকে রাতে ওদের গ্রামের মত�ো… ছেলেটা বেরিয়ে আসেনি। তাকে নিয়ে কেউ দুঃখ পেল না, পিছন ফিরে একবারও তাকাল না বুড়ো। সমবেত সুরে যুদ্ধজয়ের আদিম ধ্বনিতে মুখরিত করে উঠল আকাশ বাতাস, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে প্রতিধ্বনিত হয়ে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। আজ ওদের প্রতিশ�োধের দিন। ছেলেটার মুখটা শেষ একবার দেখেছিল বুড়ো, বেরিয়ে আসার কয়েক মুহুর্ত আগে। অবিকল যেন বাইরের দরজায় আঁকা পাথরের মূর্তিটার মত…

দুরভিসন্ধি শান্তনু দাশ ।। এক।। অংশুবিহীনগগনপট মেঘাচ্ছন্ন ঘনান্ধতম�োময়ী ! প্রথম প্রহর ৃষ্ণশি বিভাবরীকালে, মগধক লানির্মিত স�ৌধমহলের দ্বিতল কক্ষের মুক্তবাতায়নপটে একাকী দণ্ডায়রত উনবিংশ বর্ষীয়ান মগধমধ্যমযুবরাজ মৃণাল। গবাক্ষপথ-প্রেরিত তাঁর গগনপ্রভমনিস্থিতনেত্র দর্শিত ক’রে চলেছে শতসহস্র চাকচিক্যজ্যোতিরিঙ্গণরাশি পরিমন্ডিত তমশার রূপ। কৃষ্ণাম্বরস্থিত ধূসর নীরদমালার পশ্চাতে কৃষ্ণ-ধূসর বারিবাহংশ ঈষৎগতিতে ভাসমান। এর তরে স্বল্পর�ৌপ্যবৎতিথিক্ষয়পক্ষ-অর্ধেন্দু এবং গগনস্থ দুই একটি নক্ষত্রমাত্র কখন�ো মেঘমালাপশ্চাতে ডু বছে কখন�োবা প্রকাশিত হচ্ছে। মগধমহলপার্শ্বস্থিত কুলপ্রবাহিণী জাহ্নবীর ক্ষুদ্রবীচিশ্রেণী অশ্মস�োপানতটে আঁচড়ে পড়ে যে জলকল্লোলধ্বনি স ৃষ্ট করছে, তাতে রাত্রিশ�োভা আরও অধিকতর সুসজ্জিতা রূপে রূপায়িত হচ্ছে। কদাচিৎ সমীর সঞ্চালনে ঝর�োকার মুক্ত শ্বেতওড়না যুবরাজ মৃণালের মুখ�োপরে বারকয়েক স্পর্শ করে ওঠে। উপবিষ্ট কালপেচকের স�ৌধ�োপর হতে ক্রমাগত ধ্বনি এবং পবনান্দলনে বিটপীস্থপত্রের ‘তরতর’শব্দ রাত্রির গভীরতা ক্রমশ ব্যক্ত করে চলেছে। “কী; নিদ্রা হতে বিরত কেন ?”অকস্মাৎ মায়াময়ী লালিত্য স্ত্রীকণ্ঠ কর্ণযুগলে প্রবেশমাত্র মৃণাল স্তম্ভিত হয়ে বিস্মিতনেত্রে নিজ বামস্কন্ধের

78 আল�োক

শারদীয়া 2022

পশ্চাতপার্শ্বে দৃষ্টি নিপাত করলে দ্যাখে, তাঁর বিমাতা, মগধসম্রাট দেবঃপ্রিয়দর্শী অল�োকের কনিষ্ঠাপত্নী দেবী পুষ্যাত্রাণা, সহাস্যে কামকূটা নজরে তাঁর নেত্রোপরে দৃশ্যমানা। একবিংশতিবর্ষীয়া মগধরানী পুষ্যাত্রাণা, বাহান্নবর্ষবৎ সম্রাটের সহিত বিবাহপর হতেই মৃণালের প্রতি ষিড়্গদৃষ্টি নিপাতিত করে চলে। যবীয়সী ভার্যার সহিত সম্রাটের বয়সঃব্যবধানের প্রত্যয়ে, ওনার যুবা পুত্রের প্রতি পুষ্যাত্রাণার দুর্বলতা প্রদিষ্ট হয়। মৃণাল বহুপূর্বেই এই বিষয়ে প্রত্যক্ষতঃ। বাক্যান্তে, ভ�োগাসক্তা পুষ্যাত্রাণা, মৃণালের বলশালী বস্ত্রোন্মুক্ত বক্ষোপরে নিজ বামহস্তান্বী স্পর্শমাত্রই মৃণাল, তাঁর হস্ত সহসা বাত্যাপ্রদানে প্রদৃপ্তকণ্ঠে বলে ওঠে, “ত�োমার মধ্যে কি বিন্দুভাগও লজ্জা জন্ম নেয় না ? তু মি আমার পিতার ধর্মপত্নী; সম্পর্কিতসুত্রে আমার মাতা। এইমুহূর্তে আমার কক্ষ হতে দূর হও।” মৃণালের ভর্ৎসনায় পুষ্যাত্রাণা আরও আরও তাঁর নিকট অগ্রসী হয়ে, দক্ষিণ-করতলয�োগে মৃণালের গ�ৌরবর্ণ চিবুক অঙ্গুলবদ্ধ ক’রে, অহংকারে, “তু মি কেবলমাত্র আমার, অন্য কার�োর নও।” উত্তর প্রদান ক’রে কক্ষ হতে প্রস্থান করে এবং সেই নিমিত্তক্ষণেই নীরদমালা হতে এক তীক্ষ্ণগর্জ্জনিনাদরত দীর্ঘদীপ্তি দামিনী অম্বরবক্ষে চমকে উঠলেই, নবকল্লোলিনীবারিণী মগধমেদিনীপরে ধাবিত হয়।

স্বাস্থ্য ক্রমশ দুর্বলভিমুখ। রাজবৈদ্য সঞ্জীবকগুপ্তর সকলপ্রকার যবানীই সম্রাটের দেহের আর�োগ্য প্রদানে ব্যর্থ। এই হৃদ-পীড়ন কারণ শুশ্রূষার যাবতীয় দায়িত্ব কন্ধোপরে ধারণ করে নিয়েছেন সম্রাটের দ্বিজ-মহিষী রানী মহাদেবী এবং রানী করবী। সম্রাটের সহিত রানী পুষ্যাত্রাণার বিবাহ অঘটন ব্যতী অন্যথা কিছু ই নয়। শাস্ত্রকথিত, রামায়ণে রাজেন্দ্র দশরথ যেইরূপ মধ্যবয়সকালে তরুণী ভার্যা কৈকেয়ীকে ভরণ করেন, ঠিক সেইরূপ সম্রাটও পুষ্যাত্রাণার পাণিগ্রহণ করেন। সম্রাটের প্রথমা পাঠরানী অমিত্রার প্রধান সহকারিণী ছিল এই পুষ্যাত্রাণা। অকস্মাৎ নিঃসন্তানবস্থায় মগধপ্রধানমহিষী অমিত্রার দেহান্ত ঘটলে, পরিচারিকা পুষ্যাত্রাণা সম্রাট অধীনস্থ ষ�োড়শ-মহাজনপদরাষ্ট্র বৃজ্জির রাজধানী বৈশালী নগরীতে প্রত্যাগমন ক’রে নগর-নর্তকী রূপে বিরাজিত হয়। পূর্ব হতেই বৈশালী নগর রাজনর্তকী আম্রপালি, তীর্থঙ্কর মহাবীরের জন্মস্থান এবং ভগবান বুদ্ধের অন্তিম প্রচার রাজ্য কারণবশতঃ মুখচর্চিত। সহসা সম্রাট অল�োক, বৈশালীতে উপনীত হয় নিজ নামাঙ্কিত স্তম্ভ নির্মাণ হেতু । বৈশালীই একমাত্র স্তম্ভনগর, যে স্থানে সম্রাট চতু র্মুখসিংহ মূর্তি ব্যতীত এককসিংহমুখাসীন মূর্তি নির্মান করান। নগরবাসী সানন্দ্যে উৎসব আয়�োজন করলে, সেই আয়�োজিত উৎসবে পুষ্যাত্রাণা নৃত্য পরিবেশন ক’রে সকলের হৃদয় জয় করে। তাঁর নবয�ৌবন কিয়দকালব্যাপী মগধেশ্বর চক্রবর্ত্তী দেহভার ও রূপ সম্রাটের হৃদয়েও সম্রাট অল�োকের হৃদব্যাধীর দরুন প্রভাব বিস্তারে সক্ষমতা অর্জিত করলে,

মগধে প্রত্যাবর্তনকালীন সম্রাট যথাবৎ পুষ্যাত্রাণার সহিত পরিণয়গাঁটবন্ধনে আবদ্ধ হন। অন্যতরে পূর্ব হতেই সম্রাট অল�োকের অমিত্রা ব্যতী আরও দুই রানী হতে সন্তানাদি বর্তমান। দ্বিতীয়া পত্নী সিংহল-ব�ৌদ্ধকন্যা মহাদেবী হতে সম্রাটের যুগ্মজাতসন্তান, পুত্র মনীন্দ্র ৃ ীয়া পত্নী ও দুহিতা সঙ্গীমিত্রা এবং তত কলিঙ্গ-রাজেন্দ্রানী করবী হতে দ্বিজপুত্র তিশল ও মৃণাল। পরন্তু কনিষ্ঠা ভার্যা সন্তানহীনা। কক্ষ শয্যাপরে শায়িত শ�ৌর্যবংশী সম্রাটের দ্বিজ-মহিষী অহর্নিশি পাঙ্খায�োগে উপচর্চা করে চলেছে ওনার আর�োগ্য হেতু । রাজবৈদ্য সঞ্জীবকগুপ্ত ঔষধিপাচন প্রস্তুত করে, সম্রাটকে পান করায়। “সম্রাট আপনি ময়ূরমাস ভক্ষণাগ্রহ ত্যাগ করুন।”রাজবৈদ্য বলে ওঠেন। “এক্ষণমুহূর্তে ফলাদি ও জলবৎ রবিশস্যই আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে স�ৌষ্ঠবসম্পন্নভ�োজ্য।” সম্রাট ঈষৎ লাবণ্যময় হাসি ওষ্ঠোপরে এনে শান্তচিত্তে প্রত্যুত্তরে বলে ওঠেন, “তু মি সর্বদাই আমার আহারাদির প্রতি বিদ্বেষ প্রদান কর�ো।” এরপর সম্রাট আরও কিছু বাক্যস্ফলিটের স্পৃহাজ্ঞাপন করলে আসীনস্থ দ্বিজ-পত্নী সম্রাটের কথনে বাধাপ্রদান ক’রে ব�োঝাবার প্রয়ন্ত করে চলে। সম্রাটের হৃদয়ে আরও একটি বিষয়ও উদ্বেগ স ৃষ্টি করেছে এবং তা হল, যুবরাজ মৃণালের বিবাহ। অসুস্থার লাগি সম্রাট অল�োক, তক্ষশীলার পণ্ডিত আচার্য্য শুদ্ধধনের একমাত্র ষ�োড়শবর্ষীয়া রূপসী কন্যা স্বর্ণার সহিত একপক্ষপর বিবাহ স্থির করেছেন। এক অজানিত দুশ্চিন্তা ও দ্বিধা সম্রাটকে ক্রমাগত পীড়ন দান করে চলেছে। তাঁর মৃত্যুপর কে গ্রহন করবে মগধপ্রজাবৎস্যর ভাগ্য ? কে য�োগ্য

79 আল�োক

শারদীয়া 2022

শ�ৌর্য-উত্তরসূরি মগধ রাজসিংহাসনের তরে ? মগধ মহামন্ত্রী আচার্য্য রাধারক্ষিত এবং মুখ্যমন্ত্রী আচার্য্য শকাচার্য্যর সহিত আল�োচনা সাপেক্ষে সম্রাট নিজ কনিষ্ঠপুত্র মৃণালকেই যুবরাজপদে অভিষিক্ত করেন ঠিকই কিন্তু মগধ মগধেশ্বররূপে মৃণালকে আর�োহিত করতে সম্রাট খুবই চিন্তাসঙ্কটে। কারণ সম্রাট অল�োকের সিংহাসনার�োহণপ্রাক্কালে, মগধের একক ও অদ্বিতীয় রাজধানী ছিল পাটু লিপুত্র। কিন্তু আর্যাবর্তে প্রথমবার সম্রাট অল�োকই সাম্রাজ্য বৃহৎ হওয়ায় একটি অখণ্ডশাসিতরাষ্ট্রের রাজধানী করেন দুইটি; প্রথম পাটু লিপুত্র, দ্বিতীয় উজ্জয়িণী। একথা সত্য, অদ্যতে যদি রানী করবীর জ্যেষ্ঠপুত্র তিশলের অকালপ্রয়াণ না ঘটত তাহলে মগধের রাজদণ্ডভার তাঁরই কন্ধোপরে সম্রাট নিবেদিত করতেন। কিন্তু মনুষ্য চিন্তা ক’রে এক, ঘটে আরেক। রাজবৈদ্য সঞ্জীবকগুপ্ত নীর�োগতাহেতু ভ্রমণের পরামর্শ দিলে সম্রাট স্থির করেন, মৃণালের বিবাহপরেই তিনি দাক্ষিণাত্যে স্বাস্থ্য পরিবর্তনে যাত্রা করবেন। ।। দুই ।। পক্ষান্তরে বিবাহের ধার্য দিন উপনীত হল। মহাসমার�োহে যুবরাজ মৃণাল ও স্বর্ণা একে অন্যের তরে সপ্তপদীবন্ধনে আবন্ধ হয়। সমগ্র আর্যাবর্ত আনন্দোল্লাসে মদমত্তপ্রসূত হলেও কেবলমাত্র একজনই কালভু জঙ্গীণির ন্যায় ঊষ্ম বিষ-নিঃশ্বাস পরিহার করে চলেছে এই নবদাম্পত্যজীবনে। বেল, কেয়া ও অন্যান্য সুগন্ধিপুষ্পাদি দ্বারা সুসজ্জিত মৃণাল ও স্বর্ণার স�োহাগরাত্রির শয্যা। “কী হয়েছে ?” স্বর্ণা, শয্যাপরে উপবিষ্ট হয়ে কক্ষবাতায়নপটে দণ্ডায়রত মৃণালকে ললিতস্বরে জিজ্ঞাসা করে ওঠে।

মৃণাল বাইরের তিমিরাচ্ছন্ন পরিবেশ হতে নিজ নেত্রদ্বয়, স্বর্ণার প্রতি রেখে করে উত্তরে বলে, “আমার কী হবে ?” “বিবাহক্ষণ হতে লক্ষ্য করছি, আপনি ক�োন�ো একটি বিষয়ে গভীর বিষাদে নিমগ্ন। পিতার স্বাস্থ্য লয়ে কি এই দুশ্চিন্তা ?” স্বর্ণার আবেগপ্রবন জিজ্ঞাস্যে মৃণাল সামান্য মস্তক, মৃদু আন্দোলন করে, কেবলমাত্র “হুম” ক’রে ওঠে। শয্যা হতে কক্ষতলে নেমে, ধীরকদমে মৃণালের সমীপে অগ্রসী হয়ে, তাঁর উত্তরীয়�োন্মুক্ত বক্ষোপরে নিজ আলক্তকমণ্ডিত বামহস্ত রেখে, মৃণালের আকর্ষণীয় নেত্রোপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “আমি সর্বদা আপনার সহিত চলব�ো। আপনার পিতা, অদ্য হতে ত�ো তিনি আমারও পিতা। আমি পরিচর্চা করব�ো ওনার আর�োগ্যর লাগি।” মৃণাল ঈষৎ হাসি হেসে, স্বর্ণাকে নিজ বাহুয�োগে বক্ষোমধ্যে বদ্ধ করতেই কক্ষের ধাতবনির্মিত ঘৃত প্রদীপ, পবনপ্রবাহে নির্বাপিত হয়। আলিঙ্গনরতে মৃণাল বলে চলে, “অদ্যতে অগ্রজ মনীন্দ্র মগধে অবস্থান করলে পিতার চিন্তার লেশ ঘটত। কৈশরবস্থা হতেই, অগ্রজ ও জ্যেষ্ঠা সঙ্গীমিত্রা বিদেশে ব�ৌদ্ধধর্মপ্রচারে রত। আমার অগ্রজ সহ�োদর তিশল অকস্মাৎ কালর�োগের ক�োপে কুপিত হলে পিতার সর্বাশাতে গ্রহনদশা পরিলক্ষিত হয়। অদ্যতে আমি ব্যতীত এই মগধের অপর উত্তরসূরি নেই।” “আপনি কি ভীত হচ্ছেন ?” “হুম ! যৎসামান্য ! পিতার প্রাণাধিকপ্রিয় এই মগধের সুরক্ষা প্রদানে কদাপি ক্ষু ণ্ণ হলে নিজেকে ক�োন�োপ্রকারেই ক্ষমা করতে পারব�ো না স্বর্ণা।” “আপনি নিশ্চয়ই জয়ী হবেন। আচ্ছা আপনার পিতা নিজ নামাঙ্কিত চক্রে চতু ঃবিংশটি দণ্ড খ�োদিত করেন

কেন ?” প্রফু ল্লচিত্তে স্বর্ণা জিজ্ঞাসা করে। “কারণ পিতা নিজ জীবনে চব্বিশসংখ্যাবৎ জনপদ জয় করেন।” “অন্তিম জনপদই কলিঙ্গ ?” “হ্যাঁ। এই কলিঙ্গের যুদ্ধকালেই আমার অগ্রজ মনীন্দ্র ও জ্যেষ্ঠা সঙ্গীমিত্রার জন্ম হয় এবং কলিঙ্গ যুদ্ধের পশ্চাতে পিতার হৃদয়ে এক পরিবর্তন সম্পাদিত হয় যে তিনি এতকাল কেবলমাত্র অনাথ শিশুদের কলরব, বৈধব্য নারীদের অশ্রুজল ও রাজ্যবাসীর শবদেহের উপরই বিজয়লাভ করেছেন। সেইহেতু ই তিনি অহিংসা পালনে ব�ৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন। পিতা নিজের স�ৌভাগ্য স্মরণ করেন আমার অগ্রজ ও জ্যেষ্ঠাকে এবং......” ইত্যবসরে কার�োর একটি ছায়া কক্ষের চ�ৌকাঠে দর্শিত করতেই মৃণালের কথনে বাধা স ৃষ্ট হয়। “কী হল ?”স্বর্ণা সশঙ্কচিত্তে জিজ্ঞাসা করতে, মৃণাল প্রত্যুত্তরে বলে, “ফনী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলেছে।” ।। তিন ।। বিবাহের কিয়দকালের মধ্যেই সম্রাট রানী করবীকে সঙ্গকরে দাক্ষিণাত্যে যাত্রা করেন। অন্যপ্রান্তে রাজ্যের হিতদায়িত্ব মগধ মুখ্যমাত্য আচার্য্য শকাচার্য্যর উপর। দীর্ঘকাল সৈন্যরা যুদ্ধহতে বিরত থাকায় এক বিশ ৃঙ্খলা স ৃষ্টি হয়েছে তাঁদের মধ্যে। এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি পত্রও রাধারক্ষিত ও শকাচার্য্যের মধ্যে প্রেরিত হয়েছে। এই দ্বিজ কূটনীতিবিদের পথদ্রষ্টা ছিলেন আচার্য্য শ�ৌণক্য। সম্রাট অল�োকের পিতামহ অর্থাৎ যার হস্ত ধারণ করেই মগধে প্রতিষ্ঠিত হয় শ�ৌর্যবংশ সেই স�োমরক্ষিত শ�ৌর্যর দীক্ষাগুরু ও মহামন্ত্রী ছিলেন এই আচার্য্য শ�ৌণক্য। সম্রাট স�োমরক্ষিত শ�ৌর্য ও রানী দ�ৌর্ধার পুত্র সম্রাট কৃষ্ণসার মগধের সিংহাসনে আর�োহণ করেন। সম্রাট কৃষ্ণসারের 80 আল�োক

শারদীয়া 2022

দ্বিতীয়া রানী শুভাঙ্গীর জ্যেষ্ঠপুত্রই অদ্যের মগধেশ্বর সম্রাট অল�োক। তৎপর তিনি নিজ সৎভ্রাতাদের প্রাণ প্রমথন করে, মগধ সিংহাসন লাভ করেন। ব�ৌদ্ধধর্মের পূর্বে সকলে সম্রাটকে ‘চণ্ডাল�োক’ নামে বিদ্রুপ প্রকাশ করত। দেবী পুষ্যাত্রাণার কুদৃষ্টি ক্রমশ বর্ধিষ্ণুতে পদার্পণ করে চলেছে। ্ ক�োন�োপ্রকারেই মৃণাল করতৃক নিজ কামক্ষু ধা নিবৃত্ত করতে পারছে না। উপরন্তু স্বর্ণার সহিত প্রেমসন্ধি আরও দৃঢ় হতে সুদৃঢ় হচ্ছে। পুষ্যাত্রাণার আসল অভিসন্ধি মগধের সিংহাসন। যদি ক�োন�োপ্রকার মৃণালকে নিজ য�ৌবনমত্তাতে নিম্মজিত করতে সক্ষম হয় তাহলে মৃণাল সিংহাসনে আর�োহিত হবার পর শাসনদণ্ড ধারণ করবে দেবী পুষ্যাত্রাণা। কিন্তু তাঁর সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতা ব্যতী অন্য কিছু ই লাভ করেনি। প্রায় পঞ্চচন্দ্রমাস অতিক্রম করলে রানী মহাদেবী সম্রাটের সাক্ষাতভিলাষে দাক্ষিণাত্য যাত্রা করেন এবং অপরপ্রান্তে রাজবধু স্বর্ণা গর্ভবতীর দরুন তক্ষশীলাতে ৃ ৃহে প্রত্যাগমন করে। মগধ নিজ পিতগ মহলে বাস করে কেবল দেবী পুষ্যাত্রাণা এবং মৃণাল। ঘনান্ধময়ী রজনীতে পুষ্যাত্রাণা মৃণালের কক্ষে আগত হওয়া মাত্রই মৃণাল ক্ষু ব্ধস্বরে, “এইক্ষণে তু মি কী হেতু ?” জিজ্ঞাসা করে ওঠে। প্রশ্ননিমিত্তেই পুষ্যাত্রাণা নিজ কটিদেশ হতে সুতীক্ষ্ণ খঞ্জর বহির্ভূত ক’রে, কুচক্রীসূচক নজরে প্রতিবচন করে, “মৃণালের ওই আকর্ষণীয় নেত্রের নীলকান্তমনি আমাকে বাধ্য করে আমার কামাত্মকে জাগ্রত করতে। অদ্যকালব্যাপী ক�োন�ো পুরুষই আমাকে পরিত্যাগ করবার দুঃসাহসিকতা প্রকাশ করেনি; সেইস্থানে কেবলমাত্র তু মিই এক এবং অনন্য। পূর্বে সচেতন জ্ঞাপন করেছিলাম যে, তু মি আমার নও ত�ো, কার�োর নও।”

বাক্যনিমিত্তেই দেবী পুষ্যাত্রাণা স্বহস্তে মৃণালের গলদেশ ধারণ করে, খঞ্জর দ্বারা মৃণালের নেত্রমনি উপরে নেয়। মৃণালের সর্বাঙ্গ রক্তে রক্তিম। যন্ত্রণায় মূর্ছিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে কক্ষে জ্ঞান হারায় যুবরাজ মৃণাল। ।। চার।। জ্ঞান ফিরতেই মৃণাল ব�োধ করে, তাঁর নেত্রদ্বয় পট্টিবন্ধিত। “এখন কেমন ব�োধ করছ ?”মৃণাল কণ্ঠস্বর শ্রুতিগ�োচর করে অবগত হয় এই কণ্ঠ মহামন্ত্রী রাধারক্ষিতের। মৃণাল, এতকালযাবৎ পুষ্যাত্রাণার সকল অভিসন্ধি গাঁথন করলে, রাধারক্ষিত উত্তরে জানায়, তিনি মগধমহল হতে পুষ্যাত্রাণার অকস্মাৎ অন্তর্ধান হবার বার্তা শ্রবনপরই অবগত হয় বিষয়টি এমন কিছু । বিভিন্ন রাষ্ট্রে মগধচরেরা দেবী পুষ্যাত্রাণার সন্ধানে। জীবিত কী মৃত, মগধে তাঁকে উপনীত করাবেই। মৃণালের উপর প্রাণনাশক আক্রমণের বার্তা সম্রাটের নিকট প্রেরিত হওয়ামাত্রই তিনি মগধে উপস্থিত হয়ে পুষ্যাত্রাণার হয়ে ক্ষমাভিক্ষা প্রার্থনা করেন। এই মধ্যবয়সে এই বিবাহের দুরভিসন্ধি প্রকট না হলে মৃণালকে এই কষ্ট সহ্য করতে হত না। পরবর্তীতে জৈনভিক্ষু ক বেশ ধারণ করে অন্ধ মৃণাল মগধ ত্যাগ করে। অন্যতরে দেবী স্বর্ণা, এক পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে সংসার ত্যাগ ক’রে স্বামী মৃণালের নিকট যাত্রা করে। সম্রাট অল�োক নিজ মৃত্যুর পূর্বেই ঘ�োষিত করেন, তাঁর পর মৃণাল ও স্বর্ণার পুত্র সম্মতিকেই মগধের সিংহাসনে আর�োহিত করবে। কথানুসারে সর্ববিধিসম্মত মাত্র দ্বাদশবর্ষীয় প�ৌত্র সম্মতি মগধেশ্বর রূপে অধিষ্ঠিত হয়, কিন্তু এতকালের মধ্যেও দুরভিসন্ধিকারিণী পুষ্যাত্রাণার ক�োন�ো সংবাদই চরেরা লাভ করতে পারল�ো না।।

দলে ভারী অম ৃতা ঘ�োষ / মালয়েশিয়া প্রারম্ভ ঘন জঙ্গলে হঠাৎ এক গুচ্ছ কাল�ো মেঘ ছু টে এসে চারিদিকের পরিবেশ ঘন কাল�ো অন্ধকারে ঢেকে দেয়! আর তার সাথে এক বিশ্রী পচা গন্ধে জীবকুলের শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। যদিও র�োমের এই ঘন জঙ্গলে অল�ৌকিক শক্তির প্রভাবে পার্থিব জগতের প্রাণীকূল বহু পূর্বেই বিলুপ্ত প্রায়; আর যারা এখন�ো প্রকৃতির খেয়ালে বেঁচে আছে, তারাও শুভ-অশুভের দ্বন্দে খুব শীঘ্র মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। কাল�ো, অশুভ, অশরীরীর দল ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে জঙ্গলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে লড়াইতে প্রস্তুত হয়েছে। তাদের স্পর্শে জঙ্গলের প্রতিটা গাছে আগুন জ্বলছে। জঙ্গলের সীমানা ছাড়িয়ে পার্শবর্তী গ্রামগুল�োতেও এই অশরীরীর দল একটার পর একটা মানুষের শিকার করে। রাতের ঘন অন্ধকারে পথ চলতি পথিক অথবা সন্ধ্যা লগ্নে মাঠ থেকে ফিরতি গ্রামবাসীর পিছু নেওয়া, শিকারের অসতর্ক মুহূর্তে তার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়া এবং শিকারকে টেনে নিয়ে গিয়ে তার রক্তপান, এসব এখন এই অঞ্চলের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। অল�ৌকিক এই অশুভ শক্তির উপদ্রবে গ্রামবাসীরা সর্বক্ষণ আতঙ্কিত। আর তার সাথেই চিন্তিত শুভ শক্তি। প্রকৃতির রক্ষার্থেই তাদের উৎপত্তি। ফলে কাল�ো শক্তিকে নির্মূল করার লড়াই শুরু হয়েছে র�োমের এই জঙ্গলে। বহু দিন থেকেই শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব চলছে কিন্তু মানুষ শিকারের পর সেই মানুষের আত্মাও এই ভয়ঙ্কর কাল�ো শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে! ফলে ধীরে ধীরে কাল�ো শক্তিরা দলে 81 আল�োক

শারদীয়া 2022

ভারী হয়ে চলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে এখনই অশুভ অশরীরীর নির্মূল না করলে তাদের আর আটকান�ো শুভ শক্তির অসাধ্য হয়ে উঠবে। ভয়ঙ্কর দ্বন্দে শুভ শক্তির কিছু সৈনিক ধ্বংস হলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় সকল কাল�ো শক্তিকেই শেষ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত একটি মাত্র অশুভ অশরীরী পালাতে সক্ষম হয় এবং সে জঙ্গল ত্যাগ করে অন্যত্র এক গ�োপন ডেরায় লুকিয়ে থাকে। তার একটাই অভিসন্ধি, পুনরায় কাল�ো শক্তির বিকাশ। এখন শুধু জাল পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গ�োনা। অবশেষে র�োমের ছ�োট্ট শহর র�োসিয়া মন্টানা। শহরটি বিখ্যাত তার স�োনার খনির জন্য। তবে স�োনার ল�োভে দেশ বিদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ল�োভী মানুষরা, যুগ যুগ ধরে এই শহরের সাধারণ মানুষগুল�োকে তাদের দাস বানিয়ে রেখেছে। স�োনার খনি থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণীর মানুষের জীবনে এত দারিদ্রতা যে দু'বেলা পেট ভ�োরে খাবারও অনেক সময় জ�োগাড় হয়না! কিন্তু এত অভাব আর প্রতিদিনের খাবার জ�োগাড়ের জন্য সংগ্রামের মধ্যেও অক্টাভিয়া নামের ছ�োট্ট একটি মেয়ে স্বপ্ন দেখে, ক�োন�ো এক পরী তার সাদা পাখা মেলে অক্টাভিয়াকে নিয়ে যাচ্ছে স�োনার খনির দিকে। কিন্তু প্রায় রাতেই স্বপ্ন সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মেয়েটির ঘুম ভেঙে যায়। সে আর দেখতে পারেনা শেষ পর্যন্ত সেই স�োনা সে পায় কিনা। অক্টাভিয়ার বয়স মাত্র এগার�ো বছর কিন্তু তবুও সে পরীর স্বরূপ চিনতে

ভু ল করেনা; অন্তত তারত�ো এমনটাই মনে হয়। অক্টাভিয়া জানে সেই পরী আসলে হ�োয়াইট ভালভা। অক্টাভিয়ার মা তাকে রাতে ঘুম পাড়ান�োর সময় বিভিন্ন ভালভের গল্প বলে। তাই অক্টাভিয়া জানে, হ�োয়াইট ভালভা হল ভাল�ো স্পিরিট। হ�োয়াইট ভালভা বা সাদা ভালভা হল এমন অশরীরী যে দরিদ্র এবং সৎ মানুষদের সাহায্য করে। সে সাধারণ মানুষকে স�োনার খনিতে স�োনা খুঁজে দেয়। এমনকি ক�োন�ো দুষ্ট ভালভা বা ব্ল্যাক ভালভা কার�ো ক্ষতিকরার চেষ্টা করলে হ�োয়াইট ভালভা সেই মানুষকে রক্ষা করে। ছ�োট্ট অক্টাভিয়া তার মায়ের কাছে শুনেছে, ভালভা অশরীরীরা অনেক রকমের হয়। যেমন জলে যারা থাকে তাদের ভালভা অ্যাপেই বলে। আবার খনিতে যারা থাকে তাদের ভালভা বাইলর বলে। সমস্ত ভালভাদের মধ্যেই সাদা বা কাল�ো ভালভারা থাকে। অর্থাৎ কেউ কেউ উপকারী হয় আবার কেউ কেউ ক�োন�ো কারণ ছাড়াই অন্যের ক্ষতি সাধন করে। অক্টাভিয়া তার মা, বাবাকে স্বপ্নে দেখা সাদা ভালভার কথা বলেছে। তার বাবা ডেভ খনিতে সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মেয়ের দেখা স্বপ্নকে গুরুত্ব দেয় না। স�োনার খনিতে কাজ করেও এক আনা স�োনাও তার কপালে কখন�ো জ�োটেনি । বরং প্রতিদিন ফিরতি পথে স�োনা চ�োর সন্দেহে খনির প্রহরীরা তার মত মজুরদের অপমানিত, অপদস্থ করতে ছাড়ে না। তাই, অক্টাভিয়াকে অশরীরী সাদা ভালভা স�োনা পাইয়ে দিতে চায়, সে কথায় ডেভের বিশ্বাস হয় না। সে

প্রতিবার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, "ওটা ত�োমার স্বপ্ন মা। তু মি বড় হলে বুঝবে, ওই স�োনায় আমাদের অধিকার নেই। ক�োন�ো ভাল�ো ভালভাও আমাদের ওই স�োনা দিতে পারে না।" অক্টাভিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তার নীল চ�োখ দিয়ে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু তার মা ডায়না মেয়েকে নিরাশ হতে না দিয়ে তাকে বলে, "সাদা ভালভা একদিন নিশ্চয়ই আমার স�োনা মেয়েকে স�োনায় মুড়ে দেবে। কিন্তু তার জন্য ত�োমাকে মা, বাবার সব কথা শুনে ভাল�ো মেয়ে হয়ে থাকতে হবে। না হলে, কাল�ো ভালভা ত�োমাকে নিয়ে গিয়ে ওই খনিতে আটকে রাখবে। ত�োমার বাবাও তখন ত�োমাকে ছাড়াতে পারবে না।" ছ�োট্ট অক্টাভিয়া মায়ের মুখে কাল�ো ভালভা নামক ভয়ঙ্কর অশরীরীর কথা শুনে ডায়নার ক�োলে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে। ** বাইরে তখন ঘন অন্ধকার। চারিদিক বেশ নিস্তব্ধ। সবাই রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে না পড়লে মানুষগুল�ো আবার সকালে উঠে কাজে বের হতে পারবে না। বাড়ির স্ত্রীরাও সেই খনিতে দুপুরের পর মজদুরি করতে যায়। নাহলে দু'বেলার খাবার জ�োগাড় করাই মুশকিল তাদের জন্য। অক্টাভিয়ারাও তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সবার মায়েরা দুপুরে কাজে যাওয়ার সময় বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের�োতে মানা করে যায়। অক্টাভিয়া কথা শ�োনে। তার বন্ধু রা চু পি চু পি নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে খেলতে যায়। তারা অক্টাভিয়াকেও ডাকে। কিন্তু সে মা, বাবার বাধ্য মেয়ে। সে বের হয়না। হঠাৎ একদিন তাদের পাড়া থেকে দুষ্টু বাচ্চাগুল�ো এক এক করে উধাও হতে 82 আল�োক

শারদীয়া 2022

থাকে! কেউ তাদের খুঁজে পায়না। কিন্তু অক্টাভিয়া জানে তারা ক�োথায়! তার স্বপ্নের সেই সাদা পরীর মত দেখতে হ�োয়াইট ভালভা তাকে বলেছে, মা বাবার অবাধ্য বাচ্চাদের ব্ল্যাক ভালবা খনিতে আটকে রেখেছে। সাদা ভালভা স্বপ্নে অক্টাভিয়াকে সেই জায়গা দেখিয়ে দিতে চায় কিন্তু তার ঘুম ভেঙে যায়। এক অশুভ দিনে অক্টাভিয়া ঠিক করে সে একাই যাবে ওই স�োনার খনিতে, আর তার বন্ধুদের উদ্ধার করে নিয়ে আসবে! হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের মা, বাবার কান্না শুনতে ছ�োট্ট মেয়েটির ভাল�ো লাগে না। তার উপর হ�োয়াইট ভালবার অম�োঘ আকর্ষণকে সে প্রতিবার প্রত্যাখ্যান করলেও, ধীরে ধীরে সেই অশরীরী তার আত্মার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ তৈরি করছে! এখন তার ডাকে সারা না দিয়ে উপায় নেই। এক রাতে, সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর যখন ডেভ এবং ডায়না গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন অক্টাভিয়া চু পি চু পি বিছানা থেকে নেমে, বাড়ির সদর দরজা খুলে, অন্ধকারে বেরিয়ে যায়। আকাশে চাঁদ না থাকলেও কিছু দূর চলার পর নক্ষত্রের আল�োয় সে দূর থেকে স�োনার খনি দেখতে পারে। অক্টাভিয়া ভয়ে ভয়ে সেদিকে এগিয়ে চলে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই তার মনে হচ্ছে, একটা কাল�ো ছায়া যেন তার পিছু নিয়েছে! সেটা ঠিক তার ঘাড়ের পেছনে শূন্যে ভেসে ভেসে তাকে অনুসরণ করছে! অক্টাভিয়া ব�োঝে, মা বাবাকে না জানিয়ে সে রাতের অন্ধকারে একা বেরিয়েছে তাই ব্ল্যাক ভালভা তার পিছু নিয়েছে। অক্টাভিয়া ভয় পেলেও থামে না। সে জানে, তার উদ্দেশ্য মহৎ, তাই তার দৃঢ় বিশ্বাস হ�োয়াইট ভালভা নিশ্চয়ই তার সাহায্য করবে। খনির সামনে প�ৌঁছতেই সে দেখে দু'জন গার্ড খনিতে ঢ�োকার মূল দরজায় পাহারা দিচ্ছে। তাকে দেখলে নির্ঘাত তাড়িয়ে

দেবে। কিন্তু অন্য ক�োন�ো পথও নেই যে সেদিক দিয়ে অক্টাভিয়া সকলের চ�োখের আড়ালে থেকে খনিতে প্রবেশ করতে পারে। অগত্যা সে ঠিক করল, গার্ডদের ব�োঝান�োর একটা চেষ্টা তাকে করতে হবে। হতে পারে গার্ডরাই বাকি বাচ্চাদের উদ্ধার করতে তাকে সাহায্য করে। এমনটা ভেবে সে ছ�োট্ট ছ�োট্ট পায়ে গার্ড দু'জনের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও গার্ডরা কিন্তু অত ছ�োট্ট একটা মেয়েকে, গভীর রাতে, একাকী, স�োনার খনির সামনে দেখেও অবাক হয় না! বরং তাদের হাবভাব পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়, ক�োন�ো অল�ৌকিক কারণে তারা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অক্টাভিয়াকে দেখতেই পারেনি! অক্টাভিয়া বয়সে ছ�োট হলেও খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে একটু ও সময় নষ্ট না করে, গার্ড দু'জনের মাঝখান দিয়ে দ্রুত খনিতে প্রবেশ করে। এমন সময় হঠাৎ এক হিম শীতল ঠাণ্ডা স্পর্শ তার ঘাড়ে অনুভূ ত হয়। অক্টাভিয়া ভয়ে বাক রুদ্ধ হয়ে যায়। ওই স্পর্শ শয়তান ব্ল্যাক ভালভার। সে অক্টাভিয়ার ক্ষতি করতে উদ্যত হলে অক্টাভিয়া বিস্মিত চ�োখে দেখে, এক দৈবিক আল�ো সেই অন্ধকার খনিকে আল�োকিত করে দিচ্ছে এবং প্রথমবার বাস্তবে তার সামনে এসে দাঁড়ায় এক সাদা শুভ্র ছায়া। সেই ছায়ার অসীম ক্ষমতার সামনে অশুভ কাল�ো ছায়া কয়েক মুহূর্তও টিকতে পারে না। ছ�োট্ট অবুঝ অক্টাভিয়ার এমনটাই মনে হয়েছিল। ক�োন গভীর ষড়যন্ত্রের সে শিকার হয়েছে এবং তার কী বীভৎস পরিণতি হতে চলেছে তা সে ঘুনাক্ষরেও বুঝে উঠতে পারেনি। অক্টাভিয়ার কানে আসে কেমন এক ফ্যাসফ্যাসে গলায় হ�োয়াইট ভালভা বলছে, "আমি হ�োয়াইট ভালভা। আমিই ত�োমার স্বপ্নে বারবার দেখা দিয়েছি অক্টাভিয়া। আমি ত�োমাকে ত�োমার বন্ধুদের কাছে

নিয়ে যাচ্ছি। তু মি ওদের নিয়ে ফিরে যাও।" অক্টাভিয়া হ�োয়াইট ভালভা নামক অশরীরীর পেছনে পেছনে হাটতে থাকে। গভীর খনির অন্ধকার বাঁকগুল�ো পার করে, একটা বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলতেই অক্টাভিয়া দেখে, তার বন্ধু রা সেই ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। তাদের দেখে মনে হয়, এই ক'দিন তারা কিছু খেতে পায়নি। উঠে দাঁড়ান�োর ক্ষমতাও তাদের ল�োপ পেয়েছে। হ�োয়াইট ভালভা অক্টাভিয়াকে বলে, "ত�োমার বন্ধুদের প্রতি ভাল�োবাসা; তাদের মায়ের চ�োখের জল দেখে যে দুঃখ ত�োমাকে এখানে এই অন্ধকারে টেনে এনেছে, সেই সাহসের জন্য আমি ত�োমাকে পুরস্কার দিতে চাই। বল�ো কত স�োনা চাই ত�োমার?" অক্টাভিয়া কখন�ো স�োনা দেখেনি! স�োনা পেলে তার মা, বাবার জীবনের দুঃখও চলে যাবে। সে কিছু ক্ষণ ভাবল এরপর বলল, "আমাকে পুরস্কার দিতে চাইলে আমার বন্ধুদের তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। ওদের চলার ক্ষমতা নেই। আর বেশিক্ষণ এখানে এইভাবে থাকলে ওদের আর বাঁচান�ো যাবে না। ব্ল্যাক ভালভাও আবার চলে আসতে পারে। তু মি আমাকে পুরস্কার দিতে চাইলে ওদের ফিরিয়ে দাও হ�োয়াইট ভালভা। ওদের ফিরিয়ে দাও.." হঠাৎ অক্টাভিয়া অনুভব করে, তার চ�োখের সামনের দৃশ্য পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। ক�োথায় তার বন্ধু রা! ক�োথায় হ�োয়াইট ভালভা? সে খনির ভেতরে কেমন এক স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে দাঁড়িয়ে আছে! চারিদিকের অন্ধকার যেন তাকে গিলে খেতে চাইছে! ছ�োট্ট মেয়েটির পায়ের উপর কিছু যেন নড়ে উঠল! খনির ছাদে সম্ভবত ক�োন�ো সুক্ষ ছিদ্র পথে সামান্য আল�ো আসছে, আর তাতে যতটু কু দেখা যায় তাতে সে দেখল, 83 আল�োক

শারদীয়া 2022

হাজার হাজার কীটের পাহাড়ে সে একাকী দাঁড়িয়ে আছে! ভয়ে, ঘেন্নায় অক্টাভিয়া পালাতে চায়; সে দ�ৌড়তে শুরু করে। কিন্তু ক�োন দিকে যাচ্ছে সে বুঝে উঠতে পারে না। খনির বাইরের রাস্তা খুঁজে না পেয়ে সে ক্রমশ খনির ভেতরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রতিবার সে ভেতরের দেয়ালগুল�োতে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়, আবার উঠে দ�ৌড়য়। একটা সময় ক্লান্ত পা দুট�ো থেমে যায়। সে অনুভব করে, অসংখ্য কীটের পাহাড় থেকে সে পালাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু অন্ধকারটা কিছু তেই কমছে না। তার চারদিকে যে ক�োন�ো শুভ শক্তি নেই বরং সে এক অশুভ শক্তির ফাঁদে পা দিয়েছে, তা ছ�োট্ট মেয়েটিরও বুঝতে বাকি থাকে না। ভীত, ক্লান্ত অক্টাভিয়া মাটিতে বসে পড়েছিল। তখন সে স্থান দিয়ে জল প্রবাহ শুরু হয়েছে। খনির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর জল ভ�োরের পূর্বে রাত যখন বেশ গভীর সে সময় বিভিন্ন ফাটল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে; আবার সূর্যরশ্মির সাথে সাথে সেই জল এক জাদুবলে শুকিয়ে যায়! ক�োমরের নীচ অংশে শীতল জলের স্পর্শে অক্টাভিয়ার অবসন্ন শরীরটা ধীরে ধীরে ঘুমের দেশে ঢ�োলে পড়তে চায়। হঠাৎ এক ছলাৎ ছলাৎ শব্দে তার তন্দ্রা ভেঙে যায়। সচকিত হয়ে সে চ�োখ মেলে তাকায়। অন্ধকার খনির ভেতরেও সে দেখতে পারে অপেক্ষাকৃত আর�ো একটা গাঢ় অন্ধকার জলের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে! তার সাথে সাথে অক্টাভিয়ার কানে প�ৌঁছয় সেই অন্ধকারের গম্ভীর গর্জন। ব্ল্যাক ভালভা যত দ্রুত তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে তত�ো এক বিশ্রী গন্ধ অক্টাভিয়াকে আঁকড়ে ধরতে চায়। অশরীরী এবার ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, "ত�োর বন্ধু রা খুব সহজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমার ফাঁদে পা দিয়েছিল। কিন্তু ত�োকে এই খনিতে টেনে নিয়ে আসা কিছু তেই যখন সম্ভব হচ্ছিল না তখন

আমি ত�োর স্বপ্নে হানা দেই। হ�োয়াইট ভালভার রূপ ধরে ধীরে ধীরে অবশেষে ত�োকে টেনে এনেছি। এই খনির গভীরে ত�োকে রক্ষা করা সকলের অসাধ্য। আজ থেকে ত�োর আত্মা আমার হাতে বন্দি হয়ে জন্ম দেবে আর�ো এক ব্ল্যাক ভালভার। আমরা সংখ্যায় যত বৃদ্ধি পাব�ো তত�ো শক্তিশালী হয়ে উঠব। ক�োন�ো হ�োয়াইট ভালভা আমাদের হারাতে পারবে না। ওই দেখ ত�োর বন্ধু রাও ত�োকে ডাকছে।!" অক্টাভিয়া বিস্ফারিত চক্ষে দেখে, না জানি কখন তার চারিদিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে ছ�োট ছ�োট কতগুল�ো অন্ধকার! যত তারা অক্টাভিয়ার দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ততই তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বিশ্রী, পচা গন্ধটা এই মুহূর্তে বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে! অক্টাভিয়া এবার অনুভব করে, কতগুল�ো ছ�োট ছ�োট হাত তার গলা চেপে ধরছে! কারা যেন ফিসফিসিয়ে তার কানে কানে বলছে, "আমাদের সাথে খেলতে আয়... আয়... তাহলেই আমরা দলে ভারী হব।" সে এই কণ্ঠস্বর গুল�োর সাথে পরিচিত। এরা সকলেই তার বন্ধু , যাদের রক্ষার্থে সে একাকী এই খনিতে প্রবেশ করেছে। এরপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার পর তার শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে। তার শরীরটা পড়ে থাকে খনির ক�োন�ো এক অজানা গাঢ় অন্ধকারে আর তার আত্মা য�োগ দেয় ব্ল্যাক ভালভার অশুভ দলে। অবশেষে পলাতক কাল�ো শক্তি তার দল পুনর্নির্মাণ শুরু করে দেয় এবং প্রস্তুত হয় র�োমের জঙ্গলে নিজেদের হেরে যাওয়া আধিপত্য পুনরুদ্ধারের লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ধীরে ধীরে একসময় র�োমের জঙ্গল এবং বিভিন্ন খনির চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া বিশ্রী গন্ধ সর্বত্র কাল�ো ভালভার অস্তিত্ব প্রকট করতে শুরু করে। নিকট ভবিষ্যতে প্রকৃতি প্রস্তুত হয় আর�ো একবার শুভ -অশুভর দ্বন্দ্বের সাক্ষী হতে।

রম্যরচনা ঃ

নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা রাজা দেবরায় আমার বন্ধু গজার মিষ্টির দ�োকানের নাম 'স্যুইট সিক্সটিন'! ষ�োল�ো রকমের মিষ্টি পাওয়া যায় গজার দ�োকানে। তবে একই ধরনের মিষ্টি থাকে না সবসময়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম মিষ্টি পাওয়া যায়। প্রতিদিনই ষ�োল�ো রকমের মিষ্টি থাকে বলে দ�োকানের নামটা 'স্যুইট সিক্সটিন'! আজ ষ�োল�ো রকমের মধ্যে নলেন গুড়ের রসগ�োল্লাও যুক্ত হয়েছে। এটা ম�োটামুটি মাসখানেক প্রতিদিনই থাকবে। দু'জন খাদ্যরসিক টেবিলে বসে নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা অর্ডার করলেন। জন প্রতি দুট�ো করে ম�োট চারটা অর্ডার করলেন। এরই মাঝে দু'জন খুব গল্প জুড়ে দিয়েছেন। একজন বললেন, "আমি ত�ো গরম গরম নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা একসাথে পঞ্চাশটা খেতে পারব�ো!" অন্যজন বললেন, "গুল মারিস না। আমিই ত্রিশটার বেশি একসাথে খেতে পারব�ো না, আর তু ই পঞ্চাশটা খাবি!"

বলল�ো, "ঠিকাসে আপনেরার ত্রিশটা বা পঞ্চাশটা খাঅন লাগদ�ো না। খালি কন্ চাইট্টা রসগ�োল্লা খাইতে পারবেন নি?" গজার প্রশ্নের উত্তরে একজন বললেন, "যদি খেতে পারি কি পাব�ো?" অন্যজনও একই প্রশ্ন করলেন। উত্তরে গজা জানাল�ো, "আগামী এক মাস আপনেরার লিগা নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা একদম মাগনা, যত খুশি খান এক টেহাও দঅন লাগদ�ো না। তবে চাইট্টা না খাইতে পারলে একমাস নলেন গুড়ের রসগ�োল্লার পুরা দাম প্রতিদিন দেঅন লাগব�ো আবার একটাও খাইতে পারতেন না।"

ক্রেতা দু'জন ভাবলেন, "এ আর এমন কী কঠিন!" তারা রাজি হয়ে গেলেন। দু'জনই চারটা নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা অর্ডার দিলেন এবং মুহূর্তেই খেয়ে শেষ করলেন। তারপর দু'জনই হাততালি দিয়ে গজাকে বললেন, "জিতে গেলাম আমরা। এইবার একমাস ফ্রিতে নলেন গুড়ের রসগ�োল্লা খাব�ো কী মজা!" গজা এদের কথা শুনে গজা এগিয়ে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল�ো, "কেমনে

84 আল�োক

শারদীয়া 2022

জিতলেন? চাইট্টা কৈ খাইলেন?" তারা জানালেন, "আপনার সামনেই ত�ো আমরা চারটা করে খেলাম।" গজা বলল�ো, "আমি ত�ো চাইট্টা খাইতে কৈলাম।" তারা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, "চারটাই ত�ো খেলাম আমরা!" গজা বলল�ো, "চাইট্টা ত�ো খাইতে দেখলাম না একবারও!" ব্যস ঝগড়া শুরু হয়ে গেল�ো। দ�োকানের আরেকজন নিয়মিত খাদ্যরসিক এসে তাদের ঝগড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তারা সবকিছু জানালেন। নতু ন খাদ্যরসিক সব শুনে হেসে লুট�োপুটি! ঐ দুই খাদ্যরসিক এর কারণ জিজ্ঞেস করায় জানালেন, "আরে আপনারা ত�ো উনার কথাই বুঝতে পারেননি। চাইট্টা মানে চারটা নয়, চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন!!"

বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে আসুন , আর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরুন প্রদীপ দে পাগলের পাগলামি। পাগলাচন্ডী! প্রানের বন্ধু ম্যাসেজ করল�ো -- " তাড়াতাড়ি আয় দরকার আছে। আমি ভাবলাম প্রিয় বন্ধু সাগর এর ডাক মানে নিশ্চয়ই ক�োন ভাল কাজের খবর আছে। ও আর আমি দুজনই বেকার। চাকরির অন্বেষণে দুজনই অর্ধমৃত। ও আমায় খবর দেয় আর আমি ওকে খবর দিই । যদিও শেষে বিড়ালের ভাগ্যে শিকল আর ছেড়ে না। বড় বাথরুমের তাড়া পেয়েছিল, তা চেপে প্যান্টজামা গলিয়েই ফ�োন করলাম, --- ক�োথায় যাব�ো রে? -- এইত�ো এস বি আই ব্যাংকের সামনে আয় না। বেশ খানিকটা রাস্তা। তাড়াতাড়ি তাই। বেকার ছেলে তাও অট�োয় চড়ে পড়লাম। কয়েক মিনিটেই নামলাম গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাগরের সামনেই। ও আমাকে অট�ো থেকে নামতে দেখেই রে-রে করে চেঁচাল�ো, -- করেছিস কি

85 আল�োক

শারদীয়া 2022

অট�োয় চড়ে এসেছিস কেন? ফিরে যা, ফিরে যা, কাজ হবে না -কে ক�োথা থেকে দেখে নেবে। ফিরে যা , ফিরে যা । আবার ঘুরে আয় ,কিন্তু তাড়াতাড়ি আয়। আমি ভাবলাম কেউ হয়ত�ো আমায় বড়ল�োক ভেবে চাকরি দেবে না। তাই লুকিয়ে ফিরে এলাম। কিন্তু মাঝরাস্তায় এসে আবার ব্যাংকের অভিমুখে ঘুরে তাড়াতাড়ির মুডে দ�ৌড় লাগালাম। বন্ধু সাগর ঠিক দেখে ফেললে, বললে , -- হবে না, হবে না, দ�ৌড়ে এলি কেন? ফিরে যা, পুর�ো রাস্তা হেঁটে আয়। সিসিটিভি আছে ধরা পড়ে যাবি রে! আমার বড় রাগ হল। মনে হল বাড়ি ফিরে যাই আর আসব�ো না। তাও ল�োভ -আবার বেকারত্বের জ্বালা! হেঁটে হেঁটেই যেতে শুরু করে দিলাম। রাস্তায় ক�োথায় সিসিটিভি আছে, আমার যে ঠিক জানা নেই। প�ৌঁছেই বন্ধু র দেখা পেলাম। ও বললে,

-- এবার হবে। আয় এদিকে …… ও আমার হাত ধরে ব্যাংকের বাউন্ডারি ওয়ালের দিকে নিয়ে গিয়ে ওখানকার দেওয়ালে ব্যাংকের একটি বিজ্ঞাপনের ব্যনার দেখাল�ো, --ব্যানারে লেখা ছিলঃ এস.বি.আই. কার ল�োন -স্বল্প সুদে তাৎক্ষণিক উপলব্ধ -----------" হেঁটে আসুন আর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরুন " --------------------------------------------------------------রাগে শরীর জ্বলে গেল। পিছন ঘুরে গালাগাল দেওয়ার জন্য মুখ ঘুরাতেই দেখি ও হাওয়া! এদিকে ততক্ষণে আমার বড় বাহ্যের বেগও যে হাওয়া!

পঁচার দুঃখ সুস্মিতা সাহা সকাল থেকেই পঁচার মনটা বিশাল খারাপ হয়ে আছে ইংরিজিতে যাকে বলে ওই বিশাল 'মুড অফ '। পঁচাকে দেখে ওর মা সকালের খাবার খেতে ডেকেছিল কিন্তু পঁচা স�োজা না করে দিয়েছে। মা তার কারণ জিজ্ঞেস করায় চু পচাপ গম্ভীরভাবে জানিয়ে দিয়েছে " আজ আমার মুড অফ"। ওর মা ওর মুখে ইংরিজি শুনেই আর এর থেকে বেশী কিছু বলার সাহস দেখায়নি। ত�ো পঁচা না খেয়ে দেয়ে সবার থেকে দূরে একা থাকার জন্য বাড়ির ছফু ট উঁচু পাঁচিলের ওপর উঠে বসে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভাবছিল। সত্যি, মাঝে মাঝে পঁচার নিজেকে খুব অভাগা মনে হয়। তার প্রধান কারণটা হল�ো তার

86 আল�োক

শারদীয়া 2022

নাম। নামটা ওর ঠাকুরদার দেওয়া। পঁচা শুনেছে তার জন্মের সময় ঠাকুরদা নাকি কি একটা বই পড়ছিলেন। বইয়ে মধ্যে থাকা 'পঞ্চশীল' নামটা ঠাকুরদার খুব পছন্দ হয়। ঠিক সেইসময় পঁচার জন্মের খবর পেয়ে তিনি সেই নামটাকেই পঁচার নাম রেখে দেন। কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেই নাম ল�োকের মুখে মুখে ঘুরে বেরিয়ে পঞ্চশীল থেকে পঞ্চা, পঁচা, পাঁচু,পঞ্চু এমনকি এখন পেচ�োতে এসে ঠেকেছে। বন্ধু রা, পাড়ার দাদারা প্রায়ই পেচ�ো বলেই ডাকে। মাথা এত গরম হয়ে যায় যে সেই গরমে পঁচার মাথার গ�োবরগুল�ো শুঁকিয়ে ঘুঁটে হয়ে যায়। খুব রাগ হয় দাদুর ওপর মাঝে মাঝে। পঞ্চশীল নামটা যদি এতই পছন্দ

ছিল ত�ো সেটা নিজের মাথার ভেতরে সীল করে রাখলেই হত�ো, খাম�োখা পঁচার ঘাড়ে নামখানা সীল করার কি দরকার ছিল! এখন যত জ্বালা সব পঁচার। এই নামের জন্য মেয়েরাও পঁচাকে পাত্তা দেয়না ম�োটেই। তারা ছেলেদের মত খিল্লি করেনা ঠিকই কিন্তু ছেলেদের খিল্লি শুনে মুখ টিপে হাসতেও ছাড়ে না। মাথায় গ�োবর নিয়েও সে টেনেটু নে ক্লাস টেন পর্যন্ত ত�ো এসেছে , হ�োক না সে যতই এক ক্লাসে দুবার করে থেকে, সবার থেকে বেশি অভিজ্ঞ হয়ে পরের ক্লাসে ওঠা। তার ওপর বয়সেও বড় তবুও মেয়েগুল�োর এত অবহেলা! বাকিদের কথা নাহয় ছেড়েই দিল, কিন্তু মঞ্জু, সেও ওই ওদেরই মত, এটাই বড়

ব্যথা দেয় পঁচাকে। মঞ্জুকে পঁচার খুব ভাল�ো লাগে, ওকে দেখলেই কেমন একটু ইয়ে ইয়ে মানে প্রেম প্রেম পায় পঁচার। ক্লাসে বসে সারাক্ষণ ওর দিকে তাকিয়েই সময় কেটে যায়। কিন্তু মঞ্জু সেটা বুঝলে ত�ো! ত�ো এই ব�োঝান�োর জন্যই গত পরশু মঞ্জুর জন্য একটা প্রেমপত্র লিখে নিয়ে গিয়েছিল স্কুলে। তারপর টিফিনের সময় লুকিয়ে ওর ব্যাগের নিচে রেখে দিয়েছিল। মঞ্জু সেটা বাড়ি যাবার সময় দেখতে পেয়েছিল ব্যাগ ওঠাতে গিয়ে, তাই সেটা না পড়েই সাথে নিয়ে চলে গিয়েছিল। ফলে চিঠি পড়ে মঞ্জুর মনের ভাব কেমন হল সেটা জানার অবকাশ আর হয়নি পঁচার। গতকাল তাই খুব আশা নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল কিন্তু তখন কি আর জানত সব আশায় ফিনাইল ঢেলে ধুয়ে যাবে! ক্লাস চলাকালীন মঞ্জু শুধু বারে বারে পঁচার দিকে তাকিয়ে দেখছিল । আর তাই দেখে পঁচার মনেও গ�োলাপ, রজনীগন্ধার সাথে সাথে বকফু ল, কুমড়ো ফু ল ইত্যাদি সব ধরনের ফু লই ফু ট ফু ট করে ফু টে উঠছিল।

87 আল�োক

শারদীয়া 2022

তারপর টিফিনের সময় মঞ্জু স�োজা পঁচার কাছে এসে চিঠিটা খুলে ওর সামনে মেলে ধরে বলল, " ত�োমার সব ভু ল বানানগুল�ো আমি লালকালি দিয়ে কেটে ওপরে ঠিক করে লিখে দিয়েছি, যেমন - প্রীও-টা প্রিয় হবে, শুন্দুর-টা সুন্দর হবে, চ�োক-টা চ�োখ হবে, থ�োট-টা ঠ�োঁট হবে এইসব আরকি। তু মি ঠিকমত দেখে দেখে ওগুল�ো মুখস্ত করে নিও বুঝলে পঁচাদা, বাংলায় নম্বরটা একটু বেশি আসবে তাহলে।" সেই শুনে পুর�ো ক্লাস খ্যাক খ্যাক করে হেসেছিল। কেউ কেউ ত�ো ব্যঙ্গ করে বলছিল, " তু ই এবার থেকে মঞ্জুর কাছেই টিউশন পড়তে পারিস ত�ো রে পেচ�ো , ও ত�োকে পড়ান�োর সাথে সাথে ঠিকমত প্রেমপত্র লেখাও শিখিয়ে দেবে। মঞ্জু ত�ো লেখাপড়ায় খুবই ভাল�ো।" পঁচা যাকে গুরু বলে মানে সেই ডেপ�োদা পর্যন্ত সব শুনে বলেছিল, " বাঙালির ছেলে তু ই, বাংলাটা একটু ঠিকমত সিকে নিয়ে তারপর পেমপত্তর লেক না। " পঁচার খুব মানে লেগেছে এসবের

পর,থাক না মাথায় গ�োবর ঘুঁটে যা খুশি, তাই বলে কি মানসম্মান নেই নাকি! এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই সূর্য মাথার ওপর চড়ে গেছে কখন টের পায়নি পঁচা। হুঁশ ফিরল�ো মায়ের ডাকে, " ওরে, বাপ আমার, এই গনগনে র�োদ্দুরে বসে আছিস সেই থেকে, গায়ের রং যে পুড়ে কাল�ো হয়ে গেল�ো রে ! নেমে আয় বাছা।" মায়ের কথা শ�োনার ম�োটেই ইচ্ছে ছিল�ো না পঁচার কিন্তু ঠিক সেইসময় পাশের বাড়ির বল্টু এসে আমের আচার চাটতে চাটতে বলল, " না না ,থাক�ো পেচ�োদা ওখানেই, ত�োমার নামটা তাহলে একটু পাল্টাবে ,এরপর থেকে ত�োমায় কেলে পাঁচু বলে ডাকতে পারব�ো, হেব্বি কিন্তু নামটা। " শুনেই পঁচার ঝাঁট জ্বলে গেল। ধুপধাপ করে হনুমানের মত নেমে এল�ো পাঁচিল থেকে আর বল্টু র পেছনে তাড়া করল�ো। বল্টু কি আর সেখানে থাকে, সেও দে ছু ট। মা দুইহাত কপালে ঠেকিয়ে বললেন, " বাঁচালে বাবা পঞ্চানন।"

ভ্রমণ ঃ

কন্যাকুমারী প্রতিমা ভট্টাচার্য্য মন্ডল কথায় আছে 'পায়ের তলায় সর্ষে', আমার পায়ের তলায় সত্যি সর্ষে আছে। ঘুরতে আমি এত�ো ভাল�োবাসি যে, কিছু ক�োথাও না গেলেও মনটা হাঁসফাঁস করে ওঠে। অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় ত�ো দেখার খুব ইচ্ছা আছে। তেমনি ভারতবর্ষের দক্ষিণের শেষ বিন্দুতে প�ৌঁছান�োর খুব ইচ্ছা। শুনেছিলাম শেষ বিন্দুতে আছে কন্যাকুমারী, তারপরেই অথৈ সমুদ্র। শেষ সমুদ্রের বহু বহু পথ অতিক্রম করে তবেই প�ৌঁছান�ো যায় শ্রীলঙ্কা দেশে। রামায়ণে যে লঙ্কা রাজ্যের উল্লেখ ছিল,মনে করা হয় এটা সেই শ্রীলঙ্কা। পুরুষ উত্তম রামচন্দ্র আর রাবনের যুদ্ধের সময় রামচন্দ্র বানর সেনাবাহিনী নিয়ে

88 আল�োক

শারদীয়া 2022

সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে পাথর ফেলে রাস্তা করে লঙ্কায় গিয়েছিলেন মাতা সীতাকে উদ্ধার করার জন্য। অনেক দিনের ইচ্ছা আর স্বপ্নপূরণের মুখ�োমখু ি দাঁড়িয়ে মনের মধ্যে খুশিতে আনন্দে উত্তেজনা ক্রমশই বেড়ে চলছিল সেটা বেশ ভাল�ো মত�োই টের পাচ্ছিলাম। আমি রামকৃষ্ণ মঠে দিক্ষিত। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, মা সারদা দেবী এবং স্বামী বিবেকানন্দ আমার জীবনের পথে আদর্শ আশ্রয় স্থল। সেই পরম প্রিয় শ্রদ্ধেয় বিবেকানন্দের পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত কন্যাকুমারীর সেই প্রসিদ্ধ বিবেকানন্দ শিলার সান্নিধ্যলাভের অম�োঘ আকর্ষণ দুর্নিবার টানেই সুদূর পশ্চিমবঙ্গ থেকে এত�ো

দূরে দক্ষিণ ভারতের শেষ প্রান্তে ছু টে আসা। আমাদের জার্নিটা ভেলুরে ডাক্তার দেখিয়ে, তারপর ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরালায় বেরিয়ে,কেরালার অপরিসীম প্রাকৃতিক স�ৌন্দর্যের স্পর্শে নিজেদের প্রাণশক্তিকে আরও একটু উজ্জীবিত করে তু লে কন্যাকুমারী'তে এসে প�ৌঁছে গেছি। ভেলুরে যেতে গেলে কাটপাট্টি স্টেশন হয়ে যেতে হয়। ডাক্তার দেখান�োর কাজ শেষ করে বিকেল বেলায় কাটপাট্টি প�ৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্যস্থল হল প্রথমেই চেন্নাই থেকে নাগরকয়েল হয়ে স�োজা কন্যাকুমারী। চেন্নাই এগম�োড় স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭.৩৫ এর অনন্তপুরী

এক্সপ্রেসে চেপে পরদিন বেলা ১০.৩৫ -এ প�ৌঁছালাম নাগরকয়েল স্টেশনে। পথে যেতে যেতেই আমাদের সূর্যোদয় দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হল। মাইলের পর মাইল উইন্ডমিলের মালায় সাজান�ো বিস্তীর্ণ উপত্যকা আর ৃ ্য মেঘে ঢাকা পাহাড়ের অপূর্ব দশ মন ছু ঁয়ে গেল। মাঠের পর মাঠ বড় ইলেকট্রিকের প�োস্টের মত�ো দেখতে খাম্বাতে ফ্যানের পাখার মত�ো পাখা লাগান�ো। হাওয়া হলেই সেগুল�ো ঘুরে চলেছে অবিরাম। কন্যাকুমারীর সমুদ্রতীরে অবস্থিত এই মুপাণ্ডল উইন্ড ফার্ম ভারতের সর্ববৃহৎ বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০০ মেগাওয়াট। সেই অতিকায় সব উইন্ডমিলের আড়াল দিয়ে ধীরে ধীরে সূর্য উঠছে। আমরা অবাক বিস্ময়ে সেই স�ৌন্দর্য উপভ�োগ করছি। আর দুরন্ত গতিতে ছু টে চলা ট্রেনের জানালা দিয়ে ম�োবাইলের ক্যামেরায় একের পর এক ছবি তু লে তু লে ম�োবাইল মেম�োরি ফু ল করে ফেলেছি। ট্রেন থেকে সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখতে দেখতে যাওয়ার পথে সফরের সমস্ত ক্লান্তি যেন এক নিমেষে উধাও হয়ে যায়।মন ভরে যায় প্রাকৃতিক স�ৌন্দর্য উপভ�োগ করে। যথা সময়ে নাগরকয়েল স্টেশনে নেমে গাড়ীতে চেপে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে আমরা কন্যাকুমারীতে একটা খাবারের হ�োটেলে প�ৌঁছালাম। সেখানে কিছু খেয়ে নিয়ে, চললাম আশ্রমের দিকে। আগে থেকে বুকিং করে আসিনি। তবে আসার পথে ফ�োন করে জানতে চেয়েছিলাম ঘর পাওয়া যাবে কিনা ? আশ্রমের রিসেপশন থেকে জানিয়ে ছিল আপনারা আসুন, কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।

89 আল�োক

শারদীয়া 2022

খুব সুন্দর পরিবেশে সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকায় আশ্রম। আশ্রমের মধ্যে প্রচু র ফু ল গাছ আর নিম গাছে ভর্তি। মেইন গেট থেকে আশ্রমের মূল বিল্ডিং এর দূরত্ব অনেকটা। তাই আশ্রম থেকে গাড়ি করে মূল বিল্ডিং এ যাওয়া ছাড়াও সমুদ্রের ধারে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে। সমুদ্রের ধারে মিউজিয়ামের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আশ্রমের ঘরটিও খুব বড়। খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আশ্রমে খাওয়ার ব্যবস্থা তেমন নেই। তবে আশ্রমের মধ্যেই টাকা দিয়ে খাবার পাওয়া যায়। নাওয়া-খাওয়া সেরে ঠিক হল আরও একদিন যখন এখানে থাকব তখন আজ বিকেলে না হয় সমুদ্রতীরটা প্রথমে ভাল�ো করে দেখে আসি। পরের দিন আইল্যান্ডে যাওয়া যাবে। আজকে বিবেকানন্দ রক আইল্যান্ডে যাবার ভেসেলের টাইম ওভার হয়ে গেছে। সমুদ্রতীরেই রয়েছে পাশাপাশি দুটি স্মৃতিস�ৌধ। প্রথমটি দুধ সাদা রঙের গান্ধী মেম�োরিয়াল বা গান্ধী মণ্ডপ, তার কিছু দূরে অপেক্ষাকৃত নতু ন, সবুজ রঙের এক স্মৃতিস�ৌধ। এটি তামিলনাডু র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কামরাজের নামাঙ্কিত কামরাজ মেম�োরিয়াল বা কামরাজ মণ্ডপ। আরও কিছু টা এগুলে সামনে সমুদ্রতট, তারপর আদিগন্ত শুধু বিপুল জলরাশি। তার মাঝে সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিবেকানন্দ রক মেম�োরিয়াল এবং এরই অনতিদূরে সমুদ্রের বুকে দণ্ডায়মান তামিলনাডু র প্রসিদ্ধ কবি থিরুভাল্লুভারের ১৩৩ ফু ট উঁচু এক সুবিশাল মূর্তি। দীঘা পুরীতে সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকায় যেমন মেলা বসে এখানেও ঠিক তেমনি। অনেক দ�োকানের পসার।কি নেই সেখানে।সমস্ত ধরনের দ�োকান আছে। জামা কাপড়, খাবার দ�োকান, খেলনার দ�োকান,ঘর সাজান�োর রকমারী

জিনিসপত্রের দ�োকান। আমারা ডাব খেলাম আর সেই সঙ্গে দই বড়া খেলাম। কন্যাকুমারীর সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ শ�োভা দেখার জন্য সারা বিশ্বের বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় করেন। সুতরাং এই সুয�োগ কিছু তেই হাতছাড়া করা যায় না। পরের দিন খুব ভ�োরে ভ�োরে ঘুম থেকে উঠে আশ্রমের শেষ প্রান্তে সমুদ্রের ধারে দেখতে পেয়েছিলাম সত্যিই সেই সুন্দর অপরূপ দৃশ্য।আর প্রথম দিন দেখতে পেয়েছিলাম সমস্ত সাগর সঙ্গমকে আবির রঙে রাঙিয়ে সূর্যদেবতা আরব সাগরের বুকে অস্ত যাচ্ছেন। সামনে ভারত মহাসাগরের বিশাল জলরাশি দূরে বহুদূরে নীল নীলিমার সাথে গিয়ে মিশেছে। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে আমরা তন্ময় হয়ে দেখছি প্রকৃতির সেই ৃ ্য। আশেপাশের স্কুলের অপরূপ দশ ছেলেমেয়েরা স্কু ল ছু টির পর দল বেধে আসছে সাগরের জলে গা ভেজাতে। সঙ্গে পাহারায় রয়েছেন বাঁশি হাতে তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দেখে মনে হবে যেন, স্কু ল পড়ুয়াদের কন্যাকুমারীর বুকে এই সমুদ্রস্নান এখানকার পাঠক্রমের অন্তর্গত। সন্ধ্যার অন্ধকারে আল�োক মালায় সেজে বিবেকানন্দ রক মেম�োরিয়ালের শ�োভা যেন ধীরে ধীরে আরও ম�োহময় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রতট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশালাকার পাথরের উপর বসে সন্ধ্যার সে দৃশ্য সবাই বহুক্ষণ প্রাণভরে উপভ�োগ করলাম। আশ্রমে ফেরার পথে সি-বিচের ধারে দাঁড়িয়ে এখানকার সুমিষ্ট শাঁসাল�ো ডাব আর পাকা কলার পক�োরা, দেখতে ঠিক বেগুনির মত�ো। পাকা কলা বেসনে ডু বিয়ে ডিপ ফ্রাই করা। খেতে খুব অসাধারণ। এত�ো সুন্দর দৃশ্য আর খাবার খেয়ে ক্লান্তি যেন অনেকটাই দূর হয়ে গেছে। এখানে আসাটা সার্থক মনে

হচ্ছে। রাস্তার দুধারের আল�ো ঝলমল দ�োকানগুল�োতে পছন্দ মত�ো কেনাকাটা করে,আর রাতের খাবার প্যাকিং করে নিয়ে আশ্রমে ফিরলাম। আগামীকাল আমাদের বিবেকানন্দ রক মেম�োরিয়াল অভিযান, তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। পরেরদিন ভ�োরে উঠে সূর্যোদয় দেখে বিবেকানন্দ রক আইল্যান্ডে যাবার জন্য রেডি। ভেসেলের টিকিট কেটে লম্বা লাইন দিয়ে অনেক সময় পর ভেসেলে উঠে রক আইল্যান্ডে প�ৌঁছে গেলাম।

90 আল�োক

শারদীয়া 2022

জায়গাটা এত�োটাই সুন্দর,তা ক�োন ভাষা দিয়েই প্রকাশ করা যাবে না। নিজের অনুভূ তি দিয়ে অনুভব করতে হবে। চারিপাশে অথৈ জলের মধ্যে মন্দির। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের প্রার্থনা সঙ্গীত বেজে চলেছে অবিরাম। মনে প্রশান্তি এনে দেয়। ঘন্টা খানেক সেখানে কাটিয়ে ফিরে এলাম মূল ভূ খন্ডে। মিউজিয়ামে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বিবেকানন্দ স্মৃতি বিজড়িত অনেক জিনিসের সম্ভার। অনেকটা সময় সেখানে কাটিয়ে আশ্রমে ফিরেছিলাম।

এত�ো সুন্দর সময় কেটে ছিল সেখানে যে বার বার মন সেখানেই ঘুরে ফিরে যেতে চাই। আবার ক�োন একদিন হঠাৎ করেই বেরিয়ে পড়ব কন্যাকুমারীর উদ্দেশ্যে। বিবেকানন্দ রক আইল্যান্ডে প�ৌঁছে বিবেকানন্দের মূল্যবান বাণী গুল�ো মন দিয়ে অনুভব করতে।

মন মানেনা ওমানে গ�ৌতম ঘ�োষ-দস্তিদার অধীর মন অনতিবিলম্ব বিরহ সয়ে এক ডিসেম্বরের প্রথম দিবসে সিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে পড়ল�ো দিল্লি থেকে ঘণ্টা তিনেক উড়ান শেষে । আমার ভারতীয় হাতঘড়িতে তারিখ তখন পালটাব�ো পালটাব�ো করছে । এখানে এখন�ো রাত সাড়ে দশটা ম�োটে । নামতে নামতে পালকের মত�ো জাহাজটার জানলা দিয়ে চেয়ে রইলাম অপলক । রাত হয়ে গেলে কী হবে ? তিনদিকে আরব সাগরের ঢেউয়ের থেকে সুদীর্ঘ প্রবালপ্রাচীর তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আপ্রাণ আলাদা করে রেখেছে ওমানের তটভূ মিকে । আর সেই দ্বীপপ্রায় জুড়ে জ্বলজ্বল করছে সভ্যতার আল�ো । আকাশকে আড়াল করার চেষ্টায় তবুও

91 আল�োক

শারদীয়া 2022

সে মাতে নি ক�োথাও । গর্বিত মাথা তু লে স্পর্ধিত উচ্চারণে ঘ�োষণা করেনি নিজের দীর্ঘকায় উপস্থিতি । মুক্তোর মত�ো আল�োর মালায় আপনাকে ঢেকে রেখেছে । আমারই মত�ো অনভিপ্রেত ক�োন এক পরদেশির পথ চেয়ে ! বন্দরে নেমে জানলাম শেষে এত�ো আল�োর রহস্যটা । আজই ঈদের চাঁদ দ্যাখা গিয়েছে আকাশের ক�োণে । একই সঙ্গে শুরু হয়েছে আবার জাতীয় দিবসের ছু টি । জাতীয় দিবস মানে এদেশে আসলে সুলতানি ওমানের স্থপতি কাবুজ বিন সয়দের জন্মদিন – আঠের�োই নভেম্বর । মানুষের সুবিধার্থে পালন করা হয় অবশ্য মাসের শেষ দুদিন সাপ্তাহিক ছু টির সহযাত্রায় । আর এবার ত�ো

যাকে বলে একেবারে স�োনায় স�োহাগা । একমাস র�োজা শেষে আজ শুরু হিজরি বর্ষপঞ্জির শওয়াল মাস । তাই ছু টি পড়েছে গ�োটা সপ্তাহ জুড়ে । টানা নদিন ধরে । শুক্র শনি ত�ো এমনিতেই সপ্তাহান্তের অবকাশ – আগায়ও আছে আবার গ�োড়ায়ও আছে । ভ�োর না হতেই ভ�োরের আল�োয় দেখতে যেতে হবে সুলতান কাবুজ গ্র্যান্ড মস্ক । স্থপতি এডগারড বালি সবে এই দু হাজার একের মে-তে শেষ করেছেন । পাঁচখানা মিনারে ঘেরা এই গ্র্যান্ড মস্কে পঁচিশ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসতে পারেন । মসনদে বসার বাইশ বছরেরও বেশি বাদে ১৯৯২তে সুলতান কাবুজ এই মসজিদ তৈরির নির্দেশ দেন

। রাজধানী মাস্কাটের অন্যতম ব�োশার বিলায়েতে চু রানব্বইয়ের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয় । প্রায় পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বর্গ ফু ট জুড়ে ওমানের বৃহত্তম এই মসজিদ আজ প্রাচ্য স্থাপত্যের একটা বিরল দৃষ্টান্ত । তিন লক্ষ টন বেলেপাথর দিয়ে গড়া হল�ো গ্র্যান্ড মস্ক । বেলেপাথর এল�ো সাগরের ওপারে ভারতবর্ষ থেকে । ঘুরে ঘুরে দেখলাম আমি আর তাস্নিম । ক�োন�ো গাইড লাগল�ো না । তাস্নিম কিছু টা জানে । এখানে আছে দু দশক পেরিয়ে গেল । বাংলাদেশ স্কুলে বাংলা পড়ায় । বিমানবন্দরে নামার পরেই বিনে পয়সায় পেয়েছিলাম ইংরেজিতে লেখা ছ�োট ছ�োট চটিবই । গুগুল ত�ো আছেই ব্রাত্যজনের সখা । মূল প্রার্থনা কক্ষে তাস্নিম যেতে পারবেনা । একটা বিশালাকার বর্গক্ষেত্র । ২৪৪ ফু ট বাই ২৪৪ ফু ট । মেঝে থেকে ১৬০ ফু ট উঁচুতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রিয় গম্বুজখানি । এর লাগ�োয়া মূল মিনারটির উচ্চতা তিনশ�ো ফু ট । আর চার ক�োণের চারখানি গম্বুজের প্রত্যেকটি প্রায় তার অর্ধেক মানে দেড়শ�ো ফু ট । সাড়ে ছ হাজার ভক্ত একসঙ্গে বসে প্রার্থনা করতে পারেন এই মূল প্রার্থনাকক্ষে । তু লনায় মেয়েদের জায়গাখানি অবশ্য অনেকটাই ছ�োট – সেখানে টেনেটু নে সাড়ে সাতশ�ো মহিলার বন্দোবস্ত । আকাশ আজও মেঘলা করে আছে । অনেক অভিমান বুঝি বুকে চেপে আছে । ভাগ্যের ফেরে তাস্নিম আর আমি আজ কত�ো দূরে । দেশ আলাদা । কেউ নাকি বলেছিল, আমাদের ধর্মও আলাদা ! তাই হবে ! কে জানে । আমিও ত�ো মসজিদে বসে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করলাম । আর তাস্নিম মাত্রা-র শিব মন্দিরে গিয়ে শিবের মাথায় দুধ ঢালল�ো । কার কী এল�ো গেল�ো ? মাত্রার এই শিব মন্দিরে প্রত্যেক শুক্রবার

92 আল�োক

শারদীয়া 2022

ইস্কনের গীতা-পাঠের আসরে শয়ে শয়ে ভক্ত আসেন । তারপর পঙক্তি-ভ�োজনের ঢালাও ব্যবস্থা । ইস্কনের গুরুভাইরা আর মাতাজিরা নিজেদের চাঁদা করে ত�োলা টাকায় সমস্ত খাইখরচা চালান । ভিড় নাকি হয় শিবরাত্রিতে । সে নাকি লক্ষ ল�োকের মেলা । রয়্যাল ওমান পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন । গাড়ি পারকিঙের জন্য দিনরাত তাঁরা পরিশ্রম করেন । সরকারি প ৃষ্ঠপ�োষণে আরেকটি মন্দিরও আছে মাস্কাটের শহরকেন্দ্র রুয়ি থেকে মাত্রার বন্দরের দিকে যেতে পড়ে এই মন্দির । স্থানীয়রা বলেন খিমজি মন্দির । মধ্যপ্রাচ্যে ওমানই একমাত্র ব্যতিক্রমি দেশ যেখানে ভারতীয়দের ঢেলে নাগরিকতা দেওয়া হয়েছে ক�োন�োরকম ক�োন�ো ধর্মীয় বাছবিচারের ধার না ধেরেই । এর পিছনে অবশ্য আমাদের মুন্সিয়ানারই কৃতিত্ব । আর সেই কারণেই ম�োট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ আজও ভারতীয় । প্রায় আড়াইশ�ো কিল�োমিটারের মত�ো রাস্তা পেরিয়ে এলাম দু ঘণ্টার মধ্যে । স�োহার মাস্কাটের মত�োই আরেকটা বন্দরনগরী – ওমানের উত্তপ্ত উত্তর তটরেখায় । উত্তর আল বাতিনা গভরনরেটের রাজধানী এই স�োহার । চ�োদ্দশ�ো শতকে পর্তুগিজরা যে দুর্গ বানিয়েছিলেন সেটার বেশির ভাগটা জুড়ে এখন কেবলই একটা আধুনিক সংগ্রহশালা । ১৯৯৩ সালে এই যাদুঘর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পর আস্তে আস্তে ব�োঝা গেল, প্রাচীন ওমানের তাম্র-বাণিজ্যের একটা বিরাট দস্তাবেজ এই স�োহারে এত�োদিন যাবত যেন মেঘে ঢাকা তারার মত�ো টিমটিম করে জ্বলছিল�ো । যে পর্তুগিজরা একদিন সমুদ্রপথে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মাইল দূর থেকে জীবনের আপামর ঝু ঁকি নিয়ে আবহাওয়ার বৈপরীত্যকে হেলায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ

দেখিয়ে নেমেছিলেন এই মরুভূ মির সাগরবেলায়, তাঁদের চ�োখে সেদিন ছিল দুটি মাত্র স্বপ্ন – মূলত মশলা আর দ্বিপণ্য ছিল এক বিপন্ন সত্ত্বার পুনরাবিষ্কার । এটা ইতিহাস যে, ঔপনিবেশিকতার দ�ৌড়ে তাঁরা প্রতিবেশি ইংরেজ ফরাশি ওলন্দাজ এমনকি জর্মনদের সঙ্গেও পেরে ওঠেননি, কিন্তু পশ্চিমি সভ্যতার হাত ধরে যে ব্যক্তি-স্বাধীনতার আল�ো এসে একদিন ছু ঁয়ে গেছিল�ো অবশিষ্ট প ৃথিবীর মানুষকে, আল�োকের সেই ঝর্ণাধারা গ�োটা মানবজাতির মঙ্গলে নিবেদনার্থে তাঁদের অবদান ক�োন ভাবেই কিছু কম নয় । স�োহার থেকে সে রাতে আর ফেরা হয়ে উঠল�ো না । তাস্নিম বলল�ো, এই রাতটাকে একলা ফেলে যেতে আজ আর আমার মন চাইছে না । থেকে গেলাম তাই আল ওয়াদি হ�োটেলে । তিন তারা হ�োটেল । কিন্তু যত্ন-আতিথ্য কিছু ই সাত তারার থেকে কম যায় না । বিরাট বড় সুইমিং পুলে রাত নেমে এল�ো একটু যেন ত্বরা করেই । তাস্নিম বলল�ো, পুজ�োর সময় দেশধর্ম-অর্থ-বর্ণ সব ভু লে এখানে দূরদূরান্ত থেকে সবাই আসেন, দেশের মত�ো বার�োয়ারি দুর্গোৎসবে চাঁদা দেন, চারদিন টানা ঢেলে খাওয়া দুবেলা । খিচু ড়ি, ছ্যাঁচড়া (পাঁচমিশালি তরকারি), হরেকরকম ভাজা, মিষ্টান্ন – আয়�োজন আপ্যায়ন আর আনন্দের ত্রিবেণী সংগম তখন । স্থানীয় ওমানিরা পর্যন্ত তাঁদের জাতীয় প�োশাক ডিশডাশা (সাধারণত সাদা আলখাল্লা) পরে এসে পুজ�ো মণ্ডপে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামতে ঘামতে ঢাক বাজান, যথায�োগ্য দক্ষিণা দিয়ে পঙক্তিভ�োজনে পর্যন্ত য�োগ দেন, মায় পরিবেশনও করেন । রুয়ি রাউণ্ড-এবাউট ছাড়িয়ে পায়ে হাঁটা দূরত্বে পরের রাউণ্ড-এবাউটের নাম হাম্রিয়া । হাম্রিয়াতে ঢ�োকার মুখেই

অপূর্ব সুন্দর ঐতিহাসিক হাম্রিয়া মসজিদ । কিন্তু একটু বাদেই বাঁহাতে বাংলাদেশি মন্দির । রাধাকৃষ্ণ মন্দির, তাই জন্মাষ্টমী পালন হয় ধুমধাম করে । আর হয় কালীপুজ�ো আরও বিরাট করে । হবেই বা না কেন ? “কালী হল মা রাসবিহারি, নটবর বেশে বৃন্দাবনে” ! দর্শন করতে গেলাম। ঠাকুরমশাই সন্ধ্যারতি শুরু করছেন তখন । প্রবেশদ্বারের মুখেই প্রথমে রাখা যে দেবতার ছবি – তিনি সুলতান কাবুজ । পুরুতমশাই তাঁকে আরাধনা করেই তারপর সন্ধ্যারতি শুরু

93 আল�োক

শারদীয়া 2022

করলেন । নিরাপত্তা পরীক্ষার আগে পর্যন্ত মাস্কাট বিমানবন্দরে যাত্রীর সঙ্গে যাওয়া যায় । শুধু দুট�ো ভ্যাক্সিনের কাগজপত্র বা তার ছবি দেখালেই যথেষ্ট । তাস্নিমও এল�ো আমার সঙ্গে । যত�োদূর আসা যায় । যত�োক্ষণ থাকা যায় । ক�োমর-বন্ধ থেকে রুপ�োর চু ড়ি জ�োড়া বের করে ওর হাতে রাখলাম । মাত্রা সক (হাটখ�োলা) থেকে এই এক জ�োড়া রুপ�োর জওহাহির কিনেছিলাম শুধু ওর কথাই ভেবে। ওমানি মেয়েরা খুব পছন্দ করেন ।

তাস্নিম বলল, পরিয়ে দিয়ে যাবে না । বলে দুহাতের কব্জি পাশাপাশি রেখে আমার দিকে এগিয়ে দিল�ো… মাইকে ওদিকে ঘ�োষণা হয়ে গেল – “ইয়র এটেনশন প্লীজ – লাস্ট কল ফর এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট লীভিং ফর ডেলি – এ আই নাইন সেভেন ফ�োর”…

চন্দ্রাবতী চ�োংদারের (ব�োর্দো, ফ্রান্স)

পেটপুজ�ো ঃ

ট্রাডিশনাল একটি পদ, যা বাঙালিদের কাছে সবসময়ের জনপ্রিয়। আমারও অতি প্রিয় ও পছন্দের একটি পদ। ম�োচার ঘন্ট বিভিন্ন ভাবে রান্না করা যায়। আজ যে রেসিপিটা শেয়ার করছি, সেটা গলদা চিংড়ি দিয়ে বানান�ো। চিংড়ি (কুচ�ো চিংড়ি/ছ�োট চিংড়ি/গলদা চিংড়ি) দিয়ে ম�োচার ঘন্ট জাস্ট অসাধারণ খেতে লাগে... গরম গরম পরিবেশন হলে ত�ো কথায় নেই! এই বিশেষ পদটি বিশেষ দিনে করলে বিশেষ একটা ব্যাপার মনে হবে... চলুন রেসিপিটা দেখে নেওয়া যাক --

গলদা চিংড়ি দিয়ে ম�োচার ঘন্ট

উপকরণ :

ম�োচা (ছ�োট সাইজের ১টি) , আলু (মাঝারি সাইজের ১টি) , গলদা চিংড়ি (বড় গলদা ৪টি) , পেঁয়াজ কুচি (বড়�ো সাইজের ১টি) , আদা বাটা (১ চামচ) , রসুন বাটা (১/২চামচ) , টমেট�ো কুচি (মাঝারি সাইজের ১টি) , কাঁচালঙ্কা কুচি ( স্বাদ মত�ো), তেল (পরিমাণ মত�ো), তেজপাতা (১টি), শুকন�ো লঙ্কা (১টি), গ�োটা জিরে (১/২চামচ), হলুদ গুঁড়�ো (প্রয়�োজন মত�ো), জিরে গুঁড়�ো (১/২চামচ), গরম মসলা গুঁড়�ো (২পিঞ্চ), লবণ (স্বাদ মত�ো), চিনি (স্বাদ মত�ো), জল (পরিমাণ মত�ো)। কিছু উপকরণের পরিমাণ বলিনি কারণ ওগুল�ো বেশিরভাগ মানুষ ই তারা তাদের স্বাদ অনুযায়ী দেন, তাই।

94 আল�োক

শারদীয়া 2022

প্রিয় রেসিপি

প্রণালী : ১) প্রথম কাজ হল ম�োচা ছাড়িয়ে নেওয়া। যদিও এটা একটু কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ তবুও করতে ত�ো হবেই। ম�োচা ছাড়িয়ে ছ�োট ছ�োট করে কেটে নিতে হবে। এরপর জল দিয়ে ভাল�ো করে কড়াইতে বা প্রেসার কুকারে দিয়ে জল ও লবণ সহয�োগে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। (হলুদ গুঁড়�ো ও দেওয়া যেতে পারে)। ২) আলুটাকে ছ�োট ছ�োট চ�ৌক�ো করে আলুকুচি গুল�োকে হলুদ গুঁড়�ো ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। ৩) গলদা চিংড়ি গুল�োকে বেছে ভাল�ো করে ধুয়ে ছ�োট ছ�োট করে টু কর�ো করে হলুদ গুঁড়�ো ও লবণ মাখিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। ৪) মূল রান্না শুরু -কড়াইতে পরিমাণ মত�ো তেল দিয়ে গরম করে তেজপাতা, শুকন�ো লঙ্কা ও গ�োটা জিরে ভেজে নিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে আদা, রসুন বাটা, টমেট�ো, কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে একে একে ভেজে নিতে হবে। এরপর এতে হলুদ গুঁড়�ো, জিরে গুঁড়�ো ও লবণ দিয়ে ভেজে সামান্য জল দিয়ে সবকিছু কে একসাথে কষাতে হবে। মশলা কষান�ো হলে এতে আগে থেকে ভেজে রাখা আলু ও সেদ্ধ করা ম�োচা দিয়ে কিছু ক্ষণ কষিয়ে পরিমাণ মত�ো জল দিয়ে ঢাকনা চাপা দিতে হবে। এই পর্যায়ে ল�ো-ফ্লেমে রান্না হবে। কয়েক মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখতে হবে, সবকিছু সুন্দরভাবে সেদ্ধ হয়েছে কিনা। সবকিছু সেদ্ধ হলে ভাজা চিংড়ি দিয়ে আর�ো দুমিনিট মত�ো ঢাকনা চাপা দিয়ে রাখতে হবে, যাতে চিংড়ির ফ্লেবারটা পুর�ো রান্নার সাথে খুব ভাল�োভাবে মিশে যায়। এরপর ঢাকনা খুলে হাই ফ্লেমে কয়েক মিনিট নেড়ে চিনি ও গরম মশলা দিয়ে সবকিছু কে একসাথে নেড়ে নামালেই রেডি "গলদা চিংড়ি দিয়ে ম�োচা ঘন্ট"।

মনিকা বিশ্বাসের হাতে স্বাদ নিনঃ বাহারি

ম�োচা ডাল

উপকরণঃ ১টি মাঝারি আকারের ম�োচা,২০০ গ্ৰাম মুগ ডাল,১ টি পিঁয়াজ,১ টি টমেট�ো, ৫-৬ ক�োয়া রসুন, ৪-৫ টি কাঁচা লঙ্কা, অল্প আদা,২ টি তেজপাতা, পরিমাণ মত�ো সরিষা তেল, লবণ , হলুদ, ঘি, চিনি ও গরম মশলা ।

প্রনালীঃ প্রথমে মুগ ডাল ভেজে হাফ সেদ্ধ হওয়ার পর আগে থেকে কেটে রাখা ম�োচা ডালের মধ্যে দিয়ে সেদ্ধ করে নিন ।তারপর কড়াইয়ে তেল গরম করে প্রথমে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে অল্প লাল করে ভেজে নিন। তারপর একে একে কড়াইয়ে তেজপাতা, টমেট�ো কুচি, লঙ্কা কুচি, আদ কুচি, লবণ,হলুদ, দিয়ে আর�ো একটু ভেজে নিন। এবার আগে থেকে সেদ্ধ করে রাখা ডাল ম�োচা কড়াইয়ে দিয়ে নাড়তে থাকুন এভাবে ৫-৬ মিনিট গ‍্যসের উপর রাখার পর ঘি,চিনি ও গরম মশলা দিয়ে নামিয়ে নিন । তারপর গরম ভাত অথবা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন ।

কিভাবে বানাবেন :

উপকরণ :

কড়াইতে তেল গরম করে পনিরটা হালকা ভেজে তু লে নিন।এরপর সেই তেলের ভেতর ১) পনির (ছ�োট করে কাটা) - ২০০ গ্ৰাম। দারুচিনি,লবঙ্গ,এলাচ দিয়ে ভেজে নিন।এরপর ২) তেল : পরিমান মত�ো। পেঁয়াজ কুচি অল্প নুন,লাল লঙ্কা গুড়ো ও হলুদ ৩) ১টা দারুচিনি,৩টে এলাচ (ফাটান�ো),৪টে লবঙ্গ। গুড়ো দিয়ে ভেজে নিন।পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে ৪) পেঁয়াজ কুচি : ১টা তাতে এক এক করে টমাট�ো বাটা,আদা-রসুন ৫) টমেট�ো বাটা : ১টা বাটা,ধনে-জিরে গুড়ো দিয়ে কসিয়ে হাতে সময় কম থাকলে বানিয়ে নিন ভাল�ো করে যাতে টমাট�ো বাটার ৬) লাল লঙ্কা গুড়ো : ১ চামচ। ৭) হলুদ গুড়ো :১/৪ চামচ। ফেলতে পারেন সুস্বাদু পনির কাঁচা গন্ধটি চলে যায়।পনির গুল�ো ৮) আদা ও রসুন বাটা : এরপর এর সাথে মিশিয়ে নেবেন ও কালিয়া: ১ চামচ। অল্প জল, নুন (যদি লাগে তাহলেই নুন অমৃতা বিশ্বাস সরকার ৯) ধনে ও জিরে গুড়ো : ১/২ চামচ দেবেন)সবুজ লঙ্কা ও ধনে পাতা দিয়ে করে। অল্প আঁচে ঢাকা দিয়ে ফু টতে দিন ১০) ধনে পাতা : পরিমান মত�ো। ১০ মিনিট মত�ো।মাঝে একবার ঢাকা খুলে ভাল�ো ১১) নুন : স্বাদ মত�ো। করে পনির ও বাকি সব উপকরণ গুল�ো মিলিয়ে ১২) সবুজ লঙ্কা : ২ ট�ো (ফাটান�ো) মিশিয়ে দিন।এরপর ঢাকা দিয়ে আর�ো কিছু ক্ষন ১৩) জল : অল্প। ফু টিয়ে নামিয়ে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ভাত বা রুটির সাথে। 95 আল�োক

শারদীয়া 2022

খেলাধুল�ো ঃ বর্তমান সময়ে শিশুদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ নিঃস ৃত একটা স্ট্রেস হরম�োন, যা বড়দের এবং শিশুদের কমে যাচ্ছে । এর একটা বড় কারণ হল�ো ম�োবাইল এবং সমানভাবে ক্ষতি করে । এছাড়া খেলাধুল�ো করলে হাড়, টিভির কার্টুন এর প্রতি আসক্তি। আর এর জন্য আমরা বাবা মাসেল, ফু সফু স এবং হৃৎপিণ্ড সমস্ত অঙ্গই শক্তিশালী হয়। মা রাই দায়ী। বাচ্চা খাচ্ছে না ? কে খাওয়াবে দীর্ঘ সময় আজকালকার বাচ্চাদের একটা কমন প্রবলেম হল ওবিসিটি বসে? দাও হাতে একটা ম�োবাইল বা ম�োটা হয়ে যাওয়া। নিয়মিত ধরিয়ে । অল্প সময়ের মধ্যে খেলাধুলা করা বাচ্চাদের এই বাচ্চার খাওয়া শেষ। ব্যস মা ও সমস্যা হয়না । সুতরাং নিয়মিত নিশ্চিন্ত যে তার শিশুর নিউট্রিশন খেলাধুলা না করা শিশুদের ঠিকঠাক হল�ো । পরিবারও শরীরে এবং মনে অনেক সমস্যা নিশ্চিন্ত যে বেশি চিৎকার চেঁচামিচি তৈরি হচ্ছে আমাদের অগ�োচরে। ঃ সঙ্গীতা আইচ সাহা হল�োনা বাড়িতে। এই হল শুরু আমরা বুঝতেও পারছি না এই । শুরু একটা অবক্ষয়ের। শুরু নীরব বিপর্যয় ,যতক্ষণ না একটা একটা ধ্বংসের। হ্যাঁ ধ্বংস কথাটা জেনেশুনে ব্যবহার করলাম ক�োন বড় ঘটনা ঘটছে। এই শিশুদের সামাজিক । এরপর আমাদের অজ্ঞাতসারে একটু একটু করে নানা দুরূহ মেলামেশা, কমিউনিকেশনে একটা প্রবলেম হয়। এদের সমস্যা সম্ মুখীন হবে আমার আপনার অতি আদরের শিশুটি। উদ্বেগ, স্ট্রেস, উৎকণ্ঠা তৈরি হয় মনে অনেক বেশি, স্ট্রেস কারণ এই ম�োবাইলের আসক্তি শিশুটি পরবর্তীকালেও হরম�োন কর্টিসল অনিয়ন্ত্রিতভাবে ক্ষরিত হওয়ার কারণে। ছাড়তে পারবেনা । এই ম�োবাইল আর টিভির কার্টুন বাচ্চাদের কিন্তু এখন খেলার সময় ক�োথায় শিশুদের? একেই মন�োজগৎ কে এমন ভাবে গ্রাস করে নিয়েছে, পড়াশ�োনার মারাত্মক চাপ । আর তার থেকেও বড় কথা যে এরপর সেই শিশুদের দ�ৌড়ঝাঁপ করে হল চু রি গেছে শিশুদের খেলার মাঠ। হ্যাঁ এটা খুব সত্যি খেলাধুলার প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি কথা। যারা খেলতে চায়, সেইসব শিশুদেরও নেই খেলার হচ্ছে। তারা ওই অবাস্তব জগতে এতটাই উপযুক্ত মাঠ। সব জায়গার দখল দিয়েছে ডু বে থাকছে, টিভি আর ম�োবাইলের হাইরাইজ ,কমপ্লেক্স এবং ফ্ল্যাটের সারি। কনটেন্টগুল�ো বাচ্চাদের মস্তিষ্ক আর কমপ্লেক্স গুল�োতে যাও বা ছ�োট্ট মত�ো পার্ক মনের দখল এতটাই দখল নিয়ে নিচ্ছে বা খেলার জায়গা থাকে, কিন্তু স্ট্যান্ড ,যে তারা বন্ধু -বান্ধবদের সঙ্গে খেলা অ্যাল�োন ফ্ল্যাট বাড়িগুল�োতে বাচ্চাদের বা গল্প করার থেকে ওই অবাস্তব খেলার জায়গাটু কু অব্দি নেই। মা-বাবাও জগতে ডু বে থাকতেই বেশি পছন্দ আজকাল সত্যি ভীষণ ব্যস্ত যে যার নিজের করছে। এমনকি বাড়িতে বাবা -মা এর কর্মজগৎ নিয়ে। শিশুরাও তাই মুখ গুজেছে ম�োবাইলে। সঙ্গেও গল্প বা খেলা করার থেকেও ম�োবাইল দেখা অনেক মনে পড়ে যায় আমাদের ছেলেবেলার কথা । স্কু ল বেশি আনন্দের তাদের কাছে। এর ফল হচ্ছে মারাত্মক আজকাল থেকে ফিরে ক�োন রকমে নাকে মুখে দুট�ো খাবার গুঁজে ছু ট প্রায় প্রতিটি বাচ্চার চ�োখে ভারী ভারী পাওয়ারের চশমা। লাগাতাম মাঠে । টানা দুঘণ্টা ধরে চলত�ো খেলা । কুমিরডাঙ্গা এছাড়া সবথেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, যথেষ্ট পরিমাণ ,কানামাছি ,ছ�োঁয়াছু ঁয়ি, রুমাল চ�োর ,টিপ দিয়ে যা। কত রকম দ�ৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলা করলে অক্সিট�োসিন নামের একটি খেলা ছিল আমাদের। ক�োথায় হারিয়ে গেল যেন সব। ক�োন হরম�োন ক্ষরিত হয়। আমাদের দেহে এবং অবশ্যই বাচ্চাদের এক জাদুদন্ডের ছ�োঁয়ায় সব অবলুপ্ত আজ। আমার ছেলে দেহে এই অক্সিট�োসিন হরম�োনের ভূ মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং তার কমপ্লেক্সের বন্ধুদের একদিন বললাম ত�োরা এইসব অক্সিট�োসিন আমাদের ইম�োশনাল রেসপন্স গুল�োকে নিয়ন্ত্রণ খেলার নাম শুনেছিস? সবাই মাথা নেড়ে ,না বলল। বললাম করে। যেমন বিশ্বাস ,সহমর্মিতা ,সঠিক সামাজিক আচরণ ,গুড আমি শিখিয়ে দেব । খেলবি ত�োরা? একটা খেলা বুঝিয়ে কমিউনিকেশন পাওয়ার এগুল�ো নিয়ন্ত্রিত হয় অক্সিট�োসিন দেওয়ার পর দেখলাম কার�োর ক�োন ইন্টারেস্ট নেই। সবাই দ্বারা। অক্সিট�োসিন স্ট্রেস , উদ্বেগ এবং কর্টিসল হরম�োন যার মত চলে গেল ঘরে। ক্ষরণ কমায়। এই কর্টিসল হরম�োন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে

বর্তমান সময়ে শিশুদের খেলাধল ু ার প্রতি আগ্রহ

96 আল�োক

শারদীয়া 2022

97 আল�োক

শারদীয়া 2022

98 আল�োক

শারদীয়া 2022

Get in touch

Social

© Copyright 2013 - 2024 MYDOKUMENT.COM - All rights reserved.